ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

বিশ্ববাজারে পোশাকের চাহিদা কমেছে ৬ শতাংশ

প্রকাশিত: ০৫:৩৭, ২২ মার্চ ২০১৭

বিশ্ববাজারে পোশাকের চাহিদা কমেছে ৬ শতাংশ

অর্থনৈতিক রিপোর্টার ॥ বিশ্ববাজারে পোশাকের চাহিদা কমে যাওয়ায় রফতানি আয়েও ধস নেমেছে। গত আট মাসের পরিসংখ্যান বলছে, বিশ্ববাজারে পোশাকের মোট চাহিদা কমেছে প্রায় ৬ শতাংশ। ইউরোর দরপতন, ব্রেক্সিট এবং আমেরিকার নির্বাচনের কারণে রফতানি আয়ে প্রভাব পড়েছে। গত আট মাসে নতুন বাজারগুলোতে রফতানি আয় পাঁচ কোটি ডলার বাড়লেও গত অর্থবছরের একই সময়ের তুলনায় প্রবৃদ্ধি কমেছে প্রায় ৭ শতাংশ। যদিও জাপান, রাশিয়া, চীন এবং চিলির বাজারে বেশ সম্ভাবনা রয়েছে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা। জানা গেছে, িৈর পোশাক খাতের নতুন বাজারে রফতানি আয় বাড়াতে সরকারের নানা উদ্যোগ সত্ত্বেও আশানুরূপ আয় বাড়ছে না। চলতি অর্থবছরের (২০১৬-১৭) জুলাই থেকে ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত আট মাসে মোট রফতানি আয়ের প্রবৃদ্ধি হয়েছে ১.৭৯ শতাংশ। অথচ গত অর্থবছরের একই সময়ে দেশের তৈরি পোশাক খাতের প্রবৃদ্ধি হয়েছিল ৮.৬৭ শতাংশ। তবে বিশ্ববাজারে চাহিদা কমে যাওয়া, আমেরিকার নির্বাচন, ব্রেক্সিটপরবর্তী ইউরোর দরপতনের কারণে এ পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে বলে মনে করছেন এ খাতের উদ্যোক্তারা। রফতানি উন্নয়ন ব্যুরো (ইপিবি) এবং পোশাক খাতের সংগঠন বিজিএমইএ সূত্র জানায়, চলতি অর্থবছরে নতুন বাজারে গত আট মাসে পোশাক খাতের রফতানি আয় হয়েছে ২৮৫ কোটি ৫১ লাখ ডলার। ২০১৫-১৬ অর্থবছরে এ আয় ছিল ২৮০ কোটি ৫০ লাখ ডলার। অর্থাৎ গত আট মাসে নতুন বাজারগুলোতে রফতানি আয় পাঁচ কোটি ডলার বাড়লেও গত অর্থবছরের একই সময়ের তুলনায় প্রবৃদ্ধি কমেছে প্রায় ৭ শতাংশ। ইউরোপ, আমেরিকা, কানাডা ছাড়া অন্য বাজারগুলোকে অপ্রচলিত তথা নতুন বাজার হিসেবে বিবেচনা করা হয়। এসব বাজারে রফতানি আয় বাড়াতে সরকার পোশাক রফতানিকারকদের নগদ সহায়তা দেয়। ২০০৯-১০ সালে প্রথম ৫ শতাংশ নগদ সহায়তা দেয়া শুরু হয়। এর পর ২০১০-১১ অর্থবছরে ৪ শতাংশ এবং ২০১১-১২ থেকে নতুন বাজারগুলোতে ২ শতাংশ করে নগদ সহায়তা দেয়া হচ্ছে। এর ফলে ভারত, চীন, রাশিয়া, জাপান, দক্ষিণ আফ্রিকা, তুরস্ক, ব্রাজিল, চিলি, মেক্সিকো, সাউথ কোরিয়া, অস্ট্রেলিয়া এবং নিউজিল্যান্ডে রফতানি আয় বাড়ছে। অপ্রচলিত বা নতুন বাজারগুলোর মধ্যে গত আট মাসে সবচেয়ে বেশি রফতানি হয়েছে জাপানে। দেশটিতে ৫১ কোটি ৫২ লাখ ডলার পোশাক রফতানি হয়েছে। অস্ট্রেলিয়ায় ৩৯ কোটি ৪৩ লাখ, ব্রাজিলে ছয় কোটি ৫৭ লাখ, চিলিতে তিন কোটি ৭৯ লাখ, চীনে ২৫ কোটি ৬২ লাখ, ভারতে আট কোটি ৯২ লাখ, কোরিয়ায় ১১ কোটি, মেক্সিকোয় আট কোটি ১০ লাখ, রাশিয়ায় ২২ কোটি ১৩ লাখ এবং দক্ষিণ আফ্রিকায় রফতানি হয়েছে তিন কোটি ৮২ লাখ ডলার। এ সময় অস্ট্রেলিয়ায় সবচেয়ে বেশি প্রবৃদ্ধি হলেও জাপানে রফতানি বেশি হয়েছে। ইপিবির পরিসংখ্যান থেকে জানা যায়, ২০০৮ সালে অপ্রচলিত বাজারগুলোতে রফতানি আয় ছিল মাত্র ৮০ কোটি ডলার। গত অর্থবছরে এ আয় (২০১৫-১৬) দাঁড়িয়েছে ৩৯০ কোটি ডলার। এ প্রসঙ্গে তৈরি পোশাক খাতের শীর্ষ সংগঠন বিজিএমইএ সভাপতি মোঃ সিদ্দিকুর রহমান বলেন, সম্প্রতি বিশ্ববাজারে পোশাকের চাহিদা কমে যাওয়ায় রফতানি আয়েও ধস নেমেছে। গত আট মাসে বিশ্ববাজারে পোশাকের মোট চাহিদা কমেছে প্রায় ৬ শতাংশ। এ ছাড়া ইউরোর দরপতন, ব্রেক্সিট এবং আমেরিকার নির্বাচনের কারণেও রফতানি আয়ে প্রভাব পড়েছে। তবে এ বাজারগুলোয় আরও বাজার বাড়াতে আমরা কাজ করছি। তিনি আরও বলেন, যদিও বর্তমানে তৈরি পোশাক খাতে বাজার কিছুটা নিম্নমুখী । তার পরও জাপান, রাশিয়া, চীন এবং চিলির বাজারে বেশ সম্ভাবনা রয়েছে। ইপিবির পরিসংখ্যানে দেখা যায়, এশিয়ার দেশগুলোর মধ্যে জাপান থেকেই সবচেয়ে বেশি রফতানি হয়। গত জুলাই ও ফেব্রুয়ারি মাসে জাপানে মোট রফতানি হয়েছে ৫১ কোটি ৫২ লাখ ডলার। এ সময় প্রবৃদ্ধি হয়েছে ২.৫৮ শতাংশ। উদ্যোক্তাদের প্রত্যাশা চলতি অর্থবছরের শেষের দিকে এ আয় ১০০ কোটি ডলার ছাড়াতে পারে। বিজিএমইএ সভাপতি বলেন, স্বল্পোন্নত দেশগুলোর (এলডিসি) জন্য জাপান ওভেন ও নিট পণ্যে তাদের রুলস অব অরিজিন শিথিল করেছে। জাপান চীনের কাছ থেকে বছরে ৪০ বিলিয়ন (চার হাজার কোটি ডলারের পণ্যে প্রায় ৮০ শতাংশ) পোশাক আমদানি করত। কিন্তু চীনের ওপর নির্ভরতা কমাতে তারা অন্য বাজারগুলো থেকে আমদানি শুরু করেছে।
×