ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

ব্যবসায়ীদের কারসাজি!

প্রকাশিত: ০৩:১৮, ২৭ মার্চ ২০১৭

ব্যবসায়ীদের কারসাজি!

সপ্তাহের ব্যবধানে মোটা চালের দাম প্রতিকেজিতে বেড়েছে দুই টাকা। এর পাশাপাশি অস্থির হয়ে উঠেছে অন্যান্য নিত্যপণ্যের বাজার। এর পেছনে ব্যবসায়ীদের কারসাজি রয়েছে বলে মনে করেন ক্রেতারা। দাম বাড়ার জন্য ব্যবসায়ীরা একেক সময় একেক অজুহাত দিচ্ছেন। কখনও বলছেন, আকস্মিক মৌসুমী বৃষ্টিপাত, কখনওবা চৈত্র মাস, কখনও বলছেন চাহিদা বেশি, যোগান কম ইত্যাদি। কেউ কেউ বলছেন, ভারত থেকে চাল আমদানির ওপর শুল্কারোপ করায় ব্যবসায়ীরা চাল আনছেন না। ফলে চাপ পড়েছে দেশীয় চালে অথচ ধান-চাল উৎপাদনে স্বয়ংসম্পূর্ণ হওয়ার পর এমনটি হওয়ার কথা নয়। অন্যদিকে, বিশ্বে সবজি উৎপাদনে তৃতীয়, মাছ উৎপাদনে চতুর্থ এবং গবাদি পশু ও পোল্ট্রিতে উৎপাদন বাড়লেও, ক্রেতাকে এসব পণ্যই কিনতে হচ্ছে বাড়তি দামে। রমজান আসতে এখনও প্রায় দুই মাস অথচ এর মধ্যেই অস্থির হয়ে উঠেছে নিত্য ভোগ্যপণ্যের বাজার। ভোজ্যতেল, চিনি, লবণ, ছোলা, ডাল ও গুঁড়া দুধের দামের পারদ ক্রমশ উঠছে উপরে। আটার দাম আপাতত স্থিতিশীল থাকলেও চালের বাজারে অস্থিরতা। এর অনিবার্য প্রভাব পড়েছে শাক-সবজির বাজারেও। তবে সর্বাধিক উল্লম্ফন পরিলক্ষিত হচ্ছে গরু ও খাসির মাংসের দামে। জনগণের পক্ষ থেকে দাবি উঠেছে, প্রয়োজনে বিদেশ থেকে মাংস আমদানি করা হোক। মাংসের দামের অনিবার্য প্রভাব পড়েছে মাছ, ডিম ও দুধের বাজারেও অথচ বাস্তবতা হলো আন্তর্জাতিক বাজারে এমনকি প্রতিবেশী দেশেও ভোগ্যপণ্যের দাম বর্তমানে নিম্নমুখী। এ থেকে যা বোধগম্য তা হলো, রমজান ও ঈদকে সামনে রেখে প্রায় অবাধে সুযোগ নিচ্ছে ভোগ্যপণ্য আমদানিকারকসহ পাইকারি ও খুচরা ব্যবসায়ীরা। আর জনগণ বহুল উচ্চারিত এই সিন্ডিকেটের সামনে অনেকটা অসহায়, প্রায় জিম্মি হয়ে পড়েছে। কোন কারণ ছাড়াই ভোজ্যতেলের দাম বেড়েছে ৮ শতাংশÑ জাত ও মান ভেদে সব রকম ডালের দাম ২৮ শতাংশ এবং লবণের দাম ৪৮ শতাংশ। কোরবানির ঈদে চামড়া প্রক্রিয়াজাতকরণের জন্য বিপুল পরিমাণ লবণের চাহিদা থাকলেও, আকস্মিক লবণের দামের এই দ্বিগুণ মূল্যবৃদ্ধি মেনে নেয়া যায় না কিছুতেই। পরিস্থিতি সামাল দিতে সরকারকে দুই লাখ টন লবণ আমদানির অনুমতি দিতে হয়েছে। আন্তর্জাতিক বাজারে ভোজ্যতেল, ডাল, লবণ, গুঁড়া দুধ, চিনি ইত্যাদি ভোগ্যপণ্যের দাম কমা সত্ত্বেও দেশীয় বাজারে কেন অযৌক্তিকভাবে এসব পণ্যের দাম বাড়ছে, তার কারণ অনুসন্ধান করে দেখতে হবে সরকার তথা বাণিজ্য মন্ত্রণালয়, ট্যারিফ কমিশনসহ সংশ্লিষ্ট উর্ধতন কর্তৃপক্ষ ও নীতিনির্ধারকদের। গরম মসলার দামও মনিটরিং করা বাঞ্ছনীয়। দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধির নানা কারণের মধ্যে অন্যতম দুর্বল বাজার মনিটরিং, অসাধু আমদানিকারক, উৎপাদক, পরিবেশক, সরবরাহকারী, পাইকারি ও খুচরা ব্যবসায়ী, অকার্যকর টিসিবি সর্বোপরি ট্যারিফ কমিশন, বাণিজ্য মন্ত্রণালয় ও রাজস্ব বোর্ডের মধ্যে আদৌ কোন সমন্বয় না থাকা। যে কারণে ভোক্তা ও ক্রেতা স্বার্থ অধিকার এবং সংরক্ষণ বরাবরই উপেক্ষিত থেকে যাচ্ছে। সিন্ডিকেট তথা মুুষ্টিমেয় ব্যবসায়ী চক্রের বাজারে একচেটিয়া নিয়ন্ত্রণ ও মুনাফা লুটে নেয়ার কথা প্রায়ই উচ্চারিত হয়। ব্যবসাবাণিজ্যে লাভ-ক্ষতি-মুনাফা ইত্যাদি থাকবেই। তবে এ সবই হতে হবে নীতি-নৈতিকতা, সততা ও নিয়মকানুনের আওতায়, যে ক্ষেত্রে আমাদের ঘাটতি রয়েছে বহুলাংশে। সরকার তথা বাণিজ্য মন্ত্রণালয়কে এক্ষেত্রে কঠোর মনোভাব নিয়ে অগ্রসর হতে হবে বাজার মনিটরিং ও দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণে।
×