ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

সংস্কৃতি সংবাদ

সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোটের স্বাধীনতা উৎসব

প্রকাশিত: ০৫:৩৯, ২৫ মার্চ ২০১৭

সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোটের স্বাধীনতা উৎসব

স্টাফ রিপোর্টার ॥ আয়োজনের সূচনালগ্নে পরিবেশিত হলো জাতীয় সঙ্গীতের সুরে। সবাই মিলে গাইল ‘আমার সোনার বাংলা, আমি তোমায় ভালোবাসি’। এরপর গীত হলো একাত্তরের প্রেরণাদায়ী গান ‘পূর্ব দিগন্তে সূর্য উঠেছে, রক্ত লাল রক্ত লাল’। স্বাধীনতার জন্য মুক্তিকামী বাঙালীর ত্যাগের কথা স্মরণ করে শুক্রবার থেকে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে শুরু হলো সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোটের স্বাধীনতা উৎসব। এবারের উৎসবের মূল প্রতিপাদ্য- ‘লাখো শহীদের আত্মদান, অফুরন্ত শক্তির আধার’। তিনদিনের এ আয়োজনে কবিতা-নাচ-গান-নাটকের ভাষায় শ্রদ্ধা জানানো হবে ত্রিশ লাখ শহীদ ও চার লাখ বীরাঙ্গনা মাকে। শহীদ মিনারের পাশাপাশি এ উৎসব চলবে ধানম-ির রবীন্দ্র সরোবর মঞ্চে। ছুটির দিনের বিকেলে বর্ণিল বেলুন উড়িয়ে স্বাধীনতা উৎসব উদ্বোধন করেন ২৫ মার্চ কালরাত্রির গণহত্যার শিকার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মধুর ক্যান্টিনের স্বত্বাধিকারী শহীদ মধুসূদন দত্তের মেয়ে প্রতিভা রানী দে দাশ। জোটের সভাপতি গোলাম কুদ্দুছের সভাপতিত্বে উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখেন জাতীয় কবিতা পরিষদের সভাপতি ড. মুহাম্মদ সামাদ, গণসঙ্গীত সমন্বয় পরিষদের সভাপতি ফকির আলমগীর, গ্রুপ থিয়েটার ফেডারেশনের সভাপতিম-লীর সদস্য ঝুনা চৌধুরী ও সেক্রেটারি জেনারেল আখতারুজ্জামান, আবৃত্তি সমন্বয় পরিষদের সাধারণ সম্পাদক আকহাম উল্লাহ্্ প্রমুখ। স্বাগত বক্তব্য রাখেন জোটের সাধারণ সম্পাদক হাসান আরিফ। উদ্বোধনী অনুষ্ঠানের শুরুতেই শহীদ মিনারের মূলবেদিতে পুষ্পার্ঘ্য নিবেদনের পর পালন করা হয় এক মিনিটের নীরবতা। এরপর গণসঙ্গীত সমন্বয় পরিষদের শিল্পীরা পরিবেশন করেন জাতীয় সঙ্গীত ও স্বাধীনতার গান ‘পূর্ব দিগন্তে সূর্য উঠেছে’। ‘আমরা পূবে পশ্চিমে’, ‘হিমালয় থেকে সুন্দরবন, হঠাৎ বাংলাদেশ’ ও ‘জয় সত্যের জয়’ গানের সঙ্গে নৃত্য পরিবেশন করে স্পন্দনের নৃত্যশিল্পীরা। উদ্বোধনী বক্তব্যে প্রতিভা রানী দে দাশ বলেন, ২৬ মার্চ সকালে আমি আমার চোখের সামনে নিজের বাবাকে ধরে নিয়ে যেতে দেখেছি। আমাদের হাজারও আকুতিকে উপেক্ষা করে পাকিস্তানী হানাদার বাহিনী বাবাকে নিয়ে যায়। পরে শুনেছি জগন্নাথ হলের মাঠে ট্যাংক চাপায় বাবাকে কবর দেয়া হয়েছে। বাবার লাশটাও আমরা দেখতে পাইনি। নয় মাস পর ভারত থেকে দেশে ফিরে নতুন এক লড়াই শুরু হয় আমাদের। কিন্তু বঙ্গবন্ধুকে হত্যার পর সে লড়াই আরও কঠিন হয়ে পড়ে। কোন সরকারই আমাদের পাশে দাঁড়ায়নি। এমনকি নারী বলে আমাকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শহীদ পরিবারের সদস্য তালিকা থেকেও বাদ দেয়া হয়েছে। আমার ভাই অরুণ দে ছাড়া আর কাউকে ওই তালিকায় রাখা হয়নি। এটাই আমার কষ্ট। উদ্বোধন শেষে আয়োজনের দ্বিতীয় পর্বে দলীয় সঙ্গীত পরিবেশন করে উদীচী শিল্পীগোষ্ঠী ও ঋঝিজ শিল্পীগোষ্ঠী। একক সঙ্গীত পরিবেশন করেন কল্যাণী ঘোষ, আবু বকর সিদ্দীক, সমর বড়ুয়া ও আরিফ রহমান। দলীয় আবৃত্তি পরিবেশন করে শ্রুতিঘর ও প্রকাশ। একক আবৃত্তি করেন আশরাফুল আলম। শিশুতোষ পরিবেশনা ছিল মৈত্রী শিশু দলের। পথনাটক পরিবেশন করে রঙ্গপীঠ। একই সময় রবীন্দ্র সরোবর মঞ্চে দলীয় সঙ্গীত পরিবেশ করে পঞ্চভাস্কর, ভিন্নধারা ও উজান। একক সঙ্গীত পরিবেশন করেন মিরা ম-ল, সানজিদা মঞ্জুরুল হ্যাপি, আশিকুর রহমান ও বিজন চন্দ্র মিস্ত্রি। দলীয় আবৃত্তি পরিবেশন করে স্রোত ও সংবৃতা। একক আবৃত্তি পরিবেশন করেন ভাস্বর বন্দ্যোপাধ্যায় ও কাজী মদিনা। শিশুতোষ পরিবেশনা ছিল সপ্তকলির আসরের। দলীয় নৃত্য পরিবেশন করে বহ্নিশিখা ও নটরাজ। পথনাটক পরিবেশন করে নাট্যকথা। কবিকণ্ঠে প্রেমের পদাবলি ॥ বিগত হচ্ছে বর্ণময় ঋতু বসন্ত। প্রেমের ঋতুর বিদায়বেলায় নতুন বাংলা বছর আবাহনে শুরু হয়েছে প্রস্তুতি পর্ব। এরই মাঝে বিদায় নিতে যাওয়া বসন্ত নিয়ে ভিন্নধর্মী এক আয়োজন হলো শুক্রবার বিকেলে। ল্যাবএইড ফাউন্ডেশন আয়োজন করে ‘চিরবসন্তের চিঠি’ শিরোনামে কবি কণ্ঠে প্রেমের পদাবলি শীর্ষক অনুষ্ঠান। জাতীয় জাদুঘরের সুফিয়া কামাল মিলনায়তনে অনুষ্ঠিত এ আয়োজনে ১৪ কবি সকণ্ঠে পাঠ করেন কবিতা। সেই সঙ্গে ছিল আবৃত্তি ও বাঁশিবাদনও। ব্যতিক্রমী এ আয়োজনে প্রধান শ্রোতা ছিলেন বিশিষ্ট কথাসাহিত্যিক হাসান আজিজুল হক। সভাপতিত্ব করেন ল্যাবএইড গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ডাঃ এ এম শামীম। আয়েশা ফয়েজ সাহিত্য পুরস্কার প্রদান ॥ হুমায়ূন আহমেদ, মুহম্মদ জাফর ইকবাল ও আহসান হাবীবের মাÑ এই পরিচয়ের বাইরেও স্বমহিমায় উদ্ভাসিত এক নারী আয়েশা ফয়েজ। মুক্তিযুদ্ধে হারিয়েছেন স্বামী ফয়জুর রহমানকে। শামসুজ্জামান খানের ‘কিশোরসমগ্র’ প্রকাশিত ॥ চন্দ্রাবতী একাডেমি থেকে প্রকাশিত হলো বাংলা একাডেমির মহাপরিচালক শামসুজ্জামান খানের ‘কিশোরসমগ্র’। বইটির প্রকাশনা অনুষ্ঠান ও চলতি বছরের স্বাধীনতা পুরস্কার প্রাপ্তিতে শামসুজ্জামান খানকে সংবর্ধনা জানাতে শুক্রবার বিকেলে এক অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। অনুষ্ঠানের আয়োজন করে প্রকাশনা সংস্থা চন্দ্রাবতী একাডেমি। মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘরের স্বাধীনতা উৎসব ॥ গত ২২ মার্চ প্রতিষ্ঠার একুশ বছর পূরণ করেছে মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘর। একবিংশতিতম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী ও স্বাধীনতা দিবস উদযাপন উপলক্ষে সপ্তাহব্যাপী উৎসবের তৃতীয়দিন ছিল শুক্রবার। এদিন ‘২৫ মার্চ গণহত্যা দিবস : নবীন গবেষকদের দৃষ্টিতে’ শীর্ষক আলোচনায় অংশগ্রহণ করবেন সেন্টার ফর দা স্টাডি অফ জেনোসাইড এ্যান্ড জাস্টিসের সমন্বয়কারী এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্রিমিনোলজি বিভাগের প্রভাষক উম্মে ওয়ারা, ইউনিভার্সিটি অফ এশিয়া প্যাসিফিকের আইন বিভাগের প্রভাষক ইমরান আজাদ, সেন্টার ফর দা স্টাডি অফ জেনোসাইড এ্যান্ড জাস্টিসের গবেষণা সহযোগী নওরিন রহিম এবং ইস্ট ওয়েস্ট ইউনিভার্সিটির শিক্ষক সহকারী পিজুয়ার হোসাইন।
×