ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

৯৯৯ সব বিপদে বন্ধুর মতো পাশে দাঁড়াবে

প্রকাশিত: ০৫:৩২, ২৩ মার্চ ২০১৭

৯৯৯ সব বিপদে বন্ধুর মতো পাশে দাঁড়াবে

সমুদ্র হক ॥ ৯৯৯-এই একটি নম্বরে কল করে দেশের যে কোন প্রান্তের যে কোন ব্যক্তি জরুরী প্রয়োজনে অতি দ্রুত সেবা পাবেন। সকল বিপদে বন্ধুর মতো পাশে থেকে সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দেবে ৯৯৯। বিশ্বের উন্নত দেশে এ ধরনের জরুরী সার্ভিস আছে। বাংলাদেশে তথ্য, যোগাযোগ ও প্রযুক্তির (আইসিটি) ব্যাপক উন্নয়নে ন্যাশনাল ইমারজেন্সি সার্ভিস বা জাতীয় হেল্পডেস্ক চালু করা হয়েছে। প্রাথমিক পর্যায়ে পুলিশ, ফায়ার সার্ভিস ও এ্যাম্বুলেন্স সহযোগিতা পেতে বিনা টোলে ৯৯৯ নম্বরে ফোন করলেই অতি দ্রুত সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের সঙ্গে সংযোগ ঘটিয়ে দ্রুত সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দেবে। গত বছর চালু হওয়া জাতীয় হেল্প ডেস্ক চলতি বছরের মার্চের প্রথমার্ধ পর্যন্ত ১৩ লাখ ফোন কল পেয়েছে। এর মধ্যে সহযোগিতা চেয়ে ফোন কল ছিল ৪ লাখ। বাকি কলগুলো ছিল বিষয়টি জানার। কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, সহযোগিতা চেয়ে যে কলগুলো তারা পেয়েছেন তার মধ্যে পুলিশের সহযোগিতা চেয়ে কল এসেছিল ৬৮ শতাংশ। ফায়ার সার্ভিসের সহযোগিতা চেয়ে কল ছিল ২৭ শতাংশ। বাকি ৫ শতাংশ কল ছিল এ্যাম্বুলেন্স পাওয়ার জন্য। প্রতিদিনই সহযোগিতা চাওয়ার কল সংখ্যা বাড়ছে। দেশের সকল স্থানের সকলের পক্ষে জরুরী সার্ভিসগুলোর ফোন নম্বর জানা সম্ভব নয়। এ ক্ষেত্রে উন্নত বিশ্বের মতো বাংলাদেশেও প্রতিটি প্রান্ত থেকে কমন একটি সহজ নম্বরে দ্রুত যোগাযোগের প্রযুক্তি স্থাপিত হয়েছে। সূত্র জানিয়েছে, শীঘ্রই সার্ভিসের ক্ষেত্র বাড়িয়ে দেশের প্রতিটি জেলায় ৯৯৯ হেল্পডেস্ক চালু করা হবে। বর্তমানে কেন্দ্রীয়ভাবে গাজীপুর হাইটেক পার্কে ৯৯৯ হেল্পডেস্ক পাইলট প্রকল্প হিসেবে স্থাপিত হয়েছে। সেখানে একসঙ্গে ৩০টি লাইন সপ্তাহের প্রতিদিন ২৪ ঘণ্টা চালু থাকে। এজন্য কর্মরত আছেন ৩শ’ দক্ষ কর্মী। তারা প্রতিদিন দেশের প্রতিটি প্রান্তের গড়ে ৩০ হাজার কল রিসিভ করে দ্রুত সহযোগিতার লিংক করে দেন। এ পর্যন্তই তাদের কাজ শেষ হয় না। যে প্রয়োজনে কল করা হয়েছে সেই ব্যক্তি বা গোষ্ঠী ঠিকমতো সহযোগিতা পেল কি না তাও মনিটরিং করা হয়। কে কতটা সহযোগিতা পাচ্ছে কিভাবে পাচ্ছে বা পায়নি ৯৯৯ কর্তৃপক্ষকে তার জবাবদিহিতা করতে হয়। প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের এ্যাকসেস টু ইনফরমেশন (এটুআই) বিভাগ জাতীয় হেল্পডেস্কের কার্যক্রম মনিটরিং করে। শীঘ্রই এই সার্ভিসগুলোর প্রযুক্তি আপগ্রেড করে ব্যাপ্তি বাড়ানো হবে। কর্তৃপক্ষ বলেন, ৯৯৯ এ কল করার সময় কয়েকটি তথ্য নির্দিষ্ট করে বলতে হয়। অনেক সময় বিপদের মুহূর্তে তথ্য দেয়ার সময় অসংলগ্নতা পেয়ে বসে। এ ক্ষেত্রে সঠিক তথ্য না জানালে সংযোগ ঘটিয়ে দিতে বিড়ম্বনায় পড়তে হয়। যিনি কল করছেন তার পরিচিতিসহ কোন লোকেশনে কি ধরনের ঘটনা তার বৃত্তান্ত তুলে ধরতে হয়। অনেক সময় যে কর্তৃপক্ষের সঙ্গে সংযোগ ঘটিয়ে দেয়া হচ্ছে তারাও পরিচিতি ও তথ্য চাইতে পারে। এ ক্ষেত্রে বিরক্ত না হয়ে সহযোগিতা পেতে পুনরায় কথা বলতে হয়। পুলিশের কাছে সহযোগিতা পেতে পূর্ণ বর্ণনা সঠিকভাবে দেয়া দরকার। ফায়ার সার্ভিস শুধু আগুন নেভায় না। সড়ক দুর্ঘটনা নৌ দুর্ঘটনা আটকে পড়া মানুষ ও পশু পাখি উদ্ধার করে। সহযোগিতা দিতে ঘটনাস্থলে প্রয়োজনীয় ও পর্যাপ্ত সরঞ্জাম নিতে এই তথ্যগুলোর প্রয়োজন হয়। জাতীয় হেল্পডেস্ক সূত্র জানায় এই সার্ভিসগুলো আরও আধুনিকায়ন ও আপগ্রেড করতে সার্বিক ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে। আগামীতে ফোন করার সঙ্গে স্বয়ংক্রিয়ভাবে নম্বরের সঙ্গে লোকেশন ও ঘটনাস্থলে পৌঁছার আশপাশের সড়কের অবস্থানও কম্পিউটারে ভেসে উঠবে। ওয়েবসাইটে গিয়েও ৯৯৯ এ যোগাযোগ করা যাবে। সহযোগিতা পেতে ৯৯৯ ওয়েবসাইটে গিয়ে ইনবক্সে তথ্য দেয়া যাবে। আগামীতে সার্ভিসগুলো সম্প্রসারিত করে পানি, বিদ্যুত, গ্যাসসহ প্রতিটি মন্ত্রণালয়ের প্রতিটি বিভাগে সহযোগিতা পাওয়ার ক্ষেত্র তৈরি হচ্ছে। ওয়েবসাইটে ইনবক্সে লিখে সহযোগিতা চাইলে দ্রুততার সঙ্গে উত্তর দেয়ার সফটওয়্যার তৈরি হচ্ছে। এজন্য কয়েকটি এ্যাপস, সার্চ ইঞ্জিন স্থাপিত হচ্ছে। ৯৯৯ সকল বিপদে বন্ধুর মতো পাশে দাঁড়াবার আয়োজন সম্পন্ন করার পথে। ৯৯৯ অপারেটরদের ১০টি বিষয়ে দক্ষ করে তোলা হচ্ছে। যাতে প্রাথমিক সমাধানগুলো কল করার সঙ্গেই দিতে পারে। এজন্য তাদের বাংলা ইংরেজী ভাষার সঙ্গে আঞ্চলিক ভাষা জানার প্রশিক্ষণ দেয়া হয়। পর্যটক, বিদেশীরা এসে কোথাও কোন অসুবিধায় পড়লে ৯৯৯ তাদের পাশে দাঁড়াবে। দেশের যে কোন প্রান্তের মানুষ এলাকা ভিত্তিক আঞ্চলিক ভাষায় ৯৯৯ এ যোগাযোগ করলে অপারেটররা যেন কম্যুনিকেট করতে পারেন সেই প্রশিক্ষণ দেয়া হচ্ছে। এ বিষয়ে বগুড়ার অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (শিক্ষা ও আইসিটি) সুফিয়া নাজিম বলেন, দেশের সকল নাগরিকের জরুরী ও প্রয়োজনীয় সেবার ক্ষেত্র সম্প্রসারিত করতে ডিজিটালের প্রতিটি সুযোগ কাজে লাগানো হবে।
×