ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

বঙ্গবন্ধুই প্রথম জানান বিশ্ববাসীকে

প্রকাশিত: ০৫:৩১, ২৫ মার্চ ২০১৭

বঙ্গবন্ধুই প্রথম জানান বিশ্ববাসীকে

মোরসালিন মিজান ॥ ১৯৭১ সালের ২৫ মার্চ ঢাকায় শুরু হওয়া গণহত্যার খবর সারা বিশ্বকে প্রথম জানিয়েছিলেন বাঙালীর অবিসংবাদিত নেতা শেখ মুজিবুর রহমান। নতুন গবেষণা বলছে, ওই কালরাতে গোপন ট্রান্সমিটার ব্যবহার করে নিজের একাধিক ঘোষণা রেকর্ড করান বঙ্গবন্ধু। বিশ্ববাসীর উদ্দেশে ইংরেজীতে দেয়া তার একটি ঘোষণা থেকে গণহত্যার খবর প্রথম সামনে আসে। বিখ্যাত সব সংবাদ সংস্থার সাংবাদিকরা পার্শ্ববর্তী দেশ ভারতের পশ্চিমবঙ্গে বসে রেডিও মনিটরিংয়ের মাধ্যমে গুরুত্বপূর্ণ এই তথ্য সংগ্রহ করেন। ঢাকা থেকে প্রখ্যাত সাংবাদিক সাইমন ড্রিংয়ের পাঠানো প্রতিবেদনে গণহত্যার বিস্তারিত থাকলেও, এ সংক্রান্ত প্রাথমিক তথ্য তারও কয়েকদিন আগে পৃথিবীর বহু সংবাদপত্রে প্রকাশিত হয় এবং সেসব সংবাদের একমাত্র সূত্র ছিলেন শেখ মুজিবুর রহমান। বঙ্গবন্ধুকে উদ্ধৃত করেই বিশ্বগণমাধ্যমে প্রকাশিত হয় গণহত্যার খবর। যুক্তরাষ্ট্র থেকে সম্প্রতি সংগ্রহ করা দুর্লভ পত্রিকা, পরবর্তী সময়ে লেখা পুস্তক এবং পুরনো নথিপত্র ঘেঁটে পাওয়া গেছে এমন তথ্য। ১৯৭১ সালের ২৫ মার্চ রাতে ঢাকার নিরীহ নির্দোষ এবং নিরস্ত্র মানুষের ওপর ঝাঁপিয়ে পড়ে পাকিস্তানের বর্বর বাহিনী। ঘুমন্ত মানুষের ওপর নির্বিচারে গুলি চালায় তারা। জল্লাদ ইয়াহিয়া বাহিনীর হাতে নির্মমভাবে খুন হন অগণিত মানুষ। ২৫ মার্চ শুরু হলেও ২৬ মার্চ গোটাদিন এবং ২৭ মার্চ সন্ধ্যার পর থেকে ফের চলে বাঙালী নিধন। ২৫ মার্চ রাত ১১টায় পাকিস্তানী সৈন্যদের আক্রমণ শুরুর সময় তৎকালীন হোটেল ইন্টারকন্টিনেন্টালে অবরুদ্ধ করে রাখা হয় বিদেশী সাংবাদিকদের। কিন্তু এর আগেই হোটেলের ছাদে আত্মগোপন করতে সক্ষম হন প্রখ্যাত সাংবাদিক সায়মন ড্রিং। হোটেলের অতিথি তালিকায় নাম থাকলেও তাকে খুঁজে বের করতে পারেনি পাকিস্তানবাহিনী। সায়মন ড্রিং আগেই হোটেল ছেড়ে গেছেন বলে ধারণা করেন তারা। পরবর্তী সময়ে ২৭ মার্চ কার্ফু তুলে নেয়া হলে হোটেলের বাইরে এসে সংবাদ সংগ্রহের কাজ করেন সায়মন ড্রিং। রক্তে ভেসে যাওয়া ঢাকা থেকে তার পাঠানো প্রতিবেদন ৩০ মার্চ লন্ডনের দি ডেইলি টেলিগ্রাফ পত্রিকায় ছাপা হয়। একই দিন তার প্রতিবেদনটি ছাপা হয় বিখ্যাত ওয়াশিংটন পোস্ট পত্রিকায়। সীমিত গবেষণার কারণে অনেকেই মনে করেন, সায়মন ড্রিংয়ের প্রতিবেদন পড়ে সর্বপ্রথম গণহত্যার খবরটি জানতে পারে বিশ্ববাসী। বিভিন্ন বই পুস্তকে সভা সেমিনারে এমন তথ্য প্রতিনিয়তই দেয়া হচ্ছে। এমনকি সরকারীভাবে প্রকাশিত মুক্তিযুদ্ধের মূল দালিলিক গ্রন্থ ‘বাংলাদেশের স্বাধীনতাযুদ্ধ দলিলপত্র’ ঘেঁটে দেখা যায় এর দ্বিতীয় খ-ে অভিন্ন তথ্য দিয়ে লেখা হয়েছে, ‘২৫ মার্চ দিবাগত রাতে ঢাকা শহরে যে গণহত্যা চলে তাহার বিবরণ ৩০ মার্চ তারিখে লন্ডনস্থ দি ডেইলি টেলিগ্রাফ পত্রিকায় সাংবাদিক সায়মন ড্রিং প্রেরিত প্রতিবেদন মারফত সভ্য জগত সর্বপ্রথম জানিতে পারিয়া শিহরিয়া ওঠে।’ এভাবে আরও অনেক জায়গায় গণহত্যার প্রথম খবর প্রকাশের আলোচনায় এসেছে সায়মন ড্রিংয়ের প্রতিবেদন। কিন্তু সে সময় প্রকাশিত অসংখ্য সংবাদপত্র দিচ্ছে নতুন তথ্য। সম্প্রতি যুক্তরাষ্ট্রের আর্কাইভ থেকে দুর্লভ এসব পত্রিকা সংগ্রহ করেছেন বিশিষ্ট গবেষক ও জাদুঘরবিদ ড. ফিরোজ মাহমুদ। পত্রিকাগুলোর পাতা উল্টে দেখা যায়, সায়ম ড্রিংয়ের সংবাদ প্রকাশের আগের দিন ২৯ মার্চ গণহত্যার খবর দেয় বহু পত্রপত্রিকা। সংশ্লিষ্ট রিপোর্টারদের পাঠানো সংবাদ ও লেখা পড়ে জানা যায়, ২৫ মার্চ রাতে হোটেল ইন্টারকন্টিনেন্টাল ছাড়াও অন্য হোটেলে অবস্থান করছিলেন একাধিক বিদেশী সাংবাদিক। তাদের একজন ছিলেন এ্যাসোসিয়েট প্রেসের রিপোর্টার আরনল্ড জেটলিন। অন্যজন আলোকচিত্রী মিশেল লরেন্ট। দুজনই পাকিস্তানবাহিনীর গণহত্যার প্রত্যক্ষদর্শী। সার্চ লাইট চলাকালে তারা শহর ঘুরে দেখছিলেন। পাকিস্তান বাহিনীর চোখ এড়িয়ে গণহত্যার সংবাদ সংগ্রহ করেন। ছবি তুলেন। তাদের দেয়া গণহত্যার খবর থেকে জানা যায়, ২৭ মার্চ সকাল অবধি ঢাকা নগরীতে ৫ হাজার থেকে ৭ হাজার নিরীহ নির্দোষ মানুষকে হত্যা করা হয়। তাদের এইসব তথ্য সায়মন ড্রিংয়ের পাঠানো প্রতিবেদন প্রকাশের আগের দিন ২৯ মার্চ বিভিন্ন পত্রিকায় প্রকাশিত হয়। দি নিউ ইয়র্ক টাইমস বাংলাদেশে গণহত্যার কথা জানায় ২৮ মার্চ। সংশ্লিষ্ট প্রতিবেদন পাঠে জানা যায়, ২৫ মার্চ রাতে তৎকালীন হোটেল ইন্টারকন্টিনেন্টালের অতিথি তালিকায় সায়মন ড্রিং ছাড়াও ৩৫ জন বিদেশী সাংবাদিকের নাম ছিল। এই ৩৫ জনের সবাই হোটেলের বাইরে গিয়ে সংবাদ সংগ্রহের অনুমতি চান। কিন্তু অনুমতি না পেয়ে প্রতিবাদী হয়ে ওঠেন তারা। সাংবাদিকদের ঠেকাতে হোটেলের নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকা এক মেজর তাদের গুলি করে হত্যার হুমকি দেন। বলেন, ‘ইট ইজ গোয়িং টু বি টু ব্লাডি। বাইরে যাওয়ার চেষ্টা করবেন না। আমরা আমাদের লোকদের যদি গুলি করতে পারি, আপনাদের উপরেও গুলি করতে পারব।’ এ অবস্থায় হোটেলের ভেতরে অবস্থান করতে বাধ্য হন তারা। পরদিন ২৭ মার্চ সকালে বাংলাদেশ ছাড়া করতে সাংবাদিকদের নিয়ে যাওয়া হয় ঢাকা বিমানবন্দরে। সেখানে প্রত্যেককে বিবস্ত্র করে তল্লাশি চালানো হয়। সাংবাদিকদের ক্যামেরা ফিল্ম টাইপ রাইটার নোটবইসহ সংবাদ লেখার প্রয়োজনীয় সব উপকরণ কেড়ে নেয়া হয়। পরে ঢাকা থেকে তাদের নিয়ে যাওয়া হয় করাচীতে। সেখান থেকে বিদেশী সাংবাদিকদের কেউ কেউ ব্যাংককে যান। কেউ কেউ যান ভারতের বোম্বেতে। দি নিউইয়র্ক টাইমসের প্রখ্যাত সাংবাদিক সিডনী এইচ শ্যানবার্গ বোম্বে গিয়ে নিজের প্রতিবেদন তৈরি করেন। তিনি তার প্রতিবেদনে পাকিস্তান সৈন্যদের অতর্কিত আক্রমণ এবং সমগ্র ঢাকা নগরীজুড়ে তাদের হত্যাকা-ের বিবরণ দেন। প্রতিবেদনটি তার পত্রিকায় ২৮ মার্চ প্রকাশিত হয়। এভাবে সায়মন ড্রিংয়ের প্রতিবেদন প্রকাশিত হওয়ার আগেই বাংলাদেশের গণহত্যার খবর বিশ্ববাসীকে জানাতে সক্ষম হন তারা। কিন্তু ঢাকায় অবস্থানরত এবং সরেজমিন ঢাকা ঘুরে যাওয়া সাংবাদিকদের লেখা প্রকাশিত হওয়ার অনেক আগে গণহত্যার খবর বিশ্ববাসীকে জানান স্বাধীনতার মহানায়ক শেখ মুজিবুর রহমান। মহান নেতাকে উদ্ধৃত করে ১৯৭১ সালের ২৬ এবং ২৭ মার্চের পত্রিকায় গণহত্যার খবর ছাপে আন্তর্জাতিক মিডিয়া। প্রকাশিত এসব খবরের একমাত্র সূত্র ছিলেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। সে সময় বিভিন্ন দেশ থেকে প্রকাশিত পত্রিকায় খোঁজ করে পাওয়া যায় এমন তথ্য। নিজের নতুন গবেষণার কথা জানিয়ে ড. ফিরোজ মাহমুদ জনকণ্ঠকে বলেন, ২৫ মার্চ দিবাগত রাত ১২টার আগে ও পরে নিজের মোট তিনটি ঘোষণা গোপন তিন রেডিওতে রেকর্ড করেন বঙ্গবন্ধু। টেলিফোনে স্বকণ্ঠে ওইসব ঘোষণা রেকর্ড করেন দূরদর্শী নেতা। ২৫ মার্চ রাত ১২টার পর দেয়া স্বাধীনতার ঘোষণায় ছিল গণহত্যার তথ্য। সারা পৃথিবীর বিভিন্ন ভাষাভাষী মানুষের বোঝার সুবিধার্থে ইংরেজীতে ঘোষণা দেন তিনি। ঘোষণাটির বাংলা অনুবাদ এরকম- ‘পাকিস্তান বাহিনী আকস্মিকভাবে ঢাকার পিলখানা ইপিআর ঘাঁটি এবং রাজারবাগ পুলিশ স্টেশনে আক্রমণ চালিয়েছে এবং নিরস্ত্র জনগণকে হত্যা করছে।’ গণহত্যার এই খবর জানানোর পাশাপাশি প্রতিরোধ যুদ্ধ ঘোষণার কথা জানান তিনি। বলেন, ‘জনগণ বাংলাদেশের স্বাধীনতার জন্যে বীরত্বের সাথে শত্রুর সঙ্গে যুদ্ধ করছে। আমি বাংলাদেশের সর্বস্তরের জনগণকে আহ্বান করছি শেষ রক্তবিন্দু দিয়ে শত্রুকে প্রতিহত করুন। আল্লাহ আপনাদের সহায়ক হোন এবং আপনাদের সাহায্য করুন।’ ড. ফিরোজ মাহমুদের গবেষণা এবং সংগৃহীত পত্রিকা ঘেঁটে জানা যায়, ওই সময় কলকাতা থেকে রেডিও মনিটরিং করছিল এ্যাসোয়িটেড প্রেস, রয়টার্স ও দি ইউনাইটেড প্রেস ইন্টারন্যাশনাল। তারা বঙ্গবন্ধুকে উদ্ধৃত করে গণহত্যার খবরটি যতদ্রুত সম্ভব বিশ্ববাসীর কাছে পৌঁছে দেয়ার উদ্যোগ নেন। ২৬ মার্চের কাগজ ২৫ তারিখ রাত ১০টার মধ্যে ছাপা হয়ে যায়। এ কারণে পরের দিন ভারতবর্ষের অনেক পত্রিকা ঘেঁটে গণহত্যা কিংবা ক্র্যাকডাউনের খবর পাওয়া যায়নি। একই কারণে এশিয়া আফ্রিকা মহাদেশ থেকে প্রকাশিত সংবাদপত্র গণহত্যার খবর দিতে পারেনি। বরং কোন কোন পত্রিকায় লেখা হয়, ইয়াহিয়া খান ঢাকায় অবস্থান করছেন। তার সঙ্গে শেখ মুজিবের আলোচনা অব্যাহত আছে। তবে সময়ের পার্থক্যের কারণে গণহত্যার সংবাদ প্রকাশে এগিয়ে ছিল উত্তর আমেরিকার পত্রিকাগুলো। এসব পত্রিকায় গুরুত্বের সঙ্গে গণহত্যার খবর ছাপা হয়। বার্তা সংস্থাগুলো থেকে নেয়া সংবাদের ভাষা প্রায়শই এক এবং অভিন্ন। উদাহরণ হতে পারে ২৬ মার্চ যুক্তরাষ্ট্রের অঙ্গরাজ্য ম্যাসাচুসেটস থেকে প্রকাশিত বিখ্যাত সংবাদপত্র দি সান। পত্রিকাটিতে বাংলাদেশে গণহত্যার কথা জানানো হয়েছে শেখ মুজিবের উদ্ধৃতি দিয়ে। লেখা হয়েছে- `Sheikh Mujibur Rahman said the fighting started when `Pakistan arms forces attacked East Pakistan rifle base at Pielkhana and the Rajabag (Rajarbagh) police station in Dacca.’ সংবাদে বঙ্গবন্ধুর ঘোষণা থেকে পাওয়া গণহত্যার তথ্য জানিয়ে লেখা হয়, ঐবHe said Ôthey killed a number of unarmed people.’ `People are fighting gallantly with the enemy for the cause of freedom of Bangla Desh.’ He called on `every section of Bangla Desh to resist the enemy forces at any cost.’ নর্থ ইস্টার্ন ক্যালিফোর্নিয়া থেকে প্রকাশিত ‘দি টাইমস স্ট্যান্ডার্ড’ একইভাবে শেখ মুজিবকে উদ্ধৃত করে গণহত্যার খবর দেয়। সময়ের পার্থক্য পরিষ্কার করে ড. ফিরোজ মাহমুদ বলেন, বঙ্গবন্ধু যদি ২৫ মার্চ রাত ১২টা ১৫মিনিটে ঘোষণাটি দিয়ে থাকেন তাহলে নিউইয়র্কে তখন ২৫ মার্চ দুপুর ১২টা ১৫ মিনিট। শিকাগোতে ২৫ মার্চ ১১টা ১৫ মিনিট। ক্যালিফোর্নিয়ায় ২৫ মার্চ ৯টা ১৫ মিনিট। ফলে ওইসব অঞ্চলের পত্রিকাগুলো সংবাদ তৈরি ও ছাপবার জন্য পর্যাপ্ত সময় পেয়েছিল। এ কারণে ২৬ মার্চ সকালে উত্তর আমেরিকার কয়েক হাজার পত্রিকায় গণহত্যার খবর বের হয়। আর ২৭ মার্চ সারা দুনিয়ার পত্রিকায় এসেছে গণহত্যার খবর। সব পত্রিকায়ই শেখ মুজিবের স্বাধীনতা ঘোষণার খবর দেয়ার পাশাপাশি গণহত্যার বিস্তারিত তথ্য দেয়। বঙ্গবন্ধুর তিনটি গোপন ট্রান্সমিটার ব্যবহার করে তিনটি ঘোষণা দিয়েছিলেন এমন দাবির পক্ষে প্রমাণ তার কাছে আছে জানিয়ে ফিরোজ মাহমুদ বলেন, ওই গোপন ট্রান্সমিটারের মাধ্যমে দেয়া স্বাধীনতার ঘোষণায় ছিল গণহত্যার তথ্য। মুজিবের দেয়া বলেই ওই তথ্য বিশেষ আমলে নিয়েছিল বিশ্ব মিডিয়া। এদিকে, বঙ্গবন্ধুর পার্সনাল এইড হাজী গোলাম মোরশেদের সাক্ষাতকারেও গোপন ট্রান্সমিটার ও সেটি ব্যবহার করে দেয়া ঘোষণার ইঙ্গিত পাওয়া যায়। শারমিন আহমদের ‘তাজউদ্দীন আহমদ: নেতা ও পিতা’ শিরোনামে লেখা বইতে যুক্ত করা সাক্ষাতকারে গোলাম মোরশেদ বলেছেন, ‘আমি সোজা ওপরে উঠে গেলাম। ওপরে ওঠে দেখি বঙ্গবন্ধু পাইপ হাতে বসে আছেন। আমি ঢোকার সঙ্গে সঙ্গে বললেন, ‘আমরা স্বাধীন হয়ে গেলাম। 'They are coming to arrest me. I have decided to stay.'’ তখন রাত সাড়ে দশটার মতো বাজে বলে জানান গোলাম মোরশেদ। এর পরের ঘটনাবলী উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘রাত ১১টা বেজে গেল, বারোটা প্রায় বাজে বাজে, এমন সময় একটা টেলিফোন আসল। বলে, ‘আমি বলদা গার্ডেন থেকে বলছি। মেসেজ পাঠান হয়ে গিয়েছে, মেশিন নিয়ে কী করব?’ আমি মুজিব ভাইয়ের কাছে দৌড়ে গেলাম, বললাম যে ফোন এসেছে- ‘মেসেজ পাঠান হয়ে গিয়েছে। মেশিন নিয়ে আমি কী করব?’ উনি বললেন, ‘মেশিনটা ভেঙ্গে ফেলে পালিয়ে যেতে বলো।’ এই মেশিন মানে, গোপন ট্রান্সমিটার বলেই ধারণা করছেন গবেষকরা। বাংলাদেশের স্বাধীনতা ঘোষণার পাশাপাশি এইসব মেশিন ব্যবহার করে বঙ্গবন্ধু ২৬ মার্চ প্রথম প্রহরে গণহত্যার খবর বিশ্ববাসীকে জানিয়েছিলেন। ট্রান্সমিটার ব্যবহারের বিষয়টি নিয়ে আরও ব্যাপক বিস্তৃত গবেষণা এখন চলছে। গবেষণার কাজটি করছেন ফিরোজ মাহমুদ। এই গবেষণার মধ্য দিয়ে আরও অনেক অজানাকে, অল্প ও অস্পষ্ট জানাকে স্পষ্ট করা সম্ভব হবে বলে দৃঢ় প্রত্যয় ব্যক্ত করেন তিনি।
×