ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪৩১

স্বনির্ভর উন্নয়ন

প্রকাশিত: ০৩:৪৯, ২৬ মার্চ ২০১৭

স্বনির্ভর উন্নয়ন

উন্নয়ন পরিকল্পনা বাস্তবায়নের জন্য উন্নয়নশীল দেশসমূহ আন্তর্জাতিক দাতা প্রতিষ্ঠানের কাছ থেকে অর্থঋণ নিয়ে থাকে। ঋণদাতারা একগাদা শর্ত আরোপ করে। সেইসব শর্ত মেনেই বিভিন্ন দেশ ঋণ গ্রহণ করে থাকে। এতে কিছুটা অস্বস্তি ও অপ্রকাশিত গ্লানিও থাকতে পারে মাত্রাভেদে। তবে উপায়হীন থাকায় এটি ঘটে। এমনটাই চলে আসছে যুগ যুগ ধরে। বলাবাহুল্য ঋণদাতারা থাকে সুবিধাজনক অবস্থানে এবং পদে পদে তাদের অদৃশ্য ছড়ি ঘোরানোর শিকার হয় ঋণ গ্রহণকারী দেশ। পদ্মা সেতু নিয়ে বিশ্বব্যাংক কী অপবাদই না দিল বাংলাদেশকে। চারদলীয় জোট আমলে দেশ উপর্যুপরি কয়েকবার দুর্নীতিতে চ্যাম্পিয়ন হওয়ায় বিশ্বব্যাংকের মতো প্রতিষ্ঠান কি ধরে নিয়েছিল পদ্মা সেতুতে দুর্নীতির জাল বিস্তার ঘটবে? ফলে পদ্মা সেতুর ঋণ স্থগিত হয়ে যায়। কিন্তু বাংলাদেশ এ দফা মাথা উঁচু করে দাঁড়াল। অপবাদের প্রতিবাদ জানানোই শুধু নয়, নিজ দেশের অর্থায়নেই পদ্মা সেতুর কাজ শুরু করে দিয়ে অপবাদকারীদের একটা মস্ত শিক্ষা দিল বাংলাদেশ। এতে সন্দেহাতীতভাবে দেশের ভাবমূর্তি উজ্জ্বলতর হয়েছে। এরই মধ্যে কানাডার আদালত পদ্মা সেতু নিয়ে বিশ্বব্যাংকের কথিত দুর্নীতির অভিযোগটি যে বানোয়াট ছিল সে সত্যটি বিশ্বাবাসীকে জানিয়ে দিল। এই ঘটনা থেকে বাংলাদেশ বুঝল যে, নিজেদের উন্নয়ন করতে গেলে বাইরের বড় বাধা আসতে পারে। একই সঙ্গে পরনির্ভরশীল উন্নয়নের সংস্কৃতি থেকে বেরিয়ে এসে স্বনির্ভর উন্নয়ন মোটেই অসম্ভব কিছু নয়। এক্ষেত্রে সদিচ্ছা ও দৃঢ়তাই মূলমন্ত্র। বৃহস্পতিবার স্বাধীনতা পুরস্কার প্রদান অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা স্পষ্ট ভাষায় বিশ্বকে জানিয়ে দিয়েছেন যে বাংলাদেশ উন্নয়নের জন্য কারও ওপর নির্ভরশীল নয়। এদেশ একটি স্বাধীন-সার্বভৌম রাষ্ট্র হিসেবে কখনই কোন বিদেশী রাষ্ট্র বা দাতাগোষ্ঠীর কাছে মাথানত করবে না। তার এই বক্তব্য দেশবাসীর জন্য পরম গৌরবের। এই মনোভাব দৃঢ়তার সঙ্গে বজায় রেখে উন্নয়ন ধারা অব্যাহত রাখা হলে মধ্যম আয়ের দেশ হিসেবে বাংলাদেশের পরিচয় প্রতিষ্ঠা সুনিশ্চিত। শত সমস্যার ভেতরেও দেশ এগিয়ে চলেছে। বর্তমানে প্রবৃদ্ধি ৭ ভাগের ওপরে যা বিশ্বের অনেক নেতার কাছেই বিস্ময়কর। জনগণের কল্যাণে ও তাদের ভাগ্য পরিবর্তনে আন্তরিকতা নিয়ে সরকার কাজ করে যাচ্ছে বলেই দেশের এত উন্নয়ন সম্ভব হচ্ছে। দেশবাসী আশা করে স্বনির্ভর উন্নয়নের ধারা অব্যাহত থাকবে। এ জন্যে দেশের মানুষেরও করণীয় রয়েছে। সততা ও দেশপ্রেম নিয়ে নিজ নিজ ক্ষেত্রে আন্তরিক সক্রিয়তার সঙ্গে কাজ করে গেলে সার্বিক অর্থেই দেশ নিজের পায়ে দাঁড়াতে সক্ষম হবে।
×