ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

বাংলাদেশ ব্যাংকে আগুন

মতিঝিল থানায় জিডি, ক্ষয়ক্ষতির উল্লেখ নেই ॥ তদন্ত কমিটির কাজ শুরু

প্রকাশিত: ০৫:৩৩, ২৫ মার্চ ২০১৭

 মতিঝিল থানায় জিডি, ক্ষয়ক্ষতির উল্লেখ নেই ॥ তদন্ত কমিটির কাজ শুরু

স্টাফ রিপোর্টার ॥ বৃহস্পতিবার রাতে বাংলাদেশ ব্যাংকে অগ্নিকা-ের ঘটনায় ব্যাংকের তরফ থেকে একটি সাধারণ ডায়েরি করা হয়েছে মতিঝিল থানায়। অভিযোগে ক্ষয়ক্ষতির কোন পরিমাণ উল্লেখ করা হয়নি। এদিকে অগ্নিকা-ের ঘটনায় ফায়ার সার্ভিসের গঠিত পাঁচ সদস্যের এবং ব্যাংকের গঠিত তিন সদস্যের তদন্ত কমিটি কাজ শুরু করেছে। নির্ধারিত সময়ের মধ্যেই রিপোর্ট দেয়া সম্ভব হবে বলে কমিটির তরফ থেকে জানানো হয়। টানা তিন দিনের বন্ধের মধ্যে আগুন লাগার বিষয়টি গুরুত্বের সঙ্গে দেখা হচ্ছে বলে বলছেন বাংলাদেশ ব্যাংকসহ সংশ্লিষ্টরা। শুক্রবার সকালে বাংলাদেশ ব্যাংকের যুগ্ম-পরিচালক নুরুল হক জিডিটি দায়ের করেন। থানাটির ওসি ওমর ফারুক জানান, জিডিতে আগুন লাগার ঘটনার বর্ণনা রয়েছে। কিন্তু ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ বা কী ভাবে আগুন লেগেছে তার উল্লেখ নেই। তবে বাংলাদেশ ব্যাংকের গঠিত তিন সদস্যের তদন্ত কমিটির প্রধান ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক-১ আহমেদ জামাল বলছেন, আশা করছি তিন দিনের মধ্যেই প্রতিবেদন জমা দিতে পারব। কমিটির অপর দুই সদস্য নিরাপত্তা বিভাগের মহাব্যবস্থাপক লে. কর্নেল (অব) মোঃ মাহমুদুল হক খান চৌধুরী ও কমন সার্ভিস বিভাগ-২ এর মহাব্যবস্থাপক মোঃ তফাজ্জল হোসেনও ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন। আগামী ২৮ মার্চের মধ্যে কমিটির তদন্ত প্রতিবেদন জমা দেয়ার কথা। ফায়ার সার্ভিসের পাঁচ সদস্যের তদন্ত কমিটি ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন। কমিটির প্রধান ঢাকা মেট্রোর উপপরিচালক সমরেন্দ্র নাথ বিশ্বাস বলছেন, আগুনে কিভাবে লেগেছে তা তদন্ত শেষ না করে বলা যাচ্ছে না। নির্ধারিত পাঁচ কার্য দিবসের পরিবর্তে তিন কার্যদিবসের মধ্যেই কমিটি তদন্ত প্রতিবেদন জমা দিতে পারবে। ফায়ার সার্ভিসের মহাপরিচালক জানান, আগুন লাগার খবর তারা স্থানীয়দের মাধ্যমে জানতে পেরেছেন। এতে ব্যাংকের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের মধ্যে সচেতনতার অভাব লক্ষ্য করা যায়। ব্যাংক ভবনের অবকাঠামো অগ্নিনির্বাপক উপযোগী নয়। ফায়ার এ্যালার্মগুলোও অকার্যকর। প্রাথমিক পরীক্ষায় মাঝে মধ্যেই মিথ্যা ফায়ার এ্যালার্মগুলো মিথ্যা এ্যালার্ম দেয়ার তথ্য মিলেছে। যেসব এ্যালার্ম আছে, সেগুলো অকেজো। ব্যাংকের বিদ্যুতের লাইন অনেক পুরনো। এক লাইন থেকে অনেক লাইনের সংযোগ দেয়া হয়েছে। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নিজস্ব কর্মী বাহিনীর মহড়া দেয়ার কথা। কিন্তু সেটা নিয়মিত হয় না। সূত্র বলছে, ২০১৬ সালের ৪ ফেব্রুয়ারি বৃহস্পতিবার রাতে বাংলাদেশ ব্যাংকের সুইফট সিস্টেম হ্যাক করে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ফেডারেল রিজার্ভ ব্যাংকে থাকা বাংলাদেশের টাকার মধ্যে আট শ’ কোটি টাকা চুরি করে নিয়ে যায় হ্যাকাররা। রিজার্ভ চুরির পর শুক্র ও শনিবার দুইদিন ব্যাংক বন্ধ ছিল। আর রবিবার ছিল যুক্তরাষ্ট্রসহ অন্যান্য দেশে ছুটির দিন। মোট তিন দিন ছুটি ছিল রিজার্ভ চুরির ঘটনার পর। এবারও বৃহস্পতিবার রাতে আগুন লাগার ঘটনাটি ঘটে। এবার আগুন লাগার পর শুক্রবার, শনিবার ও রবিবার ব্যাংক বন্ধ। তবে অর্থ প্রতিমন্ত্রী এম এ মান্নান বলছেন, রিজার্ভ চুরির সঙ্গে আগুন লাগার সম্পর্ক আছে বলে আপাতত মনে হচ্ছে না। তবে ঘটনার নেপথ্যে আরও কোন কাহিনী আছে কিনা তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে। আইসিটি বিভাগ, বুয়েট ও কম্পিউটার সায়েন্সের বিশেষজ্ঞদের ঘটনাস্থল দেখানো হবে। তবে প্রকৃত ঘটনা প্রকাশ করা হবে। প্রসঙ্গত, বৃহস্পতিবার রাত সাড়ে নয়টার দিকে ৩০ তলা বাংলাদেশ ব্যাংক ভবনের ১৪ তলায় বৈদেশিক মূদ্রা নীতি শাখায় অগ্নিকা-ের ঘটনা ঘটে। ফ্লোরটিতে বৈদেশিক মুদ্রা নীতি বিভাগের মহাব্যবস্থাপক জিএম মাসুদ বিশ্বাস অফিস। ফায়ার সার্ভিসের ১২টি ইউনিটের অন্তত ৭০ জন দমকল কর্মী রাত সাড়ে ১০টার দিকে আগুন নিয়ন্ত্রণে আনতে সক্ষম হয়। ঘটনার পর পরই অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত, অর্থ প্রতিমন্ত্রী এম এ মান্নান, বাংলাদেশ ব্যাংকের গর্বনর ফজলে কবির, ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের কমিশনার আসাদুজ্জামান মিয়াসহ সরকার ও প্রশাসনের বিভিন্ন পর্যায়ের উর্ধতন কর্মকর্তারা ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন। ঘটনাস্থল থেকে আলামত সংগ্রহ করে তার পরীক্ষা নিরীক্ষা করা হচ্ছে সিআইডির ফরেনসিক ল্যাবরেটরিতে। ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্সের মহাপরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল আলী আহমেদ খান বৃহস্পতিবার রাতে ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে জানান, কেন্দ্রীয় ব্যাংকটির দক্ষিণ-পূর্ব কোনার দিকে অগ্নিকা-ের সূত্রপাত হয়। আগুনে ওই কক্ষের ১০ থেকে ১৫ শতাংশ জিনিসপত্র পুড়ে গেছে। কোন কম্পিউটার সার্ভারে আগুন লাগেনি। তবে কয়েকটি কম্পিউটারের সিপিও পুড়ে গেছে। বেশ কিছু ফাইলপত্র ও সেখানে থাকা কিছু কাগজপত্র পুড়ে গেছে। বড় ধরনের কোন ক্ষয়ক্ষতি হয়নি। বৈদ্যুতিক গোলযোগের কারণে অগ্নিকা-ের ঘটনাটি ঘটে থাকতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে। জানা গেছে, রবিবার মহান স্বাধীনতা ও জাতীয় দিবস উপলক্ষে বাংলাদেশ ব্যাংকে কিছু সংস্কার কাজ চলছে। যদিও বৃহস্পতিবার রাত আটটার দিকে কাজ শেষে সংস্কার কাজে যুক্ত সবাই বেরিয়ে যান।
×