ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

তারকাদের ভিড়ে এলিনা ভেসনিনার চমক

প্রকাশিত: ০৫:৪৭, ২২ মার্চ ২০১৭

তারকাদের ভিড়ে এলিনা ভেসনিনার চমক

চোটের কারণে শুধু সেরেনা উইলিয়ামস ছিলেন না। এছাড়া এ্যাঞ্জেলিক কারবার, এ্যাগ্নিয়েস্কা রাদওয়ানাস্কা, ক্যারোলিন ওজনিয়াকি, ক্যারোলিন পিসকোভা কিংবা ভেনাস উইলিয়ামসদের মতো বর্তমান সময়ের সব তারকাই ছিলেন। কিন্তু সবাইকে রীতিমতো অবাক করে ইন্ডিয়ান ওয়েলসের শিরোপা জয়ের স্বাদ পেলেন এলিনা ভেসনিনা। তাও আবার ৩০ বছর বয়সে। তাই দারুণ রোমাঞ্চিত ডাবলসে দুটি গ্র্যান্ডসøামের মালিক এ টেনিস তারকা। ইন্ডিয়ান ওয়েলসের পুরো টুর্নামেন্টজুড়েই দুর্দান্ত খেলেছেন এলিনা ভেসনিনা। তার পুরস্কার হিসেবেই চ্যাম্পিয়ন হওয়ার গৌরব অর্জন করেন রাশিয়ার এ টেনিস তারকা। রবিবার শিরোপা জয়ের লড়াইয়ে তিনি ৬-৭ (৬/৮), ৭-৫ এবং ৬-৪ সেটে পরাজিত করেন তারই স্বদেশী সভেতলনা কুজনেতসোভাকে। টেনিসের এলিট প্রিমিয়ার ম্যান্ডেটরি পর্যায়ে এটিই তার সবচেয়ে বড় অর্জন। এমন জয়ে তাই দারুণ রোমাঞ্চিত এলিনা ভেসনিনা। তবে স্বদেশী সভেতলনা কুজনেতসোভার বিপক্ষে জয়টা কিন্তু খুব সহজে আসেনি তার। প্রথম সেটে কঠিন লড়াইয়ের পরও হার মানেন তিনি। কিন্তু দমে যাননি। বরং দুর্দান্ত লড়াই করে দ্বিতীয় সেটেই ঘুরে দাঁড়ান। সমতায় ফিরে যেন আত্মবিশ্বাসও খুঁজে পান ভেসনিনা, যে কারণেই তৃতীয় সেটে বেশ ফুরফুরে মেজাজ নিয়ে খেলা চালিয়ে যান। তার ফলও পেয়ে যান এ রাশিয়ান। দ্বিতীয় সেটের তুলনায় তৃতীয় সেটটা একটু সহজেই নিজের করে নেন তিনি। প্রথমে এগিয়ে গিয়েও পরের দুই সেটে আর ভেসনিনার কাছে পেরে উঠতে পারেননি কুজনেতসোভা, যে কারণে আরও একবার হতাশা নিয়ে বিএনপি পরিবাস ওপেনের কোর্ট ছাড়তে হলো ৩১ বছর বয়সী এ টেনিস তারকাকে। সব মিলিয়ে দীর্ঘ তিন ঘণ্টা ১ মিনিট লড়াইয়ের পর কুজনেতসোভাকে হারিয়ে জয়ের হাসি হাসেন এলিনা ভেসনিনা। গত কয়েক বছর ধরেই টেনিস কোর্টের আলোচিত নাম ভেসনিনা। ২০১৩ সালে ফ্রেঞ্চ ওপেনের ডাবলসে ক্যারিয়ারের প্রথম গ্র্যান্ডসøাম জয়ের স্বাদ পান তিনি। পরের বছরটা তো স্বপ্নের মতোই কাটে তার। ২০১৪ সালের প্রথম মেজর টুর্নামেন্ট অস্ট্রেলিয়ান ওপেনের ডাবলসে ফাইনাল খেলেন তিনি। কিন্তু শিরোপা জয়ের লড়াইয়ে ব্যর্থ হন ভেসনিনা। তবে ইউএস ওপেনের দ্বৈতে ঠিকই চ্যাম্পিয়ন হওয়ার গৌরব অর্জন করেন। কিন্তু এককে তেমন কোন সাফল্যই নেই তার ঝুলিতে। গত বছর এ টুর্নামেন্টের প্রথম রাউন্ড থেকেই ছিটকে পড়েছিলেন তিনি। তাই এবার টুর্নামেন্টের শুরু থেকেই সতর্ক ছিলেন ভেসনিনা। শেষ পর্যন্ত যেন তারই ফল পেলেন তিনি। স্বদেশী প্রতিপক্ষকে পরাজয়ের স্বাদ উপহার দিয়ে প্রথম গুরুত্বপূর্ণ কোন টুর্নামেন্টের শিরোপা নিজের শোকেসে তুলতে পেরে দারুণ রোমাঞ্চিত ভেসনিনা। এ প্রসঙ্গে ম্যাচের শেষে সংবাদ সম্মেলনে তিনি বলেন, ‘এখন আমি বলতেই পারি যে, টেনিস আসলেই চমৎকার।’ বিএনপি পরিবাস ওপেনে ১৪তম বাছাই হিসেবে খেলতে নামা ভেসনিনা এ সময় আরও বলেন, ‘কোর্টে আমি কখনই হাল ছাড়িনি। দীর্ঘ সময় কোর্টে টিকে থাকার জন্য সব ধরনের চেষ্টাই করেছি। ৪-১ ব্যবধানে পিছিয়ে পড়ার পরও আমি নিজেকে বলেছি যে, এখানে হারানোর কিছুই নেই আমার। তাই প্রতিটি গেম এবং প্রতিটি পয়েন্টের জন্যই লড়াই করেছি। কারণ আমি জানতাম সে আমাকে কখনই ছেড়ে কথা বলবে না।’ বিশ্ব টেনিস র‌্যাঙ্কিংয়ের শীর্ষ সারির সব তারকাই পারফর্ম করেন এ টুর্নামেন্টে। এলিনা ভেসনিনাকেও লড়াই করতে হয়েছে কঠিন সব প্রতিপক্ষের বিপক্ষে। ইন্ডিয়ান ওয়েলসের শেষ ষোলোতে তার প্রতিপক্ষ ছিল দুর্দান্ত ফর্মে থাকা এ্যাঞ্জেলিক কারবার। জার্মান তারকাও পেরে ওঠেননি রাশিয়ান তারকার সঙ্গে। গত বছর দুটি গ্র্যান্ডসøাম জিতে টেনিস কোর্টে ঝড় তোলেন কারবার। সেরেনা উইলিয়ামসের মতো তারকাকে হটিয়ে বিশ্ব টেনিস র‌্যাঙ্কিংয়ের শীর্ষস্থানও দখল করে নেন তিনি। শুধু এ্যাঞ্জেলিক কারবারই নন, কোয়ার্টার ফাইনালে ভেসনিনা পরাজয়ের স্বাদ উপহার দিয়েছেন সাতটি গ্র্যান্ডসøামের মালিক ভেনাস উইলিয়ামসকেও। আমেরিকান টেনিসের এ জীবন্ত কিংবদন্তি মৌসুমের প্রথম গ্র্যান্ডসøাম টুর্নামেন্ট অস্ট্রেলিয়ান ওপেনের ফাইনাল খেলেছেন। কিন্তু শিরোপা জয়ের লড়াইয়ে ছোট বোন সেরেনা উইলিয়ামসের কাছে হার মানেন তিনি। কারবার-ভেনাসের পর সেমিফাইনালে ফ্রান্সের ক্রিস্টিনা মাদেনোভিচকে পরাজিত করে ফাইনালে জায়গা করে নেন ভেসনিনা, যেখানে তার প্রতিপক্ষ হয়ে আসেন সভেতলনা কুজনেতসোভা। কিন্তু শেষ পর্যন্ত কঠিন লড়াইয়ে স্বদেশী কুজনেতসোভার বিপক্ষেও জয় তুলে নেন তিনি। এ জয়কে অলৌকিক বলেও মন্তব্য করেছেন ভেসনিনা। এ বিষয়ে তার অভিমত প্রকাশ করতে গিয়ে বলেন, ‘আমি শিরোপা জিতেছি এটা তো সবার কাছেই অলৌকিকের মতো মনে হতে পারে। কেননা আমি মনে করি টুর্নামেন্টের শুরুতে কেউই ভাবেননি যে, এখানে আমি চ্যাম্পিয়ন হতে পারব। আমি নিজেই তো নিজেকে নির্বাচন করতে পারছিলাম না। যখন ফাইনালে প্রতিপক্ষ হিসেবে সভেতলনাকে পেয়েছি, জানতাম সে-ই ফেবারিট কিন্তু তাকে নিয়ে আমি মোটেই ভীত ছিলাম না। আমার লক্ষ্য ছিল শুধুই শিরোপা জেতা এবং শেষ পর্যন্ত সেটাই করতে পেরেছি। এতে আমি সত্যিই খুব আনন্দিত।’ সুদীর্ঘ ক্যারিয়ারে দুটি গ্র্যান্ডসøাম জিতেছেন কুজনেতসোভা। ২০০৯ সালে ফ্রেঞ্চ ওপেনে প্রথম মেজর শিরোপা জয়ের পর ২০১৪ সালে ইউএস ওপেনে জেতেন দ্বিতীয়টি। কিন্তু দুর্ভাগ্য তার! ইন্ডিয়ান ওয়েলসে তিনবার ফাইনাল খেললেও কখনই শিরোপার দেখা পাননি তিনি। এবারও স্বপ্ন ভঙ্গের বেদনা নিয়ে কোর্ট ছাড়তে হলো তাকে, যা খুবই হতাশার। ২০০৭ সালে ইন্ডিয়ান ওয়েলসে প্রথমবার ফাইনাল খেলেছিলেন তিনি। এর পরের বছরও ফাইনাল খেলেছিলেন কুজনেতসোভা। এ নিয়ে তিনটি ফাইনালে হারলেও হতাশ নন ৩১ বছর বয়সী এ রাশিয়ান তারকা। ম্যাচ শেষে কুজনেতসোভা বলেন, ‘এখানে আবারও ফাইনাল খেলেছি, এটাও আমার কাছে অনেক কিছু।’
×