ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪৩১

কমিউনিটি পুলিশের সাফল্যে কমে আসছে অপরাধপ্রবণতা

বরিশালের সহস্রাধিক মাদক বিক্রেতার আত্মসমর্পণ

প্রকাশিত: ০৪:৫০, ২৫ মার্চ ২০১৭

বরিশালের সহস্রাধিক মাদক বিক্রেতার আত্মসমর্পণ

খোকন আহম্মেদ হীরা, বরিশাল ॥ ‘পুলিশই জনতা-জনতাই পুলিশ’ সেøাগান সামনে রেখে কমিউনিটি পুলিশিং কার্যক্রমের গতিশীলতা ফিরে আসায় এক মাসে নগরীসহ জেলার দশ থানায় প্রায় সহস্রাধিক মাদক বিক্রেতা, সেবী ও গডফাদার আত্মসমর্পণ করেছেন। তারা লিখিত মুচলেকা দিয়ে মাদক ছেড়ে স্বাভাবিক জীবনে ফিরে আসার অঙ্গীকার করায় পুলিশ প্রশাসনের পক্ষ থেকে তাদের সংবর্ধনা দেয়া হয়। তবে যাদের বিরুদ্ধে পূর্বে মামলা রয়েছে তারা নিজ নিজ অবস্থান থেকে মামলা পরিচালনা করবেন। পুলিশের পক্ষ থেকে সমাজের ঘৃণিত ব্যক্তি হিসেবে পরিচিত মাদক বিক্রেতা, সেবী ও গডফাদারের আত্মসমর্পণের মাধ্যমে স্বাভাবিক জীবনে ফিরে আসার সুযোগ করে দেয়ায় সংশ্লিষ্ট উর্ধতন কর্মকর্তাদের ধন্যবাদ জানিয়েছেন সুশীল সমাজের নেতৃবৃন্দরা। সূত্র মতে, পুলিশের আইজি জনগণের সঙ্গে পুলিশের সেতুবন্ধন তৈরি করতে কমিউনিটি পুলিশকে শক্তিশালী করার জন্য সারাদেশে কার্যক্রম শুরু করেছেন। নিজে বিভিন্ন এলাকা চষে বেড়াচ্ছেন। তারই ধারাবাহিকতায় বরিশাল মেট্রোপলিটন পুলিশ কমিশনার এসএম রুহুল আমিনের প্রচেষ্টায় কোতোয়ালি মডেল থানা এলাকায় কমিউনিটি পুলিশকে শক্তিশালী করার উদ্যোগ নিয়েছেন ওসি শাহ মোঃ আওলাদ হোসেন পিপিএম। ইতোমধ্যে জঙ্গী, মাদক ও সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে প্রতিটি ওয়ার্ডে জনসচেতনতা তৈরি করে আসছেন কোতোয়ালি মডেল থানা পুলিশ। প্রায় প্রতিদিন বিভিন্ন ওয়ার্ড ও গুরুতপূর্ণ এলাকায় অনুষ্ঠিত হচ্ছে সভা-সমাবেশ। এছাড়াও স্থানীয় পর্যায়ে সৃষ্ট নানাবিধ বিরোধ ও সালিশের সমাধানও হচ্ছে কমিউনিটি পুলিশিং কমিটির মাধ্যমে। কমিউনিটি পুলিশিং কার্যক্রমে গতিশীলতা ফিরে আসায় ক্রমেই বরিশালে কমে আসছে অপরাধপ্রবণতা। সংশ্লিষ্ট সূত্র মতে, কমিউনিটি পুলিশের মাধ্যমে সামাজিক অপরাধ ও বিশৃঙ্খলা জনিত সমস্যাসমূহ চিহ্নিত করে সমাধানমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ, সামাজিক অপরাধের বিরুদ্ধে জনগণকে সংগঠিত করা, জনগণের প্রতিভা, মেধা ও ক্ষমতাকে কাজে লাগানো এবং আইন প্রয়োগে জনগণকে অংশগ্রহণ করানোর পাশাপাশি সমাজের অপরাধপ্রবণতা, চোরাচালান, মাদকের অপব্যবহার, নাশকতা ও রাষ্ট্রবিরোধী কর্মকা-ের তথ্য সংগ্রহ করে পুলিশকে প্রদান করাই হচ্ছে কমিউনিটি পুলিশের মূল কাজ। পাশাপাশি সমাজের দুর্বল শ্রেণী যথা নারী, শিশু, বৃদ্ধ সংখ্যালঘু, প্রতিবন্ধী ও অসহায়দের স্বার্থ রক্ষা এবং প্রয়োজনীয় সহায়তা প্রদান করে আসছেন কমিটির সদস্যরা। ফলে মহানগর এলাকাসহ জেলার প্রায় প্রতিটি উপজেলায় কমে আসতে শুরু করেছে অপরাধপ্রবণতা। বরিশালের সাংবাদিক তানভির আহম্মেদ অভি বলেন, শুনেছি অনেক আগে থেকেই কমিউনিটি পুলিশের কার্যক্রম ছিল। কিন্তু কোতোয়ালি মডেল থানায় ওসি আওলাদ হোসেন যোগদানের পর নিজের চোখে দেখতে পাচ্ছি কমিউনিটি পুলিশ কতটা শক্তিশালী। কোতোয়ালি মডেল থানার চৌকস অফিসার ইনচার্জ ওসি শাহ মোঃ আওলাদ হোসেন পিপিএম বলেন, বিশিষ্ট ব্যবসায়ী ও সাদা মনের মানুষ হিসেবে পদকপ্রাপ্ত শিল্পপতি বিজয় কৃষ্ণ দে-কে আহবায়ক এবং সমাজসেবক মাহমুদুল হক খান মামুনকে সদস্যসচিব করে গঠিত হয়েছে কোতোয়ালি মডেল থানা কমিউনিটি পুলিশিং কমিটি। এছাড়াও নগরীর ওয়ার্ডে ওয়ার্ডে বিভিন্ন শ্রেণী ও পেশার সামাজিক ব্যক্তি নিয়ে গঠিত হয়েছে কমিউনিটি পুলিশিং কমিটি। কমিউনিটি পুলিশের উদ্যোগে ১০টি এলাকায় বড় পরিসরে সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়েছে। চলমান অন্যান্য ওয়ার্ডের কার্যক্রমও। ওসি আওলাদ হোসেন বলেন, কমিউনিটি পুলিশিং হচ্ছে বাংলাদেশ পুলিশের একটি অরাজনৈতিক ও সামাজিক স্বেচ্ছাসেবী সহযোগী সংগঠন। কমিউনিটি পুলিশের মাধ্যমে খুব অল্প সময়ের মধ্যেই বাংলাদেশ পুলিশ একটি গণমুখী ও আধুনিক পুলিশ বাহিনীর মডেল হিসেবে আবির্ভূত হবে। কমিউনিটি পুলিশের সহযোগিতায় শীঘ্রই কোতোয়ালি মডেল থানা এলাকার মাদক ব্যবসায়ী, সেবীসহ সকল সামাজিক অপরাধীরা সমাজের স্বাভাবিক পরিবেশে ফিরে আসবে। তবে কমিউনিটি পুলিশের মাদক বিরোধী কার্যক্রমের সফলতাই বেশি। যার ফলে ইতোমধ্যে নগরীর অসংখ্য চিহ্নিত মাদক বিক্রেতা, সেবী ও গডফাদার আত্মসমর্পণের পর লিখিত মুচলেকা দিয়ে স্বাভাবিক জীবনে ফিরে আসার অঙ্গীকার করেছেন। জেলা পুলিশ সুপারের কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, এক মাসে উজিরপুর, বাবুগঞ্জ, মুলাদী, আগৈলঝাড়া, গৌরনদী, বাকেরগঞ্জসহ অন্যান্য থানায় সহস্রাধিক মাদক বিক্রেতা, সেবী ও গডফাদার আত্মসমর্পণের পর লিখিত মুচলেকা দিয়ে স্বাভাবিক জীবনে ফিরে আসার অঙ্গীকার করায় পুলিশের পক্ষ থেকে তাদের সংবর্ধনা দেয়া হয়েছে। সম্প্রতি কোতোয়ালি মডেল থানার আয়োজনে অনুষ্ঠিত জঙ্গীবাদ, সন্ত্রাস ও মাদক প্রতিরোধ এবং কমিউনিটি পুলিশিং কমিটি পুনর্গঠনকল্পে অনুষ্ঠিত মতবিনিময় সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে মেট্রোপলিটন পুলিশ কমিশনার এসএম রুহুল আমিন বলেন, কোন পুলিশ সদস্যর বিরুদ্ধে মাদক ব্যবসায়ীর সঙ্গে সম্পৃক্ততার প্রমাণ পেলে তার গায়ে আর পুলিশের পোশাক থাকবে না। আর যারা মাদক ব্যবসার সঙ্গে জড়িত তারা যদি এ পথ ত্যাগ করেন; পুলিশের পক্ষ থেকে তাদের একবার সুযোগ দেয়া হবে। যারা এ পেশা ছাড়বেন তারা ভাল থাকবেন, আর যারা ছাড়বেন না তাদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। মাদক, সন্ত্রাস আর জঙ্গীবাদের বিরুদ্ধে পুলিশ বাহিনী জিরো টলারেন্সে কাজ করবে। পুলিশ কমিশনার আরও বলেন, যারা ইসলামের দোহাই দিয়ে মানুষ হত্যা করে তারা কখনও ইসলামের লোক হতে পারে না। এলাকায় অপরিচিত লোকজনের আগমন বা সন্দেহভাজন ব্যক্তির ওপর নজর রেখে কমিউনিটি পুলিশিং কমিটির সদস্যদের কিংবা থানা পুলিশকে বিষয়টি অবহিত করার জন্য পুলিশ কমিশনার সকলের প্রতি আহ্বান জানান।
×