স্টাফ রিপোর্টার, যশোর অফিস ॥ জার্মানির ভক্সহল ভিভা ১৯৬৯ মডেলের গাড়ি। মুক্তিযুদ্ধ শুরুর কয়েক মাস আগে পাকিস্তান সরকার গাড়িটি যশোরের মোমিন গার্লস স্কুলে (বর্তমানে সরকারী বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়) দিয়েছিল। তখন এ স্কুলের প্রধান শিক্ষিকা ছিলেন বঙ্গবন্ধুর ঘনিষ্ঠ সহচর তৎকালীন প্রাদেশিক পরিষদের মন্ত্রী এ্যাডভোকেট মশিউর রহমানের স্ত্রী মাহমুদা রহমান। আর গাড়িচালক ছিলেন শহরতলির নূরপুরের সিদ্দিক হোসেন। সে সময় বঙ্গবন্ধু বেশ কয়েকবার যশোরে এসেছিলেন। এ গাড়িতে করেই বিভিন্ন চোরাইপথে বঙ্গবন্ধুকে বেশ কয়েকটি সমাবেশে নিয়ে যাওয়া হয়েছিল। এরপর ২৫ মার্চ গ্রেফতার হন মশিউর রহমান। বিভিন্ন সূত্র মতে, ২৩ এপ্রিল যশোর ক্যান্টনমেন্টে পাক হানাদারদের নির্মম নির্যাতনে শহীদ হন তিনি।
মশিউর রহমান গ্রেফতার হওয়ার আগেই তার পরিবারের সদস্যদের পালিয়ে যাওয়ার জন্য বলেছিলেন। এই গাড়িতে করেই মশিউর রহমানের স্ত্রী মাহমুদা দুই মেয়ে ও দুই ছেলে নিয়ে পালিয়ে যান।
মুক্তিযুদ্ধ শুরুর দুই মাস পর থেকে যশোরে মুক্তিযোদ্ধারা এ গাড়িটি ব্যবহার শুরু করেন। বিভিন্ন স্থান থেকে মুক্তিযোদ্ধাদের আনা-নেয়া, এমনকি আহত মুক্তিযোদ্ধাদের এ গাড়িতে করে কলকাতা পর্যন্তও নিয়ে যাওয়া হয়েছে। দেশ স্বাধীনের পরও কয়েক বছর এ গাড়িটি ব্যবহার করেছে স্কুল কর্তৃপক্ষ। মূলত, ’৮০-এর দশক থেকে গাড়িটি অচল হয়ে পড়ে। স্থান হয় সরকারী বালিকা বিদ্যালয়ের ভাগাড়ে। গত বছর ১৫ ডিসেম্বর জেলা প্রশাসন স্কুলের ভাগাড় থেকে গাড়িটি তুলে এনে কালেক্টরেট ভবনের সামনে রাখে প্রদর্শনের জন্য। গত বৃহস্পতিবার গাড়িটি সংস্কার করার জন্য ঘোপ এলাকার একটি গ্যারেজে স্থানান্তর করা হয়েছে। অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) আসাদুল হক বলেন, ‘মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতিবিজড়িত এ গাড়িটি সংস্কার করার জন্য গ্যারেজে দেয়া হয়েছে। পরে এটিকে কালেক্টরেট ভবনের (ডিসি অফিস) সামনে উন্মুক্ত স্থানে জনসাধারণের জন্য প্রদর্শন করা হবে।’
আরো পড়ুন
শীর্ষ সংবাদ: