ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

অপ্রদর্শিত আয় শেয়ারবাজারে বিনিয়োগসহ ৬ প্রস্তাব

প্রকাশিত: ০৬:০৬, ২৪ মার্চ ২০১৭

অপ্রদর্শিত আয় শেয়ারবাজারে বিনিয়োগসহ ৬ প্রস্তাব

অর্থনৈতিক রিপোর্টার ॥ পুঁজিবাজারে অপ্রদর্শিত আয় বিনিয়োগের সুযোগ দেয়াসহ জাতীয় রাজস্ব বোর্ডে (এনবিআর) ছয়টি প্রস্তাব দিয়েছে বাংলাদেশ মার্চেন্ট ব্যাংকার্স এ্যাসোসিয়েশন (বিএমবিএ)। তালিকাভুক্ত কোম্পানির কর ও ভ্যাট সুবিধা, ইন্টারমিডিয়ানি প্রতিষ্ঠানগুলোর কর্পোরেট কর হ্রাস, ঋণাত্মক ইক্যুইটির মার্জিন হিসাবের বিপরীতে ধার্য অনাদায়ী সুদ আয়ে কর মওকুফ, বিনিয়োগকারীর মূলধনী মুনাফার ওপর কর হ্রাস করার জন্য এনবিআরের প্রতি আহ্বান জানিয়েছে বিএমবিএ। গত ২০ মার্চ বিএমবিএ’র পক্ষ থেকে শেয়ারবাজারকে গতিশীল করা এবং অর্থনৈতিক উন্নয়নে এ বাজারকে কাজে লাগাতে আসন্ন ২০১৭-১৮ বাজেটে কিছু নীতি সহায়তার প্রস্তাব দেয়া হয়। সংগঠনের সভাপতি মোঃ ছায়েদুর রহমান ও সাধারণু সম্পাদক খায়রুল বাশার আবু তাহের মোহাম্মদ স্বাক্ষরিত এক পত্রে বিএমবিএর পক্ষ থেকে দাবি করা হয়েছে, ২০১০ সালের বিপর্যয়ের পর টানা একটি নিম্নমুখী প্রবণতার মধ্য দিয়ে যাচ্ছিল দেশের শেয়ারবাজার। অল্প সময়ের ব্যবধানে বেশকিছু রেগুলেটরি সীমাবদ্ধতা চলে আসায় বাজারে প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগ বাধাগ্রস্ত হয়, যার প্রভাবে অন্য বিনিয়োগকারীদের আত্মবিশ্বাস ও অংশগ্রহণও কমে যায়। দীর্ঘ মন্দার পর সাম্প্রতিক সময় আমরা পুঁজিবাজারে কিছু গতি দেখতে পেয়েছি। তা ধরে রেখে পুঁজিবাজারকে শিল্পায়ন, অবকাঠামো, কর্মসংস্থান তথা অর্থনৈতিক উন্নয়নে কাজে লাগাতে হবে। আমরা মনে করি, এ জন্য কিছু নীতিগত সহায়তা দরকার। আসন্ন ২০১৭-১৮ বাজেটে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের কাছে আমরা নিম্নলিখিত সমর্থনগুলোর প্রস্তাব করছি। প্রথমত. বিনা শর্তে পুঁজিবাজারে অপ্রদর্শিত অর্থ বিনিয়োগের সুযোগ। আমাদের অর্থনীতিতে অনেক অপ্রদর্শিত অর্থ আছে, যেগুলো করের আওতাবহির্ভূত। অপ্রদর্শিত হওয়ায় মালিকরা এ অর্থ কোন উৎপাদনশীল খাতে বিনিয়োগ না করে বিভিন্ন অনুৎপাদনশীল বা আইনবহির্ভূত কর্মকাণ্ডে ব্যবহার করছেন। কোন নিয়ন্ত্রক সংস্থার কাছ থেকে কোনো প্রশ্ন উত্থাপিত না হলে তারা যদি এ অর্থ শেয়ারবাজারে বিনিয়োগ করেন, বিপুল অঙ্কের এ টাকা অর্থনীতির মূল ধারায় ফিরে আসবে, শেষ পর্যন্ত যা উৎপাদনশীল খাতে কাজে লাগানো সম্ভব। বিষয়টি একদিকে অর্থনীতি স্থিতিশীল করতে ভূমিকা রাখবে, অন্যদিকে সরকারের জন্যও রাজস্ব বাড়াবে। ঋণাত্মক ইক্যুইটির বিওতে মার্জিন ঋণের বিপরীতে ব্রোকার-মার্চেন্ট ব্যাংকের অনাদায়ী সুদের ওপর কর মওকুফ। চিঠিতে বিএমবিএ বলে, ঋণাত্মক ইক্যুইটির বিও হিসাবের বিপরীতে অনেক ব্রোকার-মার্চেন্ট ব্যাংকের পাওনা সুদ অনাদায়ী রয়েছে। এগুলো হিসাবভুক্ত করা হলেও পরিস্থিতির কারণে তা আদায় করা যাচ্ছে না। কিন্তু কর কর্তৃপক্ষ সেসব পাওনাকে আয় ধরে তার ওপর কর ধার্য করছে। এছাড়া সরকারের প্রণোদনা স্কিমের আওতায় অনেক ব্রোকার-মার্চেন্ট ব্যাংক সুদ বাবদ সেসব নিট পাওনায় ছাড় দিয়েছে। সেগুলোকেও আয় ধরে তার ওপর করারোপ করা হচ্ছে, যা প্রতিকূল সময়ে ইন্টারমিডিয়ারি প্রতিষ্ঠানগুলোর ওপর আর্থিক চাপ আরও বাড়াচ্ছে। প্রায় আদায় অযোগ্য আয়ের ওপর এ করারোপ থেকে অব্যাহতি দেয়া দরকার। তালিকাভুক্ত কোম্পানিগুলোর কর্পোরেট করে সুবিধা বাড়ানোর প্রস্তাবে বিএমবিএ বলে, বর্তমানে তালিকাভুক্তির সুবাদে শেয়ারবাজারের কোম্পানিগুলো ১০ শতাংশ কর সুবিধা পায়। বাজারে আরও ভালো কোম্পানি আনতে তালিকাভুক্ত ও তালিকাবহির্ভূত কোম্পানির কর্পোরেট করের ব্যবধান অন্তত ১৫ শতাংশ হওয়া উচিত বলে আমরা মনে করি। কারণ তালিকাভুক্ত কোম্পানির হিসাব তুলনামূলক স্বচ্ছ এবং তাদের কাছ থেকে রাজস্ব আদায় সরকারের জন্য তুলনামূলক সহজ। তাদের কর সুবিধা বাড়ালে বিনিয়োগকারীরাও উপকৃত হবেন। এছাড়া বর্তমানে তালিকাভুক্ত ও তালিকাবহির্ভূত কোম্পানিকে একই হারে ভ্যাট দিতে হচ্ছে। আমরা মনে করি, হিসাবের স্বচ্ছতার কারণে তালিকাভুক্ত কোম্পানিগুলোর কাছ থেকে সরকার প্রকৃত অর্থে তুলনামূলক বেশি হারে কর ও ভ্যাট পায়। এসব কোম্পানির জন্য ৪০ শতাংশ ভ্যাট মওকুফ তালিকাভুক্তি উৎসাহিত করে শেষ পর্যন্ত বিনিয়োগকারীদের জন্যও যেমন সুবিধা বয়ে আনবে, তেমনি সরকারের জন্যও রাজস্ব আহরণ বাড়াবে। সব ইন্টারমিডিয়ারি প্রতিষ্ঠানের জন্য একই হারে কর্পোরেট করের প্রস্তাব করেছেন মার্চেন্ট ব্যাংকাররা। বিএমবিএর চিঠিতে বলা হয়, বর্তমানে শুধু সম্পদ ব্যবস্থাপনা কোম্পানিগুলো সর্বনিম্ন ১৫ শতাংশ হারে কর্পোরেট করের সুবিধা ভোগ করছে। অন্যদিকে মার্চেন্ট ব্যাংককে ৩৭ দশমিক ৫ শতাংশ ও ব্রোকারেজ হাউসগুলোকে ৩৫ শতাংশ হারে কর্পোরেট কর দিতে হয়। ব্যবসায় সুযোগের সমতা নিশ্চিত করতে ব্রোকারেজ হাউস ও মার্চেন্ট ব্যাংকগুলোর কর হারও ১৫ শতাংশে নামিয়ে আনা উচিত। এছাড়া দীর্ঘমেয়াদী বিনিয়োগ উৎসাহিত করতে প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীদের মূলধনী মুনাফার ওপর আরোপিত কর ১০ থেকে ৫ শতাংশে নামিয়ে আনা উচিত বলেও মনে করে বিএমবিএ।
×