ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

কুবি ভিসির দফতরে আন্দোলনকারীদের লাগানো তালা ১২ দিন পর ভাঙল শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা

প্রকাশিত: ০৫:৪১, ২১ মার্চ ২০১৭

কুবি ভিসির দফতরে আন্দোলনকারীদের লাগানো তালা ১২ দিন পর ভাঙল শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা

নিজস্ব সংবাদদাতা, কুমিল্লা, ২০ মার্চ ॥ কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যের (ভিসি) দফতরে লাগানো তালা অবশেষে ১২দিন পর ভেঙ্গে ফেললেন বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রতিবাদী শিক্ষক-শিক্ষার্থী, কর্মকর্তা-কর্মচারী ও ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীরা। ‘অযৌক্তিক’ দাবি তুলে কতিপয় সুবিধাভোগী শিক্ষক গত ৯ মার্চ থেকে ভিসি’র দফতর তালাবদ্ধ করে রেখেছিল। সোমবার সকালে বিশ্ববিদ্যালয়ের সাধারণ শিক্ষক, ছাত্রলীগ নেতৃবৃন্দ, সাধারণ শিক্ষার্থী ও কর্মকর্তা-কর্মচারীরা বিশ্ববিদ্যালয় চত্বরে দেড় ঘণ্টাব্যাপী মানববন্ধন শেষে তালা ভেঙ্গে ভিসিকে তাঁর কার্যালয়ে প্রবেশে সহযোগিতা করে। এদিকে কার্যালয়ে প্রবেশের পর ভিসি সাংবাদিকদের জানান, গুটিকয়েক সুবিধাভোগী শিক্ষকের কাছে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন ও শিক্ষা কার্যক্রম জিম্মি থাকতে পারে না। তাই প্রতিবাদীরা এ কর্মকা-ের সমুচিত জবাব দিয়েছে। কুমিল্লার কোটবাড়ির সালমানপুর এলাকায় গত ১৮ জানুয়ারি রাতে বিশ্ববিদ্যালয়ের দুই শিক্ষকের বাসায় ডাকাতির ঘটনা ঘটে। ভুক্তভোগীদের পক্ষ থেকে থানায় মামলা না দিয়ে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনকে ব্যবস্থা নেয়ার দাবিসহ কয়েকটি দাবি তুলে ধরে গুটিকয়েক শিক্ষক আন্দোলনের নামে ছাত্রদের ক্লাস-পরীক্ষা বন্ধ রাখে। এ সময় বিশ্ববিদ্যালয়ের একাডেমিক ভবনে তালা লাগিয়ে দেয়া হয়। পরে শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের মুখে ক্লাস-পরীক্ষা শুরু হয়। এদিকে গত ১০ মার্চ বিশ্ববিদ্যালয়ের পূর্বনির্ধারিত ৬৫তম সিন্ডিকেট সভা প- করতে আগের দিন ৯ মার্চ ভিসির দফতরে তালা লাগিয়ে দেয়া হলে ভিসি’র বাসভবনে ওই সিন্ডিকেট সভার আয়োজন করা হয়। ১০ মার্চ বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের চেয়ারম্যান প্রফেসর আবদুল মান্নানের উপস্থিতিতে সভা শুরুর প্রাক্কালে তাঁর সাথেও আন্দোলনকারী ওই শিক্ষকদের বাদানুবাদ হয়। পরে সিন্ডিকেট সভা শেষে মঞ্জুরি কমিশনের চেয়ারম্যানসহ প্রক্টরিয়াল বডি সভাস্থল ত্যাগ করলে ভিসিকে তাঁর বাসভবনে তালা লাগিয়ে অবরুদ্ধ করে রাখা হয়। এতে বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিকাংশ শিক্ষক ও শিক্ষার্থী এই আন্দোলনকে ‘অযৌক্তিক’ দাবি করে প্রতিবাদ ও নিন্দা জানায়। এদিকে ভিসি তাঁর জীবনের নিরাপত্তা চেয়ে কুমিল্লার পুলিশ সুপার বরাবর আবেদন করলে পুলিশ ও প্রশাসনের কর্মকর্তারা ওইদিন গভীর রাতে তাঁকে (ভিসি) তালাবাজদের কবল থেকে উদ্ধার করেন। ওইদিন থেকে ভিসি তাঁর বাসায় দাফতরিক কার্যক্রম পরিচালনা করছিলেন। এ বিষয়ে গত শনিবার ‘কুমিল্লা ভার্সিটিতে ছদ্মবেশে সক্রিয় মৌলবাদী চক্র, দাবি আদায়ের নামে ভিসির দফতর ৯ দিন ধরে তালাবদ্ধ’ শিরোনামে দৈনিক জনকণ্ঠে সংবাদ প্রকাশিত হলে বেশ তোলপাড় সৃষ্টি হয়। এদিকে সোমবার দুপুরে কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয় বঙ্গবন্ধু পরিষদের একাংশ, ছাত্রলীগ, বঙ্গবন্ধু কর্মচারী পরিষদ, বিশ্ববিদ্যালয় অফিসার্স এ্যাসোসিয়েশনসহ সাধারণ শিক্ষক, শিক্ষার্থী ও কর্মকর্তা-কর্মচারীরা বিভিন্ন ব্যানার ও প্ল্যাকার্ড নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয় চত্বরে দেড় ঘণ্টাব্যাপী মানববন্ধন করে। পরে তারা সমবেত হয়ে ভিসি’র দফতরের সামনে গিয়ে তালাবাজদের লাগানো তালা ভেঙ্গে ভিসি ড. মোঃ আলী আশরাফকে তাঁর কার্যালয়ে প্রবেশে সহযোগিতা করে। কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য ড. মোঃ আলী আশরাফ জানান, গুটি কয়েক সুবিধাভোগী শিক্ষক বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসিদের মেয়াদ শেষে প্রায়ই মুখরোচক দাবি তুলে সুবিধা আদায়ের চেষ্টা করে। তাদের কাছে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন ও শিক্ষা কার্যক্রম জিম্মি থাকতে পারে না। ওই সুবিধাভোগীরা আমার দফতরে তালা লাগিয়ে দেয়ার ১২ দিন পর প্রতিবাদী শিক্ষক, শিক্ষার্থী, কর্মকর্তা, কর্মচারীসহ ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীরা তাঁর সমুচিত জবাব দিয়ে সোমবার মানববন্ধন শেষে তালা ভেঙ্গে দিয়েছে।
×