ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

ভিক্ষা করে সংসার চলে মুক্তিযোদ্ধার স্ত্রীর

প্রকাশিত: ০৪:০২, ২৬ মার্চ ২০১৭

ভিক্ষা করে সংসার চলে মুক্তিযোদ্ধার স্ত্রীর

খোকন আহম্মেদ হীরা, বরিশাল ॥ স্বামীর মৃত্যুর পর সাত বছর ধরে ভিক্ষা করে সংসার চালাচ্ছেন রণাঙ্গণের বীর মুক্তিযোদ্ধা প্রয়াত আব্দুস ছত্তার সরদারের বৃদ্ধ স্ত্রী আবিসি বেগম। প্রতিবছর মার্চ মাস এলে আবিসি বেগম তার স্বামীর মুখের শোনা সেই ভয়াল দিনগুলোর কথা মনে করে আজও আঁতকে ওঠেন। অসহায় আবিসি বেগমের বসবাস জেলার গৌরনদী উপজেলার মাহিলাড়া ইউনিয়নের উত্তর বিল্বগ্রামে। তার দেয়া তথ্যানুযায়ী, ১৯৭১ সালের ২৫ মার্চ বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের স্বাধীনতার ঘোষণার পর পরই দেশমাতৃকার টানে ২৬ মার্চ ভোরে পরিবারের সবার অজান্তে বাড়ি থেকে বেরিয়ে পড়েন টগবগে যুবক ছত্তার সরদার। এলাকার মুক্তিযোদ্ধা সংগঠক সৈয়দ মনিরুল ইসলাম বুলেট ছিন্টুর পরামর্শে তিনি ভারতে প্রশিক্ষণ নিয়ে দেশে ফিরে পাক সেনাদের বিরুদ্ধে সম্মুখ যুদ্ধে অংশগ্রহণ করেন। উত্তর বিল্বগ্রামের মুক্তিযোদ্ধা ছত্তার সরদারের যুদ্ধদিনের সহযোদ্ধা মাহিলাড়া ইউনিয়ন মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার হাফিজ খান জানান, পাক সেনাদের বিরুদ্ধে একাধিক সম্মুখ যুদ্ধে ছত্তার সরদার বীরত্বের ভূমিকা পালন করেছেন। আবিসি বেগম জানান, ১৯৮৮ সালের বন্যায় তাদের ঘর পানিতে তলিয়ে যাওয়ায় অন্যান্য মূল্যবান কাগজপত্রের সঙ্গে স্বামীর মুক্তিযুদ্ধের সকল কাগজপত্র বিনষ্ট হয়ে যায়। ফলে তাদের ভাগ্যে নেমে আসে ঘোর অন্ধকার। ছত্তার সরদারের সহযোদ্ধাদের নাম মুক্তিযোদ্ধার তালিকায় অন্তর্ভুক্তি হলেও স্বাধীনতা যুদ্ধের দীর্ঘদিন পরেও তার নাম অন্তর্ভুক্ত হয়নি। এরই মধ্যে ২০১০ সালের ১৪ এপ্রিল তিন ছেলে ও চার কন্যা সন্তান রেখে ছত্তার সরদার মৃত্যুবরণ করেন। তার মৃত্যুর পর অভাবের সংসারে আবিসি বেগম ভিক্ষা করে ছেলে-মেয়েদের ভরণ পোষণের জোগান দেন। এরই মধ্যে গ্রামবাসীর সহায়তায় মেয়েদের পাত্রস্থ করেন। ছেলেরা সবাই বিয়ে করেছেন। বড় ছেলে ও অন্য ছেলেরা রিক্সা চালিয়ে এবং দিনমজুরের কাজ করে যা আয় করছে তা দিয়ে তাদের সংসারই চলে না। তাই বাধ্য হয়েই জীবিকার তাগিদে আবিসি বেগম ভিক্ষা করেন। সম্প্রতি মাহিলাড়া ইউনিয়নকে ভিক্ষুক মুক্ত করার পর দিশেহারা হয়ে পড়েন অসহায় আবিসি বেগম। পরবর্তীতে স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান সৈকত গুহ পিকলুর সহযোগিতায় এখন কোনমতে বেঁচে আছেন আবিসি বেগম। তিনি তার মৃত মুক্তিযোদ্ধা স্বামীর নাম তালিকাভুক্ত করার জন্য অনলাইনেও আবেদন করেছিলেন। উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার ও যুদ্ধাহত বীর মুক্তিযোদ্ধা সৈয়দ মনিরুল ইসলাম বুলেট ছিন্টু বলেন, আব্দুস ছত্তার সরদার প্রকৃত মুক্তিযোদ্ধা ছিলেন। তিনি আরও বলেন, বর্তমানে মুক্তিযোদ্ধা যাচাই-বাছাই প্রক্রিয়া বন্ধ থাকায় আমাদের কিছুই করার নেই।
×