ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

সংস্কৃতি সংবাদ

নানা আয়োজনে কালরাতের শহীদদের স্মরণ

প্রকাশিত: ০৪:৩৯, ২৬ মার্চ ২০১৭

নানা আয়োজনে কালরাতের শহীদদের স্মরণ

স্টাফ রিপোর্টার ॥ একাত্তরের পঁচিশে মার্চ রাতের আঁধারে নিরস্ত্র বাঙালীর ওপর ঝাঁপিয়ে পড়ে সশস্ত্র পাকবাহিনী। অপারেশন সার্চ লাইটের নামে ঢাকার বুকে চালানো হয় নিষ্ঠুরতম হত্যাযজ্ঞ। জাতির জীবনে নেমে আসে কালরাত। শনিবার ছিল সেই বিভীষিকাময় দিন। প্রথমবারের মতো পালিত হলো জাতীয় গণহত্যা দিবস। এদিন কালরাত্রি স্মরণে রাজধানীতে নানা অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। প্রতিটি অনুষ্ঠানের স্বাধীনতা দিবসের আনন্দের সঙ্গে মিশে যায় বেদনার গল্পগাথা। আলোক প্রজ্বালন, পদযাত্রা, গান, কবিতা, আলোচনাসহ নানা আনুষ্ঠানিকতায় স্মরণ করা হয় কালরাতের শহীদদের। শহীদদের স্মরণে প্রাচ্যনাটের লাল যাত্রা ॥ ‘শহীদের তাজা রক্তে ভিজে রাঙা হলো পলাশ, শিমুল- হরেক রঙের ফুল। দীর্ঘ কালরাত্রির প্রাক্কালে আমাদের পূর্ব-প্রজন্মের লাল রক্তের পথ ধরেÑ স্বাধীন আমরা হেঁটে চলি ঐক্যের বন্ধনে’Ñ এমনই ভাবনা নিয়ে গত পাঁচ বছর ধরে পঁচিশে মার্চ লালযাত্রার আয়োজন করছে নাট্যদল প্রাচ্যনাট। এবারও হয়নি ব্যতিক্রম। ভয়াল কালরাত স্মরণে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের স্বোপার্জিত স্বাধীনতা চত্বর থেকে ফুলার রোড সংলগ্ন স্মৃতি চিরন্তন চত্বর পর্যন্ত চলে এ লাল যাত্রা। প্রাচ্যনাটের সবান্ধব এ যাত্রার পুরোটা সময়জুড়ে সকলের কণ্ঠে গীত হয় ‘ধনধান্য পুষ্পভরা আমাদের বসুন্ধরা’ শিরোনামের গানটি। সন্ধ্যায় স্মৃতি চিরন্তন চত্বরে প্রদীপ প্রজ্বালন করা হয়। এ আয়োজনের মূল ভাবনায় ছিলেন রাহুল আনন্দ। যাত্রা শুরুর আগে একটি ইম্প্রোভাইজেশন নাটক মঞ্চস্থ করে প্রাচ্যনাট। নাটকটিতে উঠে আসে ভয়াল ২৫ মার্চ রাতের বীভৎসতা। মধ্যরাতে ঢাকার পিলখানা, রাজারবাগ পুলিশ লাইন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এলাকায় পাকিস্তানী হানাদারদের হামলার ভয়াবহতা তুলে ধরে হয় নাটকটিতে। নাটকের শেষ দৃশ্যে মৃতদেহের ওপর ছিটিয়ে দেয়া হয় লাল গোলাপের পাপড়ি। নাটকটিতে ধারাভাষ্য দেন প্রাচ্যনাটের মুখ্য সম্পাদক কাজী তৌফিকুল ইসলাম ইমন। শহীদ মিনারে স্বাধীনতা উৎসব ॥ ‘লাখো শহীদের আত্মদানÑঅফুরন্ত শক্তির আধার’ প্রতিপাদ্যে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার ও ধানম-ির রবীন্দ্র সরোবর মঞ্চে চলছে সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোটের তিন দিনের স্বাধীনতা উৎসব। শনিবার উৎসবের দ্বিতীয় দিনে শহীদ মিনারে দলীয় সঙ্গীত পরিবেশন করেন বহ্নিশিখা, সত্যেন সেন শিল্পীগোষ্ঠী ও খেলাঘর। একক কণ্ঠে গান শোনান রথীন্দ্রনাথ রায়, ফকির আলমগীর, অলক দাশ গুপ্ত ও মহাদেব ঘোষ। দলীয় আবৃত্তি পরিবেশন করেন মুক্তধারা সংস্কৃতি চর্চা কেন্দ্র ও মুক্তধারা আবৃত্তি চর্চা কেন্দ্র। একক আবৃত্তি পরিবেশন করেন ডালিয়া আহমেদ ও মোঃ আহকাম উল্লাহ্্। শিশুতোষ পরিবেশনায় অংশ নেয় দনিয়া সবুজ কুঁড়ি কচি কাঁচার মেলা। দলীয় নৃত্য পরিবেশন করে কত্থক নৃত্য সম্প্রদায়। পথনাটক পরিবেশন করে ভিশন থিয়েটার। রবীন্দ্র সরোবর মঞ্চের আয়োজনে দলীয় সঙ্গীত পরিবেশন করে সংস্কৃতি সমাজ, গীতশতদল ও সমস্বর। একক সঙ্গীত পরিবেশন করেন ফাহিম হোসেন চৌধুরী, বিমান চন্দ্র বিশ্বাস ও সফিউল আলম রাজা। দলীয় আবৃত্তি পরিবেশন করেন কথা ও চারুকণ্ঠ। একক আবৃত্তি পরিবেশন করেন শিমুল মুস্তাফা ও ঝর্না সরকার। শিশুতোষ পরিবেশনা ছিল কল্পরেখা ও শুদ্ধসঙ্গীত ললিতকলা একাডেমি। দলীয় নৃত্য পরিবেশন করেন নান্দনিক নৃত্য সংগঠন ও অঙ্গীকাম। পথনাটক পরিবেশন করে অবয়ব ও গতি থিয়েটার। স্বাধীনতার প্রথম প্রহর উদ্্যাপন ॥ জাতীয় গণহত্যা দিবস ও স্বাধীনতার প্রথম প্রহরে রাজারবাগ পুলিশ লাইনে আয়োজন সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করে সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোট। শনিবার রাত ১০টা ৫০ মিনিট থেকে স্বাধীনতার প্রথম প্রহর পর্যন্ত চলে এ আয়োজন। পুলিশ লাইনের শহীদ স্মৃতিস্তম্ভে আয়োজিত এ অনুষ্ঠানে সহযোগিতায় ছিল ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ ও বাংলাদেশ পুলিশ এ্যাসোসিয়েশন। অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খাঁন। বক্তব্য রাখেন পুলিশের আইজিপি এ কে এম শহিদুল হক, ডিএমপি কমিশনার আছাদুজ্জামান মিয়া ও সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোটের সভাপতি গোলাম কুদ্দুছ। আয়োজনের শুরুতে আবৃত্তি প্রযোজনা নিয়ে আসে আবৃত্তি সংগঠন বাকশিল্পাঙ্গন। তারপর আরিফ রহমান পরিবেশন করেন ‘তোরা ঢাকা শহর রক্তে ভাসাইলি’ গানটি। ‘আমরা মানুষের গান গাই’ শিরোনামে দলীয় সঙ্গীত পরিবেশন করে ঋষিজ শিল্পীগোষ্ঠী। আবিদা রহমান সেতু পরিবেশন করেন ‘ভেবো না গো মা তোমার ছেলেরা’ শিরোনামে দেশাত্মবোধক গান। রফিকুল আলম আবৃত্তি করেন ‘দাউ দাউ পুড়ে যাচ্ছে’। স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্রের গান ‘দাম দিয়ে কিনেছি বাংলা’ পরিবেশন করেন ফকির আলমগীর। নির্মলেন্দু গুণের কবিতা পাঠ করেন আবৃত্তিশিল্পী আহকাম উল্লাহ। দলীয় সঙ্গীত পরিবেশন করে বহ্নিশিখা ও সত্যেন সেন শিল্পীগোষ্ঠী। স্মৃতিস্তম্ভে আলোক প্রজ্বালনের মধ্য দিয়ে শেষ হয় এ আয়োজন। শিল্পকলা একাডেমির আলোক প্রজ্বালন ॥ পঁচিশে মার্চ গণহত্যা দিবস উপলক্ষে বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমির আয়োজনে সকল জেলা ও উপজেলা শিল্পকলা একাডেমি এবং রায়েরবাজার বধ্যভূমিতে একযোগে সন্ধ্যা সাড়ে ছয়টায় আলোক প্রজ্বালন করা হয়। সন্ধ্যায় সেগুন বাগিচার শিল্পকল্প একাডেমির নন্দনমঞ্চে আলোচনা পর্ব অনুষ্ঠিত হয়। এতে একাডেমির মহাপরিচালক লিয়াকত আলী লাকীর সভাপতিত্বে প্রধান অতিথি ছিলেন অর্থ মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব হেদায়েতুল্লাহ আল মামুন। বিশেষ অতিথি ছিলেন সংস্কৃতি সচিব মোঃ ইব্রাহীম হোসেন খান। আলোচক হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গবর্নর ও অর্থনীতিবিদ অধ্যাপক ড. আতিউর রহমান এবং ওয়্যার ক্রাইমস ফ্যাক্টস এ্যান্ড ফাইন্ডিংস কমিটির সভাপতি ডাঃ এম এ হাসান। এই আয়োজনে আরও ছিল স্থাপনা শিল্প প্রদর্শনী, প্রামাণ্যচিত্র প্রদর্শনী, মূকাভিনয় ও দেশের বিশিষ্ট শিল্পীদের অংশগ্রহণে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান। মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘর ॥ প্রতিষ্ঠার ২১ বছর পূর্তি ও স্বাধীনতা দিবস উপলক্ষে সপ্তাহব্যাপী উৎসব চলছে মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘরে। শনিবার উৎসবের চতুর্থ দিনে গণহত্যা দিবস ও কালরাত স্মরণে সন্ধ্যায় প্রদীপ প্রজ্বালন করা হয় জাদুঘর চত্বরে। এর আগে শহীদ পরিবারের সদস্যদের পক্ষে অনুভূতি ব্যক্ত করেন কাজী শামস্ তাথৈ ও আবির সুর। দলীয় আবৃত্তি পরিবেশন করে স্বনন ও স্রোত আবৃত্তি সংসদ। সাংস্কৃৃতিক পরিবেশনায় অংশ নেয় হযরত শাহ্ আলী মডেল হাই স্কুল ও বধ্যভূমির সন্তানদল। প্রদর্শিত হয় প্রামাণ্যচিত্র ‘কবি মেহেরুন্নেসা’। এটি নির্মাণ করেছেন রিয়াজ মাহমুদ মিঠু। দলীয় সঙ্গীত পরিবেশন করে সঙ্গীতাঙ্গন মনিপুর। সবশেষে রঙ্গপীঠ মঞ্চস্থ করে পথনাটক ‘খেয়াপারের মাঝি’। এটি রচনা করেছেন সাজ্জাদ রিপনর ও নির্দেশনা দিয়েছেন গোলাম জিলানী। এদিন মিরপুর জল্লাদখানা বধ্যভূমি স্মতিপীঠে সাংস্কৃতিক পরিবেশনায় অংশ নেয় ওয়াইডব্লিউসিএ ফ্রি স্কুল, মূর্ছনা সঙ্গীত একাডেমি, বাফা, সঙ্গীত সমাজ কল্যাণপুর, গ্রিনফিল্ড সাংস্কৃতিক একাডেমি, সৌন্দর্য কালচারাল একাডেমি, মম কালচারাল একাডেমি, ঘুঙ্গুর সাংস্কৃতিক একাডেমি। নাটক পরিবেশন করে মিরপুর সাংস্কৃতিক ঐক্য ফোরাম। ‘পঁচিশে মার্চের কথা শোনো’ ॥ পঁচিশে মার্চ গণহত্যা দিবস পালন করেছে শিশু একাডেমি। এ উপলক্ষে একাডেমিতে চলমান বইমেলার মুক্তমঞ্চে বিকেলে ‘পঁচিশে মার্চের কথা শোনো’ শীর্ষক কথামালার আয়োজন করা হয়। বঙ্গবন্ধুর স্বাধীনতা ঘোষণা, মুক্তিযুদ্ধ এবং স্বাধীনতা অর্জনের ইতিহাস তুলে ধরে শিশুদের সঙ্গে কথোপকথনে মেতে উঠেন কবি নির্মলেন্দু গুণ। অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন মহিলা ও শিশু বিষয়ক মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি রেবেকা মমিন। এতে দেশের গান পরিবেশন করে বাংলাদেশ শিশু একাডেমির প্রশিক্ষণার্থীবৃন্দ এবং ওয়াইডব্লিউসিএ সঙ্গীত বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা। অনুষ্ঠানে শিশুদের জন্য প্রামাণ্যচিত্র প্রদর্শিত হয়। কালরাত্রি স্মরণে ইউডা ॥ নানা আয়োজনে বিভীষিকাময় সেই কালরাত্রির শহীদদের স্মরণ ও তাদের শ্রদ্ধা জানিয়েছে ইউনিভার্সিটি অব ডেভেলপমেন্ট অলটারনেটিভ (ইউডা)। গণহত্যা ও মুক্তিযুদ্ধের চেতনাভিত্তিক পথচিত্র অঙ্কন, শহীদদের আত্মার মাগফেরাত কামনায় দোয়া পাঠ, আলোর মিছিল, আলোচনাসভা, মুক্তিযুদ্ধভিত্তিক প্রামাণ্যচিত্র প্রদর্শন, গণসঙ্গীত ও কবিতা পাঠ ইত্যাদি দিয়ে সাজানো হয় কালরাত্রি স্মরণের এই আয়োজন। ২৫ মার্চ কালরাত্রির সূর্যাস্ত থেকে আজ রবিবার ২৬ মার্চ স্বাধীনতা দিবসের সূর্যোদয় পর্যন্ত শেরে বাংলা নগরের মানিক মিঞা এভিনিউতে অনুষ্ঠিত হয় এই আয়োজন। সর্বস্তরের শিল্পীদের অংশগ্রহণের এ অনুষ্ঠানের উদ্বোধন করেন বরেণ্য শিল্পী হাশেম খান। বাংলা একাডেমিতে একক বক্তৃতা ॥ মহান স্বাধীনতা ও গণহত্যা দিবস উপলক্ষে শনিবার বিকেলে বাংলা একাডেমির কবি শামসুর রাহমান সেমিনার কক্ষে একক বক্তৃতা ও আবৃত্তি অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। স্বাধীনতা ও গণহত্যা দিবস উপলক্ষে একক বক্তৃতা করেন প্রখ্যাত ইতিহাসবিদ অধ্যাপক মুনতাসীর মামুন। স্বাগত বক্তব্য দেন একাডেমির মহাপরিচালক অধ্যাপক শামসুজ্জামান খান। সভাপতিত্ব করেন সাবেক আইন, বিচার ও সংসদ বিষয়ক মন্ত্রী ব্যারিস্টার শফিক আহমেদ। অনুষ্ঠানের শুরুতে কালরাত্রিতে পাকিস্তানী হানাদার বাহিনীর নির্মম গণহত্যার শিকার অসংখ্য মানুষের স্মরণে দাঁড়িয়ে এক মিনিট নীরবতা পালন করা হয়। একক বক্তৃতায় অধ্যাপক মুনতাসীর মামুন বলেন, দীর্ঘদিন পর বাংলাদেশ আবার মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় প্রত্যাবর্তন করতে শুরু করেছে। আমরা দেরিতে হলেও গণহত্যার ইতিহাস বিস্মৃতির হাত থেকে উদ্ধারের প্রয়াসে পঁচিশে মার্চকে গণহত্যা দিবস ঘোষণা করেছি। এজন্য মহান জাতীয় সংসদ এবং বর্তমান সরকার যেমন ধন্যবাদপ্রাপ্য তেমনি এ বিষয়ে ধারাবাহিকভাবে আন্দোলনকারী শহীদজননী জাহানারা ইমামসহ সংশ্লিষ্ট সকলের প্রয়াসকে স্মরণে রাখতে হবে। তিনি বলেন, ১৯৭৫-এর পর বাংলাদেশের সাম্প্রদায়িক-মৌলবাদী-সামারিক শাসকবর্গও ক্রমশ এদেশকে গণহত্যাকারী পাকিস্তান রাষ্ট্রের আদর্শের অনুগামী করতে চেয়েছে। তাই জনমানস থেকে মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতি, গণহত্যার স্মৃতি ভুলিয়ে দিতে চেয়েছে। কিন্তু গণহত্যা বিষয়ে জনস্মৃতি কখনও বিস্মৃত হবার নয়; তাই আজ বিভিন্ন গবেষণায় প্রমাণিত হচ্ছেÑ একাত্তরে এদেশের অনেক দুর্গম জায়গায় হত্যাকা- চালানো হয়েছে, নারী নির্যাতন হয়েছে। একক বক্তা বলেন, সরকার যেমন গণহত্যা দিবসের আন্তর্জাতিক স্বীকৃতির চেষ্টা চালাচ্ছেন তেমনি নাগরিকদেরও সামষ্টিক কর্তব্য হচ্ছে গণহত্যার শিকার মানুষের স্মৃতিকে অম্লান রাখতে মুক্তিযুদ্ধের আদর্শে চার রাষ্ট্রীয় মূলনীতির ভিত্তিতে একটি সমতাভিত্তিক-অসাম্প্রদায়িক-আধুনিক বাংলাদেশ গঠনে নিজেদের ভূমিকা রাখা। অনুষ্ঠানে মুক্তিযুদ্ধের কবিতা আবৃত্তিতে অংশগ্রহণ করেন আবৃত্তিশিল্পী ডালিয়া আহমেদ এবং শিমুল মুস্তাফা। অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করেন বাংলা একাডেমির সহপরিচালক সায়েরা হাবীব। আজ রবিবার সকালেএকাডেমির পক্ষ থেকে জাতীয় স্মৃতিসৌধে পুষ্পস্তবক অর্পণ করে মহান মুক্তিযুদ্ধের বীর শহিদদের স্মৃতির প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন করা হবে। স্বাধীনতা দিবসের চবি জাদুঘরে চিত্র প্রদর্শনী ॥ স্টাফ রিপোর্টার, চট্টগ্রাম, জানান, শিল্পীর তুলির ছোঁয়ায় চিত্রকর্ম যেন অবিকল প্রকৃতির অবয়বে গড়া। শিল্পী প্রকৃতির ওপর নির্ভর করে তা ক্যানভাসে ফুটিয়ে তোলার চেষ্টা চালায়। এ চেষ্টা তখনই সফল হচ্ছে যখন তা গ্রহণযোগ্যতা পাচ্ছে প্রদর্শনীর মাধ্যমে দর্শনার্থীদের মন যুগিয়ে। তেমনিভাবে একজন কণ্ঠশিল্পীও তার সুরের ছোঁয়া আগতদের মাঝে বিলিয়ে দিয়ে আকর্ষণ কেড়ে নিতে পারলেই সার্থকতা চলে আসে। ভবিষ্যত প্রজন্মকে তাই পড়ালেখার পাশাপাশি প্রয়োজন সুপ্ত প্রতিভা বিকাশে প্রয়োজনীয় সহযোগিতা ও অনুপ্রেরণা। আজ ২৬ মার্চ জাতীয় স্বাধীনতা দিবস উপলক্ষে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের জাদুঘরে চট্টগ্রামের অভয়া আর্ট একাডেমির ৫ বছরের শিশু থেকে শুরু করে চল্লিশোর্ধ শিল্পী শিক্ষার্থীদের এক মিলনমেলা। একশত শিক্ষার্থীর নির্বাচিত চিত্রকর্মের ওপর চিত্র প্রদর্শনীর আয়োজন করা হয়েছে। চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য প্রফেসর ড. ইফতেখার উদ্দিন চৌধুরী এই চিত্র প্রদর্শনীর উদ্বোধন করবেন। বিশেষ অতিধি থাকবেন চবির কলা ও মানববিদ্যা বিভাগের ডিন প্রফেসর ড. মোহাম্মদ সেকান্দার চৌধুরী, বিশ্ববিদ্যালয়ের জাদুঘরের পরিচালক ড. ইমরান হোসেন ও বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর মোঃ আলী আসগর চৌধুরী। অভয়া আর্ট একাডেমির এ চিত্র প্রদর্শনীতে ১০০টি চিত্র স্থান পাচ্ছে। এসব চিত্রের মধ্যে রয়েছে পেস্টেল, কলেজ, টিস্যু ওয়ার্ক, ওয়াটার কালার, অয়েল কালার, গ্লাস পেইন্ট, লিনো, কাটপ্রিন্ট, কালার ইন গ্রেভিং, এক্রিলিক কালার, পেন্সিল স্কেচ। ৫ বছরের শিশু থেকে চল্লিশোর্ধ বয়সের শিক্ষার্থীরা এসব চিত্রাঙ্কন করে প্রদর্শনীতে স্থান নিয়েছে। অভয়া আর্ট একাডেমির প্রতিষ্ঠাতা পরিচালক ও চিত্রশিল্পী লায়ন রুবেল চক্রবর্তী এ প্রর্দশনী উপলক্ষে আয়োজিত উদ্বোধনী অনুষ্ঠানের সভাপতিত্ব করবেন। জাবিতে ‘মুক্তিসংগ্রাম নাট্য উৎসব’ শুরু ॥ জাবি সংবাদদাতা জানান, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র-শিক্ষক কেন্দ্রের আয়োজনে মহান স্বাধীনতা দিবসকে উপলক্ষ করে সপ্তাহব্যাপী ‘মুক্তিসংগ্রাম নাট্য উৎসব ২০১৭’ শুরু হয়েছে। শনিবার বীর মুক্তিযোদ্ধা তারামন বিবি (বীরপ্রতীক) এই নাট্যোৎসবের উদ্বোধন করেন। দেশবরেণ্যব্যক্তিদের অংশগ্রহণে এ নাট্যোৎসব এ যাবতকালে বিশ^বিদ্যালয় পর্যায়ে অনুষ্ঠিত সবচেয়ে বড় সাংস্কৃতিক মহোৎসব। এই উৎসবে নাটক মঞ্চায়নের পাশাপাশি অনুষ্ঠিত হবে আলোচনা সভা, গান, আবৃত্তি, আর্ট ক্যাম্প, মুক্তিযুদ্ধের স্মারক প্রদর্শনীসহ নানা সাংস্কৃতিক কর্মকা-। বিশ্ববিদ্যালয়ের সেলিম আল দীন মুক্তমঞ্চে ৩১ মার্চ পর্যন্ত এই উৎসব চলবে। শনিবার বিকেল সাড়ে পাঁচটায় বিশ^বিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় খেলার মাঠে সাত দিনব্যাপী এই বর্ণাঢ্য নাট্যোৎসবের উদ্বোধন করেন বীর মুক্তিযোদ্ধা তারামন বিবি (বীরপ্রতীক)। অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন ড. মহীউদ্দীন খান আলমগীর এম.পি। বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন ডাঃ দীপু মনি এম.পি, বিকন ফার্মাসিউটিক্যালসের ব্যবস্থাপনা পরিচালক এবাদুল করিম বুলবুল, সরকারী কর্মকমিশনের সদস্য অধ্যাপক ড. শরীফ এনামুল কবির, নাট্যব্যক্তিত্ব মামুনুর রশীদ। অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন জাবি উপাচার্য অধ্যাপক ফারজানা ইসলাম।
×