আজ এই রাতে
আজ রাতজুড়ে আমি লিখতেই পারি বেদনার সেইসব পঙ্ক্তিমালা,
আর লিখতেই পারি, এই তারা ভরা রাত্রিতে-
সেই তারারা যখন বেদনায় হিম নীল দূরত্বে,
যখন রাত্রির আকাশে গান গাইছে ঘূর্ণি বাতাস,
আজ রাতজুড়ে আমি লিখতেই পারি বেদনার সেই কাব্য
আমি ভালোবেসেছিলাম তোমায়, হয়ত তুমিও তাই।
এমনি এক রাতে তারাজ্বলা আকাশের নিচে, ছিলে তুমি আমার বাহুতে,
আমার চুম্বন ছুঁয়েছিল তোমায় অসীম আকাশ হয়ে।
তুমি ভালোবেসেছিলে আমায়, হয়ত আমিও তাই,
আমার চোখ তোমায় দিতে পারেনি দিগন্ত ছোঁয়া প্রেম।
বেদনার সেই কাব্য আমি লিখছি আজ রাতজুড়ে,
যেন ছিলে না তুমি, অথবা তোমায় হারিয়ে ফেলার গল্প।
বিস্তীর্ণ এই রাত্রি, তুমিহীন যা বয়ে আনে অনন্ত বেদনা,
এই কবিতা, আমার আত্মা হয়ে শিশিরের মতো ঝরেপরে দূর্বাঘাসে।
আমার প্রেম শেকল পরায়নি তোমার পায়, কি যায় আসে তাতে,
কি যায় আসে যখন তারাভরা আকাশের নিচে তুমি পাশে নেই!
এই’ত সব। দূরে কোথাও কেউ গাইছে গান। দিগন্তের ওপারে,
যেখানে হারিয়ে গেছে আমার আত্মা-তুমি নেই বলে!
তোমাকে কাছে পাবার অনন্ত কামনা, আমার দৃষ্টির অনুসন্ধান,
তুমি নেই, তবু তোমাকে পাবার আমার হৃদয়ের ব্যাকুল প্রার্থনা
এ’ত থামবার নয়।
এ কথা সত্যি ভালোবাসি না তোমায় আর। কিন্তু কতটা ভালোবেসেছিলাম,
আমার কণ্ঠ খোঁজে সেই হাওয়া, যা তোমায় জানিয়ে দেবে তা।
হতে পারে এই শেষ অনন্ত বেদনা, যা তুমি বয়ে এনেছে আমার জন্য,
হতে পারে এটি’ই শেষ কবিতা, যা আমি লিখছি তোমার জন্য।
প্রেম আমার
আমি তোমায় তেমন ভালোবাসিনি যেন নোনা-গোলাপ কিংবা টোপাজ,
অথবা বাতাসে নিভে যাওয়া গোলাপি অগ্নি তীর।
আমার ভালোবাসা গভীর অন্ধকারে জমাট,
গোপনে খেলা করে আমার ছায়া আর আত্মায়।
আমার ভালোবাসা এমন, যেন পৃথিবীর জন্ম হয়নি,
এ যেন, পুষ্পে লুক্কায়িত বয়ে চলা সৌরভ।
তোমার ভালোবাসার আছে নিজস্ব গন্ধ,
পৃথিবীর শরীর থেকে ঠাঁই করে নিয়েছে শরীরে আমার।
না জেনেই ভালোবাসি তোমায়, কেন, কখন, কিভাবে জানতে চাইও না তা,
আমার ভালোবাসা সরাসরি, নেই কোন জটিলতা কিংবা গর্বের ছোঁয়া।
আমি তোমায় ভালোবাসি কারণ- আর কোন পথ আমার জানা নেই!
যেখানে আমি নেই, নেই তুমিও,
এতটাই কাছে, যেন আমার বুকে নিদ্রিত তোমার হাত-আমারি হাত,
এতটাই কাছে, যেন তোমার চোখ বন্ধ হলে আমিও ঘুমিয়ে পরি।
তোমাকে
যেওনা দূরে চলে, এমনকি এক দিনের জন্যও, কারণ
আমি জানি না কি করে বলতে হয়, সে‘তো অনেক সময়।
শূন্য স্টেশনে দীর্ঘ অপেক্ষা আমার কেবল তোমার জন্য,
ট্রেনগুলো যখন ঘুমিয়ে দূরে কোথাও, অন্য ঠিকানায়।
যেওনা ছেড়ে আমায়, এমনকি এক ঘণ্টার জন্য, কারণ
আমার বেদনা তখন বিন্দু থেকে সিন্ধুতে পরিণত হবে।
ঠিকানা খুঁজে ফেরা শূন্যতা গ্রাস করবে আমায়,
যা ছিন্নভিন্ন করে দেবে তোমাতে হারানো আমার হৃদয়।
হায়! তোমার মূর্তি যেন সমুদ্রতীরে হারিয়ে না যায়,
তোমার আঁখিপল্লব যেন অনিশ্চিত দূরত্বে না হারায়।
প্রিয়তম আমার যেওনা ছেড়ে এক মুহূর্তের জন্য।
ঠিক যে মুহূর্তটিতে তুমি ছেড়ে যাবে এই আমায়,
আছড়ে পরবে চিৎকার -বিভ্রান্ত আমার, প্রতি প্রান্তে,
আসবে কি ফিরে আর? নাকি ছেড়ে যাবে আমায়
Ñমৃত্যু হিম শীতলতায়?
শেকড়
আমি তোমাকে যা জানাতে চাই, তা হল,
তুমি কি জান কেমন তা, যখন আমি দেখি
ঝলসানো চাঁদ, অথবা দেখি আমার জানালায়
ধীরে গড়িয়ে পেরিয়ে যাওয়া হেমন্ত।
আমি যখন স্পর্শ করি অস্পর্শনীয় ছাই,
অথবা গাছের মৃত শরীর, সবকিছুই
আমাকে পৌঁছে দেয় তোমার চৌকাঠে।
যেন যা কিছু সুন্দর, সুগন্ধি, আলো, ধাতু,
ছোট নৌকা যা আমায় পৌঁছে দেবে তোমার দ্বীপে।
বেশ এরপর যদি
একটু একটু করে ভালোবাসতে ভুলে যাও আমায়,
আমিও একটু একটু করে ভুলে যাব ভালোবাসতে তোমায়।
যদি হঠাৎ ভুলে যাও আমায়, পিছু ফিরো না,
জেনো আমিও ভুলে গেছি ততক্ষণে তোমায়।
যে পাগলাটে দীর্ঘ ঝড়াক্রান্ত জীবন আমার
সেজন্য যদি ছেড়ে যাও আমায় কান্নায় ডুবিয়ে,
হৃদয় বন্দরে, যেখানে ছড়িয়ে শেকড় আমার।
মনে রেখ সেদিনের সে মুহূর্তে, আমি তুলে নেব হাত
আমার শেকড় খুঁজে নেবে অন্য ঠিকানা, ভূমি।
আহ্বান
বলেছিলাম এসো আমার সাথে, কেউ জানেনি
কখন জমাট বেঁধেছে বেদনা আমার। নেই
কোন গোলাপ কিবা গান কোথাও, আছে কেবল
শরীর জুড়ে ভালোবাসার সৃষ্ট উম্মুক্ত ক্ষত।
আবার বললাম, এসো আমার সাথে যেন মৃত্যু পথযাত্রী
তখন কেউ দেখেনি আমার মুখে রক্ত বমি করা চাঁদ,
কিংবা নীরবতা নিয়ে আমার রক্তে ফোঁটা গোলাপ।
ঠিক এ কারণেই যখন পুনর্বার শুনি তোমার কণ্ঠ
এসো আমার সঙ্গে- যেন হারিয়ে ফেলেছ স্বেচ্ছায়,
যেন সেই বিষাদ, ভালোবাসা অথবা বোতলবন্দী সূরার আর্তি।
সেই উষ্ণস্রোত মাটির গভীরে খুঁজে ফেরে আপন ঠিকানা
আমার জিহ্বা আবার পুড়ে গেছে সেই নীল অগ্নিতে,
নিজ রক্তে ফোঁটা গোলাপ আর পাথরের উষ্ণ জলধারা!