ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

দুটি তদন্ত কমিটি গঠন

বাংলাদেশ ব্যাংক ভবনে আগুন নিয়ন্ত্রণে ॥ পুড়েছে গুরুত্বপূর্ণ নথিপত্র কিছু ফাইলপত্র ও অগ্নিকা-ের ঘটনায় দুই কমিটি গঠন, নিরপিত্তা জোরদার

প্রকাশিত: ০৯:০৭, ২৪ মার্চ ২০১৭

বাংলাদেশ ব্যাংক ভবনে আগুন নিয়ন্ত্রণে ॥ পুড়েছে গুরুত্বপূর্ণ নথিপত্র কিছু ফাইলপত্র ও  অগ্নিকা-ের ঘটনায় দুই কমিটি গঠন, নিরপিত্তা জোরদার

স্টাফ রিপোর্টার ॥ বাংলাদেশে ব্যাংকে অগ্নিকা-ের ঘটনা ঘটেছে। ব্যাংকটির ১৪তলায় বৈদেশিক মুদ্রানীতি শাখায় অগ্নিকা-ের ঘটনাটি ঘটে। আগুনে তেমন কোন ক্ষয়ক্ষতি না হলেও ব্যাপক আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়েছিল। কিছু ফাইলপত্র ও কম্পিউটারের কিছু সিপিও পুড়ে গেছে। রিজার্ভ চুরির ঘটনার পর অগ্নিকা-ের ঘটনাটি বিশেষ গুরুত্বের সঙ্গে খতিয়ে দেখা হচ্ছে বলে ব্যাংক ও ফায়ার সার্ভিস কর্তৃপক্ষ বলছে। ঘটনাটি তদন্তে ফায়ার সার্ভিসের তরফ থেকে পাঁচ সদস্য বিশিষ্ট একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। কমিটিকে পাঁচ কার্যদিবসের মধ্যে তদন্ত প্রতিবেদন দাখিল করতে বলা হয়েছে। এছাড়া বাংলাদেশ ব্যাংক কর্তৃপক্ষও তিন সদস্য বিশিষ্ট একটি তদন্ত কমিটি করেছে। পুরো এলাকা ঘিরে রেখেছে পুলিশ ও র‌্যাব। সর্বসাধারণের প্রবেশ নিষিদ্ধ করা হয়েছে। ব্যাংকের ভেতরে, সামনে, পেছনে ও আশপাশে প্রচুর পুলিশ ও র‌্যাব মোতায়েন করা হয়েছে। ঘটনার পর পরই অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত, অর্থ প্রতিমন্ত্রী এমএ মান্নান, বাংলাদেশ ব্যাংকের গবর্নর ফজলে কবির, ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের কমিশনার আসাদুজ্জামান মিয়াসহ সরকার ও প্রশাসনের বিভিন্ন পর্যায়ের উর্ধতন কর্মকর্তারা ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন। রিজার্ভ চুরির পর অগ্নিকা-ের ঘটনাটি নিছক অগ্নিকা- নাকি পরিকল্পিত নাশকতা তা খতিয়ে দেখছে ব্যাংক, ফায়ার সার্ভিস ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। ঘটনাস্থল থেকে আলামত সংগ্রহ করেছে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ সিআইডির ফরেনসিক ইউনিট। সংগৃহীত আলামতের পরীক্ষা-নিরীক্ষা চলছে সিআইডির ফরেনসিক ল্যাবরেটরিতে। বৃহস্পতিবার রাত সাড়ে নয়টার দিকে ৩০তলা কেন্দ্রীয় ব্যাংকটির ১৪তলায় আগুনের সূত্রপাত হয়। ফ্লোরটিতে বৈদেশিক মুদ্রানীতি বিভাগের মহাব্যবস্থাপক জিএম মাসুদ বিশ্বাস অফিস। ফায়ার সার্ভিসের ১২টি ইউনিটের অন্তত ৭০ জন দমকল কর্মী রাত সাড়ে ১০টার দিকে আগুন নিয়ন্ত্রণে আনতে সক্ষম হন। বাংলাদেশ ব্যাংকের সহকারী মুখপাত্র (মহাব্যবস্থাপক) আবুল কালাম আজাদ স্বাক্ষরিক এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, ব্যাংকটির ১৪তলায় রাত নয়টা ২০ মিনিটে আগুন লাগে। ফায়ার সার্ভিস এসে মাত্র ৩০ মিনিটের মধ্যে আগুন নিয়ন্ত্রণে আনে। ঘটনা তদন্তে নির্বাহী পরিচালক-১ আহমেদ জামালের নেতৃত্বে তিন সদস্য বিশিষ্ট একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। কমিটির অপর দুই সদস্য হচ্ছেন, নিরাপত্তা বিভাগের মহাব্যবস্থাপক লে. কর্নেল (অব) মোঃ মাহমুদুল হক খান চৌধুরী ও কমন সার্ভিস বিভাগ-২ এর মহাব্যবস্থাপক মোঃ তফাজ্জল হোসেন। কমিটিকে আগামী ২৮ মার্চের মধ্যে প্রতিবেদন জমা দিতে বলা হয়েছে। ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্সের মহাপরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল আলী আহমেদ খান জানান, কেন্দ্রীয় ব্যাংকটির দক্ষিণ-পূর্ব কোণার দিকে অগ্নিকা-ের সূত্রপাত হয়। আগুনে ওই কক্ষের ১০ থেকে ১৫ শতাংশ জিনিসপত্র পুড়ে গেছে। কোন কম্পিউটার সার্ভারে আগুন লাগেনি। তবে কয়েকটি কম্পিউটারের সিপিও পুড়ে গেছে। বেশ কিছু ফাইলপত্র ও সেখানে থাকা কিছু কাগজপত্র পুড়ে গেছে। বড় ধরনের কোন ক্ষয়ক্ষতি হয়নি। বৈদ্যুতিক গোলযোগের কারণে অগ্নিকা-ের ঘটনাটি ঘটে থাকতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে। কারণ যেখানে আগুনের সূত্রপাত বলে ধারণা করা হচ্ছে, সেখানে অনেক বৈদ্যুতিক তারের সংযোগ দেখা ছিল বলে বুঝা যাচ্ছিল। আর তার পাশেই বাথরুম রয়েছে। তবে তদন্ত না করে ঘটনাটি নিছক অগ্নিকা- না-কি নাশকতা তা বলা যাচ্ছে না। আগুনের কারণ অনুসন্ধানে ফায়ার সার্ভিসের পক্ষ থেকে পাঁচ সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি করা হয়েছে। কমিটিকে পাঁচ কার্যদিবসের মধ্যে তদন্ত প্রতিবেদন দাখিল করতে বলা হয়েছে। কমিটির প্রধান করা হয়েছে ফায়ার সার্ভিসের ঢাকা মেট্রোর উপপরিচালক সমরেন্দ্র নাথ বিশ্বাসকে। আগুনে গুরুত্বপূর্ণ কোন নথিপত্র পুড়েছে কিনা বা নষ্ট হয়েছে কিনা তা বাংলাদেশ ব্যাংক কর্তৃপক্ষ খতিয়ে দেখছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের পেছন দিকে দেখা গেছে, ১৪তলার কোণায় আগুন লাগার জায়গাটি কালো হয়ে আছে। তার আশপাশের জায়গাও কালো হয়ে গেছে। স্থানীয়রা জানান, ফায়ার সার্ভিসের গাড়িগুলো প্রথমে সামনে দিয়ে ঢুকে। তবে তারা ভেতরে ঢুকে অগ্নিকা-ের জায়গায় পানি দিতে পারছিল না। পরে ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা পেছন দিক দিয়ে আগুনের কাছে যেতে সক্ষম হয়। খুব কাছ থেকে পেছনের কাঁচ ভেঙ্গে আগুনে পানি দেয়ায়, দ্রুত আগুন নিভে যায়। ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা ভবনের পেছন দিকের ভেঙ্গে ফেলার কাঁচের ফাঁক দিয়ে ভেতরে প্রবেশ করে। ফায়ার সার্ভিসের পরিচালক (অপারেশনস) মেজর একেএম শাকিল নেওয়াজ জানান, আগুন নেভানোর পরও রাত বারোটা নাগাদ ফ্লোরটির বিভিন্ন জায়গায় পানি দেয়া হয়েছে। যাতে কোথাও আগুন না থাকতে পারে। কোন প্রকার আশঙ্কা যাতে না থাকে। জানা গেছে, অগ্নিকা-ের সময় কেউ ওই ফ্লোরে ছিল না। আগামী ২৬ মার্চ মহান স্বাধীনতা ও জাতীয় দিবস উপলক্ষে বাংলাদেশ ব্যাংকে কিছু সংস্কার কাজ চলছে। তবে রাত আটটার দিকে কাজ শেষে সংস্কার কাজে যুক্ত সবাই বেরিয়ে যান।
×