ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

বাংলাদেশ ব্যাংক ভবনে আগুন কাকতালীয়, না পরিকল্পিত?

প্রকাশিত: ০৪:৩৮, ২৬ মার্চ ২০১৭

বাংলাদেশ ব্যাংক ভবনে আগুন কাকতালীয়, না পরিকল্পিত?

অর্থনৈতিক রিপোর্টার ॥ বৈদ্যুতিক চায়ের কেটলি শর্টসার্কিট হওয়ায় বাংলাদেশ ব্যাংক ভবনের ১৪ তলার কক্ষটিতে আগুন লেগেছে। প্রাথমিকভাবে এমনই ধারণা করছে ব্যাংক ভবনের অগ্নিকা-ে গঠিত ফায়ার সার্ভিসের পাঁচ সদস্যের তদন্ত কমিটি। শনিবার দুপুরে তদন্ত কমিটি দ্বিতীয়বারের মতো ঘটনাস্থল পরিদর্শন শেষে সাংবাদিকদের এ তথ্য জানান। অগ্নিকা-ে ওই ভবনের ১৪ তলায় অবস্থিত বৈদেশিক মুদ্রানীতি বিভাগের মহাব্যবস্থাপক এবং তার ব্যক্তিগত সহকারীর ব্যবহৃত দুটি কম্পিউটার, দুটি ইউপিএস, একটি ফটোকপিয়ার মেশিন, চেয়ার-টেবিলসহ কিছু আসবাব পুড়েছে। এ ছাড়া মহাব্যবস্থাপক মাসুদ বিশ্বাসের আয়করের কাগজপত্রসহ কিছু ব্যক্তিগত ফাইলপত্র পুড়ে গেছে। তবে গুরুত্বপূর্ণ কোন নথি পোড়েনি বলে জনকণ্ঠকে জানিয়েছেন তদন্ত কমিটি প্রধান ও বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক আহমেদ জামাল। এদিকে অগ্নিকা-ের এ ঘটনা কাকতালীয় না পরিকল্পিত, তা নিয়ে সর্বমহলে এখনও চলছে আলোচনা ও নানা গুঞ্জন। দেখা দিয়েছে নানা প্রশ্ন। গত বছর রিজার্ভের টাকা লুটের পরই গত সপ্তাহে ঘটে ভুয়া মেলে বার্তার ঘটনা। তারপর অগ্নিকা-। এসব ঘটনায় বাংলাদেশ ব্যাংকের নিরাপত্তা ব্যবস্থায় কোন গাফিলতি রয়েছে কি-না সে বিষয়ে গভীরভাবে উচ্চতর তদন্ত করা প্রয়োজন বলে মনে সংশ্লিষ্টরা। জানা গেছে, হ্যাকিংয়ের মাধ্যমে বাংলাদেশ ব্যাংকের রিজার্ভ চুরির ঘটনার এক বছর পার হতে না হতে গত সপ্তাহে বৈদেশিক মুদ্রানীতি বিভাগের একটি মেল থেকে ব্যাংকগুলোকে ভুয়া বার্তা পাঠানো হয়। সবশেষ গত বৃহস্পতিবার রাতে একই বিভাগে ঘটল অগ্নিকা-ের ঘটনা। আর্থিক খাতের নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ ব্যাংকে একের পর দুর্ঘটনা কাকতালীয় না পরিকল্পিত, তা নিয়ে সর্বমহলে আলোচনা ও গুঞ্জন শুরু হয়েছে। দেখা দিয়েছে নানা প্রশ্নের। এ বিষয়ে গত শুক্রবার অর্থ ও পরিকল্পনা প্রতিমন্ত্রী এমএ মান্নান তার বাসভবনে সাংবাদিকদের বলেন, রিজার্ভের টাকা লুটের পরই মেলে ভুয়া বার্তার ঘটনা। এর পরপরই একই বিভাগে আগুন লাগার ঘটনায় সাধারণ মানুষের মধ্যে নানা প্রশ্নের উদ্রেক হয়েছে। পরপর কেন এ ধরনের দুর্ঘটনা ঘটবে! বাংলাদেশ ব্যাংকে একের পর এক দুর্ঘটনায় সরকারের উচ্চ পর্যায়ের কর্তাব্যক্তিরা উদ্বিগ্ন। নিরাপত্তা ব্যবস্থায় কোনো গাফিলতি রয়েছে কি না সে বিষয়ে গভীরভাবে উচ্চতর তদন্ত হওয়া প্রয়োজন। কেন্দ্রীয় ব্যাংক ও ফায়ার সার্ভিসের তদন্ত প্রতিবেদন পাওয়া গেলে পরবর্তী সিদ্ধান্ত গ্রহণ করবে সরকার। আগুনের ভয়াবহতা খুব বেশি না হলেও তীর্যকপূর্ণ কথাবার্তা আসছে বিভিন্ন মহলে। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমগুলোতে বাংলাদেশ ব্যাংকের ১৪ তলা ভবনে রিজার্ভ চুরির নথিপত্র পুড়ে যাওয়ার কথা বলা হচ্ছে। এ বিষয়ে জানতে চাইলে বাংলাদেশ ব্যাংকের গঠিত তদন্ত কমিটির প্রধান কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক আহমেদ জামাল জনকণ্ঠকে বলেন, অগ্নিকা-ে ওই ভবনের ১৪ তলায় অবস্থিত বৈদেশিক মুদ্রানীতি বিভাগের মহাব্যবস্থাপক এবং তার ব্যক্তিগত সহকারীর ব্যবহৃত দুটি কম্পিউটার, দুটি ইউপিএস, একটি ফটোকপি মেশিন, চেয়ার-টেবিলসহ কিছু আসবাব পুড়েছে। এ ছাড়া মহাব্যবস্থাপক মাসুদ বিশ্বাসের আয়করের কাগজপত্রসহ ব্যক্তিগত কিছু ফাইলপত্র পুড়ে গেছে। তিনি জানান, চেম্বারে বাংলাদেশ ব্যাংকের কোনো গুরুত্বপূর্ণ কাগজপত্র ছিল না। যদিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভুল তথ্য প্রচার করা হচ্ছে বলে তিনি জানান। এদিকে শনিবার দুপুরে বাংলাদেশ ব্যাংকের ১৪ তলা ভবনের বৈদেশিক মুদ্রা নীতি বিভাগের পুড়ে যাওয়ার ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন ফায়ার সার্ভিসের উপ-পরিচালক (ঢাকা) সমরেন্দ্রনাথ বিশ্বাস। পরিদর্শন শেষে সাংবাদিকদের তিনি বলেন, বাংলাদেশ ব্যাংক ভবনের আগুনের ঘটনা খুবই সামান্য ঘটনা। শুধু শুধুই এটিকে অনেক বড় করে দেখানো হচ্ছে। চায়ের কেটলি থেকে শর্টসার্কিট হয়ে এই আগুন লেগে থাকতে পারে বলে প্রাথমিকভাবে ধারণা করছি। তিনি আরও বলেন, আগুনে তেমন কোনো ক্ষতিই হয়নি। একটি কম্পিউটার ছাড়া অন্যকিছু তেমন পোড়েনি। এমনকি কক্ষের চেয়ারে থাকা তোয়ালেও অক্ষত রয়েছে। কক্ষটিতে ধোঁয়া আটকে যাওয়ায় হঠাৎ করে অনেক ধোঁয়া হয়েছিল। আগুন তেমন বড় ছিলো না। পাঁচ দিনের আগেই তদন্ত কমিটি প্রতিবেদন জমা দিতে পারবে বলেও আশা প্রকাশ করেন ফায়ার সার্ভিসের এই উপ পরিচালক। ব্যাংক ভবনের আগুন নাশকতা কিনা, সাংবাদিকদের এমন প্রশ্নের জবাবে এ তদন্ত কমিটির প্রধান বলেন, আমরা ঘটনাস্থল ঘুরে দেখেছি। এরপর ব্যাংকের বিভিন্ন লোকজনের সঙ্গে কথা বলব। নাশকতার কোন প্রমাণ পাওয়া গেলে তদন্ত প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হবে। এর আগে দুপুরে বাংলাদেশ ব্যাংক ভবনের অগ্নিকা-ে গঠিত পাঁচ সদস্যের তদন্ত কমিটি দ্বিতীয়বারের মতো ঘটনাস্থলে যায়। ফায়ার সার্ভিসের উপ-পরিচালক (ঢাকা) সমরেন্দ্রনাথ বিশ্বাসের নেতৃত্বে তদন্ত কমিটি ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন। এর আগে বাংলাদেশ ব্যাংক ভবনের অগ্নিকা-ের ঘটনা তদন্তে ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে মতিঝিল থানা পুলিশ। শনিবার সকাল ১১টা ২০ মিনিটে মতিঝিল থানা পুলিশের দুই কর্মকর্তা ঘটনাস্থলে যান। এর আগে, শুক্রবার সকালে বাংলাদেশ ব্যাংক ভবনে আগুন লাগার ঘটনায় ব্যাংকের যুগ্ম পরিচালক নুরুল ইসলাম মতিঝিল থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করেন। মতিঝিল থানার উপ পরিদর্শক (এসআই) ইব্রাহিম জানান, বাংলাদেশ ব্যাংকে ভবনে আগুন লাগার ঘটনার জিডি নং-১৫৭৩। প্রসঙ্গত, গত বৃহস্পতিবার রাত সাড়ে ৯টার দিকে বাংলাদেশ ব্যাংক ভবনে আগুন লাগে। ফায়ার সার্ভিসের ১২টি ইউনিট কাজ করে রাত ১০টায় আগুন নিয়ন্ত্রণে আনে। আগুন পুরোপুরি নেভানো হয় রাত ১০টা ৩৪ মিনিটে। এ ঘটনা তদন্তে তিন ও পাঁচ সদস্যবিশিষ্ট দুটি কমিটিও করা হয়েছে।
×