ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১

অঙ্ক করে দিল পুলিশ!

চক্ষু মেলিয়া ॥ নিয়ামত হোসেন

প্রকাশিত: ০৫:১৩, ২৪ মার্চ ২০১৭

চক্ষু মেলিয়া ॥ নিয়ামত হোসেন

মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ওহাইও অঙ্গরাজ্যের ছোট দশ বছরের মেয়ে লেনা ড্রাপা। দিন কয়েক আগে সেখানকার পুলিশের কাছে সাহায্য চেয়েছে তার অঙ্ক করে দেয়ার জন্য। স্কুল গিয়েছিল সেদিন লেনা। তাকে স্কুল থেকে বাড়ির কাজের জন্য কয়েকটি অঙ্ক দেয়া হয়েছিল। লেনার মাথায় কিছুতেই ঢুকছিল না অঙ্কগুলো। তখন সে করবে কি, তার মায়ের এ্যাকাউন্টে ঢুকে ফেসবুকে পুলিশের কাছে আবেদন জানাল, সে বড় সমস্যায় পড়েছে। তাকে কি পুলিশের তরফ থেকে সাহায্য করা যাবে? পুলিশের এক কর্তা সঙ্গে সঙ্গে সেটি দেখে জানতে চাইলেন, কী সমস্যা? অবশ্যই তাকে সাহায্য করা হবে। কিন্তু সমস্যাটা কী? লেনা জানাল, অঙ্কগুলো বুঝছি না, সমাধান করে দেবেন কি? লেনা তখন ফেসবুকে অঙ্কের সমস্যাগুলো লিখে পাঠিয়ে সমাধান জানানোর অনুরোধ করে। পুলিশ কর্তাও মহা উৎসাহে সমাধানগুলো দিয়ে দেন ফেসবুকে। তিনি বলেছেন, মেয়েটিকে অঙ্কের সমাধান দিয়েছি। সবগুলোই ঠিক হয়েছে। তবে কেউ কেউ নাকি পরে বলেছে, তার দেয়া দ্বিতীয় সমাধানটি সঠিক হয়নি। প্রকাশিত এক সংবাদে জানা গেল এসব কথা। বিশ্বের সব দেশের পুলিশের নির্ধারিত কাজের মধ্যে রয়েছে জনসাধারণের নানা কাজে, বিপদে, সমস্যায় সাহায্য করা, লোকজনের পাশে দাঁড়ানো। এ জন্য পুলিশের আরেক নাম হতে পারে জনগণের বিপদের বন্ধু। তবে ইউরোপ-আমেরিকার অনেক দেশে পুলিশের ওপর এমন অনেক দায়িত্ব দেয়া হয়েছে অর্থাৎ পুলিশ এমনসব বিষয় দেখে যেগুলোর কথা শুনলে এখনও আমরা অবাক হই। যেমন ছোট একটা উদাহরণ এখানে দেয়া যেতে পারে। যদি কোন শিশুকে বাড়িতে মারধর করা হয়, তাকে নির্যাতন করা হয় এবং শিশুটি যদি পুলিশকে এ ব্যাপারে ফোন করে তা হলে সঙ্গে সঙ্গে চলে আসবে পুলিশ। নির্যাতনকারী যেই হোক, বাপ-মা হোক বা অন্য যে কেউ হোক, তাকে পুলিশের কাছে জবাবদিহি করতেই হবে! ওসব দেশে পুলিশ ছেলে-বুড়ো সবাইকে নানা বিষয়ে সাহায্য দেয়, সহায়তা করে। তবে এবার জানা গেল নতুন এক তথ্য। ‘অঙ্ক করতে না পারলে পুলিশ যে অঙ্কও করে দেয় সে কথাই জানা গেল ওহাইওর এই খবরে। কেউ অঙ্ক না পারলে পুলিশকে অনুরোধ করলে যে করে দিতে হবে এমন দায়িত্ব তাদের ওপর দেয়া আছে কিনা জানা নেই। যদি থাকে ভাল, না থাকলেও ওই পুলিশ কর্তা নিজে উদ্যোগী হয়ে ছোট্ট মেয়েটিকে অঙ্ক করে দেয়ার ব্যাপারে যে সহায়তা করেছেন তাতে তাদের সবার জনসেবার উদার মানসিকতার পরিচয়ই পাওয়া যায়। শিশুদের সহায়তার ব্যাপারে তার এই মানসিকতা যে কোন দেশের উদাহরণ হতে পারে। পুলিশকে মানুষ এভাবেই দেখতে চায়। জনগণের বন্ধু, সব সময়ের বন্ধু, বিশেষ করে বিপদের সময়ের বন্ধু, সমস্যার সময় বন্ধু হিসেবে দেখতে চায়। ব্রিটিশ আমলে এ দেশে পুলিশের ছিল লাল পাগড়ি। কোন গ্রামে, কোন এলাকায় কোন লাল পাগড়ি এসেছে দেখলে লোকজন গ্রামছাড়া হতো, শিশুরা চৌকির তলায় পালাত। ওই পুলিশ সৃষ্টি হয়েছিল মানুষকে ভয় দেখানোর জন্য, হয়রানি করার জন্য। এরপর বহুদিন পার হয়েছে। পার হয়েছে পাকিস্তানী পুলিশের অধ্যায়। এখন স্বাধীন দেশের নতুন চেতনার পুলিশ। আজকের পুলিশের নানা সমস্যার মধ্যেও পুলিশকে জনগণের বন্ধু হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করার জন্য বেশকিছু পদক্ষেপ নেয়া হয়েছে। এ ব্যাপারে উদ্যোগও নেয়া হয়েছে বেশকিছু। দেশে মানুষ সব সময় চায় পুলিশকে তাদের প্রকৃত বন্ধু হিসেবে পেতে। একদিন নিশ্চয়ই সেটা সর্বার্থে সত্যি হবে।
×