ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

খোদ চেয়ারপার্সনই এখন গোছাতে হিমশিম খাচ্ছেন

প্রকাশিত: ০৫:৩২, ২৫ মার্চ ২০১৭

খোদ চেয়ারপার্সনই এখন গোছাতে হিমশিম খাচ্ছেন

শরীফুল ইসলাম ॥ বহু চেষ্টা করেও সর্বস্তরে দল গোছানোর কাজে অগ্রসর হতে পারছেন না বিএনপি চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়া। দলের কর্মকা-েও গতিশীলতা আনতে পারছেন না তিনি। ফলে একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের প্রস্তুতিও জোরদার করতে পারছেন না। তবে এ বছরের মধ্যেই সর্বস্তরে দলের কমিটি পুনর্গঠন শেষ করতে নতুন উদ্যমে আরেকবার চেষ্টা চালানো হচ্ছে। উল্লেখ্য, ৫ বছর ক্ষমতায় থেকে ২০০৬ সালের ২৮ অক্টোবর ক্ষমতা ছাড়ার পর ওয়ান-ইলেভেনসহ বিভিন্ন কারণে নাজুক পরিস্থিতিতে পড়ে বিএনপি। বিশেষ করে ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারি দশম সংসদ নির্বাচন বর্জনের পর আওয়ামী লীগের নেতৃত্বে নতুন সরকার গঠিত হওয়ার পর বিএনপির সর্বস্তরে চরম হতাশা দেখা দেয়। এ অবস্থায় বিএনপি চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়া দল গুছিয়ে সরকারবিরোধী আন্দোলন চাঙ্গা করার ঘোষণা দেন। কিন্তু দল গোছানোর কাজে সফল হতে না পেরে ২০১৫ সালের ৫ জানুয়ারি থেকে বাসা ছেড়ে দলীয় কার্যালয়ে অবস্থান নিয়ে বিএনপি চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়া টানা ৯২ দিন অবরোধ কর্মসূচী পালন করেন। কিন্তু আন্দোলন সফল না হওয়ায় আবার নতুন করে দল গোছানোর কাজে হাত দেন। গত বছর ১৯ মার্চ জাতীয় কাউন্সিল করে ৫৯২ সদস্যের নির্বাহী কমিটি গঠন করা হলেও কমিটিতে এখনও অনেক পদ শূন্য রয়ে গেছে। এছাড়া দলের ১১ অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনের মধ্যে ৩ থেকে চারটির আংশিক নতুন কমিটি গঠন করা হলেও বাকি সংগঠনগুলো এখনও চলছে এক যুগ আগের কমিটি দিয়েই। আর ৭৫ সাংগঠনিক জেলার মধ্যে পঁচিশটিতে নতুন কমিটি করা গেলেও ৫০ জেলার কমিটি পুনর্গঠন করা সম্ভব হয়নি। বিশেষ করে দেশের রাজনীতির কেন্দ্রবিন্দু ঢাকা মহানগর বিএনপির আংশিক আহ্বায়ক কমিটি দিয়ে চলছে প্রায় এক দশকব্যাপী। বার বার উদ্যোগ নিয়েও ঢাকা মহানগর বিএনপির পূর্ণাঙ্গ কমিটি করতে হিমশিম খাচ্ছেন দলীয় হাইকমান্ড। যতবারই ঢাকা মহানগর কমিটি পুনর্গঠনের উদ্যোগ নেয়া হয় কোন্দলের কারণে ততবারই বড় রকমের সমস্যায় পড়তে হয় হাইকমান্ডকে। এ কারণে ঢাকা মহানগর বিএনপির কমিটি গঠন করতে গিয়ে এক পা এগোলেও আবার দুই পা পিছিয়ে যান দলের চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়া। সূত্রমতে, যখনই বিএনপিতে বিভিন্ন ইউনিটে দল গোছানোর প্রক্রিয়া শুরু হয় তখনই কিছু নেতা নিজেদের স্বার্থে পরস্পরের সঙ্গে দ্বন্দ্বে লিপ্ত হন। বিশেষ করে রাজধানীতে দলীয় কর্মকা- চাঙ্গা করতে ঢাকা মহানগর বিএনপির নতুন কমিটি গঠনের উদ্যোগ নিলেই একদিকে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস ও গয়েশ্বর রায়সহ কিছু নেতা এবং অপরদিকে ঢাকা মহানগর বিএনপির সাবেক সভাপতি সাদেক হোসেন খোকা ও সাবেক সদস্য সচিব আবদুস সালাম নিজেদের অনুসারীদের দিয়ে পরিস্থিতি জটিল করে ফেলেন। নতুন কমিটি নিজেদের নিয়ন্ত্রণে রাখতে তাদের পরস্পরবিরোধী অবস্থানের কারণে কমিটি পুনর্গঠন আর করা হয় না। যদিও সাদেক হোসেন খোকা দীর্ঘদিন ধরে বিদেশে অবস্থান করছেন কিন্তু তার অনুসারীদের রাজধানীর দলীয় রাজনীতিতে প্রভাব থাকায় মির্জা আব্বাস সুবিধা করতে পারছেন না। এদিকে গত বছরের জাতীয় কাউন্সিলের পর মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বিএনপির মহাসচিব হওয়ার পর থেকে মির্জা আব্বাস ও ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদসহ দলের কিছু সিনিয়র নেতা প্রকাশ্যেই তার বিরোধিতা করতে থাকেন। এ কারণে বিভিন্ন জেলা কমিটি গঠনের ক্ষেত্রে যখনই মির্জা ফখরুল তৎপরতা বাড়ান তখনই বিভিন্নভাবে তাকে বাধাগ্রস্ত করা হয়। এ কারণে জেলা কমিটি গঠনসহ বিভিন্ন ইউনিট কমিটি গঠনে বিএনপি মহাসচিবের মধ্যেও হতাশা দেখা দিয়েছে। জানা যায়, দলের বিভিন্ন স্তরের কমিটি পুনর্গঠনসহ বিভিন্ন কর্মকা- নিয়ে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ও তার অনুসারী কিছু নেতার বিরুদ্ধে তাদের পছন্দ করেন না এমন নেতারা লন্ডন প্রবাসী দলের সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান তারেক রহমানের কাছে বিস্তর অভিযোগ পাঠিয়েছেন। এসব অভিযোগ পেয়ে তারেক রহমানও মির্জা ফখরুলের ওপর ক্ষুব্ধ। এ সুযোগ পেয়ে একদিকে ফখরুল বিরোধী দলের কিছু সিনিয়র নেতা এবং অপরদিকে দলের তারেক রহমান অনুসারী নেতারা মির্জা ফখরুলকে মহাসচিব পদ থেকে সরিয়ে দেয়ার চেষ্টায় রয়েছেন বলেও সূত্র জানায়। এদিকে সংস্কারপন্থী নেতাদের দলে ফিরিয়ে কেন্দ্রীয় কমিটিতে পদ দেয়ার কথা বললেও বিভিন্ন কারণে এখনও তাদের ঝুলিয়ে রাখা হয়েছে। এ কারণে সংস্কারপন্থী বেশ ক’জন নেতা দলে সক্রিয় হওয়ার ইচ্ছা পোষণ করেও আবার থেমে গেছেন। কোন কোন সংস্কারপন্থী নেতা এখন বিএনপিতে না ফিরে নতুন রাজনৈতিক জোটে যোগ দিয়ে একাদশ সংসদ নির্বাচনে অংশ নেয়ার কথাও ভাবছেন বলে জানা গেছে। এছাড়া জাতীয় কাউন্সিলের পর সাবেক ও বর্তমান কমিটির ভাইস চেয়ারম্যান আব্দুল্লাহ আল নোমান ও মেজর (অব) হাফিজউদ্দিন ক’জন সিনিয়র নেতা স্থায়ী কমিটির শূন্য ৩টি পদে স্থান পেতে আগ্রহী হলেও তাদের এখন পর্যন্ত কোন আশ্বাস দেয়া হচ্ছে না। এ কারণে তাদের মধ্যে ক্ষোভ বিরাজ করছে। তাই তারা আন্তরিকভাবে দলীয় কর্মকা-ে হচ্ছেন।
×