ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪৩১

বিপাকে মাছ চাষী ॥ সরকারী হ্যাচারিতে ৩০ বছর রেণু উৎপাদন বন্ধ

প্রকাশিত: ০৪:১৯, ২৩ মার্চ ২০১৭

বিপাকে মাছ চাষী ॥ সরকারী হ্যাচারিতে ৩০ বছর রেণু উৎপাদন বন্ধ

খোকন আহম্মেদ হীরা, বরিশাল ॥ নানা সমস্যার কারণে দীর্ঘ ৩০ বছর ধরে মাছের রেণু উৎপাদন বন্ধ রয়েছে গৌরনদী উপজেলার একমাত্র সরকারী মৎস্য উৎপাদন কেন্দ্রের হ্যাচারিতে। এ কারণে বিপাকে পরেছেন এলাকার মৎস্য চাষীরা। বিপুল অর্থ ব্যয়ে পরিচালিত এ মৎস্য উৎপাদন কেন্দ্রটি এলাকার মৎস্য চাষীদের কোন উপকারেই আসছে না। নিরুপায় হয়ে মাছ চাষীরা মাছের রেণু সংগ্রহ করছেন ব্যক্তি উদ্যোগে নির্মিত স্থানীয় কয়েকটি হ্যাচারি থেকে। সূত্রমতে, অনেক মৎস্য চাষীরা রেণু বা মাছের পোনা সংগ্রহ করছেন যশোর, কুষ্টিয়াসহ দেশের বিভিন্ন এলাকা থেকে। একই অবস্থা সরকারী মৎস্য কেন্দ্রের। নিজস্ব খামারে পোনা উৎপাদন না হওয়ায় এখানকার নয়টি পুকুরে অন্যস্থান থেকে রেণু ক্রয় করে এনে ছাড়া হচ্ছে। মাঝে মধ্যে বাজার থেকে পোনা ক্রয় করে খামার কর্তৃপক্ষ সরকারী জলাশয় কিংবা উন্মুক্ত জলাশয়ে মাছের পোনা অবমুক্ত করছেন। অথচ যে লক্ষ্য নিয়ে এ খামারের পেছনে সরকার প্রতিবছর কোটি টাকা ব্যয় করছে তার কোন উপকারই পাচ্ছেন না স্থানীয় পর্যায়ের চাষীরা। গত কয়েক বছর আগে গৌরনদী মৎস্য খামারের চারপাশে কোটি টাকা ব্যয়ে বাউন্ডারি ওয়াল নির্মাণ করা হয়েছে। গত বছর প্রায় ৬০ লাখ টাকা ব্যয়ে চারটি পুকুরের চারপাশে গাইড ওয়াল নির্মাণ করা হয়। এছাড়া প্রতিবছর পোনা উৎপাদনের নামে সরকারীভাবে বিপুল অর্থ বরাদ্দ করা হলেও তার কোন হদিস নেই। মৎস্য হ্যাচারিটি চালুর বিষয়ে দীর্ঘদিনেও কোন উদ্যোগ নেয়নি সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ। এ কারণে এলাকাবাসীর মধ্যে তীব্র ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে। সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, স্বাধীনতার পরবর্তী সময়ে সরকারী উদ্যোগে উপজেলার দক্ষিণ পালরদী মৌজায় ১৪ একর জমির ওপর এ মৎস্য কেন্দ্রটি প্রতিষ্ঠিত হয়। মাছের পোনা উৎপাদনের জন্য বিপুল অর্থ ব্যয়ে এখানে খনন করা হয় বৃহৎ পরিসরের নয়টি পুকুর। ১৯৮৫ সালে এখানে রেণু উৎপাদনের জন্য একটি হ্যাচারি তৈরি করা হয়। মাত্র দুই বছর যেতে না যেতেই হ্যাচারিতে রেণু উৎপাদন কার্যক্রম বন্ধ হয়ে যায়। সূত্রে আরও জানা গেছে, হ্যাচারির জন্য গভীর নলকূপ থেকে তোলা পানি লবণাক্ত। নোনা পানিতে পোনা উৎপাদন করা যায় না এ অজুহাত দেখিয়ে পোনা উৎপাদন বন্ধ করে দেয় খামার কর্তৃপক্ষ। পরবর্তীতে দীর্ঘদিন ধরে চালু না থাকায় হ্যাচারির গভীর নলকূপটি বিকল হয়ে যায়। নষ্ট হয়ে যায় হ্যাচারিতে রেণু উৎপাদনের জন্য ব্যবহৃত পানি উত্তোলনের পাম্প মেশিনসহ বিভিন্ন সরঞ্জাম। সরজমিনে দেখা গেছে, দীর্ঘদিন থেকে পোনা উৎপাদন কার্যক্রম বন্ধ থাকায় সরকারী মৎস্য খামারের একমাত্র হ্যাচারিটি এখন স্টোর রুম হিসেবে ব্যবহৃত হচ্ছে। হ্যাচারির বাইরে তৈরি করা পাকা হাউসগুলোর মধ্যে বিভিন্ন গাছপালা জন্মে একাকার হয়ে গেছে। এসব রক্ষণাবেক্ষণ কিংবা দেখার যেন কেউ নেই। গৌরনদীর দক্ষিণ পালরদী গ্রামের মাছের পোনা ব্যবসায়ী মুজাফ্ফর হাওলাদার, বাবুল সরদার ও উত্তর পালরদী গ্রামের মিরন জানান, সরকারী খামারে পোনা না থাকায় তারা দাসেরহাট ও গুপ্তের হাটসহ স্থানীয় ব্যক্তি মালিকানাধীন হ্যাচারি থেকে চড়া দামে পোনা ক্রয় করে গ্রামে ঘুরে বিক্রি করে থাকেন। গৌরনদী পৌরসভার ৪নং ওয়ার্ডের কাউন্সিলর ও খামারের পার্শ্ববর্তী এলাকার বাসিন্দা লিটন ব্যাপারি ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, প্রায় ৩০ বছর থেকে সরকারী মৎস্য খামারে রেণু উপাদন হচ্ছে না। আগে এখানে মৎস্য চাষীদের প্রশিক্ষণ দেয়া হতো। দীর্ঘদিন থেকে তাও বন্ধ রয়েছে। অথচ এ খামারের জন্য সরকারের প্রতিবছর বিপুল পরিমাণ অর্থ ব্যয় হচ্ছে। তিনি দ্রুত হ্যাচারিটি চালুর বিষয়ে উর্ধতন কর্র্তৃপক্ষের হস্তক্ষেপ কামনা করেন। এ বিষয়ে গৌরনদী মৎস্য খামারের ব্যবস্থাপক দেবব্রত বিশ্বাস বলেন, মাত্র আট মাস আগে আমি এখানে যোগদান করেছি। বন্ধ হয়ে যাওয়া হ্যাচারিটি চালু করাসহ বিভিন্ন সমস্যার কথা ইতোমধ্যে আমি উর্ধতন কর্তৃপক্ষকে অবহিত করেছি। খুব শীঘ্রই হ্যাচারিটি চালু করা সম্ভব হবে বলেও তিনি উল্লেখ করেন।
×