ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

যক্ষ্মায় প্রতিবছর মারা যায় ৪৫ জন, শনাক্ত হয় ২২৫

প্রকাশিত: ০৬:২১, ২৪ মার্চ ২০১৭

যক্ষ্মায় প্রতিবছর মারা যায় ৪৫ জন, শনাক্ত হয় ২২৫

নিখিল মানখিন ॥ বাংলাদেশে এখনও যক্ষ্মা একটি মারাত্মক জনস্বাস্থ্য সমস্যা। বাংলাদেশে বছরপ্রতি লাখে যক্ষ্মার কারণে মৃত্যু হয় ৪৫ জনের। বছরপ্রতি লাখে নতুন যক্ষ্মা রোগী শনাক্ত হচ্ছে ২২৫ জন। কফে জীবাণুযুক্ত ফুসফুসের যক্ষ্মা চিকিৎসার সাফল্যের হার ৯৪ শতাংশ। ওষুধ প্রতিরোধী যক্ষ্মা চিকিৎসার সাফল্যের ক্ষেত্রে বাংলাদেশ আরও অগ্রগামী। এ ক্ষেত্রে বিশ্বে যেখানে সাফল্যের হার ৫২ শতাংশ, সেখানে বাংলাদেশে সাফল্যের হার ৭০ শতাংশ। এমন অবস্থা ২০১৬ সালের বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার গ্লোবাল টিবি রিপোর্ট অনুযায়ী বাংলাদেশে প্রতিবছর প্রতি লাখে যক্ষ্মার কারণে মৃত্যু হয় ৪৫ জনের। প্রতিবছর প্রতি লাখে নতুন যক্ষ্মা রোগী শনাক্ত হচ্ছে ২২৫ জন। এমন অবস্থার মধ্য দিয়ে আজ শুক্রবার পালিত হচ্ছে বিশ্ব যক্ষ্মা দিবস। যক্ষ্মা দিবসের এবারের সেøাগানÑ ‘ঐক্যবদ্ধ হলে সবে, যক্ষ্মামুক্ত দেশ হবে’। যক্ষ্মা বিশেষজ্ঞরা বলছেন, বিশ্বে প্রতি সেকেন্ডে একজন ব্যক্তি যক্ষ্মার জীবাণু দ্বারা আক্রান্ত হয়। বর্তমানে বিশ্বের এক-তৃতীয়াংশ জনগণ যক্ষ্মার জীবাণু দ্বারা সংক্রমিত। তবে নিয়মিত পূর্ণ মেয়াদের চিকিৎসায় যক্ষ্মা সম্পূর্ণ ভাল হয়। তিন সপ্তাহের বেশি কাশি যক্ষ্মার প্রধান লক্ষণ। অবহেলা না করে কফ পরীক্ষা করাতে হবে। বিশেষজ্ঞরা জানান, যক্ষ্মা একটি সংক্রামক রোগ, যা মাইকোব্যাটেরিয়াম টিউবারকুলোসিস নামক অতি সূক্ষ্ম জীবাণুর মাধ্যমে সংক্রমিত হয়। প্রধানত ফুসফুসই যক্ষ্মা জীবাণু দ্বারা সর্বাধিক আক্রান্ত হয়। যক্ষ্মা জীবাণু দেহের অন্য অংশকেও আক্রান্ত করে যক্ষ্মা রোগ তৈরি করতে পারে। ফুসফুসের যক্ষ্মায় আক্রান্ত কফে জীবাণুযুক্ত রোগী যদি বিনা চিকিৎসায় থাকে, তবে বছরে প্রায় ১০ থেকে ১৫ জন লোককে যক্ষ্মার জীবাণু দ্বারা সংক্রমিত করে। জীবাণু দ্বারা সকল সংক্রমিত ব্যক্তিই যক্ষ্মা রোগে ভুগে না। যে সকল ব্যক্তির রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কম, তারাই প্রধানত যক্ষ্মা রোগে আক্রান্ত হয়। তাই প্রতিটি রোগীর দ্রুত রোগ নির্ণয় ও চিকিৎসা শেষ করা জাতীয়, আঞ্চলিক ও বিশ্বের যক্ষ্মা প্রতিরোধের অন্যতম শ্রেষ্ঠ উপায়। বিশ্বে প্রতিবছর ৮.৮ মিলিয়নের বেশি লোক যক্ষ্মা রোগে আক্রান্ত হচ্ছে। আর প্রতিবছর ১.৪ মিলিয়ন লোক যক্ষ্মায় মারা যায়। ২২টি দেশে বিশ্বের মোট যক্ষ্মা রোগীর শতকরা ৮০ ভাগ বাস করে। মোট যক্ষ্মা রোগীর শতকরা ৪০ ভাগ দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়া অঞ্চলে বাস করে। জাতীয় যক্ষ্মা নিয়ন্ত্রণ কর্মসূচীর বিশেষজ্ঞরা জানান, যক্ষ্মা নিয়ন্ত্রণে এ সময়ে প্রধান চ্যালেঞ্জ ওষুধ প্রতিরোধী যক্ষ্মা বা এমডিআর যক্ষ্মা। এমডিআর যক্ষ্মার অন্যতম প্রধান কারণ যক্ষ্মায় আক্রান্ত রোগীর অনিয়মিত ওষুধ সেবন। এমডিআর যক্ষ্মার ওষুধের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া অনেক বেশি। এর চিকিৎসা দীর্ঘমেয়াদি, জটিল ও ব্যয়বহুল। এছাড়া যক্ষ্মা রোগ নিয়ন্ত্রণে অন্যান্য চ্যালেঞ্জগুলোর মধ্যে শিশু যক্ষ্মা শনাক্তকরণে জটিলতা, নগরে যক্ষ্মা নিয়ন্ত্রণের সমস্যা ও এইচআইভি যক্ষ্মা নিয়ন্ত্রণে চ্যালেঞ্জ। শনাক্তকরণে জটিলতা শিশু যক্ষ্মার ক্ষেত্রে এখনও প্রধান চ্যালেঞ্জ। এছাড়া সংক্রমণের ইতিহাস সঠিকভাবে জানা যায় না। অনেক উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে বিকল থাকে এক্স-রে মেশিন। প্রত্যন্ত অঞ্চলে যক্ষ্মা শনাক্ত যন্ত্র জিন এক্সপার্টের অভাব রয়েছে। চিকিৎসার প্রয়োজনীয় সুযোগ-সুবিধা না থাকে না। জনসচেতনতারও অনেক অভাব লক্ষ্য করা যায়। এসব কারণে শহরের তুলনায় গ্রামাঞ্চলে শিশু যক্ষ্মা রোগীর শনাক্তের হার অনেক কম। তবে অধিক জনসংখ্যা ও বসতির কারণে ঢাকায় শিশু যক্ষ্মা রোগী তুলনামূলক বেশি। স্বাস্থ্য অধিদফতর ও জাতীয় যক্ষ্মা নিয়ন্ত্রণ কর্মসূচী জানায়, ২০১৫ সালের তুলনায় ২০১৬ সালে অন্যান্য যক্ষ্মা রোগীসহ শিশু যক্ষ্মা রোগীর শনাক্তকরণ বেড়েছে। যক্ষ্মা শনাক্তকরণে আধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহারের কারণে এই সংখ্যা বেশি চিহ্নিত হয়েছে। ২০১৫ সালে যেখানে শিশু যক্ষ্মা রোগী ছিল ৮ হাজার ১০৪ জন, সেখানে ২০১৬ সালে তা বেড়ে দাঁড়ায় ৯ হাজার ২৯১ জনে। শতকরা হিসেবে ২০১৬ সালে শিশু যক্ষ্মা শনাক্তের হার ৪.৩ শতাংশ। ২০১৫ সালে এই হার ছিল ৪ শতাংশ। শিশুসহ ২০১৬ সালে দেশে শনাক্তকৃত মোট যক্ষ্মা রোগীর সংখ্যা ২,২৩,৯২২ জন।
×