ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

মুফতি হান্নানের রায়ের কপি কারা কর্তৃপক্ষের কাছে পৌঁছেছে

প্রকাশিত: ০৫:২৮, ২২ মার্চ ২০১৭

মুফতি হান্নানের রায়ের কপি কারা কর্তৃপক্ষের কাছে পৌঁছেছে

স্টাফ রিপোর্টার ॥ নিষিদ্ধ হরকাতুল জিহাদের (হুজি) শীর্ষ নেতা ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলাসহ চাঞ্চল্যকর ১৭ মামলার আসামি মুফতি হান্নানসহ তিন জনের সামনে শুধুমাত্র রাষ্ট্রপতির নিকট প্রাণভিক্ষার আবেদন বাকি। রাষ্ট্রপতির কাছে প্রাণভিক্ষা না চাইলে কিংবা রাষ্ট্রপতি প্রাণভিক্ষার আবেদন নাকচ করে দিলে তাদের মৃত্যুদ-াদেশ কার্যকরে আর কোন বাধা থাকবে না। মৃত্যুদ-াদেশপ্রাপ্ত অপর দুই জঙ্গী হলেন-শরীফ শাহেদুল আলম বিপুল ওরফে বিপুল, দেলোয়ার হোসেন ওরফে রিপন। সকল আইনী প্রক্রিয়া শেষ হবার পর মঙ্গলবার মৃত্যুদ-াদেশের বিরুদ্ধে করা রিভিউ খারিজের রায় প্রকাশিত হয়েছে। মঙ্গলবার সকাল সাড়ে ১১টার দিকে সুপ্রীমকোর্টের ওয়েবসাইটে এ রায় প্রকাশিত হয়। রায়ের কপি স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়সহ সাত জায়গায় পাঠানো হয়েছে। হাইকোর্ট বিভাগের অতিরিক্ত রেজিস্ট্রার (প্রশাসন ও বিচার) সাব্বির ফয়েজ জনকণ্ঠকে জানান, হরকাতুল জিহাদ (হুজি) নেতা মুফতি হান্নানসহ তিনজনের মৃত্যুদ-ের রায়ের অনুলিপি স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, কারা কর্তৃপক্ষ (আইজিপি) ও সিলেটের বিচারিক আদালতসহ সাত স্থানে পাঠানো হয়েছে। এ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম সাংবাদিকদের বলেন , রায় অবগত হওয়ার পর জেল কর্তৃপক্ষ জিজ্ঞাসা করবেন, রাষ্ট্রপতির কাছে তারা প্রাণভিক্ষা চাইবেন কি-না। তারা যদি রাষ্ট্রপতির কাছে প্রাণভিক্ষা চান, সে আবেদন রাষ্ট্রপতির কাছে যাবে। আর যদি না চান, তাহলে জেল কর্তৃপক্ষ তাদের পরবর্তী প্রক্রিয়ায় এগিয়ে নিয়ে যাবে। তবে জেলকোড অনুসারে রায় প্রকাশের ৭ দিনের আগে মৃত্যুদ- কার্যকর করা যাবে না এবং ২১ দিনের মধ্যে কার্যকর করতে হবে। কাজেই জেলকোড মেনেই সমস্ত আইনী প্রক্রিয়ার পর তাদের বিষয়ে রাষ্ট্র ও জেল কর্তৃপক্ষ সিদ্ধান্ত নেবে। মুফতি হান্নানসহ তিন আসামি রাষ্ট্রপতির কাছে প্রাণভিক্ষা চাইবেন কিনা, জানতে চাইলে আসামিপক্ষের আইনজীবী নিখিল কুমার সাহা জানান, এটা তাদের সিদ্ধান্ত । আমি এ বিষয়ে কিছু বলতে পারব না। উল্লেখ্য, জেলকোডে আছে ‘রাষ্ট্রপতি প্রাণভিক্ষা নাকচ করলে দ- কার্যকর করতে রায় প্রকাশের ২১ দিনের আগে নয় আর ২৮ দিনের পরে নয়। ১৯ মার্চ আসামিদের রিভিউ আবেদন খারিজ হয়েছে। ঐদিন থেকেই গণনা শুরু হবে বলে জানা গেছে। গত বছরের ৭ ডিসেম্বর মুফতি হান্নানসহ তিনজনের মৃত্যুদ-াদেশ বহাল রেখে চূড়ান্ত রায় দেন প্রধান বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার সিনহার নেতৃত্বে ৪ সদস্যের আপীল বেঞ্চ। রায়ে এ বিষয়ে আসামিদের আবেদন খারিজ ও হাইকোর্টের রায় বহাল রাখে সর্বোচ্চ আদালত। বিচারিক আদালত ও হাইকোর্টে যাবজ্জীবন দ-প্রাপ্ত অন্য দুই আসামি মহিবুল্লাহ ও আবু জান্দাল আপীল না করায় তাদের দ-ও বহাল থাকে। গত ১৮ জানুয়ারি ৬৫ পৃষ্ঠার পূর্ণাঙ্গ রায় প্রকাশিত হয়। আপীল বিভাগের এ রায় যাওয়ার পর মত্যু পরোয়ানা জারি করে বিচারিক আদালত। গত ৩ ফেব্রুয়ারি গাজীপুরের কাশিমপুর কারাগারে পৌঁছালে এ পরোয়ানা মৃত্যুদ-প্রাপ্তদের পড়ে শোনানো হয়। গত ২৩ ফেব্রুয়ারি আপীল বহাল থাকা মৃত্যুদ-ের রায় পুনর্বিবেচনা (রিভিউ) চেয়ে আবেদন করেন মুফতি হান্নানসহ তিন জঙ্গী। আবেদনটি গত ১৯ মার্চ খারিজ করে দেয় আপীল বিভাগ। তেরো বছর আগে ২০০৪ সালের ২১ মে সিলেটে হজরত শাহজালাল (রহ) মাজারে তৎকালীন ব্রিটিশ হাইকমিশনার আনোয়ার চৌধুরীর ওপর গ্রেনেড হামলার মামলায় এটি আপীলের রায়। মুফতি হান্নানের বিরুদ্ধে বোমা ও গ্রেনেড হামালার ১৭টি মামলা রয়েছে। এ ছাড়া রমনা বটমূলে নববর্ষ অনুণ্ঠানে বোমা হামলায় মৃত্যুদ- আসামি। এ মামলায় মুফতি হান্নানসহ ৮ জঙ্গীকে মৃত্যুদ- দেয়া হয়। মামলাটি হাইকের্টে ডেথ রেফারেন্সে শুনানির অপেক্ষায় । তা ছাড়া বঙ্গবন্ধু এ্যাভিনিউয়ে ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামালা, কোটালীপড়ায় শেখ হাসিনার জনসভায়স্থলে ৭৬ কেজির বোমা পুঁতে রাখা, হবিগঞ্জে সাবেক অর্থমন্ত্রী শাহ এ এম এস কিবরিয়া হত্যাকা-, সিলেটে শেখ হাসিনাকে হত্যার প্রচেষ্টা, সিলেটের সাবেক মেয়র বদরউদ্দিন কামরানকে হত্যা প্রচেষ্টা, নারায়ণগঞ্জ আওয়ামী লীগ কার্যালয়ে বোমা হামলা, খুলনায় মসজিদে বোমা হামলার মামলা, পল্টন ময়দানে বাংলাদেশ কমিউনিস্ট পার্টির জনসভায় বোমা হামলার মামলা রয়েছে। এর মধ্যে রমনা বটমূলে হামলার মামলাটি শেষের দিকে। মুফতি হান্নান আফগানিস্তানে গিয়ে তালেবানদের পক্ষ হয়ে যুদ্ধ করেছেন। যুদ্ধে আহত হবার পর তিনি দেশে ফিরে আসেন। পরবর্তীতে তিনি হরকাতুল জিহাদে যোগদান করেন। মামলার বিবরণীতে জানা যায়, ২০০৪ সালের ২১ মে সিলেটে হজরত শাহজালাল (রহ) মাজারে তৎকালীন ব্রিটিশ হাইকমিশনার আনোয়ার চৌধুরীর ওপর গ্রেনেড হামলা চালানো হয়। এ হামলায় আনোয়ার চৌধুরী, সিলেট জেলা প্রশাসকসহ অর্ধশতাধিক ব্যক্তি আহত হন। ঘটনাস্থলেই নিহত হন পুলিশের এসআই কামাল উদ্দিন । এ ছাড়া পুলিশ কনস্টেবল রুবেল আহম্মেদ ও হাবিল মিয়া নামের আরেক ব্যক্তি মারা যান হাসপাতালে। ঘটনার দিন অজ্ঞাত পরিচয় আসামির বিরুদ্ধে মামলা করে কোতোয়ালি থানা পুলিশ। মামলার তদন্ত শেষে অভিযোগপত্র প্রদান করা হলে ২০০৭ সালের ৩১ জুলাই মুফতি হান্নানসহ চারজনের বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করা হয়। এর পর সম্পূরক অভিযোগপত্রের ভিত্তিতে মঈন উদ্দিন ওরফে আবু জান্দালের নাম অন্তর্ভুক্ত করে অভিযোগ গঠন করা হয়। ২০০৮ সালের ২৩ ডিসেম্বর বিচারিক আদালত মুফতি হান্নান, শরীফ শাহেদুল আলম ওরফে বিপুল ও দেলোয়ার হোসেন ওরফে রিপনকে মৃত্যুদ- দেয় আদালত। অন্যদিকে মহিবুল্লাহ ওরফে মফিজুর রহমান ওরফে মফিজ এবং মুফতি মঈন উদ্দিন ওরফে আবু জান্দালকে যাবজ্জীবন কারাদ- দেয়া হয়। নিয়ম অনুসারে মৃত্যুদ-াদেশ অনুমোদন করতে প্রয়োজনীয় নথি হাইকোর্টে আসে। পাশাপাশি ২০০৯ সালে আসামিরা জেল আপীলও করেন। সাত বছর পর ২০১৬ সালের ৬ জানুয়ারি এ মামলায় রায় ঘোষণা করে হাইকোর্ট। হাইকোর্ট নিম্ন আদালতের দেয়া রায়ই বহাল রাখে। হাইকোর্টের রায়ের পূর্ণাঙ্গ অনুলিপি চলতি বছর ২৮ এপ্রিল প্রকাশিত হয়। পরে ১৩ জুলাই হাইকোর্টে দেয়া মৃত্যুদ-ের রায়ের বিরুদ্ধে খালাস চেয়ে আপীল করেন মুফতি হান্নান ও শরীফ শাহেদুল আলম ওরফে বিপুল। তাদের সঙ্গে আদালত মৃত্যুদ-প্রাপ্ত অপর আসামি দেলোয়ার হোসেন রিপনের পক্ষে আইনজীবী নিযুক্ত করে একই সঙ্গে তিনজনের আপীল শোনে আপীল বিভাগ। সেই আপীলের রায়ে তিন জনেরই মৃত্যুদ- বহাল রাখা হয়। সর্বশেষ রিভিউয়ের পূর্ণাঙ্গ রায় মঙ্গলবার প্রকাশিত হয় ।
×