ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১

প্রাক-বাজেট আলোচনা

নতুন ভ্যাট আইন বাস্তবায়নে সতর্কতার আহ্বান ব্যবসায়ীদের

প্রকাশিত: ০৬:০৭, ২৪ মার্চ ২০১৭

নতুন ভ্যাট আইন বাস্তবায়নে সতর্কতার আহ্বান ব্যবসায়ীদের

অর্থনৈতিক রিপোর্টার ॥ নতুন ভ্যাট আইন বাস্তবায়নে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডকে (এনবিআর) সতর্কতা অবলম্বন করতে বলেছেন ব্যবসায়ীদের শীর্ষ সংগঠন এফবিসিসিআইয়ের পরিচালক ও আউটসোর্সিং এ্যান্ড লজিস্টিক সার্ভিস প্রোভাইডারের সভাপতি আবু নাসের। তিনি বলেন, ভ্যাট আইন নিয়ে একবার ব্যবসায়ীরা রাস্তায় নেমেছিলেন। তখন এফবিসিসিআই উদ্যোগ নেয়ায় ব্যবসায়ীরা ঘরে ফিরেছিলেন। কিন্তু বারবার আমরা (এফবিসিসিআই) উদ্যোগ নেব না। বৃহস্পতিবার জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের সম্মেলন কক্ষে এনবিআর চেয়ারম্যান নজিবুর রহমানের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত ২০১৭-১৮ অর্থবছরের প্রাক-বাজেট আলোচনায় এসব কথা বলেন আবু নাসের। তিনি বলেন, ভ্যাটের বিষয়ে এখন পর্যন্ত ব্যবসায়ী মহল ও জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের মধ্যে ভুল বোঝাবুঝির অবসান হয়নি। সমস্যার সমাধানে প্রধানমন্ত্রীও নির্দেশনা দিয়েছেন। সামনে জাতীয় নির্বাচন। এ পরিস্থিতিতে এমন কোনো পদক্ষেপ নেয়া ঠিক হবে না, যাতে দেশ অস্থিতিশীল হয়ে পড়ে। ‘এর আগে একবার ব্যবসায়ীরা রাস্তায় নেমেছিলেন। তখন এফবিসিসিআইয়ের উদ্যোগে ব্যবসায়ীরা ঘরে ফিরে যান। কিন্তু বার বার আমরা উদ্যোগ নেব না’ বলেন এই ব্যবসায়ী নেতা। তিনি বলেন, মাঠ পর্যায়ে আমাদের কিছু কিছু হয়রানিমূলক ঘটনা ঘটে। ধরে আনতে বললে বেঁধে নিয়ে আসে। আমরা কিন্তু চোর না। আমরা চুরি করতে চাই না। আমরা কর্মসংস্থান সৃষ্টি করতে চাই, জাতীয় অর্থনীতিতে অবদান রাখতে চাই। তাই আমাদের যাতে আগামী দিনগুলোতে হেয় প্রতিপন্ন না করা হয়। সেবা খাতের ব্যবসায়ীদের মূল সমস্যা মূল্য সংযোজন কর বা ভ্যাট উল্লেখ করে এনবিআরের উদ্দেশ্যে আবু নাসের বলেন, এটি নিয়ে ব্যবসায়ীদের সঙ্গে যাতে সরকারের ভুল বোঝাবুঝির সৃষ্টি না হয় এবং স্থিতিশীলতা যাতে বিনষ্ট না হয় সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে। এই ব্যবসায়ী নেতার এমন বক্তব্যের পর এনবিআর চেয়ারম্যান নজিবুর রহমান বলেন, আমরা বক্তব্য দেয়ার সময় সতর্কতা অবলম্বন করব। এমন কোনো বক্তব্য দেব না যাতে আলোচনার বিঘœ ঘটে। এনবিআর চেয়ারম্যান বলেন, এফবিসিসিআই অর্থমন্ত্রীর সঙ্গে অত্যন্ত ইতিবাচক আলোচনায় নিয়োজিত আছে এবং সংসদীয় কমিটি এ বিষয়ে নিজেরা কাজ করছে। একটি সুন্দর পরিবেশে ভ্যাট আইন বাস্তবায়ন হবে। ১ জুলাই হবে ভ্যাট আইন বাস্তবায়নের তারিখ। ভ্যাট হার সমান করার দাবি ॥ জেনারেল স্টোর ও সুপার স্টোরের ভ্যাট হার সমান করার দাবি জানিয়েছে বাংলাদেশ সুপারমার্কেট ওনার্স এ্যাসোসিয়েশন। বৃহস্পতিবার জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) সঙ্গে অনুষ্ঠিত ২০১৭-১৮ অর্থবছরের প্রাক বাজেট আলোচনায় সংগঠনটির পক্ষে সভাপতি নিয়াজ রহিম এ দাবি জানান। আলোচনা সভায় নিয়াজ রহিম বলেন, একই রকম ব্যবসা পরিচালনা করেও জেনারেল স্টোরগুলো প্যাকেজ ভ্যাট দিচ্ছে। সেখানে সুপারস্টোরগুলো ক্রেতাদের নিকট থেকে চার শতাংশ ভ্যাট আদায় করছে। ফলে শুরুতেই সুপার স্টোরগুলো অসম প্রতিযোগিতার মুখোমুখি হচ্ছে। এ অবস্থায় সুপার স্টোরগুলোকেও প্যাকেজ ভ্যাটের আওতায় আনা হোক। তিনি বলেন, ডিপার্টমেন্টাল স্টোরগুলো তাদের বিপণন কৌশল হিসেবে বিক্রয় রশিদে ভ্যাট নেই বা শূন্য ভ্যাট উল্লেখ করে। অনেক ক্ষেত্রে অপেক্ষাকৃত বড় ডিপার্টমেন্টাল স্টোর ছোট সুপারমার্কেটের থেকে বেশি বিক্রি করে। অথচ সারা বছর সর্বোচ্চ ১৪ হাজার টাকা ভ্যাট পরিশোধ করে। কিন্তু কম বিক্রি করেও সুপারমার্কেটগুলোকে লাখ লাখ টাকা ভ্যাট পরিশোধ করতে হয়। তিনি জানান, ডিপার্টমেন্টাল স্টোরের প্রায় এক লাখ কোটি টাকা ব্যবসা থেকে সরকারের ভ্যাট আদায় হয় ২৫ কোটি টাকা। আর সুপারমার্কেট খাতের এক হাজার কোটি টাকার ব্যবসা থেকে সরকারের ভ্যাট আদায় হয় ১৮ কোটি টাকা। হুবহু একই প্রকৃতির ব্যবসায় দুই ধরনের ভ্যাট আদায় চরম বৈষম্যমূলক। অন্যদিকে সর্বোচ্চ খুচরা বিক্রয়মূল্যের ওপর ভ্যাট আদায় ভোক্তা আইনের পরিপন্থী, ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ সংস্থা থেকে এ বিষয়ে সতর্ক করা হয়েছে। তিনি আরও বলেন, বৈষম্যমূলক নীতি এবং ভ্যাট আইন প্রয়োগের বাস্তবতার কারণে সুপারমার্কেটের অস্তিত্ব হুমকির সম্মুখীন। পাশাপাশি এ খাত থেকে সরকারের রাজস্ব আদায়ের সম্ভাবনাও কমে আসছে। এ খাতে বিদেশী বিনিয়োগ বন্ধ হয়ে গেছে। গত তিন বছরে বন্ধ হয়ে গেছে বেশক’টি সুপারমার্কেট। সমহার ভ্যাটের পাশাপাশি বাংলাদেশ সুপারমার্কেট ওনার্স এ্যাসোসিয়েশন পক্ষ থেকে সুপারমার্কেটের ভাড়ার ওপর আরোপ করা ১৫ শতাংশ ভ্যাট প্রত্যাহার এবং বছর বছর ভ্যাট, ট্যাক্সহার পরিবর্তন না করে দীর্ঘমেয়াদী পরিকল্পনার মাধ্যমে ভ্যাট ও ট্যাক্স হার নির্ধারণের দাবি জানানো হয়।
×