ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১০ বৈশাখ ১৪৩১

শনিবার ওয়ানডে মিশন শুরু মাশরাফিদের

প্রকাশিত: ০৬:৩৪, ২৪ মার্চ ২০১৭

শনিবার ওয়ানডে মিশন শুরু মাশরাফিদের

স্পোর্টস রিপোর্টার ॥ কলম্বোয় একদিনের একটি প্রস্তুতি ম্যাচ খেলেছে বাংলাদেশ দল। এবার ওয়ানডে লড়াইয়ে নামার অপেক্ষা। তিন ম্যাচের ওয়ানডে সিরিজে প্রথম দুটি অনুষ্ঠিত হবে ডাম্বুলায়। বুধবার হাইস্কোরিং প্রস্তুতি ম্যাচে শ্রীলঙ্কা প্রেসিডেন্ট একাদশের বিপক্ষে ২ রানে হেরেছে সফরকারীরা। কিন্তু ব্যাটসম্যানরা দারুন নৈপুণ্য দেখিয়েছেন। সে কারণে মাশরাফি বিন মর্তুজার দল কিছুটা আত্মবিশ্বাস অর্জন করতে পেরেছে। তাই ওয়ানডে সিরিজে জয়ের লক্ষ্য নিয়েই বৃহস্পতিবার ডাম্বুলায় পৌঁছেছে বাংলাদেশ দল। শনিবার এখানেই অনুষ্ঠিত হবে সিরিজের প্রথম ওয়ানডে। দিবারাত্রির ম্যাচটি বাংলাদেশ সময় বিকেল ৩টায় শুরু হবে। রনগিরি ডাম্বুলা আন্তর্জাতিক স্টেডিয়ামে ২৮ মার্চ দ্বিতীয় ওয়ানডে এবং ১ এপ্রিল কলম্বোয় তৃতীয় ওয়ানডে। এবারের ওয়ানডে সিরিজটি বেশ গুরুত্বপূর্ণ বাংলাদেশের জন্য। কারণ আগামী সেপ্টেম্বরের মধ্যে আইসিসি র‌্যাঙ্কিংয়ে সেরা আটে থাকতে হবে। তাহলেই সরাসরি ২০১৯ সালের বিশ্বকাপ খেলার সুযোগ থাকবে। মাশরাফি বিন মর্তুজার দল অবশ্য র‌্যাঙ্কিংয়ে ৭ নম্বরে আছে এই মুহূর্তে। তবে লঙ্কানদের হোয়াইটওয়াশ করতে পারলে তাদের হটিয়ে ৬ নম্বর স্থানটা দখলে নেয়া সম্ভব হবে। সেক্ষেত্রে সরাসরি বিশ্বকাপ খেলার সম্ভাবনা আরও উজ্জ্বল হবে। র‌্যাঙ্কিংয়ের পাশাপাশি থাকা দুটি দলের মধ্যে লড়াই- এ কারণে বেশ হাড্ডাহাড্ডি প্রতিযোগিতা হবে বলেই মনে করছেন সবাই। বাংলাদেশ দল টেস্ট ক্রিকেটে তেমন শক্তিশালী দলে পরিণত না হলেও এবারই প্রথম স্বাগতিকদের বিপক্ষে টেস্ট জিতে বেশ উজ্জীবিত। সেই দলটির অধিকাংশ খেলোয়াড়ই আছেন ওয়ানডে দলে। তবে নেতৃত্ব মুশফিকুর রহীমের বদলে মাশরাফির কাঁধে। মাশরাফি গত ডিসেম্বরে নিউজিল্যান্ড সফরে ইনজুরিতে পড়েছিলেন। সেখান থেকে ফিরেছেন বেশ ভালভাবেই। বুধবারের প্রস্তুতি ম্যাচটাও খেলেছেন। বল হাতে প্রস্তুতি ম্যাচে কেউ তেমন সুবিধা করতে পারেননি, মাশরাফিও প্রভাব খাটাতে ব্যর্থ হয়েছেন। তবে ব্যাট হাতে ঝড়ো একটি ইনিংস খেলেছেন বাংলাদেশের সীমিত ওভারের অধিনায়ক। অন্যতম নির্ভরতা ওপেনার তামিম ইকবাল এবং বিশ্বসেরা অলরাউন্ডার সাকিব আল হাসান খেলেননি প্রস্তুতি ম্যাচে। এছাড়া বোলিং ভরসা মুস্তাফিজুর রহমানও বিশ্রামে ছিলেন। যারা খেলেছেন তাদের মধ্যে ইমরুল কায়েস ছাড়া বাকি সবাই রান পেয়েছেন। ইনজুরি থেকে ফেরা ইমরুল টেস্ট সিরিজেও ব্যর্থ ছিলেন। আবার প্রস্তুতি ম্যাচেও শূন্য রানে সাজঘরে ফিরেছেন। তবে রানের মধ্যে ফেরা সৌম্য সরকার ৪৭ রান করেন। সাব্বির রহমান (৭২) ও মাহমুদুল্লাহ রিয়াদ (৭১*) দুটি দুর্দান্ত ইনিংস খেলে দুশ্চিন্তা কমিয়েছেন ব্যাটিংয়ের। বিশেষ করে দ্বিতীয় টেস্টে দল থেকে ছিটকে পড়া মাহমুদুল্লাহর জন্য এবার ওয়ানডে সিরিজ বিশাল চ্যালেঞ্জের। কারণ ওয়ানডে দল থেকেও বাদ পড়বেন এমন একটি গুঞ্জন তৈরি হয়েছিল। কিন্তু প্রস্তুতি ম্যাচে ভাল ইনিংস খেলে আবার বাংলাদেশ শিবিরে আস্থা ধরে রেখেছেন। মাশরাফি ৩৫ বলে ৪ চার ও ৪ ছক্কায় ৫৮ রানের হার না মানা বিধ্বংসী একটি ইনিংস খেলেন। শ্রীলঙ্কা প্রেসিডেন্ট একাদশ ৩৫৪ রান তুললেও বাংলাদেশ দল ৩৫২ রান করতে সক্ষম হয়। এ কারণে বোলিংটাই চিন্তার কারণ। এবার ওয়ানডে সিরিজে তাই কঠিন লড়াইয়ে পড়তে হবে বাংলাদেশ দলকে। র‌্যাঙ্কিংয়ের ৭ নম্বরে থাকলেও সম্প্রতি দুটি ওয়ানডে সিরিজে ইংল্যান্ডের কাছে ২-১ এবং নিউজিল্যান্ডের কাছে ৩-০ ব্যবধানে হোয়াইটওয়াশ হওয়ার কারণে রেটিং পয়েন্ট কিছুটা কমেছে বাংলাদেশের ৯১। এদিকে ৮ নম্বরে থাকা পাকিস্তানের রেটিং ৮৯ এবং ৯ নম্বরে থাকা ওয়েস্ট ইন্ডিজের ৮৪। শ্রীলঙ্কার কাছে তিন ম্যাচেই হেরে গেলে তাই কিছুটা বিপাকে পড়বে দল। কিন্তু লঙ্কানদের ঘরের মাটিতে হোয়াইটওয়াশ করতে পারলে কিছুটা ভাল অবস্থানেই যাবে বাংলাদেশ দল। ৯৮ রেটিং নিয়ে ৬ নম্বরে থাকা শ্রীলঙ্কা পিছিয়ে পড়বে এবং বাংলাদেশ উঠবে ৬ নম্বরে। সেক্ষেত্রে বিশ্বকাপ সরাসরি খেলার সুযোগ আরও বাড়বে। তবে সীমিত ওভারের ক্রিকেটে এখনও দুর্দান্ত দল লঙ্কানরা। সম্প্রতিই দক্ষিণ আফ্রিকা সফরে দলটির নেতৃত্ব দিয়েছেন অভিজ্ঞ ওপেনার উপুল থারাঙ্গা। তিনিই এবার নেতৃত্ব দেবেন। ঘরের মাটিতে বরাবরই দুরন্ত লঙ্কানরা। কিন্তু সর্বশেষ অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে সিরিজ ভাল কাটেনি তাদের। গত আগস্টে ৫ ম্যাচের সিরিজে ৪-১ ব্যবধানে হেরেছে। আর ডাম্বুলায় সর্বশেষ খেলা ৩ ম্যাচেই হেরেছে তারা। ডাম্বুলায় সর্বশেষ ২০১৪ সালের ৩০ আগস্ট পাকিস্তানের বিপক্ষে জিতেছিল স্বাগতিকরা। তারপর থেকে এ মাঠে আর জিততে পারেনি। অবশ্য এই পরিসংখ্যানগুলো তেমন বড় বিষয় নয়। কারণ সর্বশেষ ৫ মোকাবেলায় শ্রীলঙ্কাকে হারাতে পারেনি বাংলাদেশ। ২০১৪ সালে বাংলাদেশ সফরে এশিয়া কাপে একমাত্র ম্যাচের পর ওয়ানডে সিরিজেও ৩-০ ব্যবধানে বাংলাদেশকে হোয়াইটওয়াশ করেছিল লঙ্কানরা। এরপর ২০১৫ বিশ্বকাপে সর্বশেষ ওয়ানডে মোকাবেলায়ও ৯২ রানের বড় ব্যবধানে হারে মাশরাফির দল। তবে ২০১৩ সালের ২৮ মার্চ পাল্লেকেলেতে স্বাগতিকদের ৩ উইকেটে হারিয়েছিল বাংলাদেশ। দেশের বাইরে লঙ্কানদের হারানোর ঘটনা ওই একটিই। সেই স্মৃতিটাই কাজে লাগাতে হবে এবার। সার্বিকভাবে শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে বাংলাদেশের জয় মাত্র ৪ আর পরাজয় ৩৩। একটি ম্যাচ পরিত্যক্ত হয়েছে। এর মধ্যে ঘরের মাটিতে লঙ্কানদের ৩ বার হারিয়েছিল। কিন্তু মাঝের টানা ৫ ম্যাচে লঙ্কানদের বিপক্ষে সাফল্য না পাওয়াটাই এবার সিরিজে কাটিয়ে ওঠার চ্যালেঞ্জ মাশরাফিদের জন্য।
×