ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ১৭ এপ্রিল ২০২৪, ৩ বৈশাখ ১৪৩১

সেঞ্চুরি হাঁকিয়ে তামিমের নতুন ইতিহাস

প্রকাশিত: ০৪:৩৩, ২৬ মার্চ ২০১৭

সেঞ্চুরি হাঁকিয়ে তামিমের নতুন ইতিহাস

স্পোর্টস রিপোর্টার ॥ একের পর এক নতুন রেকর্ডের জন্ম দিয়েই চলেছেন তামিম ইকবাল। এখন বিশ্ব ক্রিকেটের ইতিহাসে নিজের রেকর্ডকে সমৃদ্ধ করে চলেছেন। এবার প্রথম বাংলাদেশী হিসেবে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে ১০ হাজার রান করার কৃতিত্বও দেখালেন। বাংলাদেশের ক্রিকেটে নতুন এক দিগন্ত উন্মোচন করলেন। ডাম্বুলায় শ্রীলঙ্কার বিরুদ্ধে সিরিজের প্রথম ওয়ানডেতে নামার আগে এই অসামান্য কৃতিত্ব গড়তে তামিমের প্রয়োজন ছিল ১ রান, করলেন সেঞ্চুরি। ক্যারিয়ারের অষ্টম এবং বিদেশের মাটিতে তৃতীয়, শ্রীলঙ্কার বিরুদ্ধে দ্বিতীয় শতক। শেষ পর্যন্ত থামলেন ১৪২ বলে ১৫ চার ও ১ ছয়ে ১২৭ রানে। সব মিলিয়ে ক্যারিয়ার রান এখন তার ৫ হাজার ২৪৭। ওয়ানডে ক্রিকেটে রান করার দিক থেকে তিনি এর মাধ্যমে ছাড়িয়ে গেছেন ওয়েস্ট ইন্ডিজের কিংবদন্তি গর্ডন গ্রীনিজ, শ্রীলঙ্কার সাবেক তারকা রোশান মহানামা, ভারতের গৌতম গাম্ভীর, পাকিস্তানের মিসবাহ-উল-হক এবং বর্তমান সময়ে ভারতের ওপেনার রোহিত শর্মা ও ক্যারিবীয় মারলন স্যামুয়েলসকে। চতুর্থ উইকেটে সাকিব আল হাসানের সঙ্গে ১৪৪ রানের জুটি গড়েন যা দু’দেশের মোকাবেলায় এই উইকেটের সেরা জুটির রেকর্ড। বাঁহাতি ওপেনার তামিম বাংলাদেশের ক্রিকেট ইতিহাসে ইতোমধ্যেই সর্বকালের সেরা ব্যাটসম্যান হিসেবে স্বীকৃত হয়ে গেছেন। অনেক রেকর্ডেই তিনি বাংলাদেশের প্রথম ব্যাটসম্যান হিসেবে নাম লিখিয়েছেন। সব মিলিয়ে সর্বাধিক সেঞ্চুরি ও ফিফটি হাঁকানোর দিক থেকেও বাংলাদেশের সেরা ব্যাটসম্যান বাঁহাতি ওপেনার তামিম। তিন ফরমেটেই বাংলাদেশের পক্ষে সর্বাধিক রান সংগ্রাহক তিনি। সাম্প্রতিক সময়ে ব্যাট হাতে দুর্দান্ত সময় কাটছিল তার। কিন্তু গত অক্টোবর থেকে অবশ্য বড় কোন ইনিংস পায়নি বাংলাদেশ তার ব্যাট থেকে। গত বছর ১ অক্টোবর আফগানিস্তানের বিরুদ্ধে ঢাকার মিরপুর শেরেবাংলা জাতীয় স্টেডিয়ামে খেলেছিলেন ১১৮ রানের ইনিংস। এরপর ৬ ইনিংসে মাত্র একটি অর্ধশতক, ইনিংসগুলো ছিলÑ ১৭, ১৪, ৪৫, ৩৮, ১৬ ও ৫৯। তামিমের নামের সঙ্গে এই ইনিংসগুলো যেন ঠিক মিলছিল না। দেশের মাটিতে ৫টি শতক হাঁকানো তামিম বিদেশের মাটিতে হাঁকাতে পেরেছিলেন মাত্র দুটি সেঞ্চুরি। আর শুধু পাকিস্তানের বিরুদ্ধেই ছিল দুটি সেঞ্চুরি। আর কোন দেশের বিরুদ্ধে দুটি শতক হাঁকাতে পারেননি ২৮ বছর বয়সী তামিম। কিন্তু ডাম্বুলায় সিরিজের প্রথম ওয়ানডেতে শনিবার তার দিকে তাকিয়ে ছিল পুরো বাংলাদেশ। তামিমও মুখিয়ে ছিলেন দারুণ কিছু করার জন্য। কারণ, ১ রান দূরে ছিলেন একটি রেকর্ড গড়ার ক্ষেত্রে। শুরুতেই সেই রানটি পেয়ে যান এবং প্রথম বাংলাদেশী হিসেবে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে তিন ফরমেট মিলিয়ে ১০ হাজার রান পূর্ণ করেন। তার অনেক নিচে থাকা সাকিব ২৭৩ ম্যাচে করেছেন ৯৩৬০ রান। শুরুতেই ওপেনিং সঙ্গী সৌম্য সরকারকে হারিয়েছিলেন তামিম। কিন্তু দ্বিতীয় উইকেটে ৯০ রানের দারুণ এক জুটি গড়ে দলকে একটি মজবুত ভিত গড়ে দেন। মুশফিকুর রহীম দ্রুত বিদায় নিলে অবশ্য কিছুটা বেকায়দায় পড়ে দল। কিন্তু বন্ধু সাকিবের সঙ্গে চতুর্থ উইকেটে একেবারে জমাট বেঁধে উইকেটে থেকে রানের গতিটা সচল রাখেন। শেষ পর্যন্ত এই জুটিতে ওঠে ১৪৪ রান। বাংলাদেশ-শ্রীলঙ্কার ওয়ানডে সিরিজে এর আগে চতুর্থ উইকেটে ১৩৯ রানের জুটিই ছিল সেরা, সেটি ছিল শ্রীলঙ্কার পক্ষে। এবার নতুন রেকর্ড গড়লেন তামিম-সাকিব। সাকিব বিদায় নেয়ার আগেই সেঞ্চুরি পেয়ে গেছেন তামিম। ক্যারিয়ারের অষ্টম, বিদেশের মাটিতে তৃতীয় এবং শ্রীলঙ্কার বিরুদ্ধে দ্বিতীয় সেঞ্চুরি হাঁকালেন তিনি। এর আগে পাকিস্তানের বিরুদ্ধে দুটি শতক হাঁকাতে পেরেছিলেন, দ্বিতীয় কোন দেশের বিরুদ্ধে দুটি শতকের মালিক হলেনÑ তামিম। আরেকটি বিস্ময়কর ব্যাপার হচ্ছে, শ্রীলঙ্কার বিরুদ্ধে হাঁকানো দুটি শতকই তিনি তাদের মাটিতেই হাঁকালেন। শেষ পর্যন্ত তামিম থেমেছেন ১২৭ রানে গিয়ে। বাংলাদেশ দলকে বড় একটি সংগ্রহে তুলে দিয়ে বিদায় নেন তামিম। এর ফলে ১৬৩ ম্যাচের ওয়ানডে ক্যারিয়ারে তার রান দাঁড়াল ৫২৪৭। এর মাধ্যমে তিনি পেছনে ফেলেছেন গাম্ভীর (১৪৭ ম্যাচে ৫২৩৮), জিম্বাবুইয়ের এ্যালিস্টার ক্যাম্পবেল (১৮৮ ম্যাচে ৫১৮৫), স্যামুয়েলস (১৮৭ ম্যাচে ৫১৮০), মহানামা (২১৩ ম্যাচে ৫১৬২), গ্রীনিজ (১২৮ ম্যাচে ৫১৩৪), রোহিম (১৫৩ ম্যাচে ৫১৩১) ও মিসবাহ (১৬২ ম্যাচে ৫১২২)। এ ম্যাচটির আগে তামিমের রান ছিল ৫১২০। সবমিলিয়ে তিন ফরমেটে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে তার রান এখন ১০ হাজার ১২৬। টেস্টে ৮, ওয়ানডেতে ৮ এবং টি২০ ম্যাচে ১ সেঞ্চুরির মালিক তিনি। সবমিলিয়ে ১৭ সেঞ্চুরি তার ব্যাট থেকে এসেছে বাংলাদেশ দলের জন্য। বিশ্বের অন্যতম সেরাদের কাতারেও পৌঁছে যাচ্ছেন দিনের পর দিন।
×