ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

শজিমেকে রেডিও থেরাপির মেশিন ফের অচল

প্রকাশিত: ০৬:২৬, ২২ মার্চ ২০১৭

শজিমেকে রেডিও থেরাপির মেশিন ফের অচল

স্টাফ রিপোর্টার, বগুড়া অফিস ॥ বগুড়া শহীদ জিয়াউর রহমান মেডিক্যাল কলেজ (শজিমেক) হাসপাতালে ১১ বছর আগে প্রতিষ্ঠার সময় রোগীদের সর্বোচ্চ সেবার যে যন্ত্রপাতি স্থাপিত হয় তার অধিকাংশই বিকল হয়ে পড়ছে। যেগুলো চালু আছে তার অবস্থাও বেশি সুুবিধজনক নয়। কিছুদিন আগে ক্যান্সার বিভাগের রেডিও থেরাপির কাজে ব্যবহৃত ‘লিনিয়র এক্সিলেটর’ মেশিনটি ফের অকার্যকর হয়ে গেছে। দুই মাস ধরে বন্ধ হয়ে থাকায় ক্যান্সার আক্রান্তদের রেডিও থেরাপি দেয়া সম্ভব হচ্ছে না। রোগীরা রেডিও থেরাপি নিতে এসে ফিরে যাচ্ছে। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ জানায়, মেশিনটি সচল থাকার সময় ক্যান্সার বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী প্রতিদিন ক্যান্সারের অনেক রোগী রেডিও থেরাপি নেয়ার জন্য ভিড় করত। মাত্র একটি মেশিন থাকায় সব রোগীকে থেরাপি দেয়া সম্ভব হতো না। রোগীদের অপেক্ষায় রেখে কয়েকদিনে থেরাপি দেয়া হতো। মেশিনটি অকেজো হওয়ার পর কাছের আর কোন জেলার হাসপাতালে রেডিও থেরাপির সুযোগ না থাকায় ক্যান্সার রোগীদের এখন রাজধানী মুখী হতে হচ্ছে। এতে রোগীদের ভোগান্তি ও খরচ দুই-ই বেড়েছে। সূত্র জানায়, গত বছরের শেষে মেশিনটি অকোজো হয়ে পড়ে। মেরামতে খরচ হবে ৭৬ লাখ টাকা। প্রায় তিন মাস আগে অকোজো লিনিয়র এক্সিলেটর মেরামতের জন্য শজিমেক হাসপাতাল প্রশাসন থেকে সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠানকে চিঠি দেয়া হয়েছে। এখনও তা মেরামত হয়নি। এই মেশিনটি ২০১৫ সালের ১৮ আগস্ট একবার অকেজো হয়। তারও এক বছর আগে ২০১৪ সালের নবেম্বরেও একবার অকেজো হয়। প্রতিবারই মেশিনটি অকেজো হওয়ার পরও নতুন মেশিন স্থাপিত হয়নি। খোঁজ নিয়ে জানা যায়, বগুড়া শজিমেক হাসপাতালে রোগ নির্ণয় এবং চিকিৎসাকাজে ব্যবহৃত সরঞ্জাম অকেজো হওয়ার ঘটনা নতুন নয়। প্রতিবারই মেরামত করা হয়। বেশিদিন সচল থাকে না। সূত্র জানায় ১১ বছর আগের মেডিক্যাল সরঞ্জামগুলো কার্যক্ষমতা অনেকটা হারিয়েছে। রোগীদের বাড়তি চাপে এবং সরঞ্জামগুলো দ্রুত অকেজো হয়ে যাচ্ছে। এ অবস্থায় গত বছরের মধ্যভাগে হাসপাতাল ব্যবস্থাপনা কমিটির সর্বশেষ সভায় সরঞ্জামগুলো নতুন করে কেনার সুপারিশ করা হয়। শজিমেক হাসপাতাল ২০০৬ সালে প্রতিষ্ঠার সময় এক শ’ ৫৯টি চিকিৎসা সরঞ্জাম কেনা হয়। প্রতিষ্ঠার আট বছরের মাথায় অধিকাংশ সরঞ্জামই নষ্ট হয়ে যায়। হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মাসুদ আহসান শজিমেক হাসপাতালের অকেজো চিকিৎসা সরঞ্জামগুলো মেরামতের ব্যবস্থা করেন। তিনি চিকিৎসা সেবার আধুনিকায়নেরও উদ্যোগ নেন। এই ধারাবাহিকতায় গত বছরের ১১ আগস্ট কার্ডিওলজি বিভাগের ‘ক্যাথল্যাব’ (এনজিওগ্রাম) এবং কিডনি ডায়ালিসিস করার সরঞ্জামগু সচল করা হয়। একই বছরের নবেম্বর মাসে ‘নিউরোলজি’, ‘গ্যাস্ট্রোএনট্রোলজি’, ‘কিডনি’ ও ‘হেপাটোলজি’ নামে স্বতন্ত্র চারটি নতুন বিভাগ চালু করা হয়। চলতি বছরের ২২ জানুয়ারি ওই হাসপাতালে ইনটেনসিভ কেয়ার ইউনিট (আইসিইউ) চালু করা হয়। দিনে দিনে রোগীর সংখ্যাও বাড়ছে। ৫০০ শয্যার ওই হাসপাতালে প্রতিদিন গড়ে ৯০০ রোগী ভর্তি থাকে। আর বহির্বিভাগে চিকিৎসা নিতে আসা রোগীর সংখ্যাও ২ হাজার ছাড়িয়ে যায়। অতিরিক্ত রোগীর চিকিৎসা সেবা দিতে গিয়েই সরঞ্জামগুলো ঘন ঘন নষ্ট হচ্ছে। হাসপাতাল ব্যবস্থাপনা কমিটির সভায় নতুন সরঞ্জাম কেনার সুপারিশ করা হয়। সভায় বলা হয়, ১১ বছর আগে কেনা পুরাতন সরঞ্জামগুলোতে প্রায়ই ত্রুটি দেখা দিচ্ছে। বার বার মেরামতের পরও ঠিক থাকছে না। চিকিৎসা সেবা ব্যাহত হচ্ছে। হাসপাতালে যেসব সরঞ্জাম রয়েছে তার চেয়েও অত্যাধুনিক সরঞ্জাম বাজারে এসেছে। এগুলো সংযোজন করতে পারলে চিকিৎসা সেবার মান আরও বাড়ানো সম্ভব হবে।
×