ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

সোনাকাটা টেংরাগিরি বনের ইকোপার্কের বেহালদশা

প্রকাশিত: ০৪:৪৫, ২৫ মার্চ ২০১৭

সোনাকাটা টেংরাগিরি বনের ইকোপার্কের বেহালদশা

নিজস্ব সংবাদদাতা, আমতলী, বরগুনা, ২৪ মার্চ ॥ তালতলী উপকূলীয় সংরক্ষিত বনাঞ্চল নিশানবাড়িয়া ও নিদ্রাছকিনা নৈসর্গিক প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের লীলাভূমি। এ বনাঞ্চলে রয়েছে সোনাকাটা টেংরাগিরি সংরক্ষিত বনাঞ্চলের ইকোপার্ক। চরম অযতœ ও অবহেলায় এ ইকোপার্ক অধিকাংশ বেষ্টনী ভেঙ্গে পড়েছে। ভেতরের রাস্তার বেহালদশা। কাঠের পুলগুলো ভাঙ্গা। খাবার সঙ্কটের কারণে শূকর, মেছোবাঘ ও কচ্ছপ ছেড়ে দেয়া হয়েছে। পটুয়াখালী বন উপ-বিভাগীয় তালতলী রেঞ্জ কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, ১৩ হাজার ৬৩৪ একর জমির ওপর এ উপকূলীয় সংরক্ষিত বনাঞ্চল। বঙ্গোপসাগরে কোলঘেঁষা এ বনাঞ্চলের বৈশিষ্ট্য হচ্ছেÑ দক্ষিণে সাগর, পূর্বে কুয়াকাটা, পশ্চিমে পায়রা (বুড়িশ্বর) নদী, উত্তরে তালতলী ও আমতলী উপজেলা। প্রাকৃতিক সৌন্দের্যের অপরূপ লীলাভূমি এ বনাঞ্চল। এ বনাঞ্চলে রয়েছে সোনাকাটা টেংরাগিরি সংরক্ষিত ইকোপার্ক। এখানে দাঁড়িয়ে সূর্যাস্তের মনোরম দৃশ্য উপভোগ করা যায়। তিনদিকে সাগর ও ৯টি ক্যালেন (খাল) বেষ্টিত এ বনাঞ্চল। শীত মৌসুমে নৌ-ভ্রমণে শত শত পর্যটকরা এখানে আসে। ২০১২-১৩ অর্থবছরে টেংরাগিরি বিটে পরিবেশ ও বন মন্ত্রণালয় এবং আমতলী উপজেলা পরিষদ ২ কোটি ৬৩ লাখ টাকা ব্যয়ে গড়ে তুলেছে সোনাকাটা টেংরাগিরি সংরক্ষিত বনাঞ্চলে ইকোপার্ক। এ বছর বেসরকারী সংস্থা উইনরক ইন্টারন্যাশনাল ১২ লাখ ৬৩ হাজার ৮৫৮ টাকা ব্যয়ে ঘাটলা, রাস্তার পাশে মাটির কাজ ও পর্যটকদের বিশ্রামাগার নির্মাণকাজ করছে। ২০১২ সালে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ইকোপার্কের আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করেন। ওই সময় ইকোপার্কটিতে ২টি কুমির, ৯টি হরিণ, ২৬টি শূকর ও ১টি মেছোবাঘ ছিল। বর্তমানে খাবার সরবরাহ না থাকায় শূকর, কচ্ছপ ও মেছোবাঘ ছেড়ে দেয়া হয়েছে। বৃহস্পতিবার সরেজমিনে ঘুরে দেখা গেছে, বাউন্ডারি প্রাচীর খসে যাচ্ছে। লোহার খাঁচাগুলোতে মরিচা ধরেছে। পার্কের ভেতরে সুপেয় পানির জন্য গভীর নলকূপ বসানো থাকলেও তাতে কোন পানি উঠছে না। পয়ঃনিষ্কাশনের ব্যবস্থা থাকলেও শৌচাগারগুলো পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতার অভাবে পরিত্যক্ত অবস্থায় পড়ে আছে। পর্যটকদের জন্য বসার জায়গা থাকলেও তা পর্যাপ্ত নয়। যে কয়টি রয়েছে তা অপরিচ্ছন্ন। বন্যপ্রাণীদের জন্য নেই কোন ছাউনি। ভেতরের রাস্তার ইট খসে পড়েছে। ৯টি কাঠের পুল চলাচলের অনুপযোগী হয়ে পড়েছে। বেষ্টনীর মধ্যে শুধু ৫টি হরিণ ও ২টি কুমির আছে। বাকি বেষ্টনীতে কোন প্রাণী নেই। বেষ্টনীগুলো ফাটল ধরেছে। বেষ্টনীর নিচের ক্যানেলের লোহার রড ভেঙ্গে গেছে। শুরুতে যে প্রাণী ছিল বর্তমানে ওই প্রাণীগুলো নেই। বাঘের খাঁচায় বাঘ নেই, শূকরের খাঁচা শূন্য, পুকুরে কচ্ছপ নেই। পর্যটক নজরুল ইসলাম বলেন, পার্কের ভেতরের করুণ অবস্থা দেখে মনে হয় এটা কোন অরক্ষিত বনাঞ্চল। পার্কের মধ্যে কোন সুপেয় পানির ব্যবস্থা নেই। গভীর নলকূপ অকেজো অবস্থায় পড়ে আছে। তিনি আরও বলেন পর্যটকদের বসার স্থান ও পয়ঃনিষ্কাশনের শৌচাগারগুলো অত্যন্ত অপরিচ্ছন্ন। টেংরাগিরি (সকিনা) বিটের কর্মকর্তা সজীব কুমার কর্মকার জানান প্রাণীদের জন্য খাদ্য সরবরাহের অর্থ বরাদ্দ না থাকায় শূকর, মেছোবাঘ ও কচ্ছপ ছেড়ে দেয়া হয়েছে। তিনি আরও বলেন পার্ক সংস্কারের জন্য সরকারী কোন বরাদ্দ নেই।
×