ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

কড়াকড়িতে কমেছে মোবাইল ব্যাংকিং লেনদেন

প্রকাশিত: ০৩:২৮, ২৭ মার্চ ২০১৭

কড়াকড়িতে কমেছে মোবাইল  ব্যাংকিং লেনদেন

রহিম শেখ ॥ টাকা জমা ও উত্তোলনে কড়াকড়ি আরোপের ফলে কমেছে মোবাইল ব্যাংকিং লেনদেন। জানুয়ারির তুলনায় ফেব্রুয়ারি মাসে মোট লেনদেন কমেছে প্রায় সাড়ে ১১ শতাংশ। আর দৈনিক লেনদেন কমেছে প্রায় ৫ শতাংশ। তবে লেনদেন কমলেও এ সময়ে রেকর্ড পরিমাণ গ্রাহক বেড়েছে। শুধু ফেব্রুয়ারি মাসেই গ্রাহক বেড়েছে ৭৯ লাখেরও বেশি। যা আগের মাসের তুলনায় গ্রাহক বেড়েছে প্রায় ১৯ শতাংশ। যা একক মাস হিসেবে বাংলাদেশের ইতিহাসে সর্বোচ্চ। হঠাৎ কেন এত বেশি গ্রাহক এই নিয়ে চলতি বছরের ফেব্রুয়ারি শেষে এ সেবায় মোট গ্রাহক বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৪ কোটি ৯৮ লাখ ৫৪ হাজার। যা আগের মাস জানুয়ারি পর্যন্ত ছিল ৪ কোটি ১৯ লাখ ৩৩ হাজার। বাংলাদেশ ব্যাংকের হালনাগাদ প্রতিবেদনে এ তথ্য উঠে এসেছে। জানা গেছে, দ্রুততম সময়ে এক স্থান হতে অন্য স্থানে টাকা পাঠানোর অন্যতম জনপ্রিয় মাধ্যম মোবাইল ব্যাংকিং। বর্তমানে এ সেবা ব্যবহার করেই মানুষ তাদের পরিবার পরিজন ও নিকটাত্মীয়ের কাছে বেশি টাকা পাঠাচ্ছেন। তবে সম্প্রতি মোবাইল ব্যাংকিং সেবায় অপব্যবহার ঠেকাতে বেশকিছু নির্দেশনা দিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক। এতে হিসাব খেলা ও পরিচালনা এবং লেনদেনে আরও কড়াকড়ি আরোপ করা হয়েছে। এখন একজন ব্যক্তি যে কোন মোবাইল ব্যাংকিং সেবায় একটি মাত্র হিসাব চালু রাখতে পারবেন। যাদের একাধিক হিসাব চলমান রয়েছে, তা দ্রুত বন্ধ করার নির্দেশনা দেয়া হয়। একইসঙ্গে মোবাইল ব্যাংকিং ব্যবস্থায় দৈনিক ও মাসিক লেনদেনের সীমা কমিয়ে নির্ধারণ করা হয়েছে। বর্তমানে একজন মোবাইল ব্যাংকিংয়ের গ্রাহক একবারে সর্বোচ্চ ১০ হাজার টাকা উত্তোলন করতে পারবেন। পূর্বে এই হার ছিল ২৫ হাজার টাকা। এখন থেকে গ্রাহক দৈনিক দুই বার এবং মাসে ১০ বার এই সেবা নিতে পারবেন, যা আগে ছিল দৈনিক তিন বার এবং মাসে ১০ বার। একইসঙ্গে দৈনিক জমার সীমাও পরিবর্তন করা হয়েছে। এতে এখন থেকে দিনে সর্বোচ্চ দুই বারে ১৫ হাজার টাকা করে পাঠানো যাবে। যা মাসে সর্বমোট ২০ বারে এক লাখ টাকার বেশি হতে পারবে না। আগে দিনে পাঁচ বারে ২৫ হাজার টাকা এবং মাসে সর্বোচ্চ ২০ বারে দেড় লাখ টাকা করে জমা করা যেত। এছাড়া একটি মোবাইল ব্যাংকিং হিসাবে টাকা জমার ২৪ ঘণ্টার মধ্যে ঐ হিসাব থেকে সর্বোচ্চ পাঁচ হাজার টাকার বেশি নগদ উত্তোলন করা যাবে না। পাশাপাশি ৫০০০ টাকা বা এর অধিক লেনদেন করার ক্ষেত্রে জাতীয় পরিপত্র প্রদর্শনের বিধান করা হয়েছে। এমনকি রেজিস্ট্রারে গ্রাহকের স্বাক্ষর বা টিপসই সংরক্ষণের নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। কোন এজেন্ট এ ধরনের কার্যাদি যথাযথভাবে সম্পন্ন না করলে বা গাফিলতির প্রমাণ পাওয়া গেলে এজেন্টশিপ বাতিল করার নির্দেশ দিয়েছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, ঐ নির্দেশনার পর মোবাইল ব্যাংকিংয়ে টাকা পাঠানো ও উত্তোলনের ক্ষেত্রে কিছুটা ঝামেলায় পড়তে হচ্ছে গ্রাহকদের। অনেকেই এজেন্টকে পরিপত্র প্রদর্শনে অস্বীকৃতি জানাচ্ছে। আবার দৈনিক ও মাসিক লেনদেনের সীমা কমানোয় টাকা পাঠানো কমছে। এ বিষয়ে বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক ও মুখপাত্র শুভঙ্কর সাহা বলেন, মোবাইল ব্যাংকিং একটি সীমিত ব্যাংকিং সেবা। তবে এ সেবায় এখন ওভার দ্য কাউন্টার (ওটিসি) লেনদেন বেড়ে গেছে। যা নীতিমালা পরিপন্থী। কারণ ওটিসির আওতায় অনেকে মুক্তিপণ, জঙ্গী অর্থায়ন ও জোর করে টাকা আদায় করছে। এই অনিয়মের কারণে আমরা এই সেবায় লেনদেন সীমা সম্প্রতি সীমিত করেছি। বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রতিবেদনে দেখা যায়, ফেব্রুয়ারি মাসে মোবাইল ব্যাংকিংয়ে গ্রাহক বাড়লেও লেনলেন কমে গেছে। জানুয়ারি মাসে মোবাইল ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমে মোট লেনদেন হয়েছিল ২৫ হাজার ২০৫ কোটি ৯০ লাখ টাকা। ফলে ঐ মাসে দৈনিক গড় লেনদেনের পরিমাণ ছিল ৮২০ কোটি ২০ লাখ টাকা। সেখানে ফেব্রুয়ারিতে এ সেবায় মোট লেনদেন হয়েছে ২২ হাজার ৩২৭ কোটি টাকা। এতে দৈনিক লেনদেন কমে দাঁড়ায় প্রায় ৭৯৭ কোটি টাকা। এ সময়ে ক্যাশ ইন, ক্যাশ আউট, ব্যক্তি থেকে ব্যক্তি পর্যায়ে অর্থ পাঠানো, বেতনÑভাতা পরিশোধ ও রেমিটেন্সের অর্থ প্রেরণ সবই কমেছে। তবে ইউটিলিটি বিল পরিশোধ আগের মাসের চেয়ে ৪ শতাংশ বেড়েছে। তবে নতুন নির্দেশনার আলোকে মোবাইল সেবা প্রদানকারী প্রতিষ্ঠানগুলো তাদের তথ্য হালনাগাদ করায় সক্রিয় একাউন্টের সংখ্যা বাড়ছে উল্লেখযোগ্যহারে। নিয়মানুযায়ী, কোন এ্যাকাউন্ট থেকে টানা তিন মাস কোন ধরনের লেনদেন না হলে তা ইন-এ্যাকটিভ বা নিষ্ক্রিয় এ্যাকাউন্ট হিসেবে বিবেচিত হয়। আর তিন মাসের মধ্যে একটি লেনদেন হলেও তা সক্রিয় হিসেবে বিবেচিত। অবশ্য বড় কোন অনিয়ম না পাওয়া গেলে এ্যাকাউন্ট বন্ধ করে না ব্যাংক। প্রতিবেদন অনুযায়ী, ফেব্রুয়ারি শেষে মোবাইল ব্যাংকিংয়ের সক্রিয় এ্যাকাউন্টের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ২ কোটি ৩৯ লাখ। জানুয়ারি পর্যন্ত সক্রিয় এ্যাকাউন্টের সংখ্যা ছিল ১ কোটি ৬৫ লাখ। ফলে এক মাসে সক্রিয় এ্যাকাউন্ট বেড়েছে ৭৪ লাখ বা ৪৪ দশমিক ৮৫ শতাংশ। অন্যদিকে ফেব্রুয়ারি মাসে নিষ্ক্রিয় এ্যাকাউন্ট বেড়ে দাঁড়িয়েছে ২ কোটি ৫৯ লাখ ৫৪ হাজার। যা আগের মাস জানুয়ারি পর্যন্ত ছিল ২ কোটি ৫৪ লাখ ৩৩ হাজার। ব্যাংকগুলো সরাসরি মোবাইল ব্যাংকিং করতে পারে না বিধায় এ কার্যক্রমের জন্য এজেন্ট নিয়োগ করে। নির্ধারিত কিছু প্রক্রিয়া অনুসরণ করে এজেন্ট নিয়োগ দেয় ব্যাংকগুলো। নতুনভাবে কড়াকড়ি আরোপের পর আগের মাসের চেয়ে এজেন্ট সংখ্যাও কমেছে। প্রতিবেদন অনুযায়ী, ফেব্রুয়ারি শেষে ব্যাংকগুলোর মনোনীত এজেন্টের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৬ লাখ ৯৬ হাজার ৭২২ জন। জানুয়ারি পর্যন্ত এজেন্টর সংখ্যা ছিল ৭ লাখ ২৩ হাজার ১১২ জন। ফলে এক মাসে এজেন্ট কমেছে ৩ দশমিক ৬৫ শতাংশ। দেশে মোবাইল ব্যাংকিং কার্যক্রম প্রথম শুরু হয় ২০১০ সালের ৩১ মার্চ। এরপরের বছরে এ বিষয়ে একটি বিস্তারিত গাইডলাইন জারি করে বাংলাদেশ ব্যাংক। বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে দেশের ১৯টি ব্যাংক মোবাইল ব্যাংকিং করার অনুমোদন পেলেও ১৭টি ব্যাংক বর্তমানে মোবাইল ব্যাংকিং চালু করেছে। এর মধ্যে ব্র্যাক ব্যাংকের সহযোগী প্রতিষ্ঠান ‘বিকাশ’ এবং ডাচ্ বাংলা ব্যাংকের ‘রকেট’ মোবাইল ব্যাংকিং এ সেবায় এগিয়ে রয়েছে।
×