বিশ বছর!
কবিতা গঙ্গা ফড়িংয়ের মতো লাফাচ্ছে আর আমি পুচকে বালক। বিশ বছরেও শিখিনি ফড়িংয়ের ডানাধরা বিদ্যা। অথচ রাতদিন ঢুঁ মেরেছি চর্যাপদের পাতায়, মেঘদূতের সান্ধ্যাভাষায়, ঈশ্বর গুপ্তের অনুপ্রাস সমুদ্রে, বিহারীলালের জাদুতে, রবীন্দ্রনাথ, নজরুলের আধুনিক জগতে। জীবনানন্দ দাসের উত্তরাধুনিক সড়কে।
কবিতা কুঁড়াচ্ছি চিরুনির দাঁতে, জুতার জিভে, সংসারের সঙ ঘিরে, রামধনুর রং ঘিরে। পিঁপড়ের ঢিবিতে খুঁজছি শ্রম। ইটের ভাটায় শ্রমিকের ঘামে খুঁজছি মানবতা। নাড়িভুঁড়ি পচে ওঠা দেহে খুঁজছি মানবতা। বোমা বারুদের কাছে প্রার্থনা করছি যুদ্ধবিরতি। কবুতর উড়িয়ে শান্তির ফেরি করছি পৃথিবীর আনাচে-কানাচে।
কবিতা শান্তির কপোত। শান্তির নাম। অক্ষর থেকে গড়িয়ে যাচ্ছে শব্দ। শব্দ থেকে জন্ম নিচ্ছে বাক্য। এ বাক্যে বসে আছে ঋষি লালন। কবিতার শরীর থেকে জন্ম নিচ্ছে অজস্র বোতাম। এক একটা বোতাম এক এক রকম। নানা রঙে গন্ধে ফেরি করে মানবতা।
** গলিপথ
গলিপথ গালি শেখালে বসে থাকি
কানাগলির কারাগারেÑ রুটির খামিরে
মৃতসব পিপঁড়ার ঢিবি; আমাকে শেখায়
শ্রমের পাঠ। এ সমস্থ ভাষাজ্ঞান হাবিয়া
দোজখে বসে রপ্ত করে হলুদ মেয়ে।
গলিপথ গালি শেখালে শুয়োরের ঘ্রাণইন্দ্রিয়
বলে দেয় নরকের সাত রাস্তাÑঅবিশ্বাসী হাত ধরে
পেরিয়ে যাচ্ছি তৃপ্তির নদী।
পুলসেরাত পুলসেরাত
গলিপথে গড়িয়ে যাচ্ছে একজোড়া মাকাল ফল
শুয়োরেরা নেমে আসছে পশু নদীতে;
মানুষের ভাষা শিখছে সারমেয় মেয়ে।
** বেঁচে থাকার ভাষা
জলপাড় খুঁজে পেরিয়ে যাচ্ছি বালু
মরুভাল্লুকের জীবন থেকে শিখে নিচ্ছি
বেঁচে থাকার ভাষা। তৃষ্ণার জগত ঘিরে
ধৈর্যের পাঠরত
চাহিদার মেয়ে।
এটা চাই ওটা চাই
ছাইয়ের ঢিবিতে আগুন খাওয়া কয়লা
আবার পোড়াবে পোড়া তকদির
তকদির কি পোড়ে?
ও জলপাড় মেয়ে
নৈঃশব্দ শেখাচ্ছে ভাষা উত্তর
তবু হেঁটে যাচ্ছি সাভানাÑজলপাড় সন্ধানে!
** পরিবর্তন
নির্বাসনের ভাষা শেখাচ্ছিল নদীর ওপার
আর আমি কাছিমের খুলিতে মদের আসার জমিয়েছিলাম
নদীর এপারে নৃত্যরত ব্যাঙের মেয়ে ব্যাঙভাষা ভুলে
মানুষের ভাষায় বলেছিলÑওয়াও
মৃতের খুলি জুড়ে সন্ধ্যা নামলে
নদীর ওপার পরিবর্তন করে নির্বাসনের সিলেবাস
বেহেড় মাতাল বলে গালি দেয় ঢেউ জগত
রাত ঘিরে বসে থাকি নদীর এপারে
ও মেয়ে ব্যাঙভাষা শিখছি
সিলেবাস পরিবর্তনে।
** শিঙাফোঁকা কাল ঘিরে
শিঙাফোঁকা কাল ঘিরে ভেঙ্গে পড়ছে
ভৌতিক সন্ধ্যাÑকতিপয় মানুষের
হাত ধরে পাড়ি দিচ্ছি আদিগন্ত নদী
অথচ তেঁতুলতলায় এসে দেখি ভূতেরা
বসে আছে শিঙাফোঁকার আনন্দে
পৃথিবী শান্তি খেঁকো এ পাঠে রত আছে
পুঁজিবাদ ভূতের বালিকা। কবিতার নন্দনতত্ত্ব
রেঁধে দিচ্ছি বতুয়ার স্বাদে
থামো যুদ্ধ ভাঙ্গন
শিঙাফোঁকা কাল ঘিরে পাড়ি দিচ্ছি
রক্তের নদী। পায়ে পায়ে বুনে যাচ্ছি
কবিতার বীজ, মুক্তির দানা।