ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

বাংলাদেশ বাঁচাতে হলে আওয়ামী লীগকে বাঁচাতে হবে ॥ ওবায়দুল কাদের

প্রকাশিত: ০৫:৩৬, ২৩ মার্চ ২০১৭

বাংলাদেশ বাঁচাতে  হলে আওয়ামী লীগকে বাঁচাতে  হবে ॥ ওবায়দুল কাদের

স্টাফ রিপোর্টার, সিলেট অফিস ॥ আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের বলেছেন, বাংলাদেশ বাঁচাতে হলে আওয়ামী লীগকে বাঁচাতে হবে। মুক্তিযুদ্ধকে বাঁচাতে হলে আওয়ামী লীগকে বাঁচাতে হবে। স্বাধীনতাকে বাঁচাতে হলে আওয়ামী লীগকে বাঁচাতে হবে। যে উন্নয়ন ও অর্জন হচ্ছে তা বাঁচাতে হলে আওয়ামী লীগকে বাঁচাতে হবে। এ সময় বর্তমান সরকারের বিভিন্ন উন্নয়ন কর্মকা-ের চিত্র তুলে ধরে তিনি বলেন, শেখ হাসিনা তিন বছরে যা করেছেন, বিগত সরকারগুলো ২৮ বছরেও তা করতে পারেনি। এই বছরই সিলেট-ঢাকা মহাসড়ক চার লেনে উন্নীতকরণের কাজ শুরু হবে। বুধবার সিলেট আলিয়া মাদ্রাসা মাঠে বিভাগীয় তৃণমূল প্রতিনিধি সম্মেলনে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি বলেন, বিএনপির আন্দোলন মরাগাঙ্গের পানির মতন, কখনও জোয়ার আসবে না। আজ নয় কাল, কাল নয় পরশু আন্দোলন করবে বলে বিএনপি ৮ বছর অতিক্রম করেছে। তাদের আন্দোলনে জনগণের কোন সাড়া নেই।’ জনগণের ভোটে টিকতে পারবে না বলে বিএনপি এখন উগ্র জঙ্গীবাদীদের মদদ দিয়ে দেশ অস্থিতিশীল করার চক্রান্ত করছে। নির্বাচনে অংশ নেয়া বিএনপিসহ সকল রাজনৈতিক দলের গণতান্ত্রিক অধিকার। আমরা কেন তাদের অনুরোধ করবো? আপনারাই আপনাদের অধিকার বুঝে নেবেন’। বিএনপি সম্পর্কে কাদের বলেন, বিএনপিকে নিয়ে ভয় পাবেন না। ওদের নিয়ে বিচলিত হওয়ার কারণ নেই। আমি এদের নাম দিয়েছিÑ বাংলাদেশ নালিশ পার্টি। নির্বাচনে ব্যর্থ, আন্দোলনে ব্যর্থ। ঘরে বসে বসে খালি মিথ্যাচার করে। নালিশের ভাঙ্গা রেকর্ড বাজায়। নেতাকর্মীদের উদ্দেশে ওবায়দুল কাদের বলেন আগামী জাতীয় নির্বাচনের মাত্র দেড় বছর বাকি আছে। নেতাকর্মীদের কথা কম বলে বেশি বেশি কাজ করতে হবে। আওয়ামী লীগকে হাইব্রিড নেতাদের কাছ থেকে বাঁচিয়ে রাখতে হবে। আওয়ামী লীগের যেসব কমিটি মেয়াদোত্তীর্ণ সেই সব কমিটি নতুন করে করতে হবে। ‘আওয়ামী লীগে বছরের পর বছর জমিদারের মতো পদে বসে থাকা চলবে না। আমাদের গডফাদার দরকার নেই, দরকার নেই পেশাহীন পেশাজীবীর। আমরা সন্ত্রাসমুক্ত আওয়ামী লীগ গড়তে চাই। প্রত্যেক ওয়ার্ড, ইউনিয়ন ও উপজেলোর মেয়াদোত্তীর্ণ কমিটি নতুন করে করতে হবে। সিলেট বিভাগের দায়িত্বপ্রাপ্ত যুগ্ম সম্পাদক মাহবুবুল হক হানিফ ও সাংগঠনিক সম্পাদক আহমদ হোসেন তারিখ নির্ধারণ করে দেবেন। কমিটি গঠন নিয়ে কোন টালবাহানা চলবে না। পকেট কমিটি মেনে নেয়া হবে না। সুশৃঙ্খলভাবে কমিটি গঠনের মাধ্যমে আওয়ামী লীগকে শক্তিশালী করে আগামী সংসদ নির্বাচনে দলকে বিজয়ী করতে হবে। সিলেটসহ সারাদেশে আওয়ামী লীগে কোন পকেট কমিটি চলবে না। প্রতিটি স্থানেই প্রকাশ্যে সম্মেলনের মাধ্যমে গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ায় কমিটি দেয়া হবে। সকল ভেদাভেদ আর মতপার্থক্য ভুলে দলের স্বার্থে সর্বস্তরের নেতাকর্মীকে একযোগে কাজ করতে হবে। পেশাহীন ও পেশিজীবীমুক্ত আওয়ামী লীগ চাই উল্লেখ করে সেতুমন্ত্রী বলেন, সিলেটের যারা সৎ ও শিক্ষিত মানুষ তাদের শেখ হাসিনার নেতৃত্বে আওয়ামী লীগে যোগদানের আহ্বান জানাই। রাজনীতিতে যদি ভাল মানুষেরা না আসে রাজনীতি খারাপ মানুষের হাতে চলে যাবে। খারাপ লোকেরা এমপি-মন্ত্রী হবে। দেশের বারোটা বাজাবে। আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আমরা আরও শক্তিশালী, আরও স্মার্ট ও আরও আধুনিক আওয়ামী লীগ গড়ে তুলতে চাই। কর্মিবাহিনীকে আমরা সুশৃঙ্খল করতে চাই। দল করবেন, দলের নিয়মশৃঙ্খলা মানবেন না, তা করার কোন অধিকার আপনার নেই। তিনি দলীয় নেতাকর্মীদের আচরণেরও সমালোচনা করেন। এ সময় কর্মীদের মূল্যায়ন করতে ও জনগনের ভাল আচরণ করতে নেতাদের প্রতি নির্দেশ দেন তিনি। বিভিন্ন মহল দেশে ব্যাঙের ছাতার মতো লীগ নাম ব্যবহার করে দোকান খুলে বসে আছে উল্লেখ করে ওবায়দুল কাদের বলেন, এই আওয়ামী ওলামালীগ, প্রচার লীগ, আওয়ামী তরুণলীগ, আওয়ামী প্রবীণলীগ, আওয়ামী প্রজন্মলীগ, আওয়ামী কর্মজীবীলীগ, আওয়ামী ডিজিটাললীগ, আওয়ামী হাইব্রিডলীগ এসব এল কোথা থেকে। এসব নাম ব্যবহার বন্ধ করতে হবে। যারা দিনে আওয়ামী লীগ এবং রাতে বিএনপির সঙ্গে আঁতাত করে এদের চিহ্নিত করার দাবি উঠেছে আওয়ামী লীগের সিলেট বিভাগীয় তৃণমূল প্রতিনিধি সমাবেশে। সমাবেশে স্থানীয় সরকারের বিভিন্ন নির্বাচনে দলের বিদ্রোহী প্রার্থী, তৃণমূল নেতাকর্মীদের সঙ্গে মন্ত্রী-এমপির দূরত্ব এবং তাদের যথাযথ মূল্যায়ন না করার বিষয়টিও তুলে ধরেন। তারা এও বলেন, শেখ হাসিনার নেতৃত্বে দেশ সঠিক পথে এগিয়ে চলেছে। কিন্তু, দলে অনুপ্রবেশকারীদের কারণে তাদের অনেক বদনাম হচ্ছে। এসব প্রতিরোধ করা না গেলে আগামী নির্বাচনে এর বিরূপ প্রভাব পড়তে পারে। অনুষ্ঠানে অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত বলেন, এই সম্মেলন নির্বাচনের প্রস্তুতির ইঙ্গিত দিচ্ছে। নির্বাচনের আগেই দলকে সংগঠিত করতে হবে। আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুবুল আলম হানিফ এমপির সভাপতিত্বে ও সিলেটের দায়িত্বপ্রাপ্ত সাংগঠনিক সম্পাদক আহমদ হোসেনের পরিচালনায় সম্মেলনে বক্তব্য রাখেন অর্থমন্ত্রী ও সিলেট-১ আসনের সংসদ সদস্য আবুল মাল আবদুল মুহিত, অর্থ ও পরিকল্পনা প্রতিমন্ত্রী এম এ মান্নান, কেন্দ্রীয় যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুবুল আলম হানিফ এমপি, সিলেটের দায়িত্বপ্রাপ্ত সাংগঠনিক সম্পাদক আহমদ হোসেন, কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক এ্যাডভোকেট মিসবাহ উদ্দিন সিরাজ, কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগের শ্রমবিষয়ক সম্পাদক হাবিবুর রহমান সিরাজ, সংসদ সদস্য হুইপ উপাধ্যক্ষ আবদুশ শহীদ, কেন্দ্রীয় সদস্য ও সিলেট মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি বদর উদ্দিন আহমদ কামরান, জেলা আওয়ামী লীগের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি ও জেলা পরিষদ প্রশাসক এ্যাডভোকেট লুৎফুর রহমান, সাধারণ সম্পাদক ও সাবেক সাংসদ শফিকুর রহমান চৌধুরী, মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আসাদ উদ্দিন আহমদ, সিলেট-৩ আসনের সংসদ সদস্য মাহমুদ সামাদ কয়েস, সিলেট-৪ আসনের সাংসদ ইমরান আহমদ, সংসদ সদস্য মুহিবুর রহমান মানিক, সংরক্ষিত আসনের সংসদ সদস্য আমাতুল কিবরিয়া কেয়া চৌধুরী বিভিন্ন জেলা, উপজেলা ও পৌরসভার নেতারা বক্তব্য রাখেন। দীর্ঘ ১৫ বছর পর এই বিভাগীয় সম্মেলনকে ঘিরে সিলেট বিভাগের ৪ জেলার নেতাকর্মীদের মধ্যে ছিল উৎসাহ-উদ্দীপনা। মৌসুমি নেতাদের কাছ থেকে দলকে রক্ষা করা, তৃণমূল নেতাকর্মীদের মূল্যায়ন, নির্বাচনে ত্যাগী নেতাদের মনোনয়নসহ বিভিন্ন বিষয় নিয়ে আগত নেতাকর্মীরা বক্তব্য রাখেন।
×