ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

স্বাধীনতার ঘোষণা ও একটি বিশ্লেষণ

প্রকাশিত: ০৩:৫২, ২৬ মার্চ ২০১৭

স্বাধীনতার ঘোষণা ও একটি বিশ্লেষণ

বঙ্গবন্ধু জাতির পিতা এবং ঘোষক। তিনি ৭ মার্চের ঐতিহাসিক ভাষণের ধারাবাহিকতায় ২৬ মার্চ বন্দী হওয়ার পূর্বে যে চূড়ান্ত ঘোষণা দেন তা প্রতিষ্ঠিত সত্য, দালিলিক তথ্য দ্বারা প্রমাণিত এবং সমগ্র বিশ্বে প্রচারিত। মুক্তিযুদ্ধের পরিচালনার জন্য প্রধানমন্ত্রী তাজউদ্দীন আহমেদের গঠিত মুজিব নগর সরকার ১০ এপ্রিল ১৯৭১ তারিখে সরকার গঠন এবং ১৭ এপ্রিল শপথ গ্রহণকালে ২৬/৩/৭১ থেকে কার্যকর যে আনুষ্ঠানিক ‘স্বাধীনতার ঘোষণা পত্র’ দলিলটি বিধিবদ্ধ করেন তাতে স্পষ্ট উল্লেখ রয়েছে, “................ ............. .......... ............... যেহেতু এইরূপ বিশ্বাস ঘাতক (পাকিস্তানের) আচরণের পরিপ্রেক্ষিতে বাংলাদেশের সাড়ে ৭ কোটি মানুষের অবিসংবাদিত নেতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বাংলাদেশের জনগণের আত্মনিয়ন্ত্রণের আইনানুগ অধিকার প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে ১৯৭১ সালের ২৬ মার্চ তারিখে ঢাকায় যথাযথভাবে স্বাধীনতা ঘোষণা করেন এবং বাংলাদেশের মর্যাদা ও অখ-তা রক্ষার জন্য বাংলাদেশের জনগণের প্রতি উদাত্ত আহ্বান জানান”.............. ............. ................. গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশের সংবিধানের চতুর্থ তফসিল অনুচ্ছেদ ১৫০ ক্রান্তিকালীন ও অস্থায়ী বিধানাবলী অংশের উপ-অনুচ্ছেদ ৩(১) সংবিধানের উৎস হিসেবে স্বীকৃত এবং সংবিধান প্রণেতা গণপরিষদ কর্তৃক অনুমোদিত যা পরবর্তীতে কেউ বর্জন বা পরিমার্জন করেননি। এর ফলে স্বাধীনতার ঘোষক বিষয়টি মীমাংসিত। বঙ্গবন্ধু ব্যতীত অন্য কাউকে স্বাধীনতার ঘোষক বলা অসাংবিধানিক এবং রাষ্ট্রদ্রোহ। কিন্তু এই অংশটি ৩১/১২/১৯৯৮ এবং ৩০/৫/২০০০ তারিখে সংশোধিত সংবিধানের পৃষ্ঠা ১৮২ অথবা ৯০তে সংবিধানের সঙ্গেই সংযুক্ত ছিল। কিন্তু বিগত জামায়াত-বিএনপি জোট সরকার সংবিধানের উক্ত পৃষ্ঠাটি বাদ দিয়ে পুনর্মুদ্রণ করে সংবিধানের অঙ্গচ্ছেদ ঘটিয়েছে। উল্লেখ করা প্রয়োজন যে, জামায়াত-বিএনপি জোট সরকারের আইনমন্ত্রী মওদুদ আহমেদ ১৯৮৩ সালে ইধহমষধফবংয ঊৎধ ড়ভ ঝযবরশয গঁলরনঁৎ জধযসধহ গ্রন্থে উক্ত ঘোষণাপত্রটি সংযোজনী হিসেবে মুদ্রিত রয়েছে। অথচ এ ধরনের জঘন্য অপরাধ ঐসব ‘শিক্ষিত’ ব্যক্তিরাই এই জনপথে গত চৌত্রিশ বছর ধরে চালিয়ে যাচ্ছে। এতদসত্ত্বেও জিয়াকে যারা স্বাধীনতার ঘোষক দাবি করেন তাদের অবগতির জন্য জিয়ার মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণে এবং বেতার কেন্দ্রে গমনের সঠিক ইতিহাস তুলে ধরা নাগরিক দায়বদ্ধতা। মেজর জিয়া ২৭ মার্চ বঙ্গবন্ধুর পক্ষে চট্টগ্রাম বেতার ভাষণ দেন কিন্তু পরবর্তীতে বিশেষ করে ১৯৯১ সালে বিএনপি নির্বাচনী ইশতেহারে তারিখটি ২৭-এর বদলে ২৬ দাবি করেন। এখনও তাই চলছে বরং জঘন্য মাত্রায়। ২৫-২৭ মার্চ মেজর জিয়া কোথায় কি করছিলেন? কখন, কিভাবে মুক্তিযুদ্ধের পক্ষে অবস্থান এবং বেতার কেন্দ্রে গমন, ইতিহাসের এই সব প্রাসঙ্গিক তথ্যসমূহ লিপিবদ্ধ রয়েছে জিয়া লিখিত দুটি প্রবন্ধে। ক. সেদিন চট্টগ্রামে যেমন করে স্বাধীনতার লড়াই শুরু হয়েছিল-দৈনিক বাংলা ২৫/২৬ মার্চ ১৯৭২ (স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্র: নবমখন্ড পৃঃ+৪০-৪৫)। খ. একটি জাতির জন্ম-সাপ্তাহিক বিচিত্রা ২২ মার্চ, ১৯৭৪। জিয়ার এসব প্রবন্ধে ‘বঙ্গবন্ধু আমাদের জাতির জনক’ এবং ‘৭ মার্চের ভাষণ গ্রীন সিগন্যাল’ বলে স্পষ্ট উল্লেখ রয়েছে। মেজর জিয়া ছাড়াও তার তৎকালীন সহকর্মী ঘটনার সঙ্গে সংশ্লিষ্ট লেঃ জেঃ মীর শওকত আলী বীর উত্তম, লেঃ শমশের মবিন চৌধুরী, ব্রিগেডিয়ার হারুন আহম্মদ চৌধুরী, মেজর এনাম, মেজর রফিক-উল-ইসলাম বীর উত্তম, মেঃ জেনারেল সুবিদ আলী ভূইয়া প্রমুখ ৮ জন সেনা কর্মকর্তার লিখিত বক্তব্য রয়েছে জেনারেল জিয়া কর্তৃক ১৯৭৭ সালে নিযুক্ত তথ্য মন্ত্রণালয়ের প্রকল্প দ্বারা সঙ্কলিত ‘বাংলাদেশের স্বাধীনতাযুদ্ধ দলিল (মোট ১৬) নবম খ-ের’ পৃঃ ৪০-১২৭ পৃষ্ঠায়। মেজর জিয়ার ইউনিট ছিল চট্টগ্রাম ক্যান্টনমেন্টের ৫ মাইল দূরে ষোলোশহর টিসিবি গুদাম, বর্তমানে শপিং কমপ্লেক্স। সংশ্লিষ্ট দলিলসমূহে বর্ণিত তথ্যাদিতে দেখা যায় যে, ২৫ তারিখ সন্ধ্যা থেকে বাঙালীরা বিশেষ করে আওয়ামী লীগ, ছাত্রলীগ পাক বাহিনীর বিরুদ্ধে চট্টগ্রামের সড়ক ও জনপথে ব্যারিকেড এবং সোয়াত জাহাজ থেকে অস্ত্র খালাসের যে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করেছিল তার বিরুদ্ধে মেজর ইউনিট এর অবস্থান ছিল। জিয়ার ভাষায় “২৫ মার্চ (৭১) রাত সাড়ে এগারোটায় সোয়াত জাহাজ থেকে অস্ত্র খালাসের জন্য ষোলোশহর ইউনিট থেকে বন্দরে রওনা হন। কিন্তু আগ্রাবাদে (প্রকৃত স্থান পাঠানপুটল ১১ তলা সাধারণ বীমা ভবন) রাস্তার ব্যারিকেড সরিয়ে যেতে তার দেরি হচ্ছিল। এক পর্যায়ে তার সৈনিকসহ ট্রাক থেমে পড়ে।’ আওয়ামী লীগ নেতা ডা. জাফর বঙ্গবন্ধু ঘোষিত স্বাধীনতা রক্ষার জন্য বাঙালী সৈনিকদের আহ্বান জানালে ডিউটি অফিসার ক্যাপ্টেন খালেকুজ্জামান তাকে আগ্রাবাদ থেকে ইউনিটে ফেরত আসতে বাধ্য করে। এরপর জিয়ার ভাষায় ‘শুরু হলো বিদ্রোহ। রাত তখন দুটো’ (২৬ মার্চ)। ইউনিটে এসে জিয়া কি করেন তা বিধৃত রয়েছে লে (অব.) শমশের মবিন চৌধুরীর (অবসরপ্রাপ্ত পররাষ্ট্র সচিব) ভাষায় (নবম দলিল খ- পৃঃ ৫৯)ঃ- ‘মেজর জিয়াউর রহমানের নির্দেশে সবাইকে এক জায়গায় একত্রিত করা হলো। মেজর জিয়াউর রহমান টেবিলের উপর উঠে বক্তৃতা করলেন। তিনি বললেন, ‘আজ থেকে আমি অষ্টম বেঙ্গলের কমান্ডিং অফিসার। আমি বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধে অংশগ্রহণের সংকল্প ঘোষণা করলাম। এবং আমার নির্দেশেই সব কিছু চলবে। আপনারা সবাই আমার সঙ্গে থাকবেন। এখন এখানে থাকা আমাদের জন্য নিরাপদ নয়। আমরা সবাই কালুরঘাটের দিকে যাব। যেখানে গিয়ে আমরা রি-অরগানাইজ করব।’ এরপর ‘নিরাপদ’ আশ্রয়ের সন্ধানে ইউনিটের জওয়ানরা শেষ রাতে রেললাইন দিয়ে পদব্রজে এবং মেজর জিয়া জীপে কালুরঘাট ব্রিজ পার হয়ে বোয়ালখালী থানার করইলডাংগা গ্রামে পাহাড়ের পাদদেশে আশ্রয় নেন ২৬ মার্চ ভোরে। শমশের মবিনের ভাষায় ‘আমরা বিশ্রাম নিলাম এবং রি-অরগানাইজ করলাম। ২৬ মার্চ এভাবে কেটে গেল।’ মেজর জিয়ার বেতার কেন্দ্রে গমন ও ভাষণ প্রদানের তথ্য রয়েছে জিয়াসহ উল্লিখিত সেনা কর্মকর্তাদের লেখায় এবং তারিখটি ২৭ মার্চ। কর্নেল ওয়ালী আহম্মদের এক গ্রন্থে (পৃঃ ৯৭) তারিখটি ২৭ মার্চ। বলা নিষ্প্রয়োজন সংশ্লিষ্ট স্থানটি ছিল পাক-বাহিনীর নিয়ন্ত্রণের বাইরে। কিভাবে বেতার কেন্দ্রে গেলেন তা এসব লেখায় অনুপস্থিত। ২৭ মার্চ সকালে বেতার কর্মী বেলাল মোহাম্মদ বেতার কেন্দ্রে পাহারার জন্য জিয়ার সন্ধানে যান এবং পটিয়া থানায় রোস্ট দিয়ে ব্রেকফাস্ট এবং স্বাধীন বাংলা বেতারের অনুষ্ঠান প্রভাবিত জিয়ার সাক্ষ্য পান। সেখান থেকে ৩টি লরিতে জওয়ান এবং ১টি জীপে জিয়াকে বেতার কেন্দ্রে নিয়ে আসেন বিকেল ৫টা নাগাদ (স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্র পৃঃ ৫৮-৫৯)। বেলাল মোহাম্মদের এই তথ্যের প্রতিবাদ কেউ করেননি। মেজর জিয়ার ভাষায়, (মুক্তিযুদ্ধে মুজিবনগর- শামসুল হুদা চৌধুরীর পৃষ্ঠা-৪৩)। ‘২৭শে মার্চ শহরের চারদিকে বিক্ষিপ্ত লড়াই চলছিল। সন্ধ্যা সাড়ে ছটায় রেডিও স্টেশনে এসেছিলাম। এক টুকরা কাগজ খুঁজছিলাম। হাতের কাছে একটি এক্সারসাইজ খাতা পাওয়া গেল। তার একটি পৃষ্ঠায় দ্রুত প্রথম স্বাধীনতা যুদ্ধের প্রথম ঘোষণার কথা লিখলাম। কিছুক্ষণের মধ্যে তার প্রচার করা হলো। ২৮ মার্চ সকাল থেকে পনেরো মিনিট পর পর ঘোষণাটি প্রচার করা হলো।’ স্বাধীনতার ঘোষক কে এই বিতর্কের পরিসমাপ্তি টানাই জিয়ার তৎকালীন বিশ্বস্ত সহচর পরবর্তীতে বিএনপি নেতা লেঃ জেঃ মীর শওকত আলীর ১৯৮১ সালে প্রদত্ত একটি সাক্ষাতকারের সংশ্লিষ্ট অংশের উদ্ধৃতির মাধ্যমে (বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধে দলিলপত্র: ৯ম খ- ১২০-২১ পৃঃ) ‘প্রঃ বাংলাদেশের স্বাধীনতা ঘোষণা বেতারে কখন প্রচারিত হয়েছে বলে আপনি বলতে চান? উঃ এটা একটি বিতর্কিত প্রশ্ন। বেতারে স্বাধীনতা ঘোষণা যেটা নিয়ে সব সময় বিতর্ক চলতে থাকে যে জেনারেল জিয়া করেছেন, না আওয়ামী লীগ থেকে করেছেন, আমার জানা মতে সবচাইতে প্রথম বোধহয় চট্টগ্রাম বেতার কেন্দ্র থেকে হান্নান ভাইর কণ্ঠই লোকে প্রথম শুনেছিলেন। এটা ২৬ মার্চ ’৭১ অপরাহ্ন দুটার দিকে হতে পারে। কিন্তু যেহেতু চট্টগ্রাম বেতার কেন্দ্রের প্রেরক যন্ত্র খুব কম শক্তিসম্পন্ন ছিল, সেহেতু পুরা দেশবাসী সে কণ্ঠ শুনতে পাননি। কাজেই যদি বলা হয়, প্রথম বেতারে কার বিদ্রোহী কণ্ঠে স্বাধীনতার কথা উচ্চারিত হয়েছিল, তাহলে আমি বলল যে চট্টগ্রামের হান্নান সেই বিদ্রোহী কণ্ঠ। তবে এটা সত্য যে, পরদিন অর্থাৎ ২৭ মার্চ, ’৭১ মেজর জিয়ার ঘোষণা প্রচারের পরই স্বাধীনতা যুদ্ধ গুরুত্বপূর্ণ মোড় নেয়।’ এ প্রসঙ্গে উল্লেখ্য যে, সংশ্লিষ্ট বেতার ঘোষণাস্থলে জেনারেল জিয়া কোন স্মৃতিস্তম্ভ না করে মেজর জিয়ার অষ্টম বেঙ্গল ইউনিটটি যেখানে ছিল সেখানে তিনি রাষ্ট্রক্ষমতা দখলের পরে একটি পার্ক তৈরি করেন। এর ফলকটি নিম্নরূপ : বিপ্লব উদ্যান এখানে বীর চট্টলার অধিবাসীবৃন্দ এবং ৮ম বেঙ্গল রেজিমেন্টের বাঙালী অফিসার, জুনিয়র কমিশনড অফিসার ও সৈনিকরা মেজর জিয়াউর রহমানের নেতৃত্বের নিরপরাধ বাঙালীদের ওপর পাকিস্তান সরকারের বর্বরোচিত হামলার বিরুদ্ধে ২৬ মার্চ ’৭১ তারিখে সশস্ত্র স্বাধীনতা সংগ্রামে অবতীর্ণ হন। গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশের মহামান্য রাষ্ট্রপতি লে. জে. জিয়াউর রহমান বি,ইউ, পিএসসি- ১৯শে এপ্রিল, ১৯৭৯ইং। জিয়া লিখে গেছেন তারিখটি ২৭, এখন তারা বলছেন ২৬ মার্চ। জিয়ার ভাষায় বঙ্গবন্ধু জাতির জনক, ওরা মানে না। মিথ্যাবাদী কে? কে আছে জিয়ার সেই ভাষণে যে তার বাজে না? তাহলে শোনা যাক জিয়ার কণ্ঠেঃ ঞযব মড়াঃ. ড়ভ ঃযব ঝড়াবৎবরমহ ংঃধঃব ড়ভ ইধহমষধফবংয, ড়হ নবযধষভ ড়ভ ড়ঁৎ মৎবধঃ ষবধফবৎ, ঃযব ংঁঢ়ৎবসব ঈড়সসধহফবৎ ড়ভ ইধহমষধফবংয, ঝশ. গঁলরনঁৎ জধযসধহ, বি যবৎবনু ঢ়ৎড়পষধরস ঃযব ওহফবঢ়বহফবহপব ড়ভ ইধহমষধফবংয................ উল্লিখিত প্রামাণ্য দলিল সাক্ষ্য দেয় জিয়ার বেতার ভাষণের ৩০ ঘণ্টা পূর্বে এম, এ, হান্নান বেতার ভাষণ দেন। এর পূর্বেই কুমিল্লায় ২৩ মার্চ ’৭১ তারিখ খালেদ মোশারফ এবং জয়দেবপুরে ১৯ মার্চ ’৭১ মেজর শফিউল্লাহ/মইনুল হোসেন চৌধুরী প্রতিরোধ যুদ্ধে বাঙালীর পক্ষে অবস্থান নেয়। ঢাকা/ চট্টগ্রাম ক্যান্টনমেন্ট পাকবাহিনীর রাত সাড়ে ১০টায় বাঙালীদের ওপর আক্রমণ শুরু করলেও ২৫ মার্চ রাত দুটা পর্যন্ত সোয়াত জাহাজ থেকে অস্ত্র খালাস এবং পাকসেনাদের বিরুদ্ধে সড়ক ও জনপথে বাঙালীর দেয়া ব্যারিকেড পরিষ্কার পাকবাহিনীর পক্ষে কর্তব্যরত ছিলেন। আগ্রাবাদে ব্যারিকেড না থাকলে জিয়া বন্দরে পৌঁছে যেতেন। রাত দুটা পর্যন্ত ষোলোশহরে এসে নিরাপদ আশ্রয়ে চলে যান। অথচ এই শহরে বিডিআর এ কর্মরত ক্যাপ্টেন রফিক মুক্তিযুদ্ধে অংশ নেন ২৫ মার্চ রাত ৯টা থেকে এবং শহরেই পাকবাহিনীর প্রতিরোধে ব্যস্ত ছিলেন। ২৭ তারিখ সন্ধ্যায় বেতার ভাষণের সময় তার ভাষায় শহরের চারদিকে বিক্ষিপ্ত লড়াই ‘প্রমাণ দেয় যে তার ঘোষণার পূর্বেই বাঙালীরা প্রতিরোধ (যেখানে তিনি ছিলেন না)। উল্লেখ্য, প্রশ্নের আদৌ নিষ্পত্তি হয়নি জিয়ার মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণ স্বতঃস্ফূর্ত ছিল না। তার প্রেক্ষাপটে বলা যায় যে, বঙ্গবন্ধু, তাজউদ্দীন থেকে শুরু করে আওয়ামী, ছাত্রলীগ এবং সকল সংসদ সদস্যদের সামরিক আদালতে একতরফা বিচার হয়েছিল কিন্তু জিয়ার কণ্ঠস্বর পাকবাহিনী শুনেছিল এবং একজন ডেজার্টার আর্মি হিসেবে তার কোর্ট মার্শাল হয়নি। অর্থাৎ পাকবাহিনী তাকে শত্রু মনে করেনি। আসলে ইতিহাসে আপোসের কোন সুযোগ নেই। সেক্টর কমান্ডার জিয়াকে বঙ্গবন্ধু তার প্রাপ্য পাওনা বীর উত্তম খেতাব দিয়েছেন। ম্যাডাম খালেদাকে তার স্বামীর কাছে ফিরিয়ে দিয়ে পিতার দায়িত্ব পালন করেছেন কিন্তু বঙ্গবন্ধুর প্রতি জিয়া-খালেদার আচরণের ‘পুরস্কার’ ইতিহাসের কাছে ছেড়ে দেয়া ভাল। লেখক : গবেষক
×