ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

লালঘড়ি

নুফরাত জেরীন

প্রকাশিত: ০৬:৫৬, ২৪ মার্চ ২০১৭

নুফরাত জেরীন

বক্সটার কাছে ছিটকে পড়ে আছে লালঘড়িটা। চকচকে লালফিতার বাচ্চাদের ঘড়ি। বাক্সের গায়ে বড় বড় হরফে লেখা : ‘রুনী সোনার ঝঝঈ পরীক্ষার উপহার’ আব্বু। গত রাতের আগের রাতে এ্যারেস্ট হওয়া আসামিদের সকালে কোর্টে চালান করে দেয়া হয়েছে। এরপর আর কাউকে গ্রেফতার দেখানো হয়নি। আসামিদের কাছ থেকে পাওয়া জরুরী জিনিসপত্র প্রমাণের জন্য সঙ্গে নেয়া হয়েছে। আসামিদের অন্যান্য অপ্রয়োজনীয় জিনিসের সঙ্গে লালঘড়িটাও ডাস্টবিন ফাঁকা করার আগ পর্যন্ত থানার ভাগাড়েই পড়ে থাকবে। বাবা এ্যারেস্ট হওয়ার পর রুনীর জন্য ঘড়ি কেনার সময় নিশ্চয় কারোর হয়নি। হয়ত রুনীর ঘড়ির কথা একটিবারের জন্য মনেও হয়নি কারোর। রোজকার নিয়মে সকাল হয়েছে। রুনী ঝঝঈ পরীক্ষাও দিতে গিয়েছে। হয়ত ওকে একাই যেতে হয়েছে। রুনী কি মোটা কাঁচের চশমা পরে? ওর সিটটা হয়ত পেছন দিকে, যেখান থেকে ব্ল্যাকবোর্ডের ওপরে টানানো কাঁচফাটা ঘড়িটার সময় বোঝা যায় না। রুনী নিশ্চয় ডিউটি টিচারদের চোখ ফাঁকি দিয়ে পেছনের মেয়েটার কাছে বার বার সময় জানতে চাইছে। ফিসফিস করে বলছে, ‘এই ক’টা বাজে?’ থানার ভাগাড় থেকে লালঘড়িটা খিল খিল হেসে অনর্গল ওর কথার জবাব দিয়ে যাচ্ছে। নিঃসন্তান কনস্টেবল আজহারের চোখে কী যেন পড়ে হঠাৎ। এক ফোঁটা জলে লালঘড়ির ছোট্ট প্রতিবিম্বটা গড়িয়ে পড়ে গাল বেয়ে।
×