ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪৩১

যুদ্ধাপরাধী বিচার ॥ পাকি সেনা কর্মকর্তার বিরুদ্ধে তদন্তের চূড়ান্ত প্রতিবেদন প্রকাশ

প্রকাশিত: ০৫:২৯, ২২ মার্চ ২০১৭

যুদ্ধাপরাধী বিচার ॥ পাকি সেনা কর্মকর্তার বিরুদ্ধে তদন্তের চূড়ান্ত প্রতিবেদন প্রকাশ

স্টাফ রিপোর্টার ॥ একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধের সময় বাঙালীদের সহযোগিতা না করে পাকিস্তানী সেনাবাহিনীর পক্ষে ঢাকা ও কুমিল্লায় মানবতাবিরোধী অপরাধে লিপ্ত হওয়া পাকিস্তানী সেনাবাহিনীর ক্যাপ্টেন (অব.) মুহাম্মদ শহীদুল্লাহর বিরুদ্ধে তদন্তের চূড়ান্ত প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের তদন্ত সংস্থা। এটি তদন্ত সংস্থার ৪৯তম প্রতিবেদন। মঙ্গলবার বিকেলেই চূড়ান্ত প্রতিবেদনটি প্রসিকিউশন শাখায় দাখিল করা হয়েছে। প্রসিকিউটর আবুল কালাম জানকণ্ঠকে জানিয়েছেন, মঙ্গলবার বিকেলে তদন্ত সংস্থার কর্মকর্তা ট্রাইব্যুনালে এসে ঐ প্রতিবেদনটি জমা দিয়েছেন। উল্লেখ্য, বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের সময় মানবতাবিরোধী অপরাধে জড়িত থাকার অভিযোগে এই প্রথমবারের মতো পাকিস্তানী সেনাবাহিনীর সাবেক এক সদস্যের বিরুদ্ধে তদন্ত প্রতিবেদন দিয়েছে তদন্ত সংস্থা। ক্যাপ্টেন বাঙালী ক্যাপ্টেন মুহাম্মদ শহীদুল্লাহর বিরুদ্ধে অপহরণ, আটকে রেখে নির্যাতন, লুটপাট-অগ্নিসংযোগ ও হত্যার মতো মানবতাবিরোধী অপরাধের তিনটি অভিযোগ আনা হচ্ছে। মঙ্গলবার ঢাকার ধানম-িতে ট্রাইব্যুনালের তদন্ত সংস্থার কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে এ প্রতিবেদনের বিভিন্ন তথ্য তুলে ধরা হয়। এ মামলার আসামি শহীদুল্লাহর বয়স ৭৫ বছর, বাড়ি কুমিল্লার দাউদকান্দি থানার আমিরাবাদ গ্রামে। মুক্তিযুদ্ধের সময় ওই এলাকাতেই তিনি যুদ্ধাপরাধ ঘটান। তদন্ত সংস্থার প্রতিবেদনে বলা হয়, মুক্তিযুদ্ধ শুরু হলে ঢাকা সেনানিবাসে পাকিস্তানী দখলদার সেনাবাহিনীর সঙ্গে যোগ দেন মুহাম্মদ শহীদুল্লাহ। পরে তিনি ঢাকা সেনানিবাস থেকে কুমিল্লার সেনানিবাসে যোগ দিয়ে সেনাবাহিনীর সদস্যদের নিয়ে নিজ এলাকা দাউদকান্দি সদরে ক্যাম্প স্থাপন করেন। তদন্ত সংস্থার প্রধান সমন্বয়ক আব্দুল হান্নান খান সংবাদ সম্মেলনে বলেন, মুক্তিযুদ্ধের পর বাংলাদেশ সেনাবাহিনীতে যোগ না দেয়ায় শহীদুল্লাহর বিষয়ে কোন রেকর্ড বাহিনীর কাছ থেকে পাওয়া যায়নি। কিন্তু আসামি এখনও তার এলাকায় ‘ক্যাপ্টেন’ হিসেবে পরিচিত। ২০১৫ সালের ১১ অক্টোবর তার বিরুদ্ধে তদন্ত শুরু হয় জানিয়ে হান্নান বলেন, ‘দেড় বছরের বেশি সময় ধরে তদন্ত চলেছে। প্রসিকিউশনের আবেদনে ট্রাইব্যুনাল গত বছর ২ অগাস্ট শহীদুল্লাহর বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করে। ওই দিনই কুমিল্লা জেলা পুলিশ তাকে গ্রেফতার করে। পরদিন আসামিকে হাজির করা হলে ট্রাইব্যুনাল তাকে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেয়। মুক্তিযুদ্ধের সময় পাকিস্তান সেনাবাহিনীতে থেকে মানবতাবিরোধী অপরাধ করেছেন- এমন অনেক বাঙালী কর্মকর্তার বিরুদ্ধেই তদন্ত চলছে জানিয়ে সানাউল হক বলেন, ‘তদন্তের স্বার্থেই তাদের নাম-ঠিকানা বা পরিচয় প্রকাশ করতে চাই না। আশাকরি পরে ধাপে ধাপে তা আপনাদের কাছে তুলে ধরতে পারব।’এ মামলার তদন্ত কর্মকর্তা আলতাফুর রহমান জানান, তদন্ত প্রতিবেদনে মোট ১৯ জনকে সাক্ষী করা হচ্ছে। এছাড়া জব্দ তালিকার সাক্ষী করা হয়েছে আরও তিনজনকে। তদন্ত সংস্থার জ্যেষ্ঠ সমন্বয়ক সানাউল হকসহ কর্মকর্তারা এ সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন। তিন অভিযোগ ॥ আসামির বিরুদ্ধে তিনটি অভিযোগের সধ্যে রয়েছে, অভিযোগ ১ ॥ একাত্তরের ৭ জুন বিকেলে মুহাম্মদ শহীদুল্লাহ পাকিস্তানী বাহিনীর ৮/১০ জন সদস্যসহ দাউদকান্দি বাজারে হামলা চালিয়ে হোমিও চিকিৎসক হাবিবুর রহমানকে আটক করেন। পাকিস্তানী ক্যাম্পে নিয়ে নির্যাতনের পর দাউদকান্দি ফেরিঘাটের পাশের গোমতী নদীতে নিয়ে তাকে হত্যা করা হয়। পরে লাশ ফেলে দেয়া হয় নদীতে। অভিযোগ ২ ॥ একাত্তরের ১৬ জুন সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত শহীদুল্লাহ পাকিস্তানী বাহিনীর ৪০/৫০ জন সদস্যকে সঙ্গে নিয়ে দাউদকান্দির উত্তর ইউনিয়নের চেঙ্গাকান্দি ও গোলাপেরচর গ্রামে হামলা চালান। তারা স্বাধীনতার পক্ষের ২০ জনকে আটক করেন এবং পাঁচটি বাড়ির মালামাল লুট করে আগুন ধরিয়ে দেন। আটকদের মধ্যে ছয়জনকে ছেড়ে দিয়ে বাকি ১৪ জনকে দাউদকান্দি সেনা ক্যাম্পে নেয়ার পথে গোলাপেরচর টেকে তাদের লাইন ধরে দাঁড় করানো হয়। সেখান থেকে একজনকে বের করে গোমতী নদীর পাশে নিয়ে গুলি করে লাশ নদীতে ফেলে দেন শহীদুল্লাহ। পরে অন্যদের ক্যাম্পে এনে নির্যাতনের পর মুক্তিযোদ্ধাদের সম্পর্কে খবর দেয়ার শর্তে ছেড়ে দেয়া হয়। অভিযোগ ৩ ॥ একাত্তরের ২১ জুলাই শহীদুল্লাহ পাকিস্তানি বাহিনীর সদস্যদের নিয়ে দাউদকান্দি বাজারে হামলা চালান। সেখান থেকে কালামিয়া নামে এক গাড়ি চালককে ধরে নির্যাতন চালানো হয়। পরে কালামিয়াকে চান্দিনা থানার চান্দিনা হাসাপাতালের পেছনে নিয়ে গুলি করে হত্যার পর লাশ খালে ফেলে দেন।
×