ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

নড়বড়ে শিক্ষা

প্রকাশিত: ০৫:৩৫, ২২ মার্চ ২০১৭

নড়বড়ে শিক্ষা

ভিত্তি যদি হয় নড়বড়ে, খুঁটি যদি না হয় শক্ত, তবে সবই ভেঙ্গেচুরে পড়ার সম্ভাবনা শতভাগ। বেড়ে ওঠার সমস্ত আয়োজনই হয়ে যেতে পারে দুর্বল। আর এই দুর্বলতা ক্রমশ ক্ষীয়মাণ করে তুলবেই সমৃদ্ধির পথ। এর থেকে পরিত্রাণের উপায় থাকলেও সেই পন্থাকে অবলম্বন করার আগ্রহী আর মেলে না। জীবনের শুরুতেই যদি হোঁচট খেতে হয়, ভঙ্গুরতা এসে জড়ায়, তবে বাকি জীবনের পথ বন্ধুর হতে বাধ্য। হচ্ছেও তাই। এমনটাই বোধোদয় হয় যখন দেখা যায়, দেশের সতেরো হাজার সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয় চলছে প্রধান শিক্ষক ছাড়াই। ফলে এসব বিদ্যালয় চলছে না যথাযথভাবে। পাঠদানও হচ্ছে না নিয়মিতভাবে। শিক্ষার মানোন্নয়নে নেই কার্যকর কোন পদক্ষেপ। প্রধান শিক্ষকহীন বিদ্যালয়ে সহকারী শিক্ষক পালন করছেন প্রধান শিক্ষকের দায়িত্ব। তাই তাকে থাকতে হয় প্রশাসনিক কাজে ব্যস্ত। শিক্ষার কার্যক্রমে মনোনিবেশ করা সম্ভব হয় না। এ বিদ্যালয়গুলোতে তৈরি হয়েছে নানামুখী সমস্যা। প্রাথমিক শিক্ষা ব্যবস্থার অবস্থা যে বেহাল, সে কথা অতি পুরনো আজ। প্রাথমিক শিক্ষাকে হালে ফেরানোর জন্য নানা সময়ে নেয়া হয় নানা উদ্যোগ। কিন্তু কার্যত কোন নিকট বা সুদূরপ্রসারী ফল মেলে না। বিনা বেতনে এবং বিনামূল্যে পাঠ্যপুস্তক পাওয়া শিক্ষার্থীরা জাতির মেরুদ- হিসেবে বেড়ে উঠবে এমন প্রত্যাশার গোড়া কেটে ফেলা হলে মেরুদ-ই আর থাকে না। শিক্ষা ব্যবস্থার যে চিত্র প্রাথমিক থেকে উচ্চশিক্ষা পর্যন্ত, সর্বত্রই এক বিশৃঙ্খল পরিবেশ। পরীক্ষার ফলাফলে অত্যধিক পাসের হার হয়ত প্রমাণ দেয় যে, শিক্ষাদীক্ষা বেশ ভালই হচ্ছে। ‘তোতা কাহিনী’র তোতার মতো যে অবস্থা, তা হয়ত স্পষ্ট হয় না। শিক্ষা খাতের গলদগুলো ক্রমশ প্রকাশিত হলে সংশয় জাগে, মেধাবী ও মানসম্পন্ন জাতি গঠন বাধাগ্রস্ত হয়ে দেশের সর্বনাশ ডেকে আনার পথ ক্রমশ প্রশস্ত হচ্ছে বুঝি এভাবেই। শিক্ষকহীন প্রতিষ্ঠানে শিক্ষার প্রসার ঘটানো সহজসাধ্য নয় কোনভাবেই। এমনিতেই কেতাবি জ্ঞান আর সাধারণ মানুষের দৈনন্দিন জীবনের ব্যবহারিক জ্ঞান, বাংলাদেশের শিক্ষা ব্যবস্থায় এই দুইয়ের মধ্যে কোন সেতু গড়ে ওঠেনি। সার্থক শিক্ষা ব্যবস্থা এখনও এ দেশে গড়ে তোলা যায়নি বলে শিক্ষা ও বাস্তব জীবনের মধ্যে মেলবন্ধন অধরাই থেকে গেছে। শিক্ষার বিস্তার ও প্রসার ঘটানো যাদের কাজ, তাদের চেতনায় যদি তার প্রভাব না থাকে, তাতে পঙ্গুত্বই বাড়ে। এই যে প্রধান শিক্ষক না থাকা, তার নেপথ্যে স্থানীয় স্বার্থান্বেষী গোষ্ঠীগুলোর কলকাঠি নাড়ার বিষয়গুলো আর গোপনীয় নয়। দেখা গেছে, ২০১৩ সালের বেসরকারী প্রাথমিক স্কুলগুলোতে একজন সহকারী শিক্ষক ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষকের দায়িত্ব পালন করতেন। এসব স্কুল সরকারী হলে ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক পদ বিলুপ্ত হয়। এসব ভারপ্রাপ্তের মধ্যে যাদের যোগ্যতা ছিল তাদের প্রধান শিক্ষক হিসেবে নিয়োগ দেয়া হয়। কিন্তু অধিকাংশ প্রতিষ্ঠানে তা করা হয়নি। অনেক প্রতিষ্ঠানে নেই যথাযথ শিক্ষক। শিক্ষকরা প্রতিনিয়ত যাচ্ছেন অবসরে। ফলে অসংখ্য পদ শূন্য পড়ে আছে। এমনিতেই মামলার কারণে সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ে শিক্ষক নিয়োগ বন্ধ রয়েছে। মামলার জটও খুলছে না। প্রধান শিক্ষকের পদটি দ্বিতীয় শ্রেণীর নন গেজেটেড পদমর্যাদার, পিএসসির মাধ্যমেও এ পদে নিয়োগ বন্ধ রয়েছে। বছরের শুরুতে বিনামূল্যে বই বিতরণ করেই যদি কর্তৃপক্ষ দায়িত্ব শেষ মনে করেন, তবে সবই বৃথা। শিক্ষক আর শিক্ষা পদ্ধতির মানোন্নয়ন করা না হলে শিক্ষার গুণগত মানও বাড়বে না। শিক্ষার ভিত্তিমূলকে শক্তপোক্ত করার পদক্ষেপ নেয়া যে অত্যন্ত জরুরী, কর্তৃপক্ষ সেদিকে দৃষ্টি দেবে, প্রত্যাশাটা এমনই।
×