ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

সীমার পক্ষে মাঠে কেন্দ্রীয় যুবলীগ, সাক্কুর প্রচার থেকে বিরত সাবেক এমপি

প্রকাশিত: ০৪:৩৮, ২৬ মার্চ ২০১৭

সীমার পক্ষে মাঠে কেন্দ্রীয় যুবলীগ, সাক্কুর প্রচার থেকে বিরত সাবেক এমপি

নিজস্ব সংবাদদাতা, কুমিল্লা, ২৫ মার্চ ॥ কুমিল্লা সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে আওয়ামী লীগ মনোনীত মেয়র প্রার্থী আঞ্জুম সুলতানা সীমার পক্ষে শতাধিক গাড়ির বহর নিয়ে শনিবার কুমিল্লায় এসে নির্বাচনী মাঠে প্রচারে নেমেছেন যুবলীগের চেয়ারম্যান ওমর ফারুক চৌধুরীসহ যুবলীগের কেন্দ্রীয় নেতৃবৃন্দ। এদিকে বিএনপির কেন্দ্রীয় নেতা, সাবেক এমপি মনিরুল হক চৌধুরী সাংবাদিকদের নিকট ঘোষণা দিয়ে শনিবার বিকেল থেকে বিএনপির মনোনীত মেয়র প্রার্থী মনিরুল হক সাক্কুর নির্বাচনী প্রচারসহ সকল কার্যক্রম থেকে সরে দাঁড়িয়েছেন। বিকেলে তিনি নগরীর নোয়াগ্রামের নিজ বাড়িতে এ ঘোষণা দেন। পরে তিনি তার বিপুলসংখ্যক অনুসারী নিয়ে বৈঠক করেন। এতে নগরীর সদর দক্ষিণ উপজেলা এলাকায় ৬৫ হাজার ভোটারের মধ্যে বিএনপির ওই প্রার্থীর ভোটের মাঠে বিরূপ প্রভাব পড়তে পারে বলে ধারণা রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের। এদিকে নির্বাচনী প্রচারের শেষের দিকে বড় দুই দলের পক্ষে দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে আগত নেতা-কর্মী ও স্থানীয় কর্মী-সমর্থকদের প্রচার ও পদভারে মুখরিত কুমিল্লা মহানগরী। কুমিল্লা দক্ষিণ জেলার রাজনীতিতে বিএনপি মূলত ৩টি ধারায় বিভক্ত। এরমধ্যে একটি ধারার নেতৃত্বে মেয়র প্রার্থী মনিরুল হক সাক্কু, অপর ২টি ধারায় নেতৃত্বে আছেন যথাক্রমে হাজী আমিনুর রশীদ ইয়াছিন ও মনিরুল হক চৌধুরী। সিটি নির্বাচনকে কেন্দ্র করে শুক্রবার বিএনপি প্রার্থী মনিরুল হক সাক্কুর নির্বাচনী ইশতেহার ঘোষণার দিন এ ৩ নেতাও একই মঞ্চে ছিলেন। শনিবার বিকেল সাড়ে ৪টার দিকে মনিরুল হক চৌধুরী জানান, আমি জেলা বিএনপির কোন পদে বা নেতৃত্বে নেই। এরপরও দলের চেয়ারপার্সনের নির্দেশে আমি দলের প্রার্থীর পক্ষে মাঠে নেমে প্রচার শুরু করি। কিন্তু দলের প্রার্থী সাক্কু এ পর্যন্ত আমার সঙ্গে কোনরূপ যোগাযোগ করেনি, এমনকি কথাও বলেনি। এছাড়া তার কয়েক নেতা গত কয়েকদিন ধরে আমাকে নিয়ে বিরূপ মন্তব্য করছে। আমি ও আমার কর্মীরা মাঠে নামলে মনিরুল হক সাক্কুর ভোটের মাঠে ধস নামবে বলেও অপপ্রচার চালায়। বিষয়টি আমি দলের নির্বাচন পরিচালনা কমিটির নেতৃবৃন্দসহ হাইকমান্ডের অনেককে জানিয়েছি। আমি দলের প্রার্থীর মঙ্গল কামনা করি। তবে আমি ও আমার নেতা-কর্মীদের কারণে যদি তার (সাক্কু) ভোট কমে যায় সেজন্য আমি নিজের আত্মমর্যাদার কারণে সাক্কুর নির্বাচনী সকল কার্যক্রম থেকে সরে দাঁড়িয়েছি। রাতের মধ্যে ঢাকায় চলে যাব। পরে তিনি বিপুলসংখ্যক অনুসারী নিয়ে বাসভবনে এক বৈঠকে মিলিত হন। সাক্কুর নির্বাচনী কার্যক্রম থেকে সদর দক্ষিণ আসনের প্রভাবশালী এ নেতার সরে দাঁড়ানোর ঘোষণায় দলের নেতাকর্মী ও সমর্থকদের মধ্যে দারুণ তোলপাড় সৃষ্টি হয়েছে। এদিকে বিএনপি প্রার্থী মনিরুল হক সাক্কু শনিবার দিনভর নগরীর ঝাউতলা, খ্রিস্টানপাড়া, তালপুকুরপাড়, রেসকোর্সসহ বিভিন্ন এলাকায় গণসংযোগ করেন। এছাড়া এ প্রার্থীর পক্ষে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম খান, কেন্দ্রীয় নেতা সামছুজ্জামান দুদু, হাবিবুর রহমান হাবিব, ফজলুল হক মিলন, জয়নাল আবেদীন ফারুক, শহীদ উদ্দিন চৌধুরী এ্যানী, কুমিল্লা উত্তর জেলা বিএনপির সহ-সভাপতি মাজেদা আহসান মুন্সী, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ব্যারিস্টার রিজভীউল আহসান মুন্সীসহ ২০ দলের বেশ কয়েকজন নেতা নগরীর বিষ্ণুপুর, ভাটপাড়া, বাগিচাগাঁও, মুরাদপুর, ভূঁইয়া পুকুরপাড়, ঝিনাই পুকুরপাড়সহ বিভিন্ন স্থানে গণসংযোগ চালান। অপরদিকে শনিবার ঢাকা থেকে শতাধিক গাড়ির বহরসহ নেতাকর্মীদের নিয়ে কুমিল্লায় আসেন যুবলীগের চেয়ারম্যান ওমর ফারুক চৌধুরী। প্রথমে তিনি কুমিল্লা টাউনহল মিলনায়তনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী সীমার নির্বাচনী প্রচার উপলক্ষে আয়োজিত এক সমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তব্য রাখেন। কেন্দ্রীয় আওয়ামী যুবলীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য আতাউর রহমান আতার সভাপতিত্বে সমাবেশে প্রধান বক্তা ছিলেন যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক হারুনুর রশীদ। ওই সমাবেশে আওয়ামী লীগের প্রার্থী সীমাসহ যুবলীগের কেন্দ্রীয় ও স্থানীয় নেতৃন্দ বক্তব্য রাখেন। পরে যুবলীগের কেন্দ্রীয় নেতারা কয়েকটি টিমে বিভক্ত হয়ে নগরীর বিভিন্ন ওয়ার্ডে প্রার্থীর পক্ষে গণসংযোগ ও লিফলেট বিতরণ করেন। এদিকে আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য কাজী জাফর উল্লাহ, সাংগঠনিক সম্পাদক একেএম এনামুল হক শামিম, ত্রাণ ও পুনর্বাসন সম্পাদক সুজিত রায় নন্দী, রাজশাহী সিটির সাবেক মেয়র এএইচ এম খায়রুজ্জামন লিটন, ইঞ্জিনিয়ার আব্দুস সবুর, অপু উকিল, কুমিল্লা উত্তর জেলা আওয়ামী লীগের সভানেত্রী শিরিন সুলতানাসহ দলীয় নেতারা নগরীর তেলিকোনা, ঢুলিপাড়া, ধনাইতরী ও চৌয়ারা বাজার এলাকায় গণসংযোগ করেছেন। কুসিক নির্বাচনে কোন শৈথিল্য বরদাশত করা হবে না ॥ কুমিল্লা সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে কোন ধরনের শৈথিল্য বরদাশত করা হবে না। কেন্দ্রে প্রভাবশালী ব্যক্তি বলে কেউ নেই। ভোট কেন্দ্রে একমাত্র প্রভাবশালী ব্যক্তি হলেন প্রিসাইডিং অফিসার। অতীতে নির্বাচনী কর্মকা-ে গণতান্ত্রিক পরিবেশের কিছুটা ব্যত্যয় ঘটলেও কুমিল্লা সিটি নির্বাচনের মাধ্যমে আমরা পূর্ণ গণতান্ত্রিক চর্চা ফিরিয়ে আনতে চাই। আগামী ৫ বছর দেশে নির্বাচনগুলোতে যে গণতান্ত্রিক চর্চা হবে, সকলের সহায়তা নিয়ে কুমিল্লা সিটি নির্বাচন দিয়েই তা শুরু হবে। অনেকে কুমিল্লা সিটি নির্বাচনকে চ্যালেঞ্জিং হিসেবে মনে করলেও আমি তা মনে করি না। কারণ কুমিল্লা আমার পূর্ব পরিচিত, এখানকার মানুষ সম্পর্কে আমার জানা আছে। তারা সবসময় সব কাজে সহযোগিতা করার মানসিকতা লালন করে। এরপরও পূর্বের কর্মস্থল হিসেবে লোভ সামলাতে না পেরে কুমিল্লায় এসেছি। এ পর্যন্ত নির্বাচনী পরিবেশে কোন ধরনের বিঘœ ঘটেনি। শনিবার সকাল ১০টায় কুমিল্লা জেলা শিল্পকলা একাডেমি মিলনায়তনে জেলা আঞ্চলিক নির্বাচন কার্যালয় কর্তৃক আয়োজিত কুমিল্লা সিটি নির্বাচনে ভোটগ্রহণ কর্মকর্তাদের সঙ্গে মতবিনিময় সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে প্রধান নির্বাচন কমিশনার কেএম নূরুল হুদা এসব কথা বলেন। কুমিল্লা জেলা প্রশাসক মোঃ জাহাঙ্গীর আলমের সভাপতিত্বে মতবিনিময় সভায় বিশেষ অতিথির বক্তব্য রাখেন নির্বাচন কমিশনের সচিব মোহাম্মদ আবদুল্লাহ, অতিরিক্ত সচিব মোখলেছুর রহমান, বিজিবি কুমিল্লা সেক্টরের কমান্ডার কর্নেল গাজী মোঃ আহসানুজ্জামান, কুমিল্লা পুলিশ সুপার মোঃ শাহ আবিদ হোসেন, র‌্যাব-১১ এর অধিনায়ক মেজর মোস্তফা কায়জার, আনসার-ভিডিপি কুমিল্লার কমান্ডেন্ট শফিকুল আলম। সভায় নির্বাচনের বিভিন্ন দিক তুলে ধরে স্বাগত বক্তব্য রাখেন কুমিল্লার আঞ্চলিক নির্বাচন কর্মকর্তা ও রিটার্নিং কর্মকর্তা মোঃ রকিব উদ্দিন ম-ল। এ সময় নির্বাচনী এলাকার ১০৩টি কেন্দ্রে দায়িত্বপ্রাপ্ত প্রিসাইডিং অফিসার, সহকারী প্রিসাইডিং অফিসার, জেলা ও পুলিশ প্রশাসন, র‌্যাব, বিজিবি, আনসারসহ সরকারী বিভিন্ন সংস্থার কর্মকর্তা ও প্রতিনিধিগণ ছাড়াও বিভিন্ন প্রিণ্ট, ইলেকট্রনিক ও অনলাইন মিডিয়ার সাংবাদিকরা উপস্থিত ছিলেন। প্রধান নির্বাচন কমিশনার কেএম নূরুল হুদা আরও বলেন, এ সিটি নির্বাচনে ২ হাজার নির্বাচন কর্মকর্তা ছাড়াও পুলিশ-র‌্যাব-বিজিবি-আনসার বাহিনীর পর্যাপ্ত সদস্য থাকবে। তিনি আরও বলেন, আমরা নিরপেক্ষ নই। আমরা আইনের পক্ষে। তাই আমরা আইন এবং বিধির ক্ষেত্রে দুর্বল, এর বাইরে আমাদের কোন দুর্বলতা নেই। সাংবিধানিক দায়িত্বপালনে নির্বাচন সংশ্লিষ্ট সকলকে নিরপেক্ষ ভূমিকা রাখতে হবে। ভোটগ্রহণের সময় কর্মকর্তাদের যে কোন সমস্যায় পাশে থাকবে নির্বাচন কমিশন। এ নির্বাচনে জাতীয় এবং আন্তর্জাতিক পর্যবেক্ষক দল থাকবে। পর্যবেক্ষণের সময় নির্বাচনে দায়িত্বপ্রাপ্তরা আইনানুযায়ী পর্যবেক্ষকদের সহায়তা করবেন। প্রিসাইডিং অফিসারদের উদ্দেশে কঠোর নির্দেশনা দিয়ে তিনি বলেন, ভোটকেন্দ্রে প্রভাবশালী ব্যক্তি বলতে কেউ নেই, একমাত্র প্রভাবশালী ব্যক্তি হলেন প্রিসাইডিং অফিসার। কেন্দ্রে দলীয় পরিচয়ে কেউ প্রভাব খাটাতে চাইলে ছাড় দেবেন না। কোন অবস্থাতেই কাউকে বিশৃঙ্খলা করতে দেয়া হবে না। আমাদের কোন দল বা বর্ণ নেই। তাই এ নির্বাচনে কোন দলীয় পরিচয় বা প্রভাব খাটানোরও কোন সুযোগ নেই। তিনি আরও বলেন, প্রিসাইডিং অফিসারদের নিকট একটি মোবাইল ফোন নাম্বার দেয়া থাকবে। তারা যে কোন সমস্যা বা অবস্থান সম্পর্কে তাৎক্ষণিকভাবে এসএমএসের মাধ্যমে জানালে কয়েক মিনিটের মধ্যে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হবে। আর এটি সার্বক্ষণিক মনিটরিং করবেন নির্বাচন কমিশনের সচিব। পরে প্রধান নির্বাচন কমিশনার ভোটগ্রহণ কর্মকর্তাদের প্রশিক্ষণ কর্মশালার উদ্বোধন করেন।
×