ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ১৮ এপ্রিল ২০২৪, ৫ বৈশাখ ১৪৩১

সুখে থাক তারা

প্রকাশিত: ০৫:৪২, ২৩ মার্চ ২০১৭

সুখে থাক তারা

প্রশান্তির বাতাবরণে নিবদ্ধ হয়ে সুখে নিন্দ্রা যাওয়া হয় না সবার। জাগরণও তাদের হয় না হেমবর্ণ। সুখ তাদের কাছে থেকে যায় বুঝি অধরাই। তবু সুখের জন্য আপ্রাণ চেষ্টা-চরিত্রের চালিয়ে যেতে হয়। সেই কবে খ্রিস্টেরও জন্মের আগে গৌতম বুদ্ধ উচ্চারণ করেছিলেন এক অমোঘ বাণী, ‘জগতের সকল প্রাণী সুখী হোক’। কিন্তু সুখের সন্ধান পায় না অনেক প্রাণীই। সুখের প্রকৃত সংজ্ঞা কী, তা জিজ্ঞেস করলে উত্তর মেলে নানামুখী। কবির ভাষায় ‘নদীর এপার কহে ছাড়িয়া নিঃশ্বাস/ওপারেতে সর্বসুখ আমার বিশ্বাস...।’ গানে রবীন্দ্রনাথ বলেছেনও, ‘ওরা সুখের লাগি চাহে প্রেম/প্রেম মেলে না/শুধু সুখ চলে যায়।’ যেন সুখ এসেই বলে যাই যাই। যাবার জন্যিই বুঝি তার আসা। সুখের বসন্ত তাই সুখে হয় না সারা। সুখ সর্বত্রগামী হয়ত হয়, হয়ত হয় না। কিন্তু সুখ পাখিকে ধরার জন্য আকুল হয়ে ওঠে কত প্রাণ মন। নিজেকে নিয়ে সুখী হওয়া হয়ত খুবই কঠিন। কারণ মানুষ সর্ববিচারে পরিপূর্ণ নয়। তার রয়েছে অপূর্ণতা বা অভাব। অভাব থাকবে, কিন্তু অভাববোধ থাকাটা সুখ হ্রাসের লক্ষণ। বাংলাদেশের মানুষের মোটা দাগে কিছু অভাব তো রয়েছেই। নুন আনতে পান্তা ফুরনো মানুষের সংখ্যা নিহায়েত কম নয়। তবু এসব মানুষ গভীর অর্থে অসুখ নন। তবে বাংলাদেশে সুখী মানুষের সংখ্যা খুব বেশি মনে হবে না। নাগরিক জীবনের দুর্দশা, গ্রামীণ জীবনের দুর্ভোগ সুখে থাকার অন্তরায় বৈকি! হিজিবিজি অবস্থা সুখের পসরা সাজানোর অন্তরায় যদিও, তবে বাঙালী সুখ নামক মায়ার হরিণ খোঁজে হেথায়-হোথায়। কারও কারও আপ্রাণ চেষ্টাও থাকে একটু সুখের জন্য বিগলিত হয়ে ওঠা। আধুনিক জীবন আর কতটাইবা হতে পারে নিরুদ্বেগ দুঃখ কষ্টমুক্ত। বাঙালী একদা স্বপ্ন দেখত, মৎস্য মারিব খাইব সুখে। মাছ ধরও তৃপ্তিসহকারে গলাধকরণের মাঝে সুখের স্রোত উত্থলে উঠত হয়ত। কিন্তু একালে আর তা হয় না। বাংলার মানুষ যেন সুখে থাকে, সেজন্য জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান সুখী সমৃদ্ধ সোনার বাংলা গড়ায় ব্রতী হয়েছিলেন। কিন্তু বিয়োগান্তক ঘটনা সে পথ রুদ্ধ করে দিয়েছিল। আজ এই একুশ শতকে বাঙালী সুখময় জীবনের জন্য প্রাণপাত করলেও সুখ আর দুয়ারে হাজির হতে চায় না। তবু এক ধরনের সুখের প্লাবন বয়ে যায়। সুখের পরিমাপ জানে জাতিসংঘ। তাদের উদ্যোগে সাসটেইনেবল ডেভেলপমেন্ট সলিউশন নেটওয়ার্কের (এসডিএসএন) বিশ্বসুখ নিয়ে ১৫৫টি যে জরিপ করেছে চলতি বছর তাতে বাংলাদেশ গতবারের মতো এবারও ১১০তম অবস্থানে রয়েছে। জনগণের সুখের বিবেচনায় এই অবস্থানের সর্বশীর্ষে রয়েছে নরওয়ে। বিশ্বের সবচেয়ে সুখী দেশের তালিকায় গত বছর শীর্ষে ছিল ডেনমার্ক। ক্যারিবীয় দেশগুলো তালিকার প্রথম দশটি স্থানে রয়েছে। সর্বনিম্ন স্থানে রয়েছে মধ্য আফ্রিকান প্রজাতন্ত্র। বিস্ময়কর যে, তালিকায় পাকিস্তান ৮০তম, ভুটান ৯৭তম, নেপাল ৯৯তম, মিয়ানমার ১১৪তম, ভারত ১২২তম স্থানে রয়েছে। প্রতিষ্ঠানটি ২০১২ সাল থেকে এই জরিপ প্রতিবেদন প্রকাশ করে আসছে। তালিকা প্রণয়নের ক্ষেত্রে ছয়টি বিষয়কে বিবেচনায় নেয়া হয়েছে। এগুলো হচ্ছে- মোট দেশজ উৎপাদন, স্বাস্থ্যকর জীবনযাপন, স্বাধীনতা, উদারতা সামাজিক মূল্যবোধ এবং সরকার কিংবা ব্যবসায় দুর্নীতির অনুপস্থিতির হার। তালিকায় বাংলাদেশ যে অবস্থানেই থাকুক, বাস্তবতা হচ্ছে, দু’বেলা দু’মুঠোর সংস্থান হলেই নিশ্চিন্ত মনে রাতের শয্যা গ্রহণ করে সুখ নিদ্রায় যেতে পারে বাঙালী। এত কম চাহিদার জাতি বিশ্বে খুঁজে পাওয়া ভার। নানা অনুষ্ঠানে বাঙালীকে সুখী মনেই হতে পারে। জীবনযাপনের মানোন্নয়ন সুখের দিকে টেনে নেয়। বাঙালীর জীবনে আর্থিক সচ্ছলতা ক্রমশ বাড়তে থাকলে, সুখের মাত্রা বেড়ে যাওয়া অসম্ভব নয়। বরীন্দ্রনাথ বলেছিলেন, ‘সুখে আছে যারা, সুখে থাক তারা।’ সুতরাং যেসব দেশ সুখের নহরে শীর্ষাকাশে, তারা আরও সুখী থাক। সেই সঙ্গে বাঙালীও সুখ সমুদ্র খুঁজে পায় যেন।
×