ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১

সংস্কৃতি সংবাদ

মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘরের প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী ও স্বাধীনতা দিবসের অনুষ্ঠান শুরু

প্রকাশিত: ০৫:৩৭, ২৩ মার্চ ২০১৭

মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘরের প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী ও স্বাধীনতা দিবসের অনুষ্ঠান শুরু

স্টাফ রিপোর্টার ॥ মহান মুক্তিযুদ্ধ বাঙালীর অহঙ্কার। আর এই চিরস্থায়ী অহঙ্কার মুক্তিযুদ্ধ’র ইতিহাসকে ভবিষ্যত প্রজন্মের জন্য সংরক্ষণ করার লক্ষ্যে ১৯৯৬ সালের ২২ মার্চ প্রতিষ্ঠিত হয় ‘মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘর’। ১৯৭১ সালে মহান স্বাধীনতার জন্য দেশের মানুষ যে ত্যাগ ও বেদনার মধ্য দিয়ে গেছে সেটা ভবিষ্যত প্রজন্মের জন্য নথিবদ্ধ করে রাখার লক্ষ্যেই এ মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘর প্রতিষ্ঠিত। ঢাকার সেগুনবাগিচায় অবস্থিত এই মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘর আনুষ্ঠানিক যাত্রা শুরুর পর থেকেই এ লক্ষ্যেই প্রতিনিয়ত কাজ করে যাচ্ছে। মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতিসংরক্ষণের এই অনন্য প্রতিষ্ঠানটির ২১তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী ও স্বাধীনতা দিবস উদ্যাপন উপলক্ষে আয়োজন করেছে সপ্তাহব্যাপী অনুষ্ঠানমালা। সেগুনবাগিচাস্থ জাদুঘর প্রাঙ্গণে বুধবার বিকেলে ছিল সপ্তাহব্যাপী অনুষ্ঠানমালার উদ্বোধনী অনুষ্ঠান। এ উদ্বোধনী অনুষ্ঠানের শুরুতেই স্বাগত বক্তব্য দেন মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘরের ট্রাস্টি ডাঃ সারওয়ার আলী। তিনি বলেন, এক ঝঞ্ঝা বিক্ষুব্ধ সন্ধ্যায় এই মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘরের সূচনা হয়। ‘মুক্তির মন্দির শোপানো তলে’ গানটির মধ্য দিয়ে শুরু হয়েছিল এই জাদুঘর। এখন এই জাদুঘর এক টগবগে যুবক। অহঙ্কারের সঙ্গে বলতে পারি, যে স্বপ্ন নিয়ে আমরা যাত্রা শুরু করেছিলাম, তার বহুলাংশে আমরা সফল হয়েছি। এটি এখন দেশের মুক্তিযুদ্ধের সর্ববৃহৎ সংগ্রহশালা। স্বপ্ন ছিল ভাড়াবাড়ি থেকে বেদনার ও গৌরবের এই জাদুঘরকে স্থায়ী একটি রূপ দেয়ার। আমরা তা পেরেছি। মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘর প্রতিষ্ঠায় যারা অর্থ ও পরামর্শ দিয়ে সহযোগিতা করেছেন তাদের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানিয়ে ডাঃ সারওয়ার আলী বলেন, যে আদর্শ নিয়ে আমরা মুক্তিযুদ্ধে অংশ নিয়েছিলাম সে আদর্শগত অবস্থান বারবার ক্ষতবিক্ষত হয়েছে। স্বাধীনতার ওপর কুঠারাঘাত হয়েছে বারবার। আগামী ১৬ এপ্রিল আগারগাঁওয়ের এই জাদুঘরের উদ্বোধন করবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এরপর বার্ষিক প্রতিবেদন পেশ করেন মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘরের ট্রাস্টি ও সদস্যসচিব জিয়াউদ্দিন তারিক আলী। পরে ‘বহুত্ববাদী বাঙালী সমাজ ও মুক্তিযুদ্ধ’ শীর্ষক স্মারক বক্তৃতা করেন অধ্যাপক ড. অনুপম সেন। তিনি বলেন, আমাদের সবাইকে নিয়ে বাঙালী জাতিসত্তা গড়ে উঠেছে। সবাইকে নিয়েই আমাদের বহুত্ববাদী সংস্কৃতি। যেখানে কেউই ছোট নন। আমাদের মূল সংস্কৃতি হলো আমরা সবাই বাঙালী। পরবর্তিতে বাঙালী জাতিসত্তার মূল উন্মেষ ঘটিয়েছেন জাতির জনক বঙ্গবন্ধু। আর মুক্তিযুদ্ধ আমাদের অহঙ্কার। পরে শুরু হয় সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান। এ পর্বের শুরুতে নৃত্য পরিবেশন করে স্পন্দনের শিল্পীরা। শোন একটি মুজিবরের’, ‘বাংলার হিন্দু বাংলার বৌদ্ধ’ ও ‘এ মাটি নয় জাঙ্গিবাদের’ গানগুলোর সঙ্গে তারা দলীয় নৃত্য পরিবেশন করে। দলীয় আবৃত্তি পরিবেশন করে-সংবৃতা আবৃত্তি চর্চা ও বিকাশ কেন্দ্র। দলীয় সঙ্গীত পরিবেশন করে-আনন্দন এবং অন্যান্য সাংস্কৃতিক পরিবেশনায় অংশ নেয়-ফতুল্লা পাইলট উচ্চ বিদ্যালয় এবং উত্তরা ইউনিভার্সিটি। এছাড়াও এ অনুষ্ঠানে ‘ঘাতক’ শিরোনামের একটি পথনাটক পরিবেশন করে মৈত্রী থিয়েটার। নাটকটি রচনা করেছেন আব্দুল হালিম আজিজ এবং নির্দেশনা দিয়েছেন নিয়াজ আহমেদ ও আসাদুজ্জামান আসাদ। এদিকে মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘর প্রাঙ্গণে এদিন উদ্বোধন হয়েছে সপ্তাহব্যাপী মুক্তিযুদ্ধের বইমেলা। উৎসবের শেষ পর্যন্ত প্রতিদিন সকাল ১০টা থেকে সন্ধ্যা ৭টা পর্যন্ত এ বইমেলা চলবে। আগামী ২৮ মার্চ পর্যন্ত সময়সীমার এই সপ্তাহব্যাপী এই প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর অনুষ্ঠান প্রতিদিন সেগুনবাগিচার মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘর প্রাঙ্গণে অনুষ্ঠিত হবে। এবং এর পাশাপাশি আগামীকাল ২৪ মার্চ থেকে ২৬ মার্চ স্বাধীনতা দিবস পর্যন্ত মিরপুরের জল্লাদখানা বধ্যভূমি স্মৃতিপীঠেও এই আয়োজন অনুষ্ঠিত হবে। সুরের মূর্ছনা ছড়াবে আইয়ুব বাচ্চুর গিটার ॥ এবার গান নয়, পুরোটা সময় জুড়ে সুরের মূর্ছনা ছড়াবে জনপ্রিয় ব্যান্ড তারকা আইয়ুব বাচ্চু। ভক্তদের বাড়তি চাওয়াকে সাড়া দিয়ে টানা দুই ঘণ্টা শুধু গিটারের নৈপুণ্য তুলে ধরবেন তিনি। বাংলাদেশে এই প্রথমবারের মতো আয়োজিত একক গিটার শো ‘বাংলাফ্লিক্স প্রেজেন্টস সাউন্ড অব সাইলেন্স’ নিয়ে আসছেন আইয়ুব বাচ্চু। আগামী ২৪ মার্চ সন্ধ্যায় রাজধানীর কৃষিবিদ ইনস্টিটিউশন মিলনায়তনে অনুষ্ঠিতব্য এই গিটার শো যৌথভাবে আয়োজন করেছে উইজার্ড শোবিজ, ডিজে প্রো এবং এবি কিচেন। বুধবার চ্যানেল আই কার্যালয়ে গিটার শো উপলক্ষে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এসব কথা জানানো হয়। এতে উপস্থিত ছিলেন এলআরবি ব্যান্ড দলের লিড ভোকালিস্ট ও সঙ্গীত তারকা আইয়ুব বাচ্চু, চ্যানেল আইয়ের ম্যানেজিং ডিরেক্টর ফরিদুর রেজা সাগর এবং বাংলা ঢোলের ম্যানেজিং ডিরেক্টর এনামুল হক। এতে আইয়ুব বাচ্চু বলেন, অনেক দিন ধরেই ভক্তদের অনুরোধ ছিল এমন একটি একক গিটার শো করার। আমারও ইচ্ছা ছিল, সে থেকেই শুধু গিটার নিয়ে লাইভ কনসার্টের পরিকল্পনা করেছিলাম। আমাদের দেশে এ ধরনের শো খুব একটা হয় না। তবে, এ ধরনের গিটার শো দেশের বাইরে অনেকেই করে থাকেন। আশা করি, ‘বাংলাফ্লিক্স প্রেজেন্টস সাউন্ড অব সাইলেন্স’ শোটি দর্শকদের ভাল লাগবে। সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, টানা দুই ঘণ্টা গিটার বাজানোর পাশাপাশি আইয়ুব বাচ্চু জিমি হেনড্রিক্স ও ডিপ পার্পলের দুটি গান গাইবেন। এই শোয়ের টিকেটের মূল্য ধরা হয়েছে ৫০০ টাকা। দর্শকরা টিকেট চাই ডট কম থেকে এই শোয়ের টিকেট সংগ্রহ করতে পারবেন। ‘বাংলাফ্লিক্স প্রেজেন্টস সাউন্ড অব সাইলেন্স’র প্রধান পৃষ্ঠপোষক হিসেবে আছে বাংলাফ্লিক্স, মিডিয়া পার্টনার চ্যানেল আই, বাংলাদেশ প্রতিদিন এবং রেডিও টুডে; পিআর এ্যান্ড কমিউনিকেশন পার্টনার কনসিটো পিআর; কনসার্ট পার্টনার বাংলা ঢোল। শিমুল ইউসুফের জয়ন্তীর দ্বিতীয় দিনের আয়োজন ॥ মঞ্চকুসুম শিমুল ইউসুফের ৬০তম জয়ন্তী উপলক্ষে দুই দিনব্যাপী অনুষ্ঠানের দ্বিতীয় দিন ছিল বুধবার। এদিন শিল্পকলা একাডেমির খোলা প্রাঙ্গণে নানা আঙ্গিকের সঙ্গীত পরিবেশনা হয়। রবীন্দ্রসঙ্গীত গেয়ে শোনান বুলবুল ইসলাম। নজরুলের কীর্তন আঙ্গিকের গান শোনান বিজন চন্দ্র মিস্ত্রী। আধুনিক গান পরিবেশন করেন মামুন জাহিদ খান। লালনের গান গেয়ে শোনান রেবা সরকার আর লোকসঙ্গীত গেয়ে শোনান শিল্পী চন্দনা মজুমদার। ‘জাদুর প্রদীপ’, র‌্যালি ও সেমিনার ॥ রাজধানীর সেগুনবাগিচার বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমিতে ‘শুদ্ধ সংস্কৃতি রুখবে, অপসংস্কৃতির সকল দ্বার’ স্লোগানে চলছে তিন দিনব্যাপী ‘জাতীয় মূকাভিনয় উৎসব-২০১৭’। বুধবার ছিল এই উৎসবের দ্বিতীয় দিন। এদিন সন্ধ্যা সাতটায় শিল্পকলা একাডেমির স্টুডিও থিয়েটার হলে নাট্যসংগঠন স্বপ্নদলের মাইমোড্রামা ‘জাদুর প্রদীপ’র বিশেষ মঞ্চায়ন হয়। ‘আরব্য রজনী’র অমর কাহিনী ‘আলাদিনের আশ্চর্য প্রদীপ’ অবলম্বনে নির্মিত এ মাইমোড্রামার কাহিনি-পুনর্বিন্যাসসহ নির্দেশনা দিয়েছেন জাহিদ রিপন। এর আগে বিকেলে শিল্পকলা একাডেমিতে বিশ্ব মূকাভিনয় দিবস র‌্যালি এবং সেমিনার অনুষ্ঠিত হয়। সেমিনারে ’মূকাভিনয়ের শিল্পরূপ’ শীর্ষক মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন রিজোয়ান রাজন। মঞ্চসারথি আতাউর রহমানের সভাপতিত্বে আলোচনায় অংশগ্রহণ করেন বাবুল বিশ্বাস, কামাল উদ্দিন কবীর, ইস্রাফিল আহমেদ রঙ্গন, জাহিদ রিপন, নাদেজদা ফারজানা মৌসুমী, নিথর মাহবুব, রাজ ঘোষ, মীর লোকমান প্রমুখ। আজ বৃহস্পতিবার শেষ হবে তিনদিনের এই উৎসব। সমাপনী অনুষ্ঠান শেষে মূকাভিনয় পরিবেশন করবে প্যান্টোমাইম মুভমেন্ট, জেন্টলম্যান প্যান্টোমাইম ও শ্রুতি সাংস্কৃতিক একাডেমি। পুরস্কার পেল ‘গন্তব্যহীন’ ও ‘ফানুস’ ॥ মামুন-অর-রশিদ রাজশাহী থেকে জানান, রাজশাহীতে পৃথক দুটি চলচ্চিত্র উৎসবে প্রদর্শিত তরুণ পরিচালক শাহারিয়ার চয়নের দুটি ছবি পুরস্কার পেয়েছে। এছবি দুটির একটি হলো ‘গন্তব্যহীন’ অপরটি ‘ফানুস’। সর্বশেষ গত ১৭ থেকে ২১ মার্চ রাজশাহী নগরীর তিনটি ভেন্যুতে প্রদর্শিত প্রথম রাজশাহী আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসবে অন্যান্য পরিচালকদের নির্মিত চলচ্চিত্রের পাশাপাশি প্রদর্শিত হয় স্বল্পদৈর্ঘ্য চলচ্চিত্র গন্তব্যহীন। একজন আগন্তুকের চলাফেরা, বসবাস ও বাঁচার সংগ্রাম ও জীবনের নানা চরিত্র তুলে ধরা হয় এ ছবিতে। তার অপর চলচ্চিত্রের নাম ‘ফানুস’। এর মধ্যে গন্তব্যহীন রাজশাহীতে অনুষ্ঠিত প্রথম রাজশাহী আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসবে সেরা ছবি মনোনীত হয়। আর ফানুস সেরা ছবি মনোনীত হয় গত বছরের অক্টোবরে রাজশাহী ফিল্ম সোসাইটি ও ঋত্বিক ঘটক ফিল্ম সোসাইটি আয়োজিত জঙ্গী ও সন্ত্রাসবিরোধী চলচ্চিত্র উৎসবে প্রতিযোগিতা করা হয়। এতে দর্শকপ্রিয়তা পাওয়ায় শ্রেষ্ঠ চলচ্চিত্র মনোনীত হয় ফানুস। সর্বশেষ গত মঙ্গলবার শ্রেষ্ঠ চলচ্চিত্র ক্যাটাগরিতে শাহারিয়ার চয়নের ‘গন্তব্যহীন’, শ্রেষ্ঠ চলচ্চিত্রের পুরস্কার লাভ করে। রাজশাহী ফিল্ম সোসাইটির সভাপতি আহসান কবীর লিটনের সভাপতিত্বে সমাপনী অনুষ্ঠানে শাহারিয়ার চয়নের হাতে এ পুরস্কার তুলে দেন উপমহাদেশের প্রখ্যাত কথাসাহিত্যিক হাসান আজিজুল হক।
×