ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

গ্রামের ভূমি ব্যবহারে ছাড়পত্র বাধ্যতামূলক

প্রকাশিত: ০৫:৩০, ২১ মার্চ ২০১৭

গ্রামের ভূমি ব্যবহারে ছাড়পত্র বাধ্যতামূলক

বিশেষ প্রতিনিধি ॥ নগরের পাশাপাশি গ্রামাঞ্চলেও বাড়িঘর নির্মাণ এবং যে কোন উন্নয়ন কাজে ভূমি ব্যবহারের জন্য সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের ছাড়পত্র নেয়ার বাধ্যবাধকতা রেখে আইন করতে যাচ্ছে সরকার। এই লক্ষ্যে ‘নগর ও অঞ্চল পরিকল্পনা আইন, ২০১৭’ এর খসড়া নীতিগত অনুমোদন দিয়েছে মন্ত্রিসভা। এই নিয়ম অমান্য করলে পাঁচ বছর কারাদ-ের সঙ্গে ৫০ লাখ টাকা জরিমানার বিধান রাখা হয়েছে। এছাড়া মন্ত্রিসভা পাকিস্তানী সেনাবাহিনীর বর্বরোচিত ও নৃশংস হত্যাকা-ের জন্য ২৫ মার্চ জাতীয় ও আন্তর্জাতিকভাবে ‘গণহত্যা দিবস’ ঘোষণার প্রস্তাব, ‘প্রবাসী কল্যাণ বোর্ড আইন, ২০১৭’ এর খসড়া এবং দেশে যে কোন ধরনের বস্ত্রশিল্প প্রতিষ্ঠায় নিবন্ধনের বিধান রেখে ‘বস্ত্র আইন, ২০১৭’ এর খসড়ার নীতিগত অনুমোদন দিয়েছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে সোমবার মন্ত্রিসভার বৈঠকে অনুমোদন দেয়া হয়। পাশাপাশি শততম টেস্টে জয় পাওয়ায় বাংলাদেশ জাতীয় ক্রিকেট দলকে অভিনন্দন জানিয়েছে মন্ত্রিসভা। বৈঠক শেষে মন্ত্রিপরিষদ সচিব মোহাম্মদ শফিউল আলম সাংবাদিকদের বলেন, ‘নগর ও অঞ্চল পরিকল্পনা আইনটি অনেক দিনের প্রত্যাশিত। ভূমি ব্যবস্থাপনায় যেন শৃঙ্খলা আসে সেজন্য এই আইন করা হচ্ছে। পরিকল্পিতভাবে যেন জমির ব্যবহার করা হয় সেজন্য আইনে অনেকগুলো প্রস্তাব আছে। খসড়ায় গৃহায়ন ও গণপূর্তমন্ত্রীর নেতৃত্বে ২৭ সদস্যের একটি উচ্চ পর্যায়ের জাতীয় উপদেষ্টা পরিষদ গঠনের প্রস্তাব করা হয়েছে, যাদের মূল দায়িত্ব হবে নগর উন্নয়ন অধিদফতর বা তাদের ছোট পরিষদের তত্ত্বাবধান করা। এছাড়া গণপূর্ত সচিবের নেতৃত্বে থাকবে ২৫ সদস্যের নির্বাহী পরিষদ। শফিউল আলম জানান, পূর্তমন্ত্রীর নেতৃত্বে উপদেষ্টা পরিষদ মূলত নীতি-নির্ধারণী বিষয়ে কাজ করবে। আর উপদেষ্টা পরিষদের নির্দেশনা বাস্তবায়ন করা হবে নির্বাহী পরিষদের কাজ। এছাড়া জাতীয় উপদেষ্টা পরিষদের কাছে পরিকল্পনাগুলো সুপারিশসহ উপস্থাপন করবে নির্বাহী পরিষদ। সব সরকারী-বেসরকারী সংস্থা, ব্যক্তি, প্রতিষ্ঠান যাদের কার্যক্রম প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে নগর ও অঞ্চল পরিকল্পনা এবং ভূমি ব্যবহার ব্যবস্থাপনার সঙ্গে সম্পৃক্ত হবে- সেসব সংস্থা, ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানকে উপদেষ্টা পরিষদের কাছ থেকে ভূমি ব্যবহারের জন্য ছাড়পত্র নিতে হবে। উপদেষ্টা পরিষদ ছাড়পত্র দেয়ার জন্য নির্দিষ্ট কোন কর্তৃপক্ষকে ক্ষমতা দিতে পারবে জানিয়ে মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন, রাজউকসহ এ সংক্রান্ত অন্য কর্তৃপক্ষের কাজের সমন্বয় করবে উপদেষ্টা পরিষদ। নগর উন্নয়ন অধিদফতরকে নগর ও অঞ্চলের পরিকল্পনা ও ভূমি ব্যবহার ব্যবস্থাপনা প্রণয়নকারী সংস্থা হিসেবে দায়িত্ব দেয়া যাবে। এ আইনের অধীনে প্রণীত পরিকল্পনা, বিধি, কোন আদেশ, নির্দেশ মোতাবেক কাজ না করলে বা কোন ব্যক্তি, সংস্থা ও প্রতিষ্ঠান এগুলো লঙ্ঘন করলে সর্বোচ্চ পাঁচ বছরের সশ্রম কারাদ- এবং সর্বোচ্চ ৫০ লাখ টাকা পর্যন্ত অর্থদ- দেয়া যাবে। শফিউল বলেন, গ্রাম এলাকাতেও কোন উন্নয়নমূলক কাজ করতে স্থানীয় কর্তৃপক্ষের কাছ থেকে ছাড়পত্র নিতে হবে। নগর উন্নয়ন কর্তৃপক্ষগুলো তাদের এখতিয়ারভুক্ত এলাকাগুলোতে নিজেরাই অনুমোদন দেবে। পৌরসভা ও স্থানীয় পরিষদ নিজেদের গৃহীত পরিকল্পনা অনুযায়ী উন্নয়ন কর্মকা- সম্পাদন করবে। ইতোপূর্বে তারা যেসব কাজ করছে তা এই আইনের মধ্যে গণ্য হবে। মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন, উন্নয়ন কার্যক্রমের মধ্যে মানুষের বাড়িঘর নির্মাণের বিষয়টিও আছে। ছাড়পত্র নেয়ার বিষয়টি গ্রাম পর্যায়ে চলে যাবে, এটি পুরো দেশ কভার করবে। সারাদেশের যে কোন জমি ব্যবহার করতে কর্তৃপক্ষের অনুমোদন লাগবে। তিনি বলেন, গ্রামে বাড়িঘর তৈরির আগে ইউনিয়ন পরিষদের অনুমতি নেয়ার নিয়ম এখনও আছে। কিন্তু বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই তা নেয়া হয় না। কৃষি জমিতে বাড়ি করতে জেলা প্রশাসকের অনুমতি নিতে হয়। কিন্তু মানুষ সাধারণত সেই অনুমতি নেয় না। এগুলো আইনে আছে, পালন করা হয় না বলতে পারেন। নতুন আইন তৈরির যৌক্তিকতা তুলে ধরে শফিউল আলম বলেন, জমির অপব্যবহার ঠেকানো এর অন্যতম উদ্দেশ্য। পরিকল্পনা করে যেন আমরা ল্যান্ড ইউজ করি। জমির মিসইউজ যেন কম হয়। প্রতিবছর এক শতাংশ করে কৃষি জমি কমে যাচ্ছে জানিয়ে মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন, সেটা ঠেকানো দরকার। প্রস্তাবিত নতুন আইনে যেসব বিষয়ে বিস্তারিত বলা নেই, সেগুলো বিধির মাধ্যমে বিশদ করা হবে বলে জানান তিনি। ২৫ মার্চ জাতীয় ও আন্তর্জাতিক ‘গণহত্যা দিবস’ ॥ পাকিস্তানী সেনাবাহিনীর বর্বরোচিত ও নৃশংস হত্যাকা-ের জন্য ২৫ মার্চ জাতীয় ও আন্তর্জাতিকভাবে ‘গণহত্যা দিবস’ ঘোষণার প্রস্তাব অনুমোদন দিয়েছে মন্ত্রিসভা। সোমবার মন্ত্রিসভার নিয়মিত বৈঠকে ২৫ মার্চ তারিখকে ‘গণহত্যা দিবস’ ঘোষণা এবং জাতীয় ও আন্তর্জাতিকভাবে পালনের লক্ষ্যে দিবসটিকে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের জারি করা পরিপত্রের ‘ক’ ক্রমিকে অন্তর্ভুক্ত করার প্রস্তাব অনুমোদন দেয়া হয়। বৈঠক শেষে মন্ত্রিপরিষদ সচিব মোহাম্মদ শফিউল আলম সাংবাদিকদের এ তথ্য জানান। এর আগে গত ১১ মার্চ ১৯৭১ সালের ২৫ মার্চের কালরাতে পাকিস্তানী সেনাবাহিনীর বর্বরোচিত ও নৃশংস হত্যাকা-কে ‘গণহত্যা দিবস’ হিসেবে পালনের প্রস্তাব সংসদে সর্বসম্মতভাবে পাস হয়। মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন, ২৫ মার্চ গণহত্যা দিবস ঘোষণার বিষয়টি মন্ত্রিসভা সর্বসম্মতিক্রমে গ্রহণ করেছে। এটা হবে ক-শ্রেণীভুক্ত একটি দিবস। ক-শ্রেণীভুক্ত দিবসের আর্থিক খরচ সর্বোচ্চ ও এটি উচ্চ শ্রেণীর হয়। দিবসটিকে কীভাবে আন্তর্জাতিক দিবস হিসেবে পালন করা হবে- এ বিষয়ে জানতে চাইলে মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন, এটার জন্য পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ইতোমধ্যে প্রক্রিয়া শুরু করেছে। জাতিসংঘের একটি সংস্থা আছে, যারা এটা নিয়ে কাজ করে। সেখানে প্রস্তাব নিয়ে যাওয়া হয়েছে। প্রক্রিয়া শুরু হয়ে গেছে ইতোমধ্যে। চলতি বছর ২৫ মার্চ গণহত্যা দিবস পালন করা হবে কিনা- এ বিষয়ে শফিউল আলম বলেন, মন্ত্রিসভার কাছে এসেছে শুধু দিবস ঘোষণার জন্য। বাকি কাজ করবে মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয়। এ বছর দিবস পালনের জন্য মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের প্রস্তুতি আছে কিনা তা আমরা এই মুহূর্তে বলতে পারছি না। প্রবাসী কল্যাণ বোর্ড আইন ॥ প্রবাসী ও তাদের পরিবারের সদস্যদের কল্যাণে বোর্ড গঠন করবে সরকার। এজন্য ‘প্রবাসী কল্যাণ বোর্ড আইন, ২০১৭’ এর খসড়া নীতিগত অনুমোদন দিয়েছে মন্ত্রিসভা। বৈঠক শেষে মন্ত্রিপরিষদ সচিব মোহাম্মদ শফিউল আলম সাংবাদিকদের বলেন, প্রবাসী বাংলাদেশী কর্মী ও তাদের পরিবারের সদস্যদের অধিকার সুরক্ষা ও কল্যাণ নিশ্চিতের জন্য ১৯৯০ সালের জাতিসংঘের একটি কনভেনশন আছে। আমরা এটার স্বাক্ষরকারী দেশ হিসেবে এ কনভেনশনের সঙ্গে সামঞ্জস্যতা রেখে আমাদের একটি আইন করার বাধ্যবাধকতা ছিল। সেজন্য এ নতুন আইনটি প্রস্তাব করা হয়েছে।’ তিনি বলেন, ‘আমরা এতদিন ওয়েজ আর্নার্স কল্যাণ বিধিমালা, ২০০২ দিয়ে কাজটি করে আসছি। সেটাকে একটু গুছিয়ে আইনের আকারে নিয়ে আসা হয়েছে। প্রস্তাবিত আইনে প্রবাসী কল্যাণ বোর্ড নামে একটি বোর্ডের প্রস্তাব করা হয়েছে। বোর্ডের অনেক কাজ রয়েছে। খসড়া আইনে বোর্ডের ২১টি দায়িত্ব দেয়া হয়েছে জানিয়ে শফিউল আলম বলেন, বিদেশগামী কর্মীদের জন্য প্রাক-বহির্গমন ব্রিফিং সেন্টার স্থাপন, পরিচালনা ও ব্রিফিং প্রদান। বিদেশগামী কর্মীদের সহায়তা দেয়া, তাদের নির্ভরশীলদের কল্যাণার্থে স্বল্প, মধ্য ও দীর্ঘ মেয়াদী প্রকল্প গ্রহণ। প্রবাসীদের কল্যাণের জন্য কার্যক্রম পরিচালনা। প্রবাসীদের কেউ মারা গেলে মৃতদেহ আনা বা ক্ষেত্র অনুযায়ী সৎকারের ব্যবস্থা করা। এজন্য আর্থিক ও অন্যান্য সহায়তা দেয়া বোর্ডের কাজ। অসুস্থ, আহত বা শরীরিকভাবে অক্ষম প্রবাসীদের দেশে আনা এবং চিকিৎসার ব্যবস্থা করাও বোর্ডের কাজ। প্রবাসী কল্যাণ বোর্ডে ১৬ সদস্যবিশিষ্ট একটি পরিচালনা পরিষদ থাকবে জানিয়ে মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন, ‘এতে প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান সচিব চেয়ারম্যান ও প্রবাসী কল্যাণ বোর্ডের মহাপরিচালক সদস্য সচিব হিসেবে দায়িত্ব পালন করবেন। কল্যাণ বোর্ডের প্রধান হবেন মহাপরিচালক। নারী অভিবাসী কর্মীদের কল্যাণে বোর্ডকে বিশেষ দায়িত্ব দেয়া আছে। বিদেশে কর্মরত কোন নারী অভিবাসী বিপদগ্রস্ত হলে উদ্ধার, আইনগত সহায়তা দেয়া ও ক্ষতিপূরণ আদায়ে বোর্ড পদক্ষেপ গ্রহণ করবে। বস্ত্রশিল্প প্রতিষ্ঠায় নিবন্ধনের বিধান রেখে বস্ত্র আইন ॥ দেশে যে কোন ধরনের বস্ত্রশিল্প প্রতিষ্ঠায় নিবন্ধনের বিধান রেখে ‘বস্ত্র আইন, ২০১৭’ এর খসড়ার নীতিগত অনুমোদন দিয়েছে মন্ত্রিসভা। মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন, বস্ত্র শিল্পগুলোকে ভালমতো দেখভালের জন্য এই আইনটি হচ্ছে। বস্ত্র শিল্পগুলোকে এই আইনের অধীন বিধির আলোকে নির্ধারিত পদ্ধতিতে নিবন্ধন নিতে হবে। যেসব বস্ত্র শিল্প চলছে সেগুলোকে নতুন করে নিবন্ধন নিতে হবে না। তিনি বলেন, সরকারের বিরাষ্ট্রীয়করণ ও বিরাষ্ট্রীকরণ নীতির আওতায় হস্তান্তরিত বা বিক্রিত বস্ত্রমিল সম্পাদিত চুক্তির শর্ত লঙ্ঘন করলে সরকার ওগুলো আবার নিয়ে যেতে পারবে। খসড়া আইন অনুযায়ী রং, রাসায়নিকসহ আমদানিকৃত বস্ত্র উপকরণ বাজারজাত করার সময় ক্ষমতাপ্রাপ্ত কর্মকর্তা আমদানিকারকের কাছ থেকে নমুনা সংগ্রহ করে মান যাচাই করতে পারবে। নতুন এই আইনের মাধ্যমে বস্ত্রশিল্পের সুপারভাইজারি ও মনিটরিং প্রক্রিয়া জোরদার। জাতীয় ক্রিকেট দলকে মন্ত্রিসভার অভিনন্দন ॥ শততম টেস্টে শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে জয়ে বাংলাদেশের জাতীয় ক্রিকেট দলকে অভিনন্দন জানিয়েছে মন্ত্রিসভা। সচিবালয়ে সোমবার প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে মন্ত্রিসভার নিয়মিত বৈঠকের শুরুতেই ক্রিকেট দলের জন্য অভিনন্দন প্রস্তাব তোলা হয়। মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন, বাংলাদেশ শততম টেস্টে শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে বিজয় লাভ করায় মন্ত্রিসভা জাতীয় ক্রিকেট দলের জন্য অভিনন্দন প্রস্তাব গ্রহণ করেছে। সর্বসম্মতিক্রমে সেটা গৃহীত হয়েছে।
×