ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

উত্তরাঞ্চলের মোকাম থেকে ধান উধাও!

প্রকাশিত: ০৩:২৮, ২৭ মার্চ ২০১৭

উত্তরাঞ্চলের মোকাম  থেকে ধান উধাও!

অর্থনৈতিক রিপোর্টার ॥ শস্যভা-ারখ্যাত উত্তরাঞ্চলের মোকাম থেকে ধান উধাও! গেল ডিসেম্বর-জানুয়ারিতে ব্যবসার ভরা মৌসুম থেকেই বিভিন্ন মোকামের ধান কেনা শুরু করেন ব্যবসায়ীরা। তখনই টনে টনে ধানে গুদাম ভরে ফেলেন বড় ব্যবসায়ীরা। মাঝারি ব্যবসায়ীরাও একই কাজ করেন। ফলে স্থানীয় হাট-বাজারে চাহিদামতো ধান মিলছে না। যাও মিলছে কিনতে হচ্ছে চড়া দামে। এ সুযোগে মজুদদার ব্যবসায়ীরা রয়ে-সয়ে ধানকে চাল বানিয়ে বাজারে ছাড়ছেন। এর প্রভাবে অস্থির হয়ে পড়েছে চালের বাজার। ক্রমেই বেড়ে চলছে চালের দাম। মাত্র দুই সপ্তাহের ব্যবধানে বস্তাপ্রতি চালের দাম বেড়েছে ১০০-১৫০ টাকা। আরও বেশি লাভের আশায় ব্যবসায়ীরা বাজারে চাল সরবরাহ কমিয়ে দিয়েছেন বলেও অভিযোগ উঠেছে। এ অবস্থা অব্যাহত থাকলে চালের দাম কোন পর্যায়ে গিয়ে ঠেকবে তা দেখতে চলতি বোরো মৌসুমের ধান বাজারে আসা পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হবে বলে জানিয়েছেন বিশ্লেষকরা। বগুড়া জেলা চালকল মালিক সমিতির সভাপতি এটিএম আমিনুল হক জানান, এ সমিতির আওতায় ছোট-বড় চাতাল রয়েছে ১ হাজার ৭শ’র মতো। এর মধ্যে প্রায় ২৫টি অটোমেটিক রাইস মিল। ধান দেয়ার পর এসব মিলে স্বয়ংক্রিয়ভাবে চাল উৎপাদন হয়। ধারণক্ষমতা অনুযায়ী এসব মিল চালু রাখতে পর্যাপ্ত ধানের প্রয়োজন হয়। প্রত্যেক মিলের জন্য প্রতিদিন গড়ে ৮০০-১০০০ মণ ধানের দরকার। মিল চালু রাখার স্বার্থে ব্যবসায়ীদের ধান মজুদের কোন বিকল্প নেই। তবে কোন মালিক অতিরিক্ত ধান মজুদ রাখেননি বলেও দাবি এ নেতার। অপর এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, বগুড়াসহ উত্তরাঞ্চলের মোকামগুলোতে ধান পাওয়া যাচ্ছে না। চাহিদামতো ধান কিনতে পারছেন না ব্যবসায়ীরা। উৎপাদন করতে পারছেন না চাল। ধানের অভাবে জেলার প্রায় ৮০-৯০ শতাংশ চাতাল বন্ধ রয়েছে। এসব কারণে চালের বাজার উর্ধমুখী। এখানে ব্যবসায়ীদের কোন কারসাজি নেই বলেও জোর দাবি জেলা চালকল মালিক সমিতির নেতা এটিএম আমিনুল হকের। একাধিক ব্যবসায়ী জানান, ব্যবসা বলতেই এখন বড় ব্যবসায়ীরা নিয়ন্ত্রণ করছেন। ধান-চালের ব্যবসার ক্ষেত্রেও এমনটা ঘটছে। মৌসুমের শুরুতেই বড় ব্যবসায়ীরা উত্তরাঞ্চলের মোকামগুলো ধানশূন্য করে ফেলেছেন। ধান কিনে গুদামে মজুদ গড়েছেন। বোরো মৌসুমের ধান আসার আগ পর্যন্ত অনেক ব্যবসায়ীর ধান না কিনলেও চলবে। মিল চালাতে তাদের কোন সমস্যা হবে না। তবে তারা অত্যন্ত ধীরগতিতে চালের উৎপাদন করছে। এতে বাজারে চালের আরও সঙ্কট সৃষ্টি হচ্ছে। ফলে ক্রমেই চালের বাজার উর্ধমুখী হয়ে উঠছে বলেও জানান এসব ব্যবসায়ী। বগুড়ার ওমরপুর, বারোদুয়ারী, মির্জাপুরসহ বেশ কয়েকটি হাট-বাজার ঘুরে দেখা যায়, প্রতি মণ স্বর্ণা পাঁচ ৯৩০-৯৫০ টাকা, রণজিৎ ৯৭০-৯৮০ টাকা, পাজাম ১০৫০-১১০০ টাকা, কাটারিভোগ ১১৫০-১১৭০ টাকা, বিআর-৪৯ ১০০০-১০২০ টাকা দরে বেচাবিক্রি হচ্ছে। এদিকে স্বর্ণা পাঁচ জাতের প্রতি বস্তা চাল (সাড়ে ৯৩ কেজি) ৩৩৫০-৩৩৬০ টাকা, রণজিৎ ৩৫০০-৩৫৫০ টাকা, পাজাম ৩৭০০-৩৭৫০ টাকা, কাটারিভোগ ৪৩০০-৪৩৫০ টাকা, বিআর-৪৯ ৩৫৫০-৩৬০০ টাকা দরে বর্তমানে কেনাবেচা হচ্ছে বলে জানান এসব ব্যবসায়ী। জেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক মাইন উদ্দিন চালের দর বৃদ্ধির বিষয়টি স্বীকার করে বলেন, রোপা আমনের ধান প্রায় তিন মাস আগে উঠে গেছে। বোরো মৌসুমের ধান বাজারে আসতে আরও সময় লাগবে। এ কারণে প্রত্যেক বছরের মতো বাজারে ধানের সঙ্কট সৃষ্টি হয়েছে, যার প্রভাব পড়েছে চালের ওপর। এরপরও চালের দাম অস্বাভাবিক বাড়েনি। আগামী দিনে দাম আরও বাড়বে কি-না সে ব্যাপারে মন্তব্য করেননি এ কর্মকর্তা। জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের উপ-পরিচালকের কার্যালয়ের হর্টিকালচার সেন্টারের ডেপুটি ডিরেক্টর কৃষিবিদ আব্দুর রহিম জানান, চলতি মৌসুমে এ জেলায় প্রায় ১ লাখ ৯৫ হাজার হেক্টর জমিতে বিভিন্ন জাতের ধান চাষ করা হয়েছে। আগামী মে মাসের মাঝামাঝি থেকে নতুন ধান কাটা-মাড়াই শুরু হবে। তবে পুরোদমে শুরু হতে জুন মাস নাগাদ অপেক্ষা করতে হবে বলেও জানান এ কৃষিবিদ।
×