ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

যথাযোগ্য মর্যাদায় সাবেক রাষ্ট্রপতি জিল্লুর রহমানের মৃত্যুবার্ষিকী পালন

প্রকাশিত: ০৭:৪৪, ২১ মার্চ ২০১৭

যথাযোগ্য মর্যাদায় সাবেক রাষ্ট্রপতি জিল্লুর রহমানের মৃত্যুবার্ষিকী পালন

বিশেষ প্রতিনিধি ॥ স্মরণসভা, আলোচনা সভা, মিলাদ ও দোয়া মাহফিলসহ বিভিন্ন কর্মসূচীর মাধ্যমে সোমবার বর্ষীয়ান রাজনীতিক, ভাষা সৈনিক, বঙ্গবন্ধুর ঘনিষ্ঠ সহচর, মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম সংগঠক, সাবেক রাষ্ট্রপতি মোঃ জিল্লুর রহমানের চতুর্থ মৃত্যুবার্ষিকী পালিত হলো। সকালে বনানী কবরস্থানে জিল্লুর রহমানের পরিবার, আওয়ামী লীগসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক ও সামাজিক সংগঠনের পক্ষ থেকে কবর জিয়ারত ও শ্রদ্ধা নিবেদন করা হয়। বাদ আছর গুলশানের আইভি টাওয়ারে পারিবারিক বাসভবনে মিলাদ ও দোয়া মাহফিলের আয়োজন করা হয়। এতে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় নেতারা অংশগ্রহণ করেন। পরে জিল্লুর রহমানের রুহের মাগফিরাত কামনা করে অনুষ্ঠিত মোনাজাতে অংশ নেন নেতৃবৃন্দ। ২০১৩ সালের ২০ মার্চ সিঙ্গাপুরের মাউন্ট এলিজাবেথ হাসপাতালে জিল্লুর রহমান শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন। সকালে বনানী কবরস্থানে জিল্লুর রহমানের কবরে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানান আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের, প্রেসিডিয়াম সদস্য ড. আব্দুর রাজ্জাক, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক এ্যাডভোকেট জাহাঙ্গীর কবির নানক, সাংগঠনিক সম্পাদক খালিদ মাহমুদ চৌধুরী, সংস্কৃতি বিষয়ক সম্পাদক অসীম কুমার উকিল, দফতর সম্পাদক ড. আবদুস সোবহান গোলাপ, তথ্য ও গবেষণা সম্পাদক এ্যাডভোকেট আফজাল হোসেন, ঢাকা মহানগর দক্ষিণ আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক শাহে আলম মুরাদ, যুবলীগের সভাপতি ওমর ফারুক চৌধুরী, সাধারণ সম্পাদক মোঃ হারুনুর রশীদ, প্রেসিডিয়াম সদস্য সিরাজুল ইসলাম এমপি, আনোয়ারুল ইসলাম, সাংগঠনিক সম্পাদক মুহাঃ বদিউল আলম বদি, দফতর সম্পাদক কাজী আনিসুর রহমান, ছাত্রলীগের সভাপতি সাইফুর রহমান সোহাগ প্রমুখ। শ্রদ্ধা নিবেদন শেষে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের বলেন, জিল্লুর রহমানের মতো আদর্শ আর নিষ্ঠাবান নেতার চলে যাওয়ায় রাজনৈতিক অঙ্গনে যে শূন্যতা সৃষ্টি হয়েছে তা পূরণ হওয়ার নয়। তার আদর্শ যুগ যুগ ধরে নেতাকর্মীদের প্রেরণা যোগাবে। তিনি বলেন, জিল্লুর রহমান একসময় আওয়ামী লীগের প্রাণভোমরা ছিলেন, আজ তাকে খুব মনে পড়ছে। তিনি আমাদের রাজনৈতিক আদর্শ ছিলেন। তাকে সামনে রেখেই আমরা রাজনীতি করেছি। তার শূন্যতা আমাদের এখনও ভোগায়। সেতুমন্ত্রী বলেন, ভৈরবকে জেলা করার প্রক্রিয়া চলছে। যা শুরু করেছিলেন জিল্লুর রহমান। উনার মৃত্যুর সঙ্গে সঙ্গেই ভৈরবকে জেলা করার প্রক্রিয়া থেমে যায়নি। সরকার সময় সুযোগ মতো ভৈরব জেলা গঠনের প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেবে। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের প্রধানতম সহকর্র্মী হয়ে যে ক’জন কীর্তিমান পুরুষ স্বাধীকার, ভাষার সংগ্রাম, স্বাধীনতা আর সুমহান মুক্তিযুদ্ধে অনন্য সাধারণ ভূমিকা রেখেছেন, গণতান্ত্রিক আন্দোলনে অগ্রভাগ থেকে নেতৃত্ব দিয়েছেন তাদের মধ্যে জিল্লুর রহমান অন্যতম। একজন স্বেচ্ছাসেবক হয়ে রাজনৈতিক জীবন শুরু করে দীর্ঘ ৬২ বছরের রাজনৈতিক পথচলায় দেশের ১৯তম রাষ্ট্রপতি হয়েছিলেন জিল্লুর রহমান। জিল্লুর রহমান ১৯২৯ সালের ৯ মার্চ কিশোরগঞ্জ জেলার ভৈরব উপজেলায় এক সম্ভ্রান্ত মুসলিম পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। তার বাবা মেহের আলী মিঞা ছিলেন প্রখ্যাত আইনজীবী এবং তৎকালীন ময়মনসিংহ লোকাল বোর্ডের চেয়ারম্যান ও জেলা বোর্ডের সদস্য। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ইতিহাসে অনার্সসহ এমএ এবং এলএলবি ডিগ্রীধারী জিল্লুর রহমান বায়ান্নের ভাষা আন্দোলন, বাষট্টির সামরিক শাসনবিরোধী আন্দোলন, ছেষট্টির ৬ দফা আন্দোলন, ঊনসত্তরের গণঅভ্যুত্থান এবং একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধসহ প্রতিটি গণআন্দোলনে অসামান্য ভূমিকা রেখেছেন। ১৯৯২ ও ১৯৯৭ সালের কাউন্সিলেও পর পর দুই বার আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এবং ২০০২ সালের কাউন্সিলে প্রেসিডিয়াম সদস্য নির্বাচিত হন তিনি। জিল্লুর রহমান ১৯৭৩, ১৯৮৬, ১৯৯৬, ২০০১ ও ২০০৮ সালে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। ১৯৯৬ সালে স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায়মন্ত্রী ছিলেন তিনি। পাশাপাশি সংসদ উপনেতা হিসেবেও দায়িত্ব পালন করেন। এদিকে মৃত্যুবার্ষিকীতে পরিবারের পক্ষ থেকে জিল্লুর রহমানের সমাধিতে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা নিবেদন করা হয়। পরে ফাতেহা পাঠ ও মোনাজাত পড়া হয়। এ সময় জিল্লুর রহমানের ছেলে কিশোরগঞ্জ-৬ এর সংসদ সদস্য ও বিসিবির সভাপতি নাজমুল হাসান পাপন বলেন, ভৈরব জেলা বাস্তবায়নের কাজ এগিয়ে চলেছে। এছাড়া ঢাকা মহানগর আওয়ামী লীগ উত্তর ও দক্ষিণ, আওয়ামী যুবলীগ, মহিলা আওয়ামী লীগ, যুব মহিলা লীগ, আওয়ামী স্বেচ্ছাসেবক লীগ, বাংলাদেশ ছাত্রলীগ, বঙ্গবন্ধু সাংস্কৃতিক জোটসহ বিভিন্ন সামাজিক-সাংস্কৃতিক ও পেশাজীবী সংগঠন জিল্লুর রহমানের সমাধিতে পুষ্পস্তবক অর্পণ করে ও রুহের মাগফিরাত কামনায় দোয়া-মোনাজাত করে। এছাড়া মরহুমের পরিবারের পক্ষ থেকে তার কবরে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা নিবেদন করা হয়।
×