ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

বাহরাইনে ২০ হাজার বাংলাদেশী কর্মীর ভাগ্য অনিশ্চিত

প্রকাশিত: ০৫:২৭, ২৭ মার্চ ২০১৭

বাহরাইনে ২০ হাজার বাংলাদেশী কর্মীর ভাগ্য অনিশ্চিত

ফিরোজ মান্না ॥ বাহরাইনে ২০ হাজারের মতো কর্মী অবৈধ হয়ে পড়েছেন। দু’দফা সময় পেয়েও তারা বৈধ হওয়ার সুযোগ নিতে পারেননি। বহু কর্মী দালালের মাধ্যমে বৈধ হওয়ার আবেদন করেছিলেন। অনেকে আবার নিজেই বৈধ হওয়ার জন্য আবেদন জমা দিয়েছিলেন। কিন্তু ওই সব আবেদন যথাযথ প্রক্রিয়ায় হয়নি বলে বিপুলসংখ্যক কর্মীর ভাগ্য এখন অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে। এখন তাদের দেশে ফিরতে হবে। বর্তমানে দেশটিতে ৫৩ হাজারের বেশি বাংলাদেশী কর্মী বিভিন্ন পেশায় কাজ করছেন। গত বছরের অক্টোবর থেকে ডিসেম্বর পর্যন্ত বৈধ হওয়ার সময় দিয়েছিল বাহরাইন কর্তৃপক্ষ। পরে এ সময় বাড়িয়ে এ বছরের ৩ মার্চ পর্যন্ত করা হয়। প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের অনুরোধে দেশটির কর্তৃপক্ষ অবৈধ বাংলাদেশীদের বৈধ করার সিদ্ধান্ত নেয়। বাহরাইন লেবার মার্কেট রেগুলেটরি অথরিটি (এলএমআরএ) বাংলাদেশের অনুরোধের পর অবৈধদের বৈধ করার দু’দফা সুযোগ দেয়। একই সঙ্গে প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে বন্ধ শ্রমবাজার বাহরাইনে নতুন করে কর্মী নিয়োগের জন্য আলাপ-আলোচনা শুরু করা হয়। দীর্ঘ চার বছর ধরে বাজারটি বন্ধ রয়েছে। মধ্যপ্রাচ্যের এ বাজারটি খুলে গেলে অনেক কর্মী চাকরি নিয়ে যেতে পারবেন। মন্ত্রণালয় সূত্র জানিয়েছে, ২০১৩ সালের ফেব্রুয়ারি মাস থেকে প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয় ও বাহরাইনের এলএমআরএ’র সঙ্গে অবৈধ কর্মীদের বৈধ করার বিষয়টি নিয়ে আলোচনা চলছিল। বিষয়টি নিয়ে কয়েক দফা বাহরাইনের প্রতিনিধি দল দেশে এসেছে। বাংলাদেশ থেকেও প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থানমন্ত্রীর নেতৃত্বে প্রতিনিধি দল কয়েক দফা দেশটি সফর করেছে। এরপরই এলএমআরএ বিষয়টি নিষ্পত্তি করার উদ্যোগ নেয়। দীর্ঘ অপেক্ষার পর অবৈধ বাংলাদেশীদের বৈধ করার কাজ শুরু করে এলএমআরএ। একই সঙ্গে বাহরাইন কর্তৃপক্ষ বাংলাদেশ থেকে কর্মী নিয়োগের বিষয়েও আগ্রহ দেখিয়েছে। তবে তারা বেশকিছু শর্ত দিয়েছে। এ শর্ত পূরণ করার পর কর্মী নেবে বলে জানিয়েছে। প্রথমত সাশ্রয়ীভাবে বাহরাইনে কর্মী পাঠাতে হবে। চাকরির মেয়াদের বেশি সময় থাকতে পারবে না। এমন কিছু শর্তের কথা উল্লেখ করা হযেছে। জনশক্তি রফতানিকারকরা তিন থেকে পাঁচ লাখ টাকা করে নিয়ে বাহরাইনে কর্মী নিয়োগ করেছে। এতে কর্মীরা সেখানে কাজ করে তাদের খরচের টাকাই তুলতে পারেননি। এ কারণে অনেক কর্মী লুকিয়ে লুকিয়ে কাজ করেছেন, যার কারণে বাংলাদেশী কর্মীরা অবৈধ হয়ে পড়েছিলেন। এলএমআরএ’র প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা ওসামা আবদুল্লা আল আবছি সম্প্রতি সাধারণ ক্ষমা ঘোষণা করেন। এ ঘোষণা অনুযায়ী অক্টোবর থেকে ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত বৈধ হওয়ার সুযোগ ছিল। এ সময়ের মধ্যে অবৈধ কর্মীরা বৈধ হতে না পারলে তাদের দেশে ফিরে যেতে হবে। কাজে অনুপস্থিত বা কাজ থেকে পলাতক, কাজ শেষে অতিরিক্ত সময় অবস্থান, কাজ শেষের পর পলাতক ও ভিসার মেয়াদ শেষ হওয়ার পর নবায়ন না করে অতিরিক্ত সময় অবস্থানকারী প্রবাসী কর্মীরা সাধারণ ক্ষমার আওতায় পড়বেন। পরে আরও এক দফা সময় বাড়ানো হয়। বর্ধিত সময়ের মধ্যে বহু কর্মী বৈধ হওয়ার আবেদন করতে পারেননি। জানা গেছে, কর্মীরা বৈধ হওয়ার পর ছয় মাসের জন্য যে কোন প্রতিষ্ঠানে কর্মসংস্থানের সুযোগ পাবেন। একই সঙ্গে যদি কেউ দেশে ফিরতে চান তাহলে দেশেও ফিরতে পারবেন। বাহরাইন ইমিগ্রেশন তাদের কোন বাধা দেবে না। যদি সাধারণ ক্ষমার সময় পার করে কেউ দেশে ফিরতে চান তাহলে তারা কালো তালিকাভুক্ত হবেন। সেক্ষেত্রে তাদের বিরুদ্ধে ইমিগ্রেশন পুলিশ ব্যবস্থা নেবে। যেসব কর্মী নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে দেশে ফিরবেন তারা আবার সাধারণ ক্ষমা বলবৎ থাকাবস্থায় আবার বাহরাইনে যেতে পারবেন। অবৈধ কর্মীদের বৈধ হওয়ার জন্য এলএমআরএ’র একটি কল সেন্টার খুলেছে। এ কল সেন্টার থেকে বৈধ হতে কী কী করতে হবে তার তথ্য জানা যাবে। প্রবাসী কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের এক কর্মকর্তা বলেন, দীর্ঘদিন বাংলাদেশের এ শ্রমবাজারটি বন্ধ ছিল। এ কারণে সেখানে থাকা হাজার হাজার বাংলাদেশীসহ বিভিন্ন দেশের কর্মীরা অবৈধ হয়ে পড়েন। কেউ কেউ ৭ থেকে ৮ বছর ধরে দেশটিতে অবৈধভাবে বসবাস করে আসছেন। সাধারণ ক্ষমার মাধ্যমে তারা এখন বৈধ হওয়ার সুযোগ পাচ্ছেন। যদি কেউ সুযোগ হাতছাড়া করেন তার জন্য দায়ী তারাই হবেন। মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে যথাযথ চেষ্টা করা হয়েছে। দীর্ঘদিনের চেষ্টার পর বাহরাইন কর্তৃপক্ষের এমন সিদ্ধান্তকে প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয় স্বাগত জানিয়েছে। প্রায় চার বছরের চেষ্টার ফলে বাহরাইনে অবৈধ কর্মী বৈধ হচ্ছেন। মন্ত্রণালয়ের প্রতিনিধি দল একাধিকবার দেশটির কর্তৃপক্ষের সঙ্গে এ বিষয় নিয়ে আলাপ-আলোচনা করেছেন। বাহরাইনের শ্রমবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা লেবার মার্কেট রেগুলেটরি অথরিটির (এলএমআরএ) তথ্যানুযায়ী, দেশটিতে বিভিন্ন দেশের ৭১ হাজারের মতো অবৈধ অভিবাসী আছেন। এরমধ্যে প্রায় ৫৩ হাজারই বাংলাদেশী নাগরিক। অবৈধরা বৈধ হওয়ার সুযোগ পাওয়ার পরপরই ১০ হাজার অবৈধ প্রবাসী সাধারণ ক্ষমার সুযোগ চেয়ে আবেদন করেছেন। এরমধ্যে ভিসা পরিবর্তন করে বৈধভাবে বাহরাইনে কাজ করার সুযোগ চেয়েছেন ৮ হাজার প্রবাসী। দুই হাজার অবৈধ প্রবাসী পুলিশের হাতে আটক হলেও পরে তারা কোন রকম জরিমানা ছাড়াই দেশে ফিরেছেন। এখন যারা সঠিকভাবে আবেদন করতে পারেননি তারা আবার সুযোগ পাবেন কি-না এ বিষয়ে প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয় কিছুই জানাতে পারেনি।
×