জনকণ্ঠ ডেস্ক ॥ ব্রিটেনের পার্লামেন্ট ভবনের কাছে এবং ওয়েস্টমিনস্টার ব্রিজের ওপর সন্ত্রাসী হামলার ঘটনায় চারজন মারা গেছেন। নিহতদের মধ্যে এক পুলিশ অফিসার, এক হামলাকারী ও দুই পথচারী রয়েছেন। মেট্রোপলিটান পুলিশের ভারপ্রাপ্ত ডেপুটি কমিশনার মার্ক রোলি বলেছেন, এ ঘটনায় আহত হয়েছেন অন্তত ২০। লন্ডন সময় বিকেল পৌনে তিনটা নাগাদ দুটি পৃথক হামলার এ ঘটনা ঘটে। দুটি ঘটনার যোগসূত্র এখনও পুরোপুরি স্পষ্ট নয়। পুলিশ এসব ঘটনাকে ‘সন্ত্রাসী হামলা’ বলে দেখছে। খবর বিবিসির।
বুধবার এক হামলাকারী ওয়েস্টমিনস্টার ব্রিজে পথচারীদের ওপর গাড়ি উঠিয়ে দিলে এক নারীসহ দুই পথচারী মারা যান।
পুলিশ কর্মকর্তাসহ আহত হন বেশ কয়েকজন। পরে গাড়িটি ব্রিজের রেলিংয়ে বিধ্বস্ত হয়। আহতদের মধ্যে ফ্রান্সের কয়েকটি স্কুল শিশুও রয়েছে। আহতদের যে ছবি গণমাধ্যমে এসেছে, তাদের রক্তাক্ত অবস্থায় সড়কে পড়ে থাকতে দেখা গেছে। যা দেখে মনে হচ্ছে, তারা গাড়িটির ধাক্কায় জখম হয়। এ ঘটনায় পূর্ণাঙ্গ তদন্ত চলছে। বিবিসির প্রতিনিধি ডমিনিক ক্যাসিয়ানি টুইটারে জানান, বেশ কয়েকটি সূত্রে জানা গেছে যে, ব্রিজের ওপর গাড়িটির ভেতরে দুইজন ছিল। এর আগে পার্লামেন্ট ভবনের কাছে এক হামলাকারীর ছুরিকাঘাতে এক পুলিশ সদস্য মারা যান। পুলিশও হামলাকারীকে গুলি করে। পরে হামলাকারী মারা যায়।
ডাউনিং স্ট্রিট সূত্র জানিয়েছে, প্রধানমন্ত্রী টেরেসা মে নিরাপদ রয়েছেন। তিনি পরে সরকারের জরুরী কোবরা কমিটির বৈঠকে নেতৃত্ব দেবেন। প্রত্যক্ষদর্শীরা বলেছেন, তারা ওয়েস্টমিনস্টারে পার্লামেন্ট ভবন এলাকায় এক ব্যক্তিকে ছুরি হাতে দেখেছেন। হামলার পর গোটা পার্লামেন্ট এলাকা বন্ধ করে দেয়া হয়। পার্লামেন্ট অধিবেশনও মুলতবি করা হয়। পার্লামেন্টের ভেতর থেকে এমপি ও সাংবাদিকরা টুইট করে জানিয়েছেন, তারা ভবনের বাইরে তিন থেকে চারটি গুলির শব্দ শুনতে পেয়েছেন। গুলিবিদ্ধ হওয়ার আগেই হামলাকারী ছুরি হাতে কয়েকজনের ওপর চড়াও হয়। এতে কয়েকজন আহত হয়েছেন। এ ঘটনার পর আহত কয়েকজনকে লন্ডনের সেন্ট টমাস হসপিটালে ভর্তি করা হয়েছে। ওই হাসপাতালের একজন চিকিৎসক বলেন, আহত কয়েকজনের অবস্থা গুরুতর।
ডেইলি মেইলের সাংবাদিক কোয়েন্টিন লেটস বলেন, হামলাকারী খোলা গেট দিয়ে ঢুকে পড়ে, তারপর পুলিশের ওপর চড়াও হয়েছিল। একজন পুলিশ সদস্য লুটিয়ে পড়েন। তারপর হামলাকারী দৌড়াতে থাকে এমপিরা যে গেট দিয়ে পার্লামেন্টে ঢোকেন সে দিকে। ২০ গজের মতো দৌড়ানোর পর সাদা পোশাকে থাকা দুই নিরাপত্তার গুলিতে সে পড়ে যায়।
এদিকে ব্রিটেনের মুসলিম কাউন্সিল এক বিবৃতি দিয়ে এই হামলার নিন্দা করেছে। এখনও পর্যন্ত কেউ হামলার দায়িত্ব স্বীকার করেনি। মুসলিম কাউন্সিল তাদের বিবৃতিতে বলেছে, ওয়েস্টমিনস্টারের ঘটনায় তারা স্তম্ভিত ও মর্মাহত। তারা এই হামলার নিন্দা জানাচ্ছে। হামলার উদ্দেশ্য নিয়ে আঁচ অনুমান করার সময় এখনও আসেনি। হতাহতদের প্রতি তাদের রয়েছে সমবেদনা। পুলিশ এবং জরুরী সেবাব্যবস্থার সঙ্গে জড়িতরা যেভাবে সাহসিকতার সঙ্গে পরিস্থিতি মোকাবেলা করেছে তার প্রতি তাদের অভিনন্দন।
লন্ডনের ঘটনাটি যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পকে জানানো হয়েছে বলে তার মুখপাত্র জানিয়েছেন। তবে এনিয়ে তাৎক্ষণিকভাবে ট্রাম্পের কোন বক্তব্য আসেনি।
টিউলিপ সিদ্দিক নিরাপদ ॥ ব্রিটিশ সংসদ সদস্য টিউলিপ সিদ্দিক, যিনি বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ভাগ্নি, হামলার সময় সংসদ ভবনে ছিলেন। পরে তিনি টুইটারে মেসেজ দেন যে তিনি নিরাপদ আছেন। তার খোঁজ নেবার জন্য তিনি সবাইকে ধন্যবাদ দেন।