ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

চট্টগ্রামে রাজনীতির হালচাল

তৃণমূলে নির্বাচনী প্রচার ॥ তৎপর আওয়ামী লীগ, বিএনপি অনিশ্চয়তায়

প্রকাশিত: ০৪:০২, ২৬ মার্চ ২০১৭

তৃণমূলে নির্বাচনী প্রচার ॥ তৎপর আওয়ামী লীগ, বিএনপি অনিশ্চয়তায়

হাসান নাসির, চট্টগ্রাম অফিস ॥ জেলায় জেলায় একের পর এক জনসভায় নৌকা প্রতীকে ভোট চাইছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তারই নির্দেশনায় নির্বাচনী ইশতেহার তৈরির কাজ শুরু করে দিয়েছে আওয়ামী লীগ। চলছে তৃণমূল পর্যায়ে প্রস্তুতি। অপরদিকে, নির্বাচন নিয়ে এখনও অনিশ্চয়তায় বিএনপি। তবে দলটির শীর্ষ নেতারা শেখ হাসিনার অধীনে নির্বাচনে না যাওয়ার কথা বললেও নির্বাচনকে সামনে রেখে স্থানীয় পর্যায়ে চলছে ঘর গোছানোর কাজ। বিএনপি এবং দলটির নেতৃত্বাধীন জোট আসুক বা না-ই আসুক, নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যেই যে নির্বাচন হবে তাতে সংশয় নেই। বিষয়টি গুরুত্বের সঙ্গে নিয়েই তৎপর আওয়ামী লীগ। চলছে প্রার্থিতা নিশ্চিত করার লক্ষ্যে নেতাদের উচ্চপর্যায়ে গ্রহণযোগ্যতা বাড়াবার চেষ্টার পাশাপাশি তৃণমূল ঠিক রাখার তোড়জোড়। দলের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরও তার সাংগঠনিক তৎপরতা বাড়িয়েছেন। বিভিন্ন জেলা সফরে গিয়ে নেতাকর্মীদের প্রস্তুত হবার জন্য বলে চলেছেন। সেই নির্বাচনে বিএনপি আসবে কিনা তা নিয়ে আওয়ামী লীগের আদৌ মাথাব্যথা রয়েছে কিনা তা স্পষ্ট নয়। তবে নেতারা যাই বলুন না কেন, একান্ত অনিবার্য বিবেচনায় শেষ পর্যন্ত যদি নির্বাচন করতেই হয় তাহলে যেন শক্ত প্রতিদ্বন্দ্বিতা গড়ে তোলা যায় সে লক্ষ্যে প্রস্তুতি নিয়ে রাখার নির্দেশনা রয়েছে বিএনপির হাইকমান্ড থেকেও। দলের অভ্যন্তরীণ বিভিন্ন সূত্রে এ তথ্য জানা যায়। বিশেষ করে চট্টগ্রামের বিএনপি নেতাদের ইঙ্গিত তা-ই বলছে। চট্টগ্রাম মহানগর বিএনপির সভাপতি ডাঃ শাহাদাত হোসেন জানান, এখনও পর্যন্ত দলীয় সিদ্ধান্ত হচ্ছেÑ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার অধীনে দল নির্বাচনে যাবে না। বিএনপি একটি নির্বাচন সহায়ক সরকার চায়, যে সরকারের অধীনে নির্বাচন কমিশন স্বাধীনভাবে কাজ করতে পারবে। তিনি বলেন, আমরা চাই এমন একটি নির্বাচনকালীন সরকার, যে সরকারের ওপর প্রধানমন্ত্রী প্রভাব খাটাতে পারবেন না। একটি শক্তিশালী নির্বাচন কমিশন ও সহায়ক সরকারের মাধ্যমে যথাযথ পরিবেশ সৃষ্টি করা হলেই বিএনপি নির্বাচনে যাবে। তবে বিএনপি নির্বাচনমুখী দল বিধায় ভোটের প্রস্তুতি সব সময়ই থাকে। আন্দোলন এবং নির্বাচন দুটোকেই সামনে রেখে প্রস্তুতি চলছে বলে জানান বিএনপির এই নেতা। অপরদিকে, আওয়ামী রাজনীতিতে উল্টো চিত্র। নির্বাচন নিয়ে কোনই সংশয় নেই। বিএনপি এলো কি না এলো, তা নিয়েও চিন্তা নেই। দলের সভাপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার জনসভাগুলোতে নির্বাচনী আমেজ। তিনি নৌকা প্রতীকে ভোট চাইছেন, আওয়ামী লীগকে পুনরায় নির্বাচিত করার আহ্বান জানাচ্ছেন। নির্বাচনকে সামনে রেখে চলমান উন্নয়ন প্রকল্পগুলোর কাজ দ্রুত শেষ করার তাগাদাও দিয়ে চলেছেন। নেতাকর্মীদের চাঙ্গা রাখতে প্রধানমন্ত্রী আগাম প্রচারণায় তৃণমূলে ফুরফুরে আমেজ। চট্টগ্রামের প্রায় প্রতিটি নির্বাচনী এলাকাতেই যোগাযোগ বাড়িয়েছেন বর্তমান এমপি ও মনোনয়ন প্রত্যাশী নেতারা। জাতীয় সংসদ নির্বাচনে চট্টগ্রামে মোট আসন ১৬টি। এর মধ্যে মহানগরীতে ৪টি এবং জেলায় ১২টি। বিগত জাতীয় সংসদ নির্বাচনে অংশগ্রহণ করেনি বিএনপি। চট্টগ্রামে এ ১৬ আসনের মধ্যে ১৩টিতেই আওয়ামী লীগের এমপি। আসন সমঝোতায় বাকি ৩টি আসনের ২টিতে জাতীয় পার্টি এবং ১টিতে তরিকত ফেডারেশন। আগামী জাতীয় নির্বাচনেও আসন সমঝোতা হবে কিনা তা নির্ভর করছে বিএনপির গতিবিধির ওপর। আওয়ামী লীগের বিভিন্ন সূত্রে জানা যায়, বিএনপি যদি আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে অংশগ্রহণ না করে তাহলে ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগ এককভাবেই লড়বে। আর যদি বিএনপির নেতৃত্বাধীন জোট নির্বাচনে আসে আওয়ামী লীগও জোটগতভাবে নির্বাচনে অংশ নেবে। তবে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার আগাম প্রচারণায় এ ধারণা বদ্ধমূল হয়েছে যে, নির্বাচনকে ঘিরে ক্ষমতাসীন দলটি একটি ছক কষে রেখেছে। বিএনপির কেন্দ্রীয় পর্যায়ের এক নেতা বলেন, বিএনপিসহ প্রতিদ্বন্দ্বি দলগুলোকে অপ্রস্তুত রেখে নির্বাচন সম্পন্ন করতে চায় আওয়ামী লীগ। প্রধানমন্ত্রীর আগাম ভোট চাওয়া সংবিধানের সুস্পষ্ট লঙ্ঘন। শুধু তাই নয়, ভোটের ফল যেন অনুকূলে রাখা যায় সে জন্য পছন্দমতো নির্বাচন কমিশন গঠন করেই ক্ষান্ত নয় আওয়ামী লীগ, তারা দলীয় সরকারের অধীনেই নির্বাচন করে ক্ষমতা ধরে রাখতে চায়। কিন্তু এ ধরনের নীলনক্সা দেশের মানুষ মেনে নেবে না। তবে বিএনপির এ নেতা এও বলেন যে, নির্বাচনের জন্য তাদের দল সব সময়ই প্রস্তুত থাকে। ডাঃ শাহাদাত দলের প্রস্তুতি প্রসঙ্গে বলেন, আন্দোলন এবং নির্বাচন দুটোকেই সামনে রেখে এগোচ্ছে বিএনপি। একটি নির্বাচন সহায়ক সরকারের দাবিতে কঠোর আন্দোলন গড়ে তোলা হবে। সাংগঠনিক প্রস্তুতি প্রসঙ্গে বলেন, চট্টগ্রামসহ সারাদেশেই মাঠ পর্যায়ের ইউনিটগুলোর সম্মেলন সম্পন্ন করা হচ্ছে। নতুন কমিটি গঠিত হবে শীঘ্রই। ভোটাররা সুষ্ঠু ও সুন্দর পরিবেশে নির্বাচনে ভোট দিতে পারলে বিএনপিই জয়লাভ করবে বলে জোর আশাবাদী এই নেতা। অপরদিকে, আওয়ামী লীগের প্রচারে এবার সবচেয়ে বেশি স্থান পাচ্ছে উন্নয়ন। দলের হাইকমান্ড থেকেও সরকারের উন্নয়ন কর্মকা-গুলোকে প্রচারের নির্দেশনা রয়েছে। দেশব্যাপী বিদ্যুত ও সড়ক যোগাযোগ ব্যবস্থাপনায় উন্নয়ন, শিক্ষা, স্বাস্থ্য, শিল্পজোন প্রতিষ্ঠাসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে উন্নয়নের যে মহাযজ্ঞ চলছে তা ঠিকভাবে প্রচারে আনা গেলে জনগণ বর্তমান সরকারকেই ক্ষমতায় বহাল রাখবে বলে আশাবাদ আওয়ামী লীগ নেতাদের।
×