ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪৩১

সাক্ষাতকারে অর্থ ও পরিকল্পনা প্রতিমন্ত্রী

কেন্দ্রীয় ব্যাংকে তিন ঘটনায় জনমনে নানা প্রশ্ন

প্রকাশিত: ০৩:৫৯, ২৬ মার্চ ২০১৭

কেন্দ্রীয় ব্যাংকে তিন ঘটনায় জনমনে নানা প্রশ্ন

অর্থনৈতিক রিপোর্টার ॥ বাংলাদেশ ব্যাংকে পরপর তিনটি অনাকাক্সিক্ষত ঘটনা জনমনে নানান প্রশ্নের জন্ম দিয়েছে বলে মনে করেন অর্থ ও পরিকল্পনা প্রতিমন্ত্রী এম এ মান্নান। প্রথমে রিজার্ভ চুরি, তারপর ই-মেইল হ্যাকড আর এবার অগ্নিকা-ের ঘটনাকে অনেকে কাকতাল বললেও তিনি তা মানতে রাজি নন। আলাপকালে অর্থ ও পরিকল্পনা প্রতিমন্ত্রী বলেন, ‘বাংলাদেশ ব্যাংক এমন কোন জায়গা নয় যে, চাইলেই সেখানে যখন-তখন প্রবেশ করা যায়। শুধু তাই নয়, এটি ব্যাংকিং খাতের প্রধান নিয়ামক। দেশের অন্যতম স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠান। এখানে পরপর এমন তিনটি অনাকাক্সিক্ষত ঘটনা ঘটার কথা নয়। ফলে মানুষের মনে প্রশ্ন ওঠা খুবই স্বাভাবিক যে, একই জায়গায় প্রথমে রিজার্ভ চুরি, তারপর ই-মেইল হ্যাকড, অতঃপর অগ্নিকা-ের ঘটনা ঘটে কী ভাবে? কাকতালীয় ঘটনারও তো একটা সীমা থাকে! সাধারণ মানুষের মতো আমার মনেও প্রশ্ন জেগেছে, এসব ঘটনার গভীরে কী আছে?’ গত সপ্তাহে বাংলাদেশ ব্যাংকের বৈদেশিক মুদ্রানীতি বিভাগের ই-মেইল হ্যাকড নিয়ে মন্ত্রণালয় কাজ শুরু করেছে। এর মধ্যে একই বিভাগে আগুনের ঘটনায় সাধারণ মানুষের মধ্যে এ নিয়ে প্রশ্ন ওঠা স্বাভাবিক মনে করছেন এম এ মান্নান। তিনি বলেন, ‘শুনলাম, যে বিভাগে আগুন লেগেছে, সেই বিভাগের একজন কর্মকর্তা মেইল সাইনআউট না করেই বাসায় চলে গিয়েছিলেন। সাইনআউট না করে চলে যাওয়া কোন অপরাধ না হয়ে থাকলে ধরে নিতে হবে প্রযুক্তির ব্যবহারে বাংলাদেশ ব্যাংকের কর্মকর্তারা অনেক পিছিয়ে।’ অর্থ ও পরিকল্পনা প্রতিমন্ত্রী উল্লেখ করেছেন, বাংলাদেশ ব্যাংক ভবনে আগুনের ঘটনায় সরকার উদ্বিগ্ন। এ কারণে রিজার্ভ চুরির সঙ্গে অগ্নিকা-ের কোন যোগসূত্র আছে কিনা তা খুঁজে বের করতে চান তারা। এক্ষেত্রে সাংবাদিকদের অনুসন্ধানকেও গুরুত্ব দেবেন বলে ইঙ্গিত দিয়েছেন তিনি। এম এ মান্নানের প্রশ্নÑ ‘কেন্দ্রীয় ব্যাংকের মতো একটি প্রতিষ্ঠানে অগ্নিনির্বাপক ব্যবস্থা নেই কেন?’ তিনি মনে করেন, একটি স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠানে নিজস্ব নিরাপত্তা ব্যবস্থা না থাকাটা বড় দুর্বলতা। অগ্নিকা-ের ঘটনা সামাল দেয়ার জন্য নিজেদের ছোট পরিসরের হলেও একটি অগ্নিনির্বাপক ইউনিট থাকা উচিত। কিন্তু বাংলাদেশ ব্যাংক ভবনে তা নেই। মেইল হ্যাকিং, রিজার্ভ ও আগুনের ঘটনা বাংলাদেশ ব্যাংক কর্মকর্তাদের অদক্ষতা আর অসাবধানতার প্রমাণ দেয় বলে মনে করেন এম এ মান্নান। তিনি বলেন, ‘এসব ঘটনা কাকতালীয়, আমি অন্তত এটা মানতে পারি না। আশা করি, সরকার উচ্চপর্যায়ের একটি তদন্ত কমিটি গঠন করে প্রকৃত দোষীদের শাস্তির আওতায় আনবে। এই কমিটি ঘটনার গভীরে গিয়ে তথ্য উদ্ঘাটন করবে। এছাড়া বাংলাদেশ ব্যাংকের অভ্যন্তরীণ কমিটি ও ফায়ার সার্ভিসের তদন্ত কমিটিও আলাদাভাবে কাজ করছে।’ প্রসঙ্গত, বৃহস্পতিবার রাত সাড়ে ৯টার দিকে বাংলাদেশ ব্যাংক ভবনে আগুন ধরে। ফায়ার সার্ভিসের ১২টি ইউনিট কাজ করে রাত ১০টায় আগুন নিয়ন্ত্রণে আনে। পরে আগুন পুরোপুরি নেভানো হয় রাত ১০টা ৩৪ মিনিটে। এ ঘটনা তদন্তে দুটি কমিটি গঠন করা হয়। একটি তিন সদস্যের, অন্যটি পাঁচ সদস্যবিশিষ্ট। বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক আহমেদ জামালের নেতৃত্বে তিন সদস্যের তদন্ত কমিটিকে ২৮ মার্চের মধ্যে প্রতিবেদন জমা দিতে বলা হয়েছে। এছাড়া ফায়ার সার্ভিসের উপ-পরিচালকের (ঢাকা) নেতৃত্বে পাঁচ সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়। এই কমিটিকে পাঁচ কার্যদিবসের মধ্যে প্রতিবেদন জমা দিতে বলা হয়েছে। Ñসূত্র: বাংলা ট্রিবিউন
×