ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

স্বপ্নীল জয়ে স্মরণীয় অভিষেক

প্রকাশিত: ০৫:৪৫, ২১ মার্চ ২০১৭

স্বপ্নীল জয়ে স্মরণীয় অভিষেক

স্পোর্টস রিপোর্টার ॥ কলম্বোয় নিজেদের ঐতিহাসিক শততম টেস্টে পাওয়া জয়ে বাংলাদেশ এখন ঘোরের মধ্যে। ম্যাচসেরা তামিম ইকবাল ও সিরিজ সেরা সুপার সাকিব-আল হাসানের প্রশংসায় পঞ্চমুখ সবাই। আছেন উইকেটের সামনে-পেছনে দুর্দান্ত নেতৃত্ব দেয়া মুশফিকুর রহীমও। সেখানে অনেকটা পার্শ্বনায়ক হয়ে অভিষেকটাকে স্মরণীয় করে রাখলেন মোসাদ্দেক হোসেন সৈকত। বিশ্লেষকদের মতে, প্রথম ইনিংসের ১২৯ রানের লিডই ম্যাচের ভাগ্য গড়ে দেয়। ৩৩৮ রানের জবাবে এক পর্যায়ে ১৯৮ রানে ৫ উইকেট পড়ে যাওয়ার পরও যেটির রূপকার সাকিবকে (১১৬) যোগ্য সঙ্গ দিয়ে ৭৫ রানের দারুণ এক ইনিংস খেলেন মোসাদ্দেক। সপ্তম উইকেটে গড়েন সর্বোচ্চ ১৩১ রানের জুটি; দেখে কে বলবে ২১ বছর বয়সের একজন জীবনে প্রথম টেস্ট ম্যাচ খেলছিলেন? কাছে থেকে দেখা নবীন সঙ্গীকে নিয়ে স্বয়ং সাকিবও যারপর নাই উচ্ছ্বাসিত। টাইগার ক্রিকেটের বড় তারকা সাকিব বলেন, ‘মোসাদ্দেককে দেখে মনেই হয়নি খেলতে কোন সমস্যা হয়েছে। দারুণ আত্মবিশ্বাসী ছিল। আমি আর কিছু সময় উইকেটে থাকলে ও হয়ত সেঞ্চুরিটাও পেয়ে যেত। তারপরও যেভাবে ব্যাট করেছে, বাংলাদেশ ক্রিকেটের জন্য এটা খুবই ইতিবাচক। ওর ব্যাটিং এ্যাপ্রোচ আন্তর্জাতিক ক্রিকেটের উপযোগী। আশাকরি এটা ধরে রাখতে পারবে।’ এত অল্প বয়সে অভিষেকেই মোসাদ্দেকের ব্যাটিং দেখে মুগ্ধ সাকিব আরও যোগ করেন, ‘আমি মনে করি, বাংলাদেশের ক্রিকেটের হয়ে ওর অনেক বড় ভবিষ্যত আছে। ওয়ানডেও ভাল করছে, তুমুুল প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ আন্তর্জাতিক ক্রিকেট খুব ভালভাবে শুরু করেছে। এটা দারুণ। এভাবে যদি চালিয়ে যেতে পারে তাহলে ওর নিজের জন্য ভাল, দেশের জন্যও ভাল।’ মোসাদ্দেক আগে টেস্ট অভিষেকেই জয়ের স্বাদ পেয়েছেন বাংলাদেশের আর মাত্র চারজন ক্রিকেটার। ২০০৯ সালে ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে বাংলাদেশের প্রথম জয়ের ম্যাচে অভিষেক হয়েছিল অলরাউন্ডার মাহমুদুল্লাহ রিয়াদ ও পেসার রুবেল হোসেনের। সেন্ট ভিনসেন্টে ৫ শিকারের পথে দারুণ বোলিংয়ে আলো ছড়িয়েছিলেন মাহমুদুল্লাহ। ২০১৩ সালে জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে জয়ের ম্যাচে প্রথমবারের মতো সাদা পোশাকে মাঠে নেমেছিলেন পেস বোলিং-অলরাউন্ডার জিয়াউর রহমান। হারারেতে দ্বিতীয় ইনিংসে ৪ উইকেট নিয়েছিলেন তিনি। আর ২০১৪তে ঘরের মাটিতে জিম্বাবুইয়ের বিপক্ষে টেস্ট জয়ের অভিষেক জুবায়ের হোসেন লিখনের। মিরপুরে ৩ উইকেটের জয়ে প্রথম ইনিংসে এই লেগস্পিনার নিয়েছিলেন ২ উইকেট। কিন্তু মোসাদ্দেকের নামটা বিশেষভাবে স্মরণীয় হয়ে থাকবে। লঙ্কার মাটিতে লঙ্কাকে হারিয়ে ঐতিহাসিক শততম টেস্টে পাওয়া জয়ের সমান আর কিছুই হতে পারে না। এমন বর্ণিল অভিষেক খুব কম খেলোয়াড়ের ভাগ্যেই জোটে। তরুণ ডানহাতি ক্রিকেটার হয়ত নিজেও ভাবেননি একসঙ্গে এত কিছু পেয়ে যাবেন। সর্বোপরি আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে নিজ দেশের শততম টেস্টে এর আগে মোট আটজন ক্রিকেটারের অভিষেক হয়। মোসাদ্দেক সেই সৌভাগ্যবানদেরও একজন। কলম্বোয় এদিন বাংলাদেশের ৮৬তম খেলোয়াড় হিসেবে টেস্ট ক্যাপ পরেন তিনি। মোসাদ্দেকের আগে সর্বশেষ শততম টেস্টে অভিষেক হয় জিম্বাবুইয়ের কার্ল মুম্বার। ২০১৬ সালের ডিসেম্বরে এই শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে শততম টেস্ট খেলে জিম্বাবুয়ে। গত বছর জানুয়ারিতে খুলনায় জিম্বাবুইয়ের বিপক্ষে টি২০ দিয়ে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে পা রাখেন মোসাদ্দেক। সেপ্টেম্বরে আফগানিস্তানের বিপক্ষে ওয়ানডে অভিষেক। এ পর্যন্ত খেলেছেন ৮ ওয়ানডে ও ৪ টি২০। বয়স একুশ হলেও ঘরোয়া ক্রিকেটে এরই মধ্যে নিজেকে প্রমাণ করেছেন। প্রথম শ্রেণীর ২১ ম্যাচে ৭ সেঞ্চুরি ও ৯ হাফ সেঞ্চুরিতে ৬৮.৩৭ গড়ে করেছেন ২২২৩ রান। আর ৪৭ লিস্ট-‘এ’ ম্যাচে ১ সেঞ্চুরি ও ১০ ফিফটিতে নামের পাশে ১৪৭১ রান। প্রথম শ্রেণীর ক্রিকেটে বাংলাদেশের প্রথম ব্যাটসম্যান হিসেবে টানা দুই ইনিংসে ডাবল সেঞ্চুরির কীর্তি আছে মোসাদ্দেকের। আছে ২৮২, ২৬২, ২৫০ রানের বিশাল সব ইনিংস। টেস্ট ক্রিকেটে অবদান রাখতে পারলে হয়তো ফিনিশিংয়ে বাংলাদেশের দুশ্চিন্তা কাটবে। তুখোড় সাকিবের অনুমান সত্যি হলে মোসাদ্দেকের সৌজন্যে টাইগার ক্রিকেটেও একদিন অনেক সাফল্য লেখা হবে।
×