ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

বাংলাদেশ ব্যাংকের রিজার্ভ চুরিতে জড়িত উত্তর কোরীয় হ্যাকাররা

প্রকাশিত: ০৫:৪৬, ২৪ মার্চ ২০১৭

বাংলাদেশ ব্যাংকের রিজার্ভ চুরিতে জড়িত উত্তর কোরীয় হ্যাকাররা

অর্থনৈতিক রিপোর্টার ॥ বাংলাদেশ ব্যাংকের রিজার্ভের ৮ কোটি ১০ লাখ ডলার হাতিয়ে নেয়ার পিছনে উত্তর কোরিয়ার কম্পিউটার হ্যাকারদের হাত রয়েছে বলে মনে করছে যুক্তরাষ্ট্রের জাতীয় নিরাপত্তা সংস্থা-এনএসএ। এনএসএ’র উপপরিচালক রিক লেজেট মঙ্গলবার ওয়াশিংটনের আসপেন ইনস্টিটিউটে এক গোলটেবিল বৈঠকে এ অভিমত দেন বলে যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক পত্রিকা ফরেন পলিসির এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে। এদিকে, চীনা মধ্যসত্ত্বভোগীদের সহায়তায় উত্তর কোরিয়ার হ্যাকাররা বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে বিপুল অংকের অর্থ লোপাট করে বলে এফবিআইর তদন্ত কর্মকর্তারা জানতে পেরেছেন। ওয়াল স্ট্রিট জার্নাল বলছে, এ ঘটনায় উত্তর কোরিয়াকে দায়ী করে মামলা দায়েরেরও প্রস্তুিিত নিচ্ছেন মার্কিন কর্মকর্তারা। মার্কিন তদন্ত কর্মকর্তারা মনে করছেন, উত্তর কোরিয়ার সরকারের নির্দেশনায় নিউইয়র্ক ফেডারেল রিজার্ভ ব্যাংকের বাংলাদেশ এ্যাকাউন্ট থেকে আট কোটি দশ লাখ ডলার চুরি করা হয়। বেসরকারি তথ্য-প্রযুক্তি বিশেষজ্ঞরা বাংলাদেশ ব্যাংকে সাইবার হামলার সঙ্গে ২০১৪ সালে সনি পিকচার্সের হলিউড স্টুডিও হ্যাকডের মধ্যে যে সম্পর্ক খুঁজে বের করেছেন সেদিকে ইঙ্গিত করেন লেজেট। তিনি বলেন, সনিতে হামলাকারীদের সঙ্গে বাংলাদেশ ব্যাংকে হামলাকারীদের সম্পর্কের বিষয়টি যদি সত্যি হয়, তার অর্থ দাঁড়ায় যে, একটি দেশ ব্যাংক ডাকাতি করছে। এটা অনেক বড় ঘটনা। এ সময় মডারেটর তাকে প্রশ্ন করেন, আপনি কি বিশ্বাস করেন, কোনো দেশ এখন রাষ্ট্রীয়ভাবে ব্যাংক ডাকাতি করছে? আমি বিশ্বাস করি, সরল জবাব দেন লেজেট। তবে বাংলাদেশের রিজার্ভ চুরির বিষয়ে এনএসএ কোনো তথ্য-প্রমাণ পেয়েছে কি না তা জানাননি সংস্থাটির উপ-পরিচালক লেজেট। গত বছরের ফেব্রুয়ারিতে ভুয়া সুইফট বার্তা পাঠিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের ফেডারেল রিজার্ভ ব্যাংক অব নিউ ইয়র্কে রাখা বাংলাদেশের রিজার্ভের ৮ কোটি ১০ লাখ ডলার ফিলিপিন্সের রিজল ব্যাংকে পাঠানো হয়েছিল। ওই অর্থ পরে জুয়ার টেবিলে চলে যায়। ওই ঘটনা তদন্তে বাংলাদেশের নিযুক্ত করা সিলিকন ভ্যালির সাইবার নিরাপত্তা প্রতিষ্ঠান ফায়ারআইও সে সময় এই সাইবার চুরিতে উত্তর কোরিয়া ও পাকিস্তানের দুটি হ্যাকার গ্রুপের সম্পৃক্ততার তথ্য ফরেনসিক পরীক্ষায় পাওয়ার কথা জানিয়েছিল। বিশ্বজুড়ে তোলপাড়ের মধ্যে ফিলিপিন্সের সিনেট কমিটি এই ঘটনার তদন্ত শুরুর পর এক ক্যাসিনো মালিকের কাছ থেকে দেড় কোটি ডলার উদ্ধারের পর তা ফেরত পায় বাংলাদেশ। বাকি অর্থ উদ্ধারে কোনো দৃশ্যমান অগ্রগতি নেই। এর দুটো কারণ আছে বলে জানালেন ফিলিপিন্সের ইনকোয়ারার পত্রিকার অনুসন্ধানী সাংবাদিক ড্যাক্সিম লুকাস, যিনি বাংলাদেশ ব্যাংকের রিজার্ভ চুরির ঘটনা প্রথমে বিস্তারিত ফাঁস করে ব্যাপক আলোড়ন তোলেন। প্রথমত, ফিলিপিন্সের রাজনৈতিক পরিস্থিতি বদলে গেছে। দ্বিতীয়ত: সে দেশের অনেক কর্মকর্তা মনে করেন, ব্যাংক তহবিল লোপাটের সাথে বাংলাদেশ ব্যাংকের কেউ-কেউ জড়িত। এদিকে, এ টাকা চুরির ঘটনায় কিছু ব্যক্তির বিরুদ্ধে ফিলিপিন্স কর্তৃপক্ষ সে দেশে মামলা দায়ের করেছে। এদের মধ্যে আরসিবিসি ব্যাংকের সাবেক কয়েকজন কর্মকর্তা রয়েছেন। এখন এ মামলাটি আদালতে বিচারাধীন আছে। ফিলিপিন্সে যাওয়া টাকার মধ্যে কিছু টাকা বাংলাদেশ ফেরতও পেয়েছে। কিন্তু বেশিরভাগ টাকা এখনো পায়নি। গত বছরের নবেম্বর মাসে বাংলাদেশের আইনমন্ত্রী আনিসুল হকের নেতৃত্বে একটি প্রতিনিধি দল চুরির টাকা উদ্বার করতে ফিলিপিন্সের সহায়তা পাবার আশায় সে দেশ সফর করেছিলেন। কিন্তু তাতে খুব একটা লাভ হয়নি বলে মনে হচ্ছে। বাংলাদেশের বিদায়ী রাষ্ট্রদূত জন গোমেজকে ফিলিপিন্সের নতুন প্রেসিডেন্ট মৌখিক আশ্বাস দিয়েছিলেন যে অর্থ উদ্ধারে ফিলিপিন্স সরকার সহায়তা করবে। তবে ফিলিপিন্সের নতুন সরকারের দৃষ্টিভঙ্গি কী হবে তার উপরই নির্ভর করছে বিষয়টি কোন দিকে এগুবে। এছাড়া আদালতে যে মামলা এখন থমকে আছে সেটি কবে নাগাদ নিষ্পত্তি হবে সে বিষয়ে কিছু বলা মুশকিল বলে উল্লেখ করেন ফিলিপাইনের অনুসন্ধানী সাংবাদিক ড্যাক্সিম লুকাস।
×