কূটনৈতিক রিপোর্টার ॥ ‘সাউথ এশিয়া স্যাটেলাইট’ কর্মসূচীতে অংশ নেয়ার জন্য ভারতের সঙ্গে চুক্তিবদ্ধ হয়েছে বাংলাদেশ। বৃহস্পতিবার বিটিআরসি কার্যালয়ে সংস্থার চেয়ারম্যান শাহজাহান মাহমুদ ও ভারত সরকারের পক্ষে ঢাকায় নিযুক্ত হাইকমিশনার হর্ষবর্ধন শ্রিংলা এ চুক্তিতে সই করেন। ভারতের উদ্যোগে মহাকাশে এ স্যাটেলাইট পাঠানো হচ্ছে।
চুক্তি সই অনুষ্ঠানে পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলম বলেন, এ যুগান্তকারী চুক্তির ফলে সার্ক অঞ্চল স্যাটেলাইটের মতো হাইটেক সহযোগিতায় যুক্ত হলাম। শুধু বাংলাদেশ নয়, এ অঞ্চলের অন্যান্য দেশও যুক্ত হয়েছে। এর পাশাপাশি অন্যান্য অঞ্চলে বার্তা যাবে যে, আমরা কোন অংশে পিছিয়ে নেই। তবে দেশের বাইরে থাকা ডাক ও টেলিযোগাযোগ প্রতিমন্ত্রী তারানা হালিম একটি অডিওবার্তায় চুক্তি স্বাক্ষরকারীদের অভিনন্দন জানান।
বিটিআরসি চেয়ারম্যান শাহজাহান মাহমুদ বলেন, সাউথ এশিয়া স্যাটেলাইটের বারোটি ট্রান্সপন্ডারের মধ্যে একটি বিনামূল্য পাচ্ছে বাংলাদেশ এবং তা যেভাবে ইচ্ছা ব্যবহার করা যাবে। কৃত্রিম উপগ্রহটি উৎক্ষেপণের সমস্ত ব্যয়ভার বহন করছে ভারত সরকার। এ বছরই তা উৎক্ষেপণ হচ্ছে।
চুক্তি সই অনুষ্ঠানে ভারতের হাইকমিশনার হর্ষবর্ধন শ্রিংলা বলেন, এটি উৎক্ষেপণে ৪০ কোটি ডলার খরচ হবে। এ স্যাটেলাইট প্রায় প্রস্তুত রয়েছে, শীঘ্রই উৎক্ষেপণ সম্ভব হবে। সার্কভুক্ত যেসব দেশ ‘সাউথ এশিয়া স্যাটেলাইট’-এর সঙ্গে যুক্ত হবে, তাদের মধ্যে সংযোগ স্থাপন করা সম্ভব হবে।
চুক্তি সই অনুষ্ঠানে পররাষ্ট্র সচিব শহীদুল হক, ডাক ও টেলিযোগাযোগ সচিব শ্যাম সুন্দর শিকদার, বিটিআরসি ভাইস চেয়ারম্যান আহসান হাবিব খানসহ অন্যান্য কর্মকর্তা উপস্থিত ছিলেন।
এ চুক্তির শিরোনাম হলো ‘এগ্রিমেন্ট বিটুইন দ্য গবর্নমেন্টস অব রিপাবলিক অব ইন্ডিয়া এ্যান্ড দ্য গবর্নমেন্ট অব দ্য পিপলস রিপাবলিক অব বাংলাদেশ কনসার্নিং টু অরবিট ফ্রিকোয়েন্সি কো-অর্ডিনেশন অব সাউথ এশিয়া স্যাটেলাইট প্রোপোজড এ্যাট ফোর্টি এইট ডিগ্রী ইস্ট।’ ভারতের উদ্যোগে এ প্রকল্পে অংশগ্রহণের জন্য নেপাল, ভুটান, ইন্দোনেশিয়াসহ কয়েকটি দেশ ইতোমধ্যে সম্মতি দিয়েছে। ভারতের উদ্যোগে ‘সাউথ এশিয়া স্যাটেলাইট’-এর উৎক্ষেপণে বাংলাদেশের অংশগ্রহণ নিশ্চিত করতে গত সোমবার একটি প্রস্তাব অনুমোদন করে মন্ত্রিসভা।
তবে চুক্তিতে শর্ত দেয়া হয়েছে, বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইটের কার্যক্রমে এ স্যাটেলাইট বাধাগ্রস্ত করতে পারবে না। বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট ‘১১৯ ডিগ্রী ইস্টে আর এটি ৪৮ ডিগ্রী ইস্টে’ বলে জানানো হয়েছে। ফ্রান্সের থালিস এলিনিয়া স্পেস ফ্যাসিলিটিতে বাংলাদেশের প্রথম কৃত্রিম উপগ্রহ ‘বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট’ নির্মাণের অর্ধেকের বেশি কাজ শেষ হয়েছে। এ স্যাটেলাইটে ৪০ ট্রান্সপন্ডার থাকবে, যার বিশটি বাংলাদেশের ব্যবহারের জন্য রাখা হবে এবং বাকিগুলো ভাড়া দিয়ে বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন হবে। সব ঠিক থাকলে চলতি বছরের ডিসেম্বরে উৎক্ষেপণের পর ২০১৮ সালের এপ্রিল নাগাদ এ স্যাটেলাইট বাণিজ্যিক অপারেশন শুরু করতে পারবে। তখন বিদেশী স্যাটেলাইটের ভাড়া বাবদ বাংলাদেশের বছরে ১৪ মিলিয়ন ডলার সাশ্রয় হবে বলে সরকার আশা করছে।
সাউথ এশিয়া স্যাটেলাইটের চুক্তির বিষয়ে ঢাকার ভারতীয় হাইকমিশন থেকে পাঠানো এক বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, ভারত ইন্ডিয়ান স্পেস রিসার্চ অর্গানাইজেশনের (আইএসআরও) মাধ্যমে দক্ষিণ এশীয় অঞ্চলসমূহে সেবাদানের জন্য আইএসআরও’র জিওসিনক্রোনাস স্যাটেলাইট লঞ্চ ভেহিকেল (জিএসএলভি এমকে-ওও) ব্যবহার করে ১২-কু ব্যান্ড ট্রান্সপন্ডার্স (প্রতিটি ৩৬ মেগাহার্টজ)-এর সঙ্গে দুই টন শ্রেণীর যোগাযোগ স্যাটেলাইট চালু করবে। স্যাটেলাইট সিস্টেমের আওতায় প্রস্তাবিত আবেদনটির মধ্যে রয়েছে টেলিকমিউনিকেশন, টেলিমেডিসিন ও ইন্টার গবর্নমেন্ট নেটওয়ার্কস, দুর্যোগ অবস্থায় জরুরী যোগাযোগ, টেলিভিশন ব্রডকাস্ট এবং ডিটিএইচ টেলিভিশন সার্ভিস।
প্রতিটি অংশগ্রহণকারী দেশ তাদের নিজস্ব অভ্যন্তরীণ ব্যবহারের জন্য ৩৬ থেকে ৫৪ মেগাহার্টজ ক্ষমতাসম্পন্ন একটি সার্বক্ষণিক সেবাদানকারী প্রান্সপন্ডারের সুবিধা পাবে। প্রতিটি দেশই বিষয়বস্তু সংযোজন ও এর ব্যবহারের জন্য দায়ী থাকবে।
২০১৪ সালে কাঠমান্ডুতে সার্ক সামিট চলাকালে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি ভারতের প্রতিবেশীদের জন্য উপহার হিসেবে স্যাটেলাইটটি উৎক্ষেপণের ঘোষণা দেন। স্যাটেলাইটটি দক্ষিণ এশীয় অঞ্চলের উন্নয়ন এবং আঞ্চলিক উন্নয়নের জন্য অভিজ্ঞতা ও প্রযুক্তি বিনিময়ে ভারতের প্রতিজ্ঞার প্রতিফলন। পাকিস্তান ছাড়া সকল দক্ষিণ এশীয় দেশ এ অনন্য পরিকল্পনার অংশ, যেটি অংশগ্রহণকারী দেশসমূহের জনগণের সুবিধার জন্য একটি সহযোগিতামূলক প্রচেষ্টার মাধ্যমে অঞ্চলটিকে একসূত্রে গেঁথে দেবে।
