ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১০ বৈশাখ ১৪৩১

শহীদ মিনারে মিজারুল কায়েসের প্রতি সর্বস্তরের মানুষের শ্রদ্ধা

প্রকাশিত: ০৫:২৯, ২১ মার্চ ২০১৭

শহীদ মিনারে মিজারুল কায়েসের প্রতি সর্বস্তরের মানুষের শ্রদ্ধা

কূটনৈতিক রিপোর্টার ॥ ব্রাজিলে নিযুক্ত বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত ও সাবেক পররাষ্ট্র সচিব মোহাম্মদ মিজারুল কায়েসের প্রতি শেষ শ্রদ্ধা জানিয়েছেন সর্বস্তরের মানুষ। সোমবার কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে তার মরদেহের প্রতি এই শ্রদ্ধা জানানো হয়। এর আগে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় প্রাঙ্গণে তার প্রথম জানাজার নামাজ অনুষ্ঠিত হয়। আজ মঙ্গলবার মিজারুল কায়েসের মরদেহ রাজধানীর বনানী কবরস্থানে দাফন করা হবে। মিজারুল কায়েসের মরদেহ ঢাকার আসার পরে সোমবার সকাল সাড়ে ৮টায় পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে তার প্রথম জানাজার নামাজ অনুষ্ঠিত হয়। এ সময় পররাষ্ট্রমন্ত্রী আবুল হাসান মাহমুদ আলী, পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলম, পররাষ্ট্র সচিব এম শহীদুল হক, সাবেক ও বর্তমান রাষ্ট্রদূত ছাড়াও তার সহকর্মীরা সেখানে উপস্থিত ছিলেন। পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে জানাজা শেষে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে মিজারুল কায়েসের মরদেহ আনা হয় সকাল সোয়া ১০টায়। সেখানে একটি কালো ব্যানারের সামনে রাখা হয় মিজারুল কায়েসের মরদেহ। শ্রদ্ধা অনুষ্ঠান পরিচালনা করেন সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোটের সভাপতি গোলাম কুদ্দুস। ‘শিল্পভুবনের প্রিয়জন মেধাবী কূটনীতিক মিজারুল কায়েসের প্রতি জাতির শ্রদ্ধাঞ্জলি’ এমনটাই লেখা ছিল সেই কালো ব্যানারে। মিজারুল কায়েসের মরদেহ সেখানে আনার আগেই জড়ো হন শিল্প-সাহিত্য-সাংস্কৃতিক জগতের মানুষেরা। আসেন উচ্চপদের সরকারী কর্মকর্তারাও। শহীদ মিনারে প্রথমে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পক্ষে তার মরদেহে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানান তার সহকারী সামরিক সচিব লেফটেন্যান্ট জেনারেল সাইফুল্লাহ। এরপর একে একে সংস্কৃতি ও নাট্যকর্মী ও তার সাবেক সহকর্মীরাসহ সমাজের বিভিন্ন স্তরের মানুষরা তার প্রতি শ্রদ্ধা জানান। মিজারুল কায়েসের স্ত্রী নাঈমা কায়েস, তার দুই মেয়ে মানসী ও মাধুরী এবং তার দুই ভাই ও বোন এ সময় উপস্থিত ছিলেন। সেখানে নাট্যব্যক্তিত্ব রামেন্দু মজুমদার বলেন, মিজারুল কায়েস দেশের শিল্প সাহিত্যকে বিদেশে তুলে ধরার চেষ্টা করতেন। তার অকালে চলে যাওয়ায় আমাদের অনেক ক্ষতি হয়েছে। ইউনিভার্সিটি অব এশিয়া প্যাসিফিকের উপাচার্য অধ্যাপক ড. জামিলুর রেজা চৌধুরী বলেন, মিজারুল কায়েস সাহিত্য-শিল্প চেতনার মানুষ ছিলেন। বইমেলা আসলে এক ব্যাগ বই কিনে নিয়ে যেতেন। তার সঙ্গে আড্ডায় শিল্পী সমাজ প্রাণ পেত হাসি ঠাট্টায়। কবি মোহন রায়হান বলেন, বাংলা ভাষা, শিল্প সাহিত্য গভীরভাবে ভালবাসতেন মিজারুল কায়েস। তীক্ষè ছিল তার রসবোধ। সাবেক সচিব আবু আলম শহীদ খান বলেন, অত্যন্ত মেধাবী একজন সিভিল সার্ভিস কর্মকর্তা ছিলেন মিজারুল। তার সঙ্গে থাকা মানেই কিছু জ্ঞান লাভ করা। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. আ আ ম স আরেফিন সিদ্দিক, সাবেক রাষ্ট্রদূত আনারুল আলম, সাবেক রাষ্ট্রদূত গোলাম মাহমুদ, বিসিএস ’৮২ ফোরামের সভাপতি সাবেক সচিব মিজানুর রহমান, সাবেক সচিব আবু আলম শহীদ খান, ডাঃ ফেরদৌস বেগম, শিল্পী মনিরুল ইসলাম, নাট্যব্যক্তিত্ব আতাউর রহমান, বাংলাদেশ শিল্পকলা এ্যাকাডেমির পরিচালক লিয়াকত আলী লাকী প্রমুখ শ্রদ্ধা জানান। এছাড়াও মিজারুল কায়েসের প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন করে ’৮২ বিসিএস ফোরাম, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা অনুষদ, কিশোরগঞ্জের পাকুন্দিয়া সমিতি, ঢাকা কলেজ, বিশ্বসাহিত্য কেন্দ্র, বাংলাদেশ শিল্পকলা এ্যাকাডেমি, বঙ্গবন্ধু নাট্য দল, থিয়েটার স্কুল ও থিয়েটার ও আবৃত্তি সমন্বয় পরিষদ। সোমবার বাদ আসর রাজধানীর গুলশান আজাদ মসজিদে মিজারুল কায়েসের দ্বিতীয় জানাজা অনুষ্ঠিত হয়। বিভিন্ন দেশের কূটনীতিক ও শুভানুধায়ীরা সে জানাজা অনুষ্ঠানে অংশ নেন। আজ মঙ্গলবার মিজারুলের মরদেহ হেলিকপ্টারে করে জন্মস্থান কিশোরগঞ্জের পাকুন্দিয়ায় নিয়ে যাওয়া হবে। সেখানে তার আত্মীয়স্বজন ও প্রতিবেশীরা তৃতীয় ও শেষ জানাজায় অংশ নেবেন। এরপর তার মরদেহ আবার ঢাকায় ফিরিয়ে আনা হবে। মঙ্গলবার বনানী কবরস্থানে মিজারুল কায়েসের বাবা-মায়ের কবরের পাশে তাকে দাফন করা হবে। এছাড়া আগামী ২৩ মার্চ বাদ মাগরিব ঢাকা সেনানিবাসের শাহীন অডিটরিয়াম কুলখানি অনুষ্ঠিত হবে মিজারুল কায়েসের। এর আগে রবিবার মধ্য রাতে কাতার এয়ারওয়েজের একটি ফ্লাইটে মিজারুল কায়েসের লাশ হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে পৌঁছে। গত ১১ মার্চ ব্রাজিলের রাজধানী ব্রাসিলিয়ার একটি হাসপাতালে মিজারুল কায়েস মৃত্যুবরণ করেন। মিজারুল কায়েস ব্রাজিলে বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূতের দায়িত্ব পালনকালে গুরুতর অসুস্থ হয়ে মাস খানেক ধরে ব্রাজিলের ব্রাসিলিয়া হাসপাতালে আইসিইউতে ছিলেন। কিশোরগঞ্জের সন্তান মিজারুলের বয়স হয়েছিল ৫৭ বছল। ২০০৯ সাল থেকে ২০১২ সাল পর্যন্ত পররাষ্ট্র সচিব হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন মিজারুল কায়েস। এর আগে ২০১২ সালে শ্বাসকষ্টজনিত সমস্যা ও রক্তে ইনফেকশনের মতো প্রাণঘাতী সেপটেসেমিয়ায় আক্রান্ত হয়েছিলেন। সিঙ্গাপুরের মাউন্ট এলিজাবেথ হাসপাতালে চিকিৎসা নিয়ে সে সময় সুস্থ হয়েছিলেন তিনি। ব্রাজিলে যাওয়ার আগে মিজারুল বাংলাদেশের লন্ডন মিশনে হাইকমিশনারের দায়িত্ব পালন করেন। সেখান থেকে তাকে ব্রাজিলে পাঠানো হয়েছিল।
×