ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ২৩ এপ্রিল ২০২৪, ১০ বৈশাখ ১৪৩১

পাউবোর গাফিলতি

শাল্লায় ৪ ফসল রক্ষা বাঁধের কাজ হয়নি

প্রকাশিত: ০৪:০৪, ২৬ মার্চ ২০১৭

শাল্লায় ৪ ফসল রক্ষা বাঁধের কাজ হয়নি

নিজস্ব সংবাদদাতা, সুনামগঞ্জ ২৫ মার্চ ॥ শাল্লা উপজেলায় পানি উন্নয়ন বোর্ডের আওতায় ৪টি ফসল রক্ষার বাঁধের কাজ এখনও শুরু হয়নি। এ নিয়ে স্থানীয় কৃষকরা আতঙ্কিত রয়েছে। উপজেলার ছাঁয়ার হাওড়সহ কিশোরগঞ্জ ও নেত্রকোনার হাওড়গুলোও এই বাঁধের ওপর নির্ভরশীল। এই বাঁধ দিয়ে হাওড়ে পানি প্রবেশ করলে ৩টি জেলার হাওড়গুলো তলিয়ে যায়। এমন ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায় থাকার পরও স্থানীয় ঠিকাদাররা এখন পর্যন্ত বাঁধের কাজ শুরু করেনি। পানি উন্নয়ন বোর্ডের এসও, প্রকল্প বাস্তবায়ন কমিটি (পিআইসি) ও ঠিকাদাররা নিজেদের ভাগা ভাগি নিয়ে ব্যস্ত রয়েছে একদিকে। আর অন্যদিকে বিরূপ আবহাওয়ার কারণে ফসলহানির আশঙ্কায় প্রহর গুনছেন বোরো চাষীরা। সরেজমিন হাওড় এলাকার কৃষকদের সঙ্গে আলাপ করে জানা যায়, উপজেলার শাল্লা ইউনিয়নের শ্রীহাইল গ্রামের জোয়ারিয়ার ৮শ’ মিটার বাঁধের কাজ শুরু করেনি সংশ্লিষ্ট ঠিকাদার। গতবছরও ঠিকাদারের এমন গাফিলতির জন্য জোয়ারিয়া বাঁধ ভেঙ্গে হাওড়ের ফসল তলিয়ে গেছে। এদিকে ঘুঙ্গিয়ারগাঁও বাজার ব্রিজ হতে মুক্তারপুর গ্রামের ব্রিজ পর্যন্ত আড়াই কিলোমিটার বাঁধের কাজও শুরু হয়নি। ৩নং বাহাড়া ইউনিয়নের হরিনগর গ্রামের ১শ’ ৬০ মিটার ও মনুয়া গ্রামের ১ কি মি বাঁধের কাজ নিয়েও চলছে ঠিকাদারদের নানা নাটকীয়তা। উপজেলার হাওড়গুলোর জন্য এই বাঁধগুলো অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ। উপজেলার আনন্দপুর গ্রামের কৃষক মিহির রায় বলেন, এই হাওড়ের ফসলের ওপর নির্ভর করে আমাদের সারাবছরের আহারসহ যাবতীয় খরচাদি। ইট পথরের শহরে যারা বসবাস করেন ঘুষ বাণিজ্য নিয়ে ব্যস্ত থাকেন, তারা হাওড়বাসীর কান্না বুঝবে কিভাবে। কৃষকের নোনা জলে তারা জনগণের টাকা লুটেপুটে খেয়ে চলছে। গত ২৩ মার্চ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা কার্যালয়ে এক জরুরী বৈঠকে নির্বাহী কর্মকর্তা মাসুম বিল্লাহ ঠিকাদারদের জামানত বাজেয়াপ্ত করার নির্দেশ দিয়েছেন পাউবোর কর্মকর্তাদের। তবে ঠিকাদার কর্তৃক এসব বাঁধের কাজে নিয়োজিত থাকা টিটু তালুকদার বলেন, নির্বাহী কর্মকর্তার কাছে এক সপ্তাহের সময় নিয়েছি। ৪০ ভাগ কাজ করবো বলে প্রতিশ্রুতি দিয়েছি। এখন পর্যন্ত পাঁচ ভাগ কাজ হয়েছে। আর শ্রমিক না পাওয়ায় জোয়ারিয়া বাঁধের কাজ শুরু করতে পারিনি। অন্যদিকে উপজেলার পিআইসি কমিটির ৩৬টি বাঁধের কাজও শেষ হয়নি। কোথাও ৪০ ভাগ কোথাও ২০ ভাগ কাজ হয়েছে বলে জানা গেছে। উপজেলার আনন্দপুর গ্রামের মাদারিয়া কুঁড়ের খালের বাঁধেও ৩০ ভাগ কাজ হয়েছে। এই বাঁধে ১১ লাখ টাকা বরাদ্দ হলেও ৩ লাখ টাকার কাজ করেছে পিআইসির সভাপতি সুব্রত সরকার (ইউপি সদস্য)। এমনকি পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্দেশে বাঁধে সাইনবোর্ড স্থাপন করা হলেও এই সাইনবোর্ডে বরাদ্দের পরিমাণ উল্লেখ করা হয়নি। স্থানীয়দের দাবি, আরও অনেক তথ্য গোপন করা হয়েছে উল্লেখ করে এলাকাবাসী বললেন, বরাদ্দের পরিমাণ উল্লেখ করলে আমাদের কাছে তাদের পুকুরচুরির দৃশ্য ধরা পড়ে যাবে। এ বিষয়ে সুব্রত সরকার জানান, আমাদের বিল উত্তোলন করার পরই পানি উন্নয়ন বোর্ডকে ১৫% টাকা দিয়ে দিতে হয়। তাহলে আমরা কিভাবে সঠিক কাজ করতে পারব ? আমি দুই লাখ টাকায় ৩০ হাজার টাকা সঙ্গে সঙ্গে গুনে দিয়ে এসেছি। এ বাঁধের দায়িত্বে থাকা পানি উন্নয়ন বোর্ডের কর্মকর্তা ইব্রাহিম খলিল পিআইসির সভাপতির বক্তব্য ও ১৫% ভাগ নেয়ার বিষয় অস্বীকার করে বলেন, অফিসে আসেন কথা হবে। আমি মোবাইলে এ বিষয়ে কথা বলতে চাই না। নির্বাহী প্রকৌশলী আফসার উদ্দিন জানান, অভিযোগটি সত্য নয়। তবে আমার কোন অফিসার যদি এই ধরনের দুর্নীতির সঙ্গে জড়িত থাকে তাদের বিরুদ্ধে যথাযথ আইনানুগ ব্যবস্থা নেয়া হবে। বাঁধের কাজে বিলম্ব হওয়ার কারণ জানতে চাইলে তিনি জানান, আমরা আগাম বন্যার অপেক্ষায় নয় আশঙ্কায় থাকি। নিম্নমানের কাজ হচ্ছে এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, লোকবল সঙ্কটের কারণে মনিটরিং সঠিকভাবে করা সম্ভব হয়না অনেক ক্ষেত্রে বলে স্বীকার করেছেন তিনি।
×