ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

আন্তরিকতার সঙ্গে দায়িত্ব পালন করুন ॥ নবীন কর্মকর্তাদের প্রধানমন্ত্রী

প্রকাশিত: ০৯:০৩, ২৪ মার্চ ২০১৭

আন্তরিকতার সঙ্গে দায়িত্ব পালন করুন ॥ নবীন কর্মকর্তাদের প্রধানমন্ত্রী

প্রশাসনের নবীন কর্মকর্তাদের সততা, আন্তরিকতা ও নিষ্ঠার সঙ্গে দায়িত্ব পালনের আহ্বান জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, স্বাধীন দেশে প্রতিটি মানুষের অধিকার নিশ্চিত করতে হবে। প্রধানমন্ত্রী বলেন, নবীন কর্মকর্তাদের আমি এটুকুই বলব আমাদের সব সময় মনে রাখতে হবে যে, লাখো শহিদের রক্তের বিনিময়ে অর্জিত আমাদের এই স্বাধীনতা। স্বাধীন দেশে প্রতিটি মানুষের অধিকার নিশ্চিত করতে হবে। এ দেশকে উন্নত-সমৃদ্ধ করতে হবে। খবর বাসসর। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে লোক প্রশাসন প্রশিক্ষণ কেন্দ্র ও অন্যান্য পাঁচটি প্রতিষ্ঠান আয়োজিত ৬৩তম বুনিয়াদী প্রশিক্ষণ কোর্সের সনদ বিতরণ অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির ভাষণে একথা বলেন। প্রধানমন্ত্রী বলেন, এখন আমরা এটাই চাই জনসেবা কি করে নিশ্চিত করা যায়। জাতির পিতা প্রতিটি মহকুমাকে জেলায় রূপান্তরের মাধ্যমে ক্ষমতা বিকেন্দ্রীকরণ শুরু করেছিলেন। আমরা তারই পদাঙ্ক অনুসরণ করে বিভিন্নস্তরে স্থানীয় সরকার গঠন করেছি। এবারই প্রথমবারের মতো জেলা প্রশাসনের প্রতিনিধি নির্বাচন হলো। এই নির্বাচিত প্রতিনিধিদের মাধ্যমে স্থানীয় সরকার শক্তিশালী করতে চাই। জনসংখ্যার আধিক্যের জন্য আমরা ক্ষমতাকে বিকেন্দ্রীকরণ করে দ্রুত উন্নয়নের উদ্যোগ নিতে চাই। এই জনসংখ্যা যেন সেবা পায় সেটা নিশ্চিত করাই আমাদের লক্ষ্য। প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমাদের প্রশাসনের কর্মকর্তারা যারা বিভিন্ন উন্নয়নের সঙ্গে সম্পৃক্ত সকলকেই স্ব স্ব ক্ষেত্রে আন্তরিকতার সঙ্গে এই কাজ করতে হবে। এজন্য সফলভাবে আমাদের প্রকল্পগুলো যেন গৃহীত ও বাস্তবায়িত হয় তা নিশ্চিত করা সকলের দায়িত্ব। অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি অর্থমন্ত্রী এবং বাংলাদেশ লোক প্রশাসন প্রশিক্ষণ কেন্দ্র (বিপিএটিসি) পরিচালনা পরিষদের চেয়ারম্যান আবুল মাল আব্দুল মুহিত, জনপ্রশাসনমন্ত্রী সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম ও প্রতিমন্ত্রী ইসমাত আরা সাদেক বক্তৃতা করেন। সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব ড. মোজাম্মেল হক খান অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তৃতা করেন। অভিজ্ঞতা ব্যক্ত করে অনুষ্ঠানে বক্তৃতা করেন, ৩৪তম বিসিএস সাধারণ ক্যাডারের সদস্য সানজিদা পারভীন এবং কৃষি সম্প্রসারণ কর্মকর্তা খান সালেহীন। বিপিএটিসির রেক্টর আ ন ম আব্দুর রহমান অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন। অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রীর উপদেষ্টা ড. তৌফিক-এলাহী-চৌধুরী, জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি এএইচএন আশিকুর রহমান, প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সচিব ড. কামাল আব্দুল নাসের চৌধুরী, প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের এসডিজি বিষয়ক সমন্বয়ক আবুল কালাম আজাদসহ সরকারের উচ্চ পর্যায়ের কর্মকর্তা এবং প্রশিক্ষকসহ প্রশিক্ষণ কোর্স সম্পন্নকারী প্রশাসনের নবীন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন। গত বছর ২৫ সেপ্টেম্বর এই ৬৩তম বুনিয়াদি প্রশিক্ষণ কোর্স চালু হয়। বাংলাদেশ সিভিল সার্ভিস ও জুডিশিয়াল সার্ভিসের ৫৬৭ কর্মকর্তা প্রশিক্ষণ সম্পন্ন করেন। যার মধ্যে ১৬২ নারী কর্মকর্তাও রয়েছেন। ৬ মাসের প্রশিক্ষণ শেষে কর্মকর্তাদের দু’মাস হাতেকলমে শিক্ষা প্রদান করা হয়। প্রধানমন্ত্রী অনুষ্ঠানে ছয়টি প্রতিষ্ঠানের শতকরা ৫ ভাগ হারে ৩০ প্রশিক্ষণার্থী কর্মকর্তার হাতে মেরিট মেডেল এবং সনদপত্র তুলে দেন। প্রধানমন্ত্রী বলেন, জাতির পিতা সব সময় বলতেনÑবাংলাদেশের মানুষের সার্বিক উন্নতিই ছিল তার একমাত্র কামনা ও স্বপ্ন। বাংলাদেশের মানুষ যেন অন্ন, বস্ত্র, শিক্ষা, বাসস্থান এবং উন্নত জীবন পায় সেটা নিশ্চিত করাই তার জীবনের একমাত্র সাধনা ছিল। কিন্তু তিনি সেটা করে যেতে পারেননি। তিনি যদি বেঁচে থাকতেন তাহলে বাংলাদেশ অনেক আগেই একটি উন্নত, সমৃদ্ধ দেশ হিসেবে গড়ে উঠত। যেমন আমরা দৃষ্টান্ত দেই সিঙ্গাপুর বা মালয়েশিয়া বা বিভিন্ন দেশের। তখন বাংলাদেশই হতো বিশ্বে উন্নয়নের একটি দৃষ্টান্ত। তিনি বলেন, বঙ্গবন্ধুর অসমাপ্ত কাজ সম্পন্ন করাই আমাদের লক্ষ্য। মানুষ যেন উন্নত জীবনের অধিকারী হয় সে জন্য প্রযুক্তিনির্ভর বাংলাদেশ গড়ে তোলাও আমাদের অন্যতম লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য। তিনি বলেন, আমরা ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ার যে ঘোষণা দিয়েছিলাম তা আজ বাস্তব। কাজেই এই উন্নয়ন আমাদের অব্যাহত রাখতে হবে দেশের মানুষের জন্য। কাজেই আজকে যারা নবীন কর্মকর্তা দায়িত্ব নিচ্ছেন তাদের কাছে আমার এই একটাই অনুরোধ থাকবে, আন্তরিকতার সঙ্গে দেশের মানুষের কল্যাণের জন্য কাজ করতে হবে। এ প্রসঙ্গে জাতির পিতার একটি ভাষণ উদ্ধৃত করে প্রধানমন্ত্রী জানান, সরকারী কর্মচারিগণের উদ্দেশে প্রদত্ত এক ভাষণে তিনি বলেন, ‘আপনি চাকরি করেন, আপনার মাইনা দেয় ঐ গরিব কৃষক, আপনার মাইনা দেয় ঐ গরীব শ্রমিক, আপনার সংসার চলে ঐ টাকায়, আমি গাড়ি চড়ি ঐ টাকায়... ওদের সম্মান করে কথা বলেন, ওদের ইজ্জত করে কথা বলেন, ওরাই মালিক।’ প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমাদের সংবিধানের সপ্তম অনুচ্ছেদে স্পষ্ট বলা আছেÑ ‘প্রজাতন্ত্রের মালিক জনগণ।’ কাজেই এ দেশের জনগণের আর্থ-সামাজিক উন্নতি নিশ্চিত করাই আমাদের লক্ষ্য। প্রধানমন্ত্রী দেশের আর্থ-সামাজিক উন্নয়নের প্রসঙ্গ তুলে ধরে ১৯৫৬ সালে পাকিস্তানের ডন পত্রিকায় প্রকাশিত একটি রিপোর্ট অনুযায়ী পাকিস্তান আমলে পূর্ব-পশ্চিমের বৈষম্যও উল্লেখ করেন। প্রধানমন্ত্রী ২৫ মার্চ গণহত্যা শুরুর পর পরই বঙ্গবন্ধুর স্বাধীনতার ঘোষণা এবং ইপিআরের ওয়্যারলেসে তা দেশব্যাপী প্রচারের প্রসঙ্গ উল্লেখ করে বলেন, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে স্বাধীনতা ঘোষণার পর পরই গ্রেফতার করে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানেও তাকে মামলা দিয়ে ফাঁসিতে ঝোলানোর চেষ্টা করা হয়। ইয়াহিয়া খান তাকে ফাঁসিতে ঝোলানোর হুকুম দিলেও যেহেতু আমরা সে সময়ে স্বাধীনতা অর্জন করি, তাই আন্তর্জাতিক জনমতের চাপে তাকে মুক্তি দিতে বাধ্য হয়। ১৯৭২ সালের ১০ জানুয়ারি আমাদের মাঝে এসে একটি স্বাধীন বাংলাদেশ কিভাবে চলবে বঙ্গবন্ধু তার রূপরেখা প্রণয়ন করেন। শেখ হাসিনা বলেন, বাংলাদেশ একমাত্র দেশ যেখানে দেশ স্বাধীন হওয়ার তিন মাসের মধ্যে আমাদের মিত্রশক্তি অন্যান্য দেশের মতো ঘাঁটি গেঁড়ে না থেকে দেশ ত্যাগ করে। এজন্য প্রধানমন্ত্রী ভারতের তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধী এবং স্বাধীনচেতা নেতা বঙ্গবন্ধুর বলিষ্ঠ ভূমিকার প্রসঙ্গ তুলে ধরেন। প্রধানমন্ত্রী প্রশাসনের নবীন কর্মকর্তাদের উদ্দেশে বলেন, আমার বিশ্বাস, ৬ মাস মেয়াদি প্রশিক্ষণের মাধ্যমে বিভিন্ন বিষয়ভিত্তিক তাত্ত্বিক ও ব্যবহারিক জ্ঞানের যথাযথ প্রয়োগ এবং জনসেবার মনোভাব জাতীয় উন্নয়নে কাক্সিক্ষত ভূমিকা পালনে আপনাদের সহায়তা করবে। আমার নির্দেশনায় সম্প্রতি প্রবর্তিত ২ মাস মেয়াদি মাঠ সংযুক্তি কার্যক্রম অর্জিত তাত্ত্বিক জ্ঞানকে বাস্তবতার নিরিখে আরও শাণিত করতে প্রশিক্ষণার্থীগণকে সহায়তা করবে বলে আমি মনে করি। তিনি বলেন, আমরা সরকারী কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বেতন ১২৩ ভাগ পর্যন্ত বাড়িয়েছি। আমাদের সরকার বাংলা নববর্ষ উৎসব ভাতা চালু করেছে। বেতন-ভাতার নিরিখে সরকারী চাকরি এখন অনেক আকর্ষণীয় হয়েছে। প্রধানমন্ত্রী বলেন, আর্থ-সামাজিক উন্নয়নে বাংলাদেশ এখন বিশ্বে ‘রোল মডেল’। স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী লগ্নে বাংলাদেশকে একটি মধ্যম আয়ের দেশে পরিণত করার লক্ষ্যে নিরবচ্ছিন্ন কর্মপ্রয়াসও চলছে। ২০২১ সালের আগেই আমরা বাংলাদেশকে মধ্যম আয়ের এবং ২০৪১ সালের মধ্যে উন্নত-সমৃদ্ধ দেশে পরিণত করব, ইনশাআল্লাহ। পরে নবীন প্রশাসনিক কর্মকর্তাদের অংশগ্রহণে মনোজ্ঞ সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানও উপভোগ করেন প্রধানমন্ত্রী।
×